________________
১৪৬
উত্তরাধ্যয়ন সূত্র
শরীরসম্পন্ন জীব রূপে যে জন্মগ্রহণ করে সে পৃথ্বীকায়াতিগত) ( হইলে ) উকোসং (উৎকৃষ্ট রূপে) সংখাঈয়ং ( সংখ্যাতীত = অসংখ্য, অসংখ্য উৎসর্পিণী ও অবসর্পিণী পরিমিত) কালং ( কাল ) সংবসে ( অবস্থান করে )। (ইহা জানিয়া) হে গৌতম.. ইত্যাদি ॥৫|| গতঃ প্রাপ্তঃ অতিগতঃ” টীকা ৩। পৃথীকায়ের ব্যাখ্যার জন্য ৫৮ সূত্রের ৩নং পাদটীকা দ্রষ্টব্য। | ৩। “উৎকর্ষত উৎকৃষ্টকালং” টীকা ১। উৎকৃষ্ট ও জঘন্তের ব্যাখ্যার জন্য ৫৩ সূত্রের ২নং পাদটীকা দ্রষ্টব্য।
৪। কালের পরিমাণকে তিন প্রকারে ব্যক্ত করা হয়। যথা সংখ্যাত অসংখ্যাত ও অনন্ত। যে সংখ্যা অঙ্কদ্বারা প্রকাশ করা যায় তাহাকে সংখ্যাত বা সংখ্যেয় কাল বলে। একক হইতে আরম্ভ করিয়া আটাশট অঙ্ক পর্যন্ত যে সংখ্যা হয় তাহা সংখ্যাতকালের অন্তর্গত। ইহার অতিরিক্ত হইলে তাহা অসংখ্যাত বা অসংখ্যেয় কাল বলিয়া গণনা করা হয়। অসংখ্যাত কাল সংখ্যাদ্বারা ব্যক্ত করা যায় না বলিয়া উপমার দ্বারা ব্যক্ত করা হয় যথা, পল্যোপম ও সাগরােপম। কিন্তু অসংখ্যাত কালও অসীম বা অনন্ত নহে। ইহাও নির্দিষ্ট সীমার অন্তর্গত, এই সীমার অতিরিক্ত হইলে যখন উপমার দ্বারাও ব্যক্ত করা সম্ভব হয় না তখন তাহাকে অনন্ত কহে। সংখ্যাত, অসংখ্যাত ও অনন্তের জঘন্য, মধ্যম ও উৎকৃষ্ট এই তিন প্রকার করিয়া বিভাগ আছে ; এই বিভাগগুলির মধ্যে কোন কোনটীর প্রবিভাগও আছে এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন মতও আছে, তাহা স্থানাঙ্গ, কর্মগ্রন্থাদি হইতে অবগত হওয়া যাইতে পারে। কালের ন্যায় অন্যান্য দ্রব্যের পরিমাণও এইভাবে সংখ্যাত ও অনন্ত বলিয়া গণনা করা হয়।
৫। জৈন শাস্ত্রে কালকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হইয়াছে যথা, উৎসর্পিণী ও অবসর্পিণী। অন্যান্য শাস্ত্রে যেমন সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি নামক চারি যুগ ধরা হয় তদ্রুপ জৈন শাস্ত্রে প্রত্যেক অবসর্পিণী ও উৎসর্পিণীকে ছয় ভাগে বা যুগে বিভক্ত করা হয়। এই রূপ বিভাগের প্রত্যেককে আর বা আরা বলা হয়। একটি চক্রের যেমন অর অর্থাৎ পাখী (spoke) থাকে তদ্রুপ এক একটি অর বা আর কালরূপ চক্রের পাখীর ন্যায়। অবসপিণী কালে এই ছয়টী বিভাগের নাম যথাক্রমে ১। সুখং সুখং অর্থাৎ একান্ত সুখময়, ২। সুখং—অর্থাৎ একান্ত সুখের চেয়ে কিছু কম কিন্তু দুঃখশূন্য ৩। সুখংদুঃখং—অর্থাৎ যাহাতে সুখের পরিমাণ বেশী ও দুঃখের পরিমাণ কম । দুঃখংসুখং—অর্থাৎ যাহাতে দুঃখের পরিমাণ বেশী ও সুখের পরিমাণ কম ৫। দুঃখং—অর্থাৎ দুঃখপূর্ণ এবং সুখের অভাবযুক্ত ৬। দুঃখং দুঃখং—অর্থাৎ একান্ত দুঃখময়। উৎসর্পিণী কালে এই নামগুলি বিপরীত দিক হইতে আরম্ভ হইবে অর্থাৎ প্রথমে দুঃখং দুঃখং হইয়া সর্বশেষে সুখং সুখং হইবে। অবসর্পি কালে আয়ু, বল, সুখ, শরীরের পরিমাণ ক্রমশঃ হ্রাস প্রাপ্ত হইতে থাকিবে এবং উৎসর্পিণী কালে তৎসমস্ত ক্রমশঃ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতে থাকিবে। অবসর্পিণীর পর উৎসর্পিণীও উৎসর্দিনীর পর অবসর্পিণী এই ভাবে অনাদি কাল হইতে কালচক্র চলিয়া আসিতেছে। বর্তমান সময়ে অবসপিণীর পঞ্চম অর্থাৎ দুঃখ আরা চলিতেছে।