________________
১১০
বর্ধমান মহাবীর • আগুন লেগেছে। সেই আগুনে বড় বড় গাছ পুড়ছে, হােট হােট গাছ, ঝােপ ঝাড় জঙ্গল। ক্রমশঃ সেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। লাল হয়ে উঠল আকাশ। দেখল বনের পশুয়া প্রাণ ভয়ে চারদিকে ছুটছে। প্রথমে হাতীয় দল গেল, তারপর বুনাে মােষ, শিয়াল, হরিণ, এক ঝাক বনটিয়া তারপর আর এক ঝাক। দেখল তারা সবাই নদীর ধারে এসে ভিড় করেছে। সেখানে পরিসর একটুখানি জায়গা। দেখতে দেখতে তা পশুতে পাখিতে ভরে গেল। সকলের শেষে সে দেখল এল এক যুথভ্রষ্ট হাতী। জায়গা বলতে তখন আর কিছু ছিল না। সে কোন মতে এক কোণে এসে দাড়াল। কিন্তু পা নাড়বার তার উপায় নেই।
অনেকক্ষণ সে দাড়িয়ে রইল তারপর এক সময় গা চুলকোবার জন্যই সে যেন পা তুলল।
| সে পা তুলল আর সেই অবসরে যেখানে তার পা ছিল সেখানে এসে আশ্রয় নিল এক অল্পপ্রাণ খরগােশ।
গা চুলকিয়ে হাতীটি যখন মাটিতে পা রাখতে যাবে তখন তার চোখে পড়ে গেল সেই খরগােশটি। হাতীর মনে দয়ার উদ্রেক হল। মাটিতে পা রাখলে খরগােশটির মৃত্যু হবে ভেবে সে তিন পায়ে দাড়িয়ে রইল। দাড়িয়ে রইল যতক্ষণ সেই আগুন জ্বলল।
তারপর যখন সেই দাবাগ্নি নিভে গেল ও বনের পশুরা নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে গেল তখন সে তার পা নাবিয়ে মাটিতে রাখতে গেল। কিন্তু সেই পা সে মাটিতে রাখতে পারল না। তার পা অসাড় হয়ে যাওয়ায় ধপ করে সেখানেই সে পড়ে গেল।
কুৎপিপাসায় কাতর হয়ে সেই হাতীটি সেইখানে পড়ে রইল। নদীর জল এত কাছে তবু সেখানে গিয়ে জল খাবার তার শক্তি নেই। ভরসা-যদি বৃষ্টি হয়। করুণ চোখে সে তাই আকাশের দিকে চেয়ে রইল। কিন্তু একফোঁটা বৃষ্টি পড়ল না। সে তাই আগুনে পােড় বনের ধারে নদীর তীরে এৰে পড়ে রইল। তারপর এক সময় তার মৃত্যু হল।