________________
তীর্থংকর
১৪১
বর্ধমান তাকে নিগ্রন্থ প্রবচন শোনালেন। বললেন, সবই যদি নিয়তি জন্য তবে মোক্ষও নিয়তিবশে অনায়াসলভ্য। তবে এত জপ তপ ধ্যান ধারণার প্রয়োজন কি ? সুপ্ত সিংহের মুখে এসে কি হরিণ শিশু প্রবেশ করে? তাই চাই পুরুষকার, আত্মার নির্মাণের জন্য সতত প্রচেষ্টা। সদ্দালপুত্র বর্ধমানের প্রবচনে প্রভাবান্বিত হয়ে সস্ত্রীক তাঁর কাছে শ্রাবক ধর্ম গ্রহণ করল ।
সদ্দালপুত্রের ধর্মপরিবর্তনের কথা যখন আজীবিক নেতা মংখলীপুত্রের কানে গেল তখন তাঁর মনে হল যেন বজ্রপাত হয়ে গেছে। কারণ সদ্দালপুত্র একজন সাধারণ গৃহস্থ ছিল না। আজীবিক মতাবলম্বীদের মধ্যে তার বিশিষ্ট স্থান ছিল। তাই রাগে দুঃখে গোশালক তাঁর নিকটস্থ আজীবিক সাধুদের সম্বোধন করে বললেন, ভিক্ষুগণ, শুনেছ, পোলাসপুরের ধর্মস্তম্ভের পতন হয়েছে। শ্রমণ মহাবীরের উপদেশে সদ্দালপুত্র আজীবিক সম্প্রদায় পরিত্যাগ করে নিগ্ৰন্থ প্রবচন গ্রহণ করেছে। কত দুঃখের কথা ৷ কত পরিতাপের কথা ৷ চল পোলাসপুরে চল। তাকে আবার আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে আনাই এখন আমাদের একমাত্র কর্তব্য ।
গোশালক তাই আজীবিক শ্রমণ সঙ্ঘ নিয়ে পোলাসপুরে এসে সভা ভবনে অবস্থান করলেন ও তারপর কয়েকজন বাছা বাছা শ্ৰমণ নিয়ে সদ্দালপুত্রের আবাসস্থানে গিয়ে উপস্থিত হলেন ।
বর্ধমান তার পুর্বেই পোলাসপুর পরিত্যাগ করে বাণিজ্যগ্রামের দিকে চলে গেছেন ।
যে সদ্দালপুত্র মংখলীপুত্র গোশালকের নাম শুনলে পুলকিত হয়ে উঠত সেই সদ্দালপুত্র তাঁকে আজ সাধারণ অভ্যর্থনা জানাল, ধর্মাচার্যের সম্মান জানাল না । গোশালক এতে আরও ক্রুদ্ধ হলেও মনে মনে বুঝতে পারলেন যে বর্ধমানের নিন্দা করে বা স্বমতের প্রশংসা করে সদ্দালপুত্রকে আজীবিক সম্প্রদায়ে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাই কণ্ঠস্বরকে যতদূর সম্ভব কোমল করে বললেন, দেবায়ুপ্রিয়, মহাব্রাহ্মণ কি এখানে এসেছেন ?