________________
২০
উত্তরাধ্যয়ন সূত্র সেই সদাচারী অধীতশাস্ত্ৰ শিষ্য দেব গন্ধৰ্ব্ব মনুষ্য পূজিত হইয়া শুক্রশােণিতাদি অপবিত্র দ্রব্যোপন্ন, শরীর ত্যাগ পূর্বক শাশ্বত—অপুনরাবর্তনশীল—সিদ্ধ বা মুক্ত হয় অথবা অল্পকর্মবিশিষ্ট মহৈশ্বর্যশালী দেবতারূপে উৎপন্ন হয় ॥৪৮|| এইরূপ বলিতেছি।
ইতি বিনয়তঅধ্যয়ন, প্রথম অধ্যয়ন
ভাবকর্ম বলে, আর এক বিশেষ প্রকার অতি সূক্ষ্ম পরমাণুনির্মিত স্কন্ধকে দ্রব্যকর্ম বলে। অধ্যবসায়ের প্রভাবে আকৃষ্ট হইয়া জড় পরমাণুনির্মিত সম্বন্ধসমূহ জীবাত্মার সহিত মিলিত হইয়া আত্মার ‘কার্মণ শরীর উৎপন্ন করে ও এই শরীর জীবাত্মার সহিত জন্মজন্মান্তরে নানা যােনিতে পরিভ্রমণ করে। কামণ-শরীরকে অন্য দর্শনে লিঙ্গশরীর বলে। বদ্ধ কর্ম দুইভাবে ক্ষরিত হয় ? প্রথমত-নির্দিষ্ট সময়ে ফল প্রদান করিয়া স্বতঃই ক্ষরিত হইয়া যায়, দ্বিতীয়ত:-তপস্যা ধ্যানাদির দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আত্মা হইতে এ সেই কর্মস্কন্ধসমূহকে পৃথক করিয়া দেওয়া হয়। আত্মা হইতে কর্মপুদগলের আত্যন্তিক বিয়ােগ হইলে আত্মার স্বাভাবিক গুণ ও শক্তির পূর্ণ বিকাশ হয়, এবং জন্মজরামরণ হইতে চিরতরে নিবৃত্তি হয়। ইহাই মুক্তাবস্থা, সিদ্ধাবস্থা বা নির্বাণ। কিন্তু একটিমাত্র মনুষ্যজন্মে কর্মের আত্যন্তিক ক্ষয় নাও হইতে পারে। সংযত, ত্যাগী সন্ন্যাসীর সদাচারময় জীবনে, শাস্ত্রানুযায়ী আচরণ, তপস্যা, ধ্যান প্রভৃতি দ্বারা কর্মক্ষয় করিতে করিতে ও কিছু কর্ম অবশিষ্ট থাকিয়া যায়, সে সময়ে আয়ুক্ষয়ে মৃত্যু হইলে সেই জীবের দেবলােকে মহর্কিক দেবরূপে জন্ম হয় ও দেবলােকসুলভ সুখভােগ করিয়া তথাকার অতি দীর্ঘায়ুক্ষয়ে পুনরায় মানবজন্ম গ্রহণ করিয়া অবশিষ্ট কর্মক্ষয় করিয়া মুক্তিলাভ করে অথবা আরও কয়েকবার জন্মগ্রহণ করিয়া মুক্ত হয়। এই স্থলে এই অবস্থাকে “অল্পরজ” শব্দের দ্বারা ব্যক্ত করা হইয়াছে। সচ্চরিত্রসম্পন্ন সাধু অল্প কর্ম অবশেষ থাকিতে মৃত্যু প্রাপ্ত হইলে দেবলােকে মহৰ্দ্ধিক ও মহাদ্যুতিশালী দেবতারূপে জন্মগ্রহণ করে।