________________
উত্তরাধ্যয়ন সুত্র
পূর্বজন্মে চণ্ডাল জাতির জন্য অপমানিত হইয়া ক্রোধবশে তপস্যার প্রভাবে চক্রবর্তী রাজা হইব, হস্তিনাপুরে এরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়া সম্ভূত অনশন পূর্বক প্রাণত্যাগ করতঃ নলিনীগুল্ম নামক স্বর্গের বিমানে দেবরূপে উৎপন্ন হয় এবং সেখানকার আয়ুভোগ করিয়া তথা হইতে চ্যুত হইয়৷ ব্রহ্মনামক রাজার স্ত্রী চুলনীর গর্ভ হইতে ব্রহ্মদত্ত নামক পুত্ররূপে উৎপন্ন হইল ॥১॥
20.
বহিষ্কৃত করিয়া দেয়। চিত্র এই অপমান শান্ত চিত্তে সহন করে, কিন্তু সম্ভূত সহাগুণ হারাইয়া অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়। সম্ভূত ক্রোধবশে সমস্ত নগরকে ভস্মসাৎ করিবার অভিপ্রায়ে যৌগিক শক্তিদ্বারা মুখ হইতে ধূম বহির্গত করিতে থাকে। তদানীন্তন হস্তিনাপুরের রাজা সনৎকুমার চক্রবর্তী এই বৃত্তান্ত অবগত হইয়া রাজকীয় বৈভবের সহিত মুনিকে শান্ত করিতে আগমন করিলেন । সম্ভূত রাজার অনুনয়ে শান্ত হইল না কিন্তু চিত্রের সান্ত্বনা বচনে শান্ত হয়। চক্রবর্তীর বিশাল বৈভব দেখিয়া সে মোহিত হয় এবং ‘যদি আমার তপস্যার প্রভাব থাকে তবে চক্রবর্তী রাজা হইব' এইরূপ প্রতিজ্ঞ। করিয়া অনশন পূর্বক দেহত্যাগ করে। চিত্রও ভ্রাতার সহিত অনশন করিয়া এক সঙ্গেই দেহত্যাগ করে ও সৌধর্ম নামক প্রথম দেবলোকে অবস্থিত নলিনীগুল্ম বিমানে উভয় ভ্রাতা দেবরূপে উৎপন্ন হয়। তথাকার দেব আয়ু ভোগ করিয়া চিত্র পুরিমতাল নগরে এক ধনবান্ বণিকের গৃহে ও সম্ভূত কাম্পিল্যপুরে ব্রহ্মরাজার পুত্র ব্রহ্মদত্ত রূপে জন্মগ্রহণ করে।
ব্রহ্মদত্ত বয়প্রাপ্ত হইয়া নানাপ্রকার অবস্থা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়া ক্রমে রাজ্যলাভ করিয়! চক্রবর্তী রাজা হয় । কোন সময়ে নৃত্যগীত শ্রবণ ও পুষ্পগুচ্ছ দেখিয়া জাতিস্মরণ জ্ঞান হয়, এবং পূর্বজন্মগুলি স্মৃতিপথে আসে। ভ্রাতার কথা স্মরণ করিয়া ভ্রাতার বিরহে অত্যন্ত দুঃখিত হয়, এবং ভ্রাতার সহিত মিলিত হইবার অভিপ্রায়ে একটা শ্লোকের প্রথম চরণ রচনা করে। যথা— আসী দাসা মিয়া হংসা চংডালা অমরা জহা !
এবং এইরূপ প্রচার করে যে যে ব্যক্তি ইহার দ্বিতীয় চরণ পুরণ করিতে পারিবে তাহাকে অর্ধ রাজ্য প্রদান করিব। রাজ্যের লোভে অনেক লোকেই এই প্রথম চরণটী মুখস্থ করিয়া লইল। এই দিকে চিত্রও বয়প্রাপ্ত হইয়া জাতিস্মরণ জ্ঞান লাভ করে এবং সংসার ত্যাগ করিয়া শ্রমণ দীক্ষা অঙ্গীকার করে। বিচরণ করিতে করিতে ক্রমে কাম্পিল্যপুরে সমাগত হইয়া এক উদ্যানে ধ্যান মগ্ন হইয়া থাকে। সেখানে উদ্যানপালকের মুখে শ্লোকের প্রথম চরণটি শ্রবণ করিয়। চিত্র সমস্ত বুঝিতে পারে এবং নিম্নমত দ্বিতীয় চরণটী রচনা করিয়া উদ্যানপালককে বলিয়া
দেয় ।
ইমা ণো ছঠিয়া জাঈ, অগ্নমন্ত্রেণ জা বিণা ৷
উদ্যানপালক দ্বিতীয় চরণটাও মুখস্থ করিয়া ফেলিল এবং অর্ধরাজ্যপ্রাপ্তির লোভে হৃষ্টমনে রাজার নিকট উপস্থিত হইয়া দ্বিতীর চরণটীর আবৃত্তি করিল। রাজা ইহা শুনিয়াই মুর্ছিত হইয়া পড়ে এবং সভাসদ্গণ সেই উদ্যানপালককে ধৃত করিয়া আবদ্ধ করে। রাজা জ্ঞানলাভ করিয়া উদ্যানপালকের নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত হয় এবং অত্যন্ত সম্মানের সহিত সেই মুনিকে প্রাসাদে আনয়ন করে। উভয়ের মধ্যে যে বার্তালাপ হয় তাহা সূত্রেই বর্ণিত আছে।