Book Title: Shraman Sanskrutik Kavita
Author(s): Ganesh Lalwani
Publisher: Jain Bhawan Publication
Catalog link: https://jainqq.org/explore/004066/1

JAIN EDUCATION INTERNATIONAL FOR PRIVATE AND PERSONAL USE ONLY
Page #1 -------------------------------------------------------------------------- ________________ -10) শ্রমণ সংস্কৃতির কবিতা ວ່າ গণেশ লালওয়ানী Kio ° { va * m H For Personal & Private Use Only Page #2 -------------------------------------------------------------------------- ________________ শ্ৰমণ সংস্কৃতির কবিতা গণেশ লালওয়ানী জৈন ভবন : কলিকাতা For Personal & Private Use Only Page #3 -------------------------------------------------------------------------- ________________ For Personal & Private Use Only Page #4 -------------------------------------------------------------------------- ________________ শ্ৰমণসংস্কৃতির কবিতা গনেশ লালওয়ানী For Personal & Private Use Only Page #5 -------------------------------------------------------------------------- ________________ जैन भवन শ্ৰমণ সংস্কৃতির কবিতা প্রথম প্রকাশ : বৈশাখ, ১৩৮৩ প্রকাশক : শ্ৰকান্তিলাল মাল জৈন ভবন : পি-২৫ কলাকার স্ট্রীট কলিকাতা-৭ মুদ্ৰক : শ্ৰীঅজিতমােহন গুপ্ত ভারত ফোটোটাইপ স্টুডিও ৭২/১, কলেজ স্ট্রীট, কলিকাতা-১২ প্রচ্ছদ চিত্ৰণ : বিভূতি সেনগুপ্ত পরিবেশক : অভিজিৎ প্রকাশনী ৭২/১, কলেজ স্ট্রীট, কলিকাতা-১২ • দাম : তিন টাকা For Personal & Private Use Only Page #6 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সমস্ত সংসারকে আলােক প্রদানকারী নির্মল সূর্য উদিত হয়েছে সেই সূর্য সমস্ত প্রাণীকে আলােকিত করবে। For Personal & Private Use Only Page #7 -------------------------------------------------------------------------- ________________ Winternitz প্রমুখ মনীষীরা জৈন আগম সাহিত্যকে ‘dry as dust' বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। যেখানে শ্ৰমণ জীবনের দৈনন্দিন আচার আচরণের কথা বলা হয়েছে সেখানে খানিকটা নিরসতা আসা স্বাভাবিক কিন্তু তাই দিয়ে সমগ্র জৈন আগম সাহিত্যের বিচার করা যাবে না। অলঙ্কার উপমাদি ছাড়াও বিষয়ের উপস্থাপন, বাস্তবানুগ বর্ণন ও কথােপকথনের রীতির প্রয়ােগ সেই সাহিত্যে এমন এক অভিনবত্ব এনে দিয়েছে যা সহৃদয় পাঠকের মনকে নাড়া না দিয়ে পারে না। ‘শ্ৰমণ সংস্কৃতির কবিতা’র এইটাই সংক্ষিপ্ত ভূমিকা। ভগবান মহাবীরের ২৫০০তম নির্বাণােৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত For Personal & Private Use Only Page #8 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সুচীপত্র দুই জীবন : দুই আদর্শ ১ মনুষ্যজন্ম দুর্লভ ৬ জীবন অনিশ্চিত ১১ ব্ৰত সম্পন্নই শ্রেষ্ঠ যাজ্ঞিক ১৯। সংসার দুঃখময় ২৮ আত্মাই আত্মার রক্ষক ৩৫ আত্মজয় শ্রেষ্ঠ জয় ৪২ আমার জীবন আমার বাণী ৫৩ ব্রীর স্তব ৬৩ For Personal & Private Use Only Page #9 -------------------------------------------------------------------------- ________________ For Personal & Private Use Only Page #10 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দুই জীবন : দুই আদর্শ। মিথিলাধিপতি রাজা নমি অন্তঃপুরিকাদের সঙ্গে স্বর্গসুখ অনুভব করে আনন্দে কাল ব্যতীত করতেন। তারপর একসময় মােহ উপশান্ত হলে তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। নমি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করলে এককালে সমগ্র মিথিলায় করুণ কোলাহল উত্থিত হল। দেবরাজ ইন্দ্র তখন ব্রাহ্মণ বেশে নমির কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন : রাজর্ষি, আগুন ও বাতাসে আপনার প্রাসাদ যখন দগ্ধ হচ্ছে তখন অন্তঃপুরিকাদের আপনি কেন রক্ষা করছেন না ? নমি প্রত্যুত্তর দিলেন । ব্রাহ্মণ, For Personal & Private Use Only Page #11 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমার বলতে কিছু নেই, তাই আমি সুখে আছি, সুখে জীবন ধারণ করছি, মিথিলা দগ্ধ হলে আমার কিছুই দগ্ধ হয় না। স্ত্রী-পুত্র পরিত্যাগী শ্রমণের প্রিয় অপ্রিয় কিছু থাকে না। যার পরিগ্রহ নেই, যার গৃহ নেই, যে ভিক্ষান্নে জীবন ধারণ করে একত্ব ভাবনায় যার হৃদয় পরিপূর্ণ, সে সর্বদাই সুখে সংলীন থাকে। ইন্দ্র বললেন : রাজ, সুদৃঢ় অর্গল ও দ্বার যুক্ত প্রাকার, অস্ত্রশস্ত্র পরিপূর্ণ। প্রাকারােপরস্থ প্রকোষ্ঠ, পরিখা ও শতঘ্নী দিয়ে নগর পরিবেষ্টিত করে আপনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করুন। নমি বললেন : ব্রাহ্মণ, শ্রদ্ধাই নগর, ক্ষমা প্রাকার, তপ ও সংবর দ্বার ও অর্গল, For Personal & Private Use Only Page #12 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কায়িক, বাচিক ও মানসিক ত্রিবিধ গুপ্তি প্রাকারােপরস্থ প্রকোষ্ঠ, পরিখা ও শতন্নী, .. ধর্মকার্যে পরাক্রমই ধনু, ঈর্যা প্রভৃতি সমিতি জ্যা ধৈর্য মুষ্টি, সত্য স্নায়ু, তপ তীর ; তপ রূপ নারাচ দিয়ে। কর্মরূপ শত্রুবর্ম বিদারণ করে যিনি আত্মার ওপর জয় লাভ করেন, তিনি সংসার হতে মুক্ত হন। ইন্দ্র বললেন : ক্ষত্রিয়, বলপূর্বক লুণ্ঠনকারী দস্যু, তস্কর, চোর, এদের হাত হতে নগর রক্ষা করে আপনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করুন। নমি বললেন : ব্রাহ্মণ, সংসারে মানুষ নিরপরাধকেই সাধারণতঃ দণ্ড দেয়, যে দোষ করেনি। সেই ধৃত হয়, For Personal & Private Use Only Page #13 -------------------------------------------------------------------------- ________________ যে দোষ করেছে সে ধৃত হয় না, তাই আমি নিশ্চয় করে কিভাবে দস্যু, তস্কর ও চোরকে দণ্ড দিতে পারি ? ইন্দ্র বললেন : ক্ষত্রিয়, যারা আজো আপনার বশ্যতা স্বীকার করেনি তাদের যুদ্ধে পরাজিত করে আপনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করুন। নমি বললেন : ব্রাহ্মণ, দুর্জয় সংগ্রামে যে সহস্র সহস্র শত্রুর ওপর জয়লাভ করে তার চাইতে যে নিজের ওপর জয়লাভ করে। সেই শ্রেষ্ঠ। বাইরের শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে কি লাভ ? নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ; আত্মা দিয়ে আত্মাকে যিনি জয় করেন তিনি অনন্ত সুখ প্রাপ্ত হন। For Personal & Private Use Only Page #14 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ইন্দ্র তখন ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করে নিজের বেশ ধারণ করলেন। তারপর নমিকে সম্বৰ্দ্ধিত করে বললেন : রাজন, আপনার ক্রোধ নির্জিত হয়েছে, মান পরাভূত, মায়া নিরাকৃত, লোভ বশীভূত ৷ আশ্চর্য সুন্দর আপনার সরলতা, আশ্চর্য সুন্দর আপনার দয়ালুতা, আশ্চর্য সুন্দর আপনার ক্ষমা, আশ্চর্য সুন্দর আপনার নির্লোভতা । নমি প্রব্রজ্যা। উত্তরাধ্যয়ন For Personal & Private Use Only Page #15 -------------------------------------------------------------------------- ________________ মনুষ্যজন্ম দুর্লভ সৌরপুরে সমুদ্র বিজয় নামে . এক রাজা ছিলেন। তার অরিষ্টনেমি নামে এক পুত্র ছিল। অরিষ্টনেমির জন্য তিনি উগ্রসেন কন্যা রাজীমতীকে প্রার্থনা করেন। অরিষ্টনেমি যখন, বিবাহ-মণ্ডপে উপস্থিত হন তখন ভয়ার্ত পশুদের আর্তনাদ শুনতে পান। তাদের বিবাহে উপস্থিত রাজন্যবর্গের আহারের জন্য হত্যা করা হবে শুনে। অরিষ্টনেমি সেখানেই নির্বেদ প্রাপ্ত হন। ও বিবাহ-মণ্ডপ পরিত্যাগ করে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। অরিষ্টনেমি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছেন শুনে For Personal & Private Use Only Page #16 -------------------------------------------------------------------------- ________________ রাজীমতীও সংসার পরিত্যাগ করেন। একদিন সাধ্বী রাজীমতী ভগবান অরিষ্টনেমিকে বন্দনা করবার জন্য রৈবতক পর্বতের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে সহসা বৃষ্টি নামায় পথ-পার্শ্বস্থ একটি পর্বত গুহায় ' তিনি আশ্রয় নিলেন। বর্ষণ জন্য গুহা অন্ধকার থাকায় ও কাউকে পরিদৃষ্ট না হওয়ায় রাজীমতী আর্দ্র চীবর শরীর হতে খুলে নিয়ে মাটিতে মেলে দিলেন। রাজীমতীর অনাবৃত দেহ দেখে গুহার পেছন ভাগে অবস্থিত রথনেমির চিত্ত বিচলিত হল । তিনি আসন পরিত্যাগ করে রাজীমতীর দিকে এগিয়ে গেলেন ও বললেন : শুভে, আমি রথনেমি, For Personal & Private Use Only Page #17 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তুমি আমাকে ভজনা কর, আমি তােমাকে দুঃখ দেব না। এসাে, আমরা বিষয় সুখ-ভােগ করি, কারণ মনুষ্য জন্ম দুর্লভ ; বিষয় সুখ ভােগ করে পরে জিনমার্গ অবলম্বন করব। রথনেমিকে তার দিকে আসতে দেখে রাজীমতী দু’হাতে বক্ষদেশ আবৃত করে মাটিতে বসে পড়েছিলেন ; এখন সেই চীবর তুলে নিয়ে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে তাঁর সামনে উঠে দাড়ালেন ও বললেন : রথনেমি, তুমি যদি রূপে বৈশ্রবণ হও, লালিত্যে নলকুবের, এমন কি স্বর্গাধিপতি পুরন্দরও হও না কেন, তবু আমি তােমাকে কামনা করি না। হে অপযশঃকামী, তােমার মৃত্যুই শ্রেয়ঃ ; For Personal & Private Use Only Page #18 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কারণ একজন যা বমন করেছে। তুমি তাই গ্রহণ করতে উৎসুক। ধিক্ ! আমি ভােগ রাজকন্যা, তুমি অন্ধক বৃষ্ণিবংশ-জাত, কুলের কথা মনে রেখে আমাদের গন্ধন জাতীয় সর্পের মতাে হওয়া উচিত নয় । নারীদেহ দেখা মাত্রই তুমি যদি বিচলিত হও, তবে হঠ জাতীয় তৃণের মতাে কোনদিনই স্থিরতা লাভ করবে না। গােপ বা রক্ষক যেমন গবাদি পশু বা ধনের অধিকারী হয় না, তুমিও তেমনি কেবল বাহ্য সাধুবেশ ধারণ করে থাকবে, মােক্ষলাভের অধিকারী হবে না। হস্তী যেমন অঙ্কুশবিদ্ধ হয়ে স্থির হয়, রথনেমিও তেমনি For Personal & Private Use Only Page #19 -------------------------------------------------------------------------- ________________ Jo রাজীমতীর উপদেশবাক্য শুনে সংযমে অবস্থিত হলেন ও কায় মনঃ বাক্যে জাবজ্জীবন জিতেন্দ্রিয় ও দৃঢ়ব্রত হবার সঙ্কল্প নিয়ে সেই গুহা হতে নিষ্ক্রান্ত হলেন। রথনেমীয়। উত্তরাধ্যয়ন For Personal & Private Use Only Page #20 -------------------------------------------------------------------------- ________________ জীবন অনিশ্চিত ভগবান অরিষ্টনেমি গ্রামানুগ্রাম বিচরণ করতে করতে একবার ভারবীতে এসে উপস্থিত হলেন । ভারবীর রাজপুত্র গৌতম তাঁর আসবার খবর পেয়ে তাঁর প্রবচন শুনতে গেল । প্রবচন শুনে সে শ্রদ্ধান্বিত হল ও ভগবান অরিষ্টনেমিকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণা দিয়ে বলল : ভগবন্ , নিগ্রন্থ প্রবচন আমার শ্রেয়ঃ মনে হয়েছে, নিগ্রন্থ প্রবচনে আমার শ্রদ্ধা হয়েছে, নিগ্রন্থ প্রবচন আমি গ্রহণ করেছি । হে দেবানুপ্রিয়, পিতামাতার আদেশ নিয়ে এসে আমি শ্ৰমণ সঙ্ঘে প্রবেশ করব ; তাঁদের যদি অনুমতি লাভ করি তবে আপনি প্রতিবন্ধ করবেন না। এই বলে গৌতম পিতামাতার কাছে গেল ও তাঁদের প্রণাম ও প্রদক্ষিণা দিয়ে বলল : পিতা, আমি আজ For Personal & Private Use Only ১১ Page #21 -------------------------------------------------------------------------- ________________ নিগ্রন্থ প্রবচন শুনতে গিয়েছিলাম, নিগ্রন্থ প্রবচন আমার শ্রেয় মনে হয়েছে, নিগ্রন্থ প্রবচন আমার প্রেয় মনে হয়েছে, নিগ্রন্থ প্রবচন আমি গ্রহণ করেছি। সেকথা শুনে পিতা অন্ধকবৃষ্ণি বললেন : পুত্র, তুমি নিগ্রন্থ প্রবচন শ্রবণ করেছ, নিগ্রন্থ প্রবচনে তোমার শ্রদ্ধা হয়েছে, নিগ্রন্থ প্রবচন তুমি গ্রহণ করেছ, পুত্র, তুমি কৃতকৃত্য হয়েছ, তুমি ধন্য হয়েছ। সেকথা শুনে গৌতম বলল । পিতা, তবে আমায় আদেশ দিন কেশােৎপাটন করে আমি শ্ৰমণ সঙ্ঘে প্রবেশ করি। গৌতমের মুখে শ্ৰমণ সঙ্ঘে প্রবেশের কথা শুনে মা ধারিণী দুঃখিত হলেন। চোখের জলে বক্ষ ভাসিয়ে তিনি বললেন : পুত্র, তুমি আমাদের একমাত্র সন্তান, তােমার তিলমাত্র বিরহ আমাদের অসহ্য। তাই যতদিন আমরা বেঁচে আছি ততদিন সংসারে থাক, For Personal & Private Use Only Page #22 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সাংসারিক সুখ ভােগ কর, তারপর আমরা গত হলে সংসার পরিত্যাগ করে যথাসুখ শ্ৰমণ দীক্ষা গ্রহণ কোরাে। সেকথা শুনে গৌতম বলল ঃ •, তুমি যা বলছ তা সেইরূপই, কিন্তু কেউ কী বলতে পারে কার মৃত্যু আগে হবে, কার পরে ? জীবন যখন অনিশ্চিত, যখন কিছুরি কোনাে স্থিরতা নেই, তখন অযথা সময় নষ্ট করা উচিত নয়। তুমি আদেশ দাও, আমি কেশােৎপাটন করে শ্ৰমণ সঙ্ঘে প্রবেশ করি। সেকথা শুনে ধারিণী বললেন, পুত্র, তােমার ঘরে উদ্ভিন্ন-যৌবনা সুন্দরী স্ত্রীরা রয়েছে, তুমি তাদের কিভাবে পরিত্যাগ করবে ? তাদের সঙ্গে তাই পার্থিব সুখ উপভােগ কর, তারপর ভােগ হতে উপশান্ত হয়ে শ্ৰমণ দীক্ষা গ্রহণ কোবরা। গৌতম বলল : মা, তুমি যা বলছ তা সেইরূপই, For Personal & Private Use Only Page #23 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কিন্তু জীবন যখন অনিশ্চিত, পার্থিব সুখ যখন অশুচি ও অনিয়ত, তখন অযথা সময় নষ্ট করা উচিত নয়। তাছাড়া কেউ কী বলতে পারে, কার মৃত্যু আগে হবে, কার পরে ? তাই আদেশ দাও কেশােৎপাটন করে শ্ৰমণ সঙ্ঘে প্রবেশ করি। এর প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে ধারিণীর চোখের জলে কণ্ঠ অবরুদ্ধ হল। তাই দেখে অন্ধকবৃষ্ণি বললেন : পুত্র, তােমার পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, উৰ্দ্ধতন সপ্তপুরুষ, যে ধন রত্ন ও ঐশ্বর্য সংগ্রহ করেছেন, সেই ঐশ্বর্য তুমি ভােগ কর। সেই ভােগ হতে উপশান্ত হয়ে । তারপর শ্ৰমণ দীক্ষা গ্রহণ করাে। গৌতম বললঃ পিতা আপনি যা বলছেন তা সেইরূপই, কিন্তু ঐশ্বর্য অস্থির, এই আছে এই নেই। ঐশ্বর্য তস্কর অপহরণ করতে পারে, অগ্নি দগ্ধ করতে পারে, স্বজনগণ তা হতে আমায় বঞ্চিত করতে পারে, For Personal & Private Use Only Page #24 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তাছাড়া যা একদিন পরিত্যাগ করে যেতে হবে তা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। পিতা, তাই আদেশ দিন আমি কেশােৎপাটন করে শ্ৰমণ সঙ্ঘে প্রবেশ করি। যখন অনুকূল উপসর্গে গৌতমকে নিবৃত্ত করা গেল না, তখন অন্ধকবৃষ্ণি শ্ৰমণ-জীবনের কঠোরতার কথা বলে তাকে নিবৃত্ত করতে চাইলেন। বললেন ঃ পুত্র, নিগ্রন্থ প্রবচন সত্য, নিগ্রন্থ প্রবচন শ্রেয়, নিগ্রন্থ প্রবচন গ্রহণীয়, কিন্তু তার আচরণ ক্ষুরের ধারার মতাে নিশিত। পুত্র, তুমি সুখে লালিত, সুখে পালিত, দুঃখ কি—তুমি তা কখনাে জানােনি। শ্ৰমণকে শীত-গ্রীষ্ম, ক্ষুধা-তৃষ্ণা সমভাবে সহ্য করতে হয়, For Personal & Private Use Only Page #25 -------------------------------------------------------------------------- ________________ -তুমি তা সহ্য করতে পারবে না।' তাই বলি, তুমি এখন বিষয় সুখ ভােগ কর, তারপর বিষয় সুখ হতে উপশান্ত হয়ে শ্ৰমণ দীক্ষা গ্রহণ করাে। গৌতম বললঃ পিতা, আপনি যা বলছেন তা সেইরূপই, নিগ্রন্থ ধর্ম পালন ক্ষুরের ধারার মতাে নিশিত; . কিন্তু তা দুর্বলের জন্য, বিষয়ে যে লােলুপ, তৃষ্ণায় যে দত্ত-চিত্ত, কিন্তু যে বিগত-তৃষ্ণ ও শ্রদ্ধাশীল তার পক্ষে কিছুই কষ্টকর নয়। গৌতমকে যখন প্রতিকূল উপসর্গেও নিবৃত্ত করা গেল না। তখন অন্ধকবৃষ্ণি বললেন : পুত্র, তােমাকে নিয়ে আমাদের অনেক সাধ ছিল, তাই অন্ততঃ একদিনের জন্যও তােমাকে রাজপদে অভিষিক্ত দেখতে চাই। গৌতম সেকথা শুনে অস্বীকার করলে পিতামাতার মনে আঘাত দেওয়া হবে ভেবে নিরুত্তর রইল। For Personal & Private Use Only Page #26 -------------------------------------------------------------------------- ________________ অন্ধকবৃষ্ণি তখন গৌতমের অভিষেকের আয়ােজন করে গৌতমকে রাজপদে অভিষিক্ত করলেন। তারপর গৌতমের সামনে দাড়িয়ে বললেন : পুত্র, তােমাকে আমাদের যা দেয় ছিল তা সমস্তই দিয়েছি ; তােমাকে আর আমরা কি দিতে পারি ? গৌতম বলল ঃ পিতা, আমায় রাজোহরণ ও ভিক্ষাপাত্র দিন আর আমার কিছুই চাই না। অন্ধকবৃষ্ণি তখন গৌতমকে রজোহরণ ও ভিক্ষাপাত্র দান করলেন। পরদিন সকালে গৌতম অরিষ্টনেমির কাছে গিয়ে উপস্থিত হল। অন্ধকবৃষ্ণি গৌতমকে ভগবানের হাতে তুলে দিয়ে বললেন : ভগব, পঙ্ক হতে জাত হয়ে কমল যেমন পঙ্ক হতে অস্পৃষ্ট থাকে। আমাদের একমাত্র পুত্র গৌতমও তেমনি ১৭ For Personal & Private Use Only Page #27 -------------------------------------------------------------------------- ________________ St সংসার মালিন্যে জাত ও বৰ্দ্ধিত হয়েও সংসার মালিন্যে তেমনি অস্পৃষ্ট । হে দেবানুপ্রিয়, সে সংসারের অসারতা অনুভব করে সংসারাশ্রম পরিত্যাগ করে শ্রমণ সঙ্ঘে প্রবেশ করতে চায়, আপনি তাকে গ্রহণ করুন। গৌতম এভাবে ভগবান অরিষ্টনেমির কাছে প্রব্রজিত হল ও কঠোর তপশ্চর্যা ও কৃচ্ছ সাধনায় সেই জীবনেই মুক্তি লাভ করল । প্রথম বর্গ। অস্তক্বদ্দশা For Personal & Private Use Only Page #28 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ব্ৰতসম্পন্নই শ্রেষ্ঠ যাজ্ঞিক হরিকেশবল নামে, চণ্ডাল কুলােৎপন্ন - জ্ঞান, দর্শন ও চারিত্র সম্পন্ন এক শ্ৰমণ ছিলেন। একবার একমাস উপবাসের পর ভিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি ব্রাহ্মণদের যজ্ঞশালায় গিয়ে উপস্থিত হন। তপস্যায় পরিশুষ্ক শরীর ও জীর্ণ মলিন বস্ত্ৰ-পরিহিত কদাকার হরিকেশবলকে দেখে ব্রাহ্মণেরা একসঙ্গে বলে উঠলেন ? ওরে কুৎসীৎ, তুই কে ? কেন এখানে এসেছিস ? যা, দূর হ।। হরিকেশবকে লাঞ্ছিত হতে দেখে তিন্দুক বৃক্ষবাসী যক্ষ তার শরীরে প্রবেশ করল ও ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ করে বলল । ব্রাহ্মণগণ, আমি শ্রমণ, পঞ্চ মহাব্রতধারী, For Personal & Private Use Only Page #29 -------------------------------------------------------------------------- ________________ পরিগ্রহহীন ও রন্ধন হতে বিরত। ভিক্ষার সময় হওয়ায় আপনাদের এখানে ভিক্ষান্ন গ্রহণ করতে এসেছি। আপনারা প্রভূত অন্ন বিতরণ করছেন ; সকলকে বিতরণের পর। যা অবশিষ্ট থাকে। তা হতে সামান্য আমাকে দেবেন। ব্রাহ্মণেরা বললেন : মূখ, এখানে যে অন্ন রয়েছে। তা ব্রাহ্মণদের জন্য। যা, দূর হ। হরিকেশের মধ্যে প্রবিষ্ট যক্ষ তখন বলল কৃষকেরা ফসল পাবার জন্য উচু নীচু সমস্ত রকম জমিতেই বীজ বপন করে, আপনারাও তেমনি আমাকে সৎপাত্র বিবেচনা করে শ্রদ্ধার সঙ্গে সামান্য অন্ন দান করুন। ব্রাহ্মণেরা বললেন : ওরে মূখ, কে সুপাত্র, কে কুপাত্র, For Personal & Private Use Only Page #30 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তা আমরা জানি। জাতি ও বিদ্যাসম্পন্ন ব্রাহ্মণই সৎপাত্র। যক্ষ বলল : ব্রাহ্মণগণ, যে ক্রোধ, মান, মায়া ও লােভের অধীন, জীব-হিংসা পরায়ণ ও পরিগ্রহধারী, সে জাতিতে ব্রাহ্মণ ও বিদ্যাসম্পন্ন হলেও সৎপাত্র নয়। সেকথা শুনে ব্রাহ্মণ শিষ্যেরা ক্রুদ্ধ হল ও হরিকেশবলকে সম্বােধন করে বলল । ওরে পাজি নিগ্রন্থ, আমাদের এই অন্ন যদি পচে নষ্টও হয়ে যায় তবু তার একটা কণাও তােকে দেব না। সেকথা শুনে যক্ষ বলল হে ব্রাহ্মণ শিষ্যেরা, তােমরা যদি অভুক্ত আমাকে অন্নদান না কর, তবে কী করে পুণ্যার্জন করবে ? সেকথা শুনে প্রধান ঋত্বিক সােমদেব For Personal & Private Use Only Page #31 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ক্রুদ্ধ হয়ে ছাত্রদের বললেন : এই পাজি শ্ৰমণটা এমনিতে যাবে না, একে প্রহার করে . গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দাও। ব্রাহ্মণ শিষ্যেরা তখন হরিকেশবলকে কিল, ঘুষি, লাথি ও গুড় দিয়ে প্রহার করতে লাগল। প্রধান ঋত্বিক সােমদেবের পত্নী ভদ্রা হরিকেশবলকে প্রহৃত হতে দেখে ঘর হতে বেরিয়ে এলেন ও শিষ্যদের সম্বােধন করে বললেন : এ তােমরা কি করছ ? ইনি উগ্রতপা, জিতেন্দ্রিয় ও সংযত, ব্রহ্মচারী ও মহাত্মা। ইনি ইচ্ছা করলে। তপস্তেজে এখুনি তােমাদের সকলকে ভস্ম করে দিতে পারেন। আমার পিতা কোশলাধিপতি যক্ষ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমাকে প্রথমে এরই হাতে সমর্পণ করতে গিয়েছিলেন For Personal & Private Use Only Page #32 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কিন্তু ইনি আমাকে গ্রহণ করেন নি। তাই আমি একে জানি, ইনি অপমানের অযােগ্য ও পূজনীয়। . ওদিকে যক্ষও ক্রুদ্ধ হয়ে ততক্ষণে ব্রাহ্মণ শিষ্যদের অদৃশ্য হতে। আক্রমণ করল। শিষ্যরা তখন রক্ত বমন করতে করতে সেখানে মূৰ্ছিত হয়ে পড়তে লাগল। তাই দেখে ভদ্র। আবার বললেন : তােমরা উগ্রতপস্বী, ঘাের ব্রতধারী, হরিকেশবলকে অপমান করেছ ; পতঙ্গেরা যেমন অগ্নিকে আক্রমণ করতে গিয়ে দগ্ধ ও বিনষ্ট হয়, তােমরাও তেমনি যক্ষ কর্তৃক হত ও বিনষ্ট হবে। তাই জীবনের যদি আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে এর শরণ নাও। For Personal & Private Use Only Page #33 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সােমদেব তখন ভার্যা ভদ্রার সঙ্গে হরিকেশবলকে প্রসন্ন করবার জন্য বললেন : হে পূজ্য, : আপনি আমাদের কৃত, অপমান ও প্রহার ক্ষমা করুন। মুনিরা ক্ষমা পরায়ণ হােন, কোপ পরায়ণ হন না। সেকথা শুনে। হরিকেশবল বললেন : ব্রাহ্মণগণ, আমার মনে আগেও কোনাে দ্বেষ ছিলনা, এখনাে কোনাে দ্বেষ নেই। আমার প্রতি সেবা পরায়ণ। যক্ষই শিষ্যদের প্রহার করেছে। সােমদেব তখন বললেন : হে মহাভাগ, আমরা সকলেই আপনার শরণাগত, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আমাদের এখানে শালি ধান্যের অন্ন প্রস্তুত রয়েছে, সেই অন্ন গ্রহণ করুন। ২৪ For Personal & Private Use Only Page #34 -------------------------------------------------------------------------- ________________ হরিকেশবল তখন সােমদেব প্রদত্ত অন্ন গ্রহণ করলেন। মুনি অন্ন গ্রহণ করলে দিব্য গন্ধ প্রবাহিত হল, দিক সকল প্রশান্ত হল। ব্রাহ্মণেরা তখন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল । আশ্চর্য এর তপস্যা, এর কাছে জাতি মাহাত্ম্য কিছুই নয়। হরিকেশবল তখন তঁাদের বললেন : ব্রাহ্মণগণ, আপনারা কেন যজ্ঞ করে জল দিয়ে বাহ্য শুদ্ধি প্রার্থনা করেন ? স্নানের দ্বারা শুদ্ধি হয় না। আচমন ও কুশ, যুপ, তৃণ, কাষ্ঠ ও অগ্নি ব্যবহার করে। আপনারা আরাে জীবহিংসা জনিত পাপ সঞ্চয় করেন। ব্রাহ্মণেরা তখন বললেন : হে শ্ৰমণ, For Personal & Private Use Only Page #35 -------------------------------------------------------------------------- ________________ . আমরা কিভাবে তবে আচমন করব ? যজ্ঞ করব ? যজ্ঞ করে পাপকর্ম বিনষ্ট করব? হরিকেশবল বললেন : ব্রাহ্মণগণ, জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি পঞ্চ মহাব্ৰত ধারণ ও ক্রোধ, মান, মায়া ও লােভ পরিত্যাগ করে ধর্মাচরণে প্রবৃত্ত হন। যিনি সংবর সাধনায় পাপকর্ম হতে নিবৃত্ত ও জীবনে আকাক্ষাহীন, যার শরীর সংযমের জন্য উৎসর্গীকৃত যিনি নির্মল ব্ৰত-সম্পন্ন ও দেহ শুশ্রুষা হতে বিরত, তিনি কর্মশত্রু বিনষ্ট করে শ্রেষ্ঠ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। ব্রাহ্মণেরা তখন বললেন : হে ভিক্ষু, আপনার অগ্নি কী? অগ্নিকুণ্ড কী ? দর্বি কী ? অগ্নি প্রজ্বালন করবার করীষ কী ? যজ্ঞ কাষ্ঠ কী ? শান্তি মন্ত্র কী? আপনি কি প্রকার হােমের দ্বারা অগ্নিতে হবন করেন ? For Personal & Private Use Only Page #36 -------------------------------------------------------------------------- ________________ হরিকেশবল বললেন : আমাদের তপস্যাই অগ্নি, জীব অগ্নিকুণ্ড, মন, বচন ও কায়ার যোগ দর্বি, শরীর করীষ, কর্ম কাষ্ঠ ও সংযমাচরণই শান্তি মন্ত্র। এরূপ শ্রেষ্ঠ হােমের দ্বারা। আমরা হবন করি। ব্রাহ্মণেরা তখন বললেন : হে মহাভাগ, আপনার হ্রদ কী ? শান্তি তীর্থ কী ? কোথায় স্নান করে কর্মমল পরিহার করেন ? হরিকেশবল বললেন : ধর্মই আমাদের হ্রদ, ব্রহ্মচর্য নির্মল শান্তি তীর্থ ; সেখানে স্নান করে। রাগ-দ্বেষ রূপ উষ্ণতা পরিহার করি। ও কৃর্মমল ধৌত করে বিমল ও বিশুদ্ধ হই। মহর্ষিরা এই স্নানকেই শ্রেষ্ঠ স্নান বলেছেন। হরিকেশীয়। উত্তরাধ্যয়ন For Personal & Private Use Only Page #37 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ২৮ সংসার দুখঃময় ভোগে অনাসক্ত ও সংযমে প্রীতিবান হয়ে মৃগাপুত্ৰ পিতামাতার নিকটে গিয়ে বলল : মা, আমি সংসারে বিগত-তৃষ্ণ হয়েছি, অনুজ্ঞা দাও, প্রব্রজ্যা গ্রহণ করি । সাংসারিক সুখ কিংপাক ফলের মতোই আপাত মধুর, কিন্তু পরিণামে দুঃখদায়ী । এই শরীর অনিত্য, অশুচি ও অপবিত্র পদার্থে উৎপন্ন, ক্ষণভঙ্গুর ও দুঃখ ও ক্লেশের আকর। যে শরীর একদিন অবশ্যই পরিত্যাগ করে যেতে হবে, সেই শরীরে আমার একটুও সুখ নেই ৷ For Personal & Private Use Only Page #38 -------------------------------------------------------------------------- ________________ রােগ, শােক ও জরা-মরণ গ্রস্ত মানুষের জীবন। আমায় একটুও আনন্দ দেয় না। জন্ম দুঃখ, জরা দুঃখ, রােগ দুঃখ, মৃত্যু দুঃখ, এই সংসারই দুঃখময় ; সংসারে জীবগণ। কেবলই দুঃখ প্রাপ্ত হয়। ভূমি, গৃহ, ধন, ঐশ্বর্য, পুত্র, কল, বন্ধু, বান্ধব, এমন কি নিজের দেহও একদিন বিবশ হয়ে যায়। পাথেয় না নিয়ে যে দীর্ঘপথে যাত্রা করে, ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাতর হয়ে। পথে সে যেমন কষ্ট পায় ; ধর্মাচরণ না করে, যে পরলােকে যাত্রা করে, পথে আধি ও ব্যাধিতে পীড়িত হয়ে সেও তেমনি কষ্ট পায়। গৃহ প্রজ্বলিত হলে সগৃহস্থ। For Personal & Private Use Only Page #39 -------------------------------------------------------------------------- ________________ যেমন অসার বস্তু পরিত্যাগ করে। মূল্যবান দ্রব্য সংগ্রহ করে, আপনাদের অনুজ্ঞা নিয়ে । আমিও সেরূপ । জরা-মরণরূপ সংসারাগ্নি হতে আত্মাকে রক্ষা করতে ইচ্ছা করি। সেকথা শুনে। মৃগাপুত্রের মা বললেন ঃ পুত্র, শ্ৰমণ ধর্ম পালন করা অত্যন্ত কঠিন, শ্ৰমণদের অনেক গুণ থাকতে হয়। তুমি সুখভােগে অভ্যস্ত, তােমার শরীর কোমল ও কমনীয়, শ্ৰমণধর্ম পালন করতে তুমি তাই সমর্থ হবে না। শ্ৰমণ ধর্মের নিয়ম লােহার মতাে গুরুভার ও দুর্বহ। সমস্ত জীবন পালন করেও তা হতে নিষ্কৃতি নেই। আকাশ গঙ্গা পার হওয়া যেমন দুষ্কর, For Personal & Private Use Only Page #40 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ক্ষরস্রোতের প্রতিকূলে সঁতার কাটা যেমন দুষ্কর, বাহু দিয়ে সমুদ্র অতিক্রম যেমন দুষ্কর, সংযমরূপ সমুদ্র অতিক্রম করাও ঠিক সেই রকম দুষ্কর। সংযম বালুকা গ্রাসের মতাে নিরস ও আস্বাদহীন ; তপশ্চরণ অসিধারার ওপর বিচরণ।। সাপের মতাে একাগ্র দৃষ্টিতে সংযম পালন লােহার যব চর্বণ করা। তরুণ বয়সে শ্ৰমণ ধর্ম গ্রহণ প্রদীপ্ত অগ্নিশিখা পান। হীনবীর্য পুরুষের পক্ষে শ্ৰমণ ধর্ম গ্রহণ। কাপড়ের থলেতে বাতাস ভরা। মেরু পর্বতকে যেমন তুলাদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না, For Personal & Private Use Only Page #41 -------------------------------------------------------------------------- ________________ বিষয়ে অসন্দিগ্ধ ও সর্বদা শঙ্কাহীন হয়ে বিচরণও ঠিক সেইরূপ শক্ত। সে কথা শুনে মৃগাপুত্র বলল : মা, তুমি যা বলছ, তা ঠিক ; তবে বিগত-তৃষ্ণ ব্যক্তির কাছে কিছুই অসাধ্য নয়। আমি শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা অনন্তবার সহ্য করেছি, দুঃখ ও ভয়ে বার বার বিমূঢ় হয়েছি। জরা-মরণরূপ ভীষণ বনে জন্ম ও মৃত্যুর দুঃখ বারংবার ভােগ করেছি। পৃথিবীতে অগ্নি উষ্ণ, সেই অগ্নির উষ্ণতার চাইতেও অনন্তগুণ উষ্ণতা জনিত দুঃখ আমি নরকে সহ্য করেছি। তীক্ষ্ণধার ক্ষুর, ছুরি ও কঁচি দিয়ে আমাকে কর্তিত, বিদারিত ও ছিন্ন করা হয়েছে, আমার শরীর হতে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। ৩২ For Personal & Private Use Only Page #42 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি মৃগের ন্যায় বিবশ হয়ে পাশে ও জালে ধৃত, বদ্ধ ও রুদ্ধ হয়ে বহুবার ব্যাপাদিত হয়েছি। আমি পরবশ হয়ে মৎস্যের ন্যায় বঁড়শী ও জালের দ্বারা অনন্তবার ধৃত হয়েছি ; আমাকে চেরা, ফাড়া ও হত্যা করা হয়েছে। আমি পক্ষীর ন্যায়। অনন্তবার শেন পক্ষীর দ্বারা ধৃত হয়েছি ; জালে বদ্ধ ও আঠাতে সংলগ্ন হয়ে পরে বিনাশিত হয়েছি। আমাকে বৃক্ষের ন্যায় কুঠার ও পরশু দিয়ে খণ্ড খণ্ড করা হয়েছে, আমার ছাল । ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। আমি সমস্ত জীবনে দুঃখপূর্ণ বেদনাই অনুভব করেছি, মুহূর্তমাত্ৰ সুখানুভব করিনি। সেকথা শুনে। মৃগাপুত্রের পিতা বললেন : পুত্র, For Personal & Private Use Only Page #43 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তুমি স্বচ্ছন্দে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করাে, কিন্তু শ্রমণাচারে রােগের প্রতিকার না করা রূপ দুঃখ আছে। মৃগাপুত্র বলল : পিতা, আপনি যা বলছেন। তা সত্য, কিন্তু বনের পশু-পক্ষী রােগাক্রান্ত হলে, কে তার প্রতিকার করে ? আমিও অরণ্য মৃগের মতাে একাকী বিচরণ করব ; সংযম ও তপস্যা দ্বারা একাকী ধর্ম আচরণ করব। মৃগ যেমন অনিয়ত-স্থান-বিহারী হয়ে আহার্য ও পানীয় সংগ্রহ করে, আমিও সেরূপ অনিয়ত স্থান-বিহারী হয়ে মুক্তির দিকে অগ্রসর হব। সেকথা শুনে। মৃগাপুত্রের পিতামাতা বললেন : পুত্র, তােমার যাতে সুখ হয়, তাই করাে। মৃগাপুত্রীয়। উত্তরাধ্যয়ন। .৩৪ For Personal & Private Use Only Page #44 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আত্মই আত্মার রক্ষক প্রভূত ধনসম্পদের অধিকারী মগধরাজ শ্রেণিক: একদিন মণ্ডিকুক্ষি,উদ্যানে ভ্রমণ করতে এলেন। সেখানে তরুণ বয়স্ক এক নবীন শ্রমণকে তিনি বৃক্ষমূলে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। শ্রমণের রূপ ও লাবণ্যে আকৃষ্ট হয়ে তিনি তার দিকে এগিয়ে গেলেন ও অঞ্জলিবদ্ধ হাতে তঁাকে প্রণাম করে। তার অদূরে মাটিতে বসে তাকে বললেন ? আর্য, আপনি বয়সে নবীন, এই বয়সে সকলেই বিষয় সুখ ভােগ করে, কিন্তু আপনি তা না করে। কেন শ্রমণ ধর্ম গ্রহণ করেছেন— সেকথা জানতে ইচ্ছা করি। শ্ৰমণ বললেন : রাজন, আমার কেউ রক্ষক ছিল না, For Personal & Private Use Only Page #45 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি অনাথ ছিলাম, তাই শ্ৰমণ ধর্ম গ্রহণ করেছি। সেকথা শুনে শ্রেণিক • হেসে বললেন : আর্য, , আপনার মতাে রূপ-লাবণ্য সম্পন্ন ব্যক্তির রক্ষক ছিল না। সেকথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না, কিন্তু এখন আমি আপনার রক্ষক হব ; আপনি বন্ধু, বান্ধব, আত্মীয়, পরিজন পরিবৃত হয়ে বিষয় সুখ ভােগ করুন। শ্ৰমণ বললেন ঃ রাজ, আপনি নিজেই অনাথ, আপনি আমায় কিভাবে রক্ষা করবেন ? শ্রেণিক সেকথা শুনে। বিস্মিত হলেন। বললেন । পূজ্য, আমার বহু অশ্ব ও হস্তী রয়েছে, সৈন্য ও সামন্ত রয়েছে, পরিবার ও পরিজন রয়েছে, আমার আদেশ প্রতিপালিত হচ্ছে, প্রভুত্বও রয়েছে, For Personal & Private Use Only Page #46 -------------------------------------------------------------------------- ________________ এবং মানুষ যে সব সুখ কামনা করে, সে সমস্ত সুখ আমার করায়ত্ত ; এই অবস্থায় ৩ আমি কিভাবে অনুথ ? শ্ৰমণ বললেন : রাজ, আপনি অনাথ কথার অর্থ জানেন না, তাই ওকথা বলছেন। মানুষ কি ভাবে অনাথ হয় বা আমি কিভাবে অনাথ সেকথা বলছি, শুনুন : কৌশাম্বীতে প্রভূত বিত্তশালী আমার পিতা রয়েছেন, আমি তার একমাত্র পুত্র না হলেও প্রিয় পুত্র ছিলাম। রাজ, প্রথম বয়সে। আমি একবার ভীষণ দাহজ্বরে আক্রান্ত হই। আমার চোখে। ভীষণ যন্ত্রণা উপস্থিত হয়েছিল। আমার তখন মনে হচ্ছিল For Personal & Private Use Only Page #47 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কে যেন তীক্ষ্ণ অস্ত্র একসঙ্গে আমার চোখ, কান ও নাকের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। আমার কটিদেশ, হৃদয় ও মস্তিষ্ক কে যেন বজের মতাে প্রজ্বলিত করে দিয়েছে। আমি অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছিলাম। আমার পিতা। আমাকে তদস্থ দেখে মন্ত্র, ওষধি ও শস্ত্র প্রয়ােগে পারদর্শী। চিকিৎসকদের সমবেত করেছিলেন, তারাও তাদের সাধ্য মতাে। আমাকে সুস্থ করবার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু রাজ, তঁাদের কেউই আমার যন্ত্রণা লাঘব করতে সমর্থ হন নি। সেদিন আমি প্রথম অনুভব করেছিলাম— আমি অনাথ, আমার কেউ রক্ষক নেই। রাজ। আমার পিতা For Personal & Private Use Only Page #48 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমার জন্য সমস্ত সম্পত্তি দান করতে প্রস্তুত ছিলেন, আমার মা আমার শিয়রে বসে অনর্গল অশ্রু বিসর্জন করছিলেন, আমার ভাই, বােন আমার চারদিক ঘিরে সর্বদা দাড়িয়ে রয়েছিলেন, আমার স্ত্রী এক মুহুর্তও আমার শয্যা পরিত্যাগ করে যান নি, কিন্তু তাদের কেউই আমার বেদনা লাঘব করতে সমর্থ হন নি। রাজ, সেই আমার অনাথত্ব, মানুষের অনাথত্ব। তখন আমার মনে হয়েছিল যে বেদনা আমি ভােগ করছি, সেই বেদনা জীবনে জীবনে অনন্তবার। আমি ভােগ করেছি। রাজন, মনে মনে তখন স্থির করলাম ৩৯ For Personal & Private Use Only Page #49 -------------------------------------------------------------------------- ________________ এই বেদনা হতে যদি আমি মুক্ত হই, তবে আমি ক্ষমাবান ও জিতেন্দ্রিয় হব, হিংসা হতে নিবৃত্ত হব, শ্ৰমণ দীক্ষা গ্রহণ করব। তারপর সেই চিন্তা করতে করতে কখন যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা মনে নেই, কিন্তু তারপর দিন সকালে . যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখি আমার সেই জ্বর ও বৈদনা উপশান্ত হয়েছে। আমি তখন পিতামাতার আদেশ নিয়ে শ্ৰমণ দীক্ষা গ্রহণ করলাম ও আত্ম সংযম ও তপশ্চর্যার ভেতর দিয়ে আত্ম স্বাতন্ত্র্য লাভ করলাম— এ ভাবে আমি সনাথ হলাম। রাজ, আত্মাই বৈতরণী নদী, আত্মাই নরকস্থিত কণ্টকাকীর্ণ শাল্মলী বৃক্ষ, আত্মাই কামদুঘা ধেনু, For Personal & Private Use Only Page #50 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আত্মাই নন্দন বন,। আত্মাই সুখ দুঃখের কর্তা, বিকর্তাও ; , আত্মাই সদাচার ও দুরাচারে প্রবৃত্ত হয়ে শত্রু ও মিত্র হয়। শ্রেণিক তখন বললেন : মুনি, আপনার দৃষ্টান্তে মানুষ কিভাবে অনাথ ও সনাথ হয়। তা বুঝতে পেরেছি। হে মহাভাগ, আপনার মনুষ্য জীবন সফল হয়েছে, রূপ ও লাবণ্য সার্থক হয়েছে। বিষয় ভােগের জন্য। আপনাকে যে প্রলােভিত করেছি। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনি আমায় ক্ষমা করুন ও ধর্মে প্রতিষ্ঠিত করুন। মহানিগ্রস্থীয়। উত্তরাধ্যয়ন ৪১ For Personal & Private Use Only Page #51 -------------------------------------------------------------------------- ________________ 82 আত্মজয় শ্রেষ্ঠ জয় লোকপ্ৰদীপ ভগবান পার্শ্বের পরম্পরাগত শিষ্য কেশী তখন শ্রাবস্তীর তিন্দুকবনে অবস্থান করছিলেন। মহাবীর শিষ্য গৌতমও তখন শ্রাবস্তীতে বিচরণ করছিলেন। পার্শ্ব পরম্পরার শ্রমণ বংশকে জ্যেষ্ঠ মনে করে বিদ্যা-বিনয় সম্পন্ন গৌতম একদিন সশিষ্য তিন্দুক বনে গিয়ে উপস্থিত হলেন। কেশী গৌতমকে সমাগত দেখে তাঁকে সম্যক প্রকারে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করলেন ও বসবার জন্য জীবরহিত শালি, ব্রীহি, কোদ্রব ও রোলাক ধান্যের শুষ্ক তৃণ ও কুশ দিলেন । তারপর সকলে সুখে সমাসীন হলে কেশী বললেন : গৌতম, আপনাকে আমি কিছু প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করি ৷ For Personal & Private Use Only Page #52 -------------------------------------------------------------------------- ________________ গৌতম বললেন : কেশী, আপনি স্বচ্ছন্দে প্রশ্ন করুন, আমি সাধ্যমতো যথোচিত প্রত্যুত্তর দেব । কেশী বললেন : গৌতম, হাজার হাজার শত্রুর মধ্যে আপনি বাস করেন, তারাও আপনাকে সর্বদাই অভিভূত করবার চেষ্টা করে, আপনি তাদের কিভাবে নির্জিত করেছেন ? গৌতম বললেন : কেশী, একটী শত্রু জয় করলে পাঁচটা শত্রু জয় করা হয়, পাঁচটী শত্রু জয় করলে দশটী শত্ৰু, দশটী শত্রুকে জয় করে আমি সমস্ত শত্রুকেই জয় করেছি। কেশী বললেন : গৌতম, সেই শত্রু কে ও কারা ? গৌতম বললেন : কেশী, মনই একটী শত্রু, For Personal & Private Use Only 83 Page #53 -------------------------------------------------------------------------- ________________ মনকে জয় করলে মন ও ক্রোধ, মান, মায়া ও লােভ এই পাঁচ শত্রু জয় করা হয় এই পাঁচ শত্রু জয় করলে। এই পাঁচ ও পাঁচটি ইন্দ্রিয় এই দশ শত্রু জয় করা হয়, এই দশ শত্রু জয় করে আমি স্বচ্ছন্দ বিচরণ করি। কেশী বললেন : গৌতম, সংসারে যখন বেশীর ভাগ জীবই পাশবদ্ধ, আপনি তখন কিভাবে মুক্তপাশ ও বায়ুর মতাে অপ্রতিবদ্ধ ? গৌতম বললেন : কেশী, সভাবনাদি দিয়ে সেই পাশ আমি ছিন্ন করেছি, তাই আমি মুক্তপাশ। ও বায়ুর মতাে অপ্রতিবদ্ধ। কেশী বললেন : গৌতম, সেই পাশ কী ? । For Personal & Private Use Only Page #54 -------------------------------------------------------------------------- ________________ গৌতম বললেন : কেশী, তীব্র রাগ, দ্বেষ, মােহাদিই সেই পাশ। সেই পাশ , শাস্ত্রোপদিষ্ট পথে ছিন্ন করে আমি স্বচ্ছন্দ বিচরণ করি। কেশী বললেন : গৌতম, সমস্ত প্রাণীর হৃদয়ে একটী লতা মঞ্জরিত হয়। যার ফল বিষময়, আপনি সেই লতা কিভাবে উৎপাটিত করেছেন ? গৌতম বললেন : কেশী, সেই লতা সর্বতােভাবে ছিন্ন করে সমূলে আমি উৎপাটিত করেছি। তাই তার বিষময় ফল আমায় ভক্ষণ করতে হয় না। কেশী বললেন ঃ গৌতম, সেই লতা কী ? গৌতম বললেনঃ কেশী, ভীষণ ও ভীষণ ফলদায়িনী ৪৫ For Personal & Private Use Only Page #55 -------------------------------------------------------------------------- ________________ বিষয় ভােগের তৃষ্ণাই সেই লতা, সেই লতা শাস্ত্রোপদিষ্ট পথে উৎপাটিতকরে আমি স্বচ্ছন্দ বিচরণ করি। কেশী বললেন : গৌতম, ভীষণ প্রজ্বলিত অগ্নি দেহধারী জীবমাত্রকে দগ্ধ করে, আপনি সেই অগ্নি কীভাবে নির্বাপিত করেছেন ? গৌতম বললেন : কেশী, মহামেঘ প্রসূত উত্তম যে বারি, সেই বারি দিয়ে সেই অগ্নি আমি নির্বাপিত করেছি। সেই নির্বাপিত অগ্নি তাই আমাকে দগ্ধ করে না। কেশী বললেন : গৌতম, সেই অগ্নি কী ? গৌতম বললেন : কেশী, ক্রোধ, মান, মায়া ও লােভ রূপ কষায়ই সেই অগ্নি, ৪৬ For Personal & Private Use Only Page #56 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তীর্থঙ্করােপদিষ্ট শ্রুত, শীল ও তপস্যাই বারি, সেই বারি দিয়ে সেই অগ্নি নির্বাপিত করে আমি স্বচ্ছন্দ বিচরণ করি। কেশী বললেন : গৌতম, আপনি যে দুর্দমনীয় ভয়ঙ্কর দুষ্ট অশ্বের ওপর আরােহণ করে রয়েছেন। তা তীব্রবেগে ধাবিত হচ্ছে, সেই দুর্দমনীয় ভয়ঙ্কর দুষ্ট অশ্ব আপনাকে কেন উন্মার্গে নিয়ে যায় না? গৌতম বললেন : কেশী, সেই দুর্দমনীয় ভয়ঙ্কর দুষ্ট অশ্বকে তরূপ দৃঢ় বন্নায় আমি ধরে রয়েছি, তাই সে আমাকে উন্মার্গে নিয়ে যায় না। কেশী বললেন ঃ গৌতম, সেই দুর্দমনীয় ভয়ঙ্কর দুষ্ট অশ্ব কী ? গৌতম বললেন, কেশী, মনই সেই দুর্দমনীয় ৪৭ For Personal & Private Use Only Page #57 -------------------------------------------------------------------------- ________________ : ভয়ঙ্কর দুষ্ট অশ্ব। যা চতুর্দিকে ধাবিত হয়, ধর্ম শিক্ষায় সেই দুষ্ট অশ্বকে বশীভূত করে আমি স্বচ্ছন্দ বিচরণ করি। । কেশী বললেন : গৌতম, সংসারে অনেক কুমাৰ্গ আছে । যা অবলম্বন করে প্রাণীরা সন্মার্গ হতে চূত ও বিনষ্ট হয়, আপনি কেন সন্মার্গ হতে দ্রুত ও বিনষ্ট হন না ? গৌতম বললেন : কেশী যারা সন্মার্গ ও উন্মার্গে প্রবৃত্ত আমি তাদের সবাইকে জানি, তাই সন্মার্গ হতে চ্যুত হয়ে আমি উন্মার্গে পতিত হই না। কেশী বললেন : গৌতম, উন্মার্গই বা কী ? সন্মার্গ ই বা কী ? গৌতম বললেন : কেশী, অন্য তীর্থিকোপদিষ্ট পথই ৪৮ For Personal & Private Use Only Page #58 -------------------------------------------------------------------------- ________________ উন্মার্গ, তীর্থঙ্কবােপদিষ্ট পথই সন্মার্গ, সেই পথই উত্তম। কেশী বললেন ঃ গৌতম, মহাসমুদ্রে জলপ্রবাহে ভাসমান প্রাণীদের জন্য উত্তম গতি, আশ্রয় ও অবস্থান কী? গৌতম বললেন : কেশী, সেই মহাসমুদ্রে একটী দ্বীপ রয়েছে যেখানে কোনাে জল প্রবাহেরই গতি হয় না। কেশী বললেন : গৌতম, সেই দ্বীপ কী? গৌতম বললেন : কেশী, ধর্মই সেই দ্বীপ ; সংসার সমুদ্রে জরা-মরণ রূপ প্রবাহে ভাসমান জীবের জন্য ধর্মই একমাত্র উত্তম গতি, আশ্রয় ও অবস্থান। For Personal & Private Use Only Page #59 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কেশী বললেন : গৌতম, সমুদ্রে জল প্রবাহে তাড়িত হয়ে নৌকো ইতস্ততঃ ধাবিত হয়, সেই নৌকোয় আরােহণ করে আপনি কিভাবে পরপারে যেতে ইচ্ছা করেন ? গৌতম বললেন : কেশী, যে নৌকোয় জল প্রবেশ করে, সেই নৌকো পরপারে যেতে সমর্থ হয় না; যে নৌকো নিচ্ছিদ্র সেই নৌকোই পরপারে যেতে সমর্থ হয়। কেশী বললেনঃ গৌতম, সেই নৌকো কী? গৌতম বললেন : কেশী, এই শরীরই নৌকো, আত্মা নাবিক, সংসারই সমুদ্র, এই সমুদ্র মহর্ষিগণ অতিক্রম করেন। For Personal & Private Use Only Page #60 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কেশী বললেন : গৌতম, সংসারে অধিকাংশ জীবই গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত, কে তাদের আলোক প্রদান করবে ? গৌতম বললেন : কেশী, সমস্ত সংসারকে আলােক প্রদানকারী নির্মল সূর্য উদিত হয়েছে, সেই সূর্য সমস্ত প্রাণীকে আলােকিত করবে। কেশী বললেন : গৌতম, সেই সূর্য কে ? গৌতম বললেন : কেশী, বিগততৃষ্ণ সর্বজ্ঞ তীর্থঙ্করই সেই সূর্য, . সেই সূর্য উদিত হয়েছে, তিনিই সমস্ত প্রাণীকে আলােকিত করবেন। কেশী বললেন : গৌতম, শারীরিক ও মানসিক দুঃখপীড়িত জীবের জন্য । For Personal & Private Use Only Page #61 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ব্যাধিরহিত মঙ্গলময় ও উপদ্রবহীন স্থান কী? গৌতম বললেন : কেশী, লােকের ঊর্ধ্বভাগে দুরধিগম্য শাশ্বত এক স্থান রয়েছে যেখানে জরা, মৃত্যু, ব্যাধি ও বেদনা নেই। কেশী বললেন ঃ গৌতম, কী সেই স্থান ? গৌতম বললেন : কেশী, নির্বাণ, অব্যাবাধ, সিদ্ধি, লােকা, ক্ষেম ও শিব নামে যা অভিহিত হয়, এই সেই স্থান। সেই স্থান শাশ্বত, দুরধিগম্য, ও লােকাগ্র অবস্থিত ; সংসার-প্রবাহ বিনাশকারী মহর্ষিরা সেই শাশ্বত ললাকে গমন করে শােক প্রাপ্ত হন না। কেশীগৌতমীয়। উত্তরাধ্যয়ন For Personal & Private Use Only Page #62 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমার জীবন আমার বাণী ॥ ১॥ ভগবান মহাবীর হেমন্ত ঋতুতে সংসার পরিত্যাগ করে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলেন। প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে তিনি সেখান হতেই প্রস্থান করেছিলেন । সেই হেমন্ত ঋতুতে বস্ত্র দিয়ে শরীর আচ্ছাদন করবার কথা তিনি চিন্তা করেন নি । একখানা দেবদূষ্য বস্ত্ৰ স্কন্ধের ওপর রেখে তেরো মাস অবস্থান করেছিলেন, পরে সে বস্ত্র পরিত্যাগ করে সম্পূর্ণ নির্বস্ত্র হয়েছিলেন। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর চার মাসের বেশা কিছু সময় কীট-পতঙ্গ পোকা-মাকড় তাঁর শরীরে উঠত ; For Personal & Private Use Only অন্য Page #63 -------------------------------------------------------------------------- ________________ (8 তিনি তাদের নিবারিত না করে তাদের দংশন সহ্য করতেন। পথ চলবার সময় মনুষ্য-প্রমাণ পথের ওপর রথের ধুরার মতো দৃষ্টি রেখে পথ চলতেন । ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাঁকে দেখে ভয় পেত, একত্র হয়ে তাঁর দিকে ঢিল ছুঁ ড়ত, কেউ কেউ বা চীৎকার দিয়ে উঠত। যেখানে অনেক লোক একত্রিত হয় সেখানে থাকতে হলে আত্মগত ও সংযতেন্দ্রিয় হয়ে অধ্যাত্ম ধ্যানে লীন থাকতেন ৷ তিনি গৃহীদের সঙ্গে সম্পর্ক করতেন না, জিজ্ঞাসিত হলে নিরুত্তর থাকতেন, প্রণাম করলেও যেমন কিছু বলতেন না, প্রহার করলেও তেমনি বিক্ষুব্ধ হতেন না । তিনি গীত-বাদ্য-নাটকাদি, দ্বন্দ্বযুদ্ধ বা মল্লযুদ্ধ For Personal & Private Use Only Page #64 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দেখতেন না, পরস্পর মানুষ যেখানে কথা বলছে সেখানে উদাসীনের মতাে অবস্থান করতেন। • সুস্থ অবস্থাতেও উদর পূর্তির জন্য তিনি কখনাে আহার গ্রহণ করতেন না, আঘাত প্রাপ্ত হয়েও তিনি কখনাে চিকিৎসার ইচ্ছা করতেন না। শরীর নশ্বর ও অশুচি একথা জ্ঞাত হয়ে শরীর সংস্কার, স্নান বা দন্তধাবনাদি হতে বিরতু থাকতেন। কামভােগে বিরত, মিতভাষী ভগবান শীত ঋতুতে হিম শীতল ছায়ায় বসে ধ্যান করতেন, গ্রীষ্ম ঋতুতে উৎকুটাসনে সূর্যের দিকে মুখ করে অবস্থান করতেন। For Personal & Private Use Only Page #65 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ৫৬ তিনি রুক্ষ কোদ্রব চাল শুকনো বদরীচূর্ণ ও কুল্লায় আহার করতেন ৷ দীর্ঘ আটমাস তিনি এই তিনটী মাত্র দ্রব্য গ্রহণ করেছিলেন। কখনো একমাস, কখনো দুইমাস, কখনো ছয়মাস জলগ্রহণ না করে তিনি অবস্থান করতেন । কখনো পর্যুষিত অন্ন গ্রহণ করতেন ; কখনো দুই, তিন, চার বা পাঁচ দিন উপবাস করতেন। গ্রামে বা নগরে ভ্রমণ করে অন্যের জন্য প্রস্তুত খাদ্য অন্বেষণ করতেন, গ্রহণযোগ্য হলেই তিনি খাদ্য গ্রহণ করতেন অন্যথায় গ্রহণ করতেন না । ভিক্ষার জন্য যেখানে উপস্থিত হতেন সেখানে যদি ক্ষুধার্থ পারাবত বা পিপাসিত কাক উড়ে এসে তাঁর সামনে মাটীতে বসত, For Personal & Private Use Only Page #66 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তবে তিনি ভিক্ষা গ্রহণ না করেই সেখান হতে ফিরে যেতেন । যদি সেখানে ব্রাহ্মণ; শ্রমণ, ভিখিরী, অতিথি, চণ্ডাল, মার্জার বা কুকুর আগে হতে এসে উপস্থিত থাকত তবে যাতে তাদের আহার প্রাপ্তিতে বাধা না হয় সেজন্য সেখান হতে ভিক্ষা গ্রহণ না করেই তিনি ফিরে যেতেন । তিনি এভাবে ভিক্ষা গ্রহণ করতেন যাতে ক্ষুদ্র প্রাণীরও হিংসা না হয়। তিনি কখনো আর্দ্র, কখনো শুকনো, কখনো বা পর্যুষিত অন্ন গ্রহণ করতেন, কখনো পুরুনো চালের ভাত কুল্মাষ বা ছাতু গ্রহণ করতেন । তিনি যদি সেরূপ খাদ্য না পেতেন তবে কিছু গ্রহণ না করে সংযত ভাবে অবস্থান করতেন ॥৩॥ পরিত্যক্ত গৃহে, সভাগৃহে বা জলপত্রে, পণ্যশালায় বা কর্মকার গৃহে, For Personal & Private Use Only 57 Page #67 -------------------------------------------------------------------------- ________________ বিচালিতূপের মঞ্চের নীচে বা ধর্মশালায়, উদ্যানে, বৃক্ষমূলে বা শ্মশানে তিনি অবস্থান করতেন। এভাবে প্রায় দীর্ঘ তেরাে বছর তিনি অতিবাহিত করেছিলেন। সেই সময় দিবারাত্র। তিনি সংযমে নিরত থাকতেন, ও অপ্রমত্ত ভাবে সমাহিত চিত্তে অবস্থান করতেন। সংযম গ্রহণের পর। প্রমাদবশতঃ তিনি কখনাে নিদ্রিত হন নি, নিজেকে সর্বদাই জাগরিত রাখতেন, কখনাে অল্প নিদ্রিত হতেন কিন্তু ইচ্ছা পূর্বক কখনাে নিদ্রিত হতেন না। নিদ্রাকে প্রমাদ বৃদ্ধির কারণ মনে করে উঠে বসতেন, কখনাে বাইরে গিয়ে পদচালনা করতেন। সেই সব আশ্রয়স্থানে তাকে নানাবিধ বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে— কখনাে সর্প, কখনাে শকুনি, কখনো নিশাচর মানুষ। For Personal & Private Use Only Page #68 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তার ওপর অত্যাচার করেছে, শস্ত্রপাণি প্রহরীর তাকে প্রহার করেছে, কামাসক্ত পুরুষ বা নারী তাকে প্রলুব্ধ করবার চেষ্টা করেছে। তিনি সেই সব কষ্ট অনুকূল বা প্রতিকূল সমস্তই সহ্য করেছেন। একাকী ভ্রমণ করতে করতে রাত্রিকালে কোন এক স্থানে এসে অবস্থান করলে। লােকে তাকে নানাবিধ প্রশ্ন করত, প্রত্যুত্তর না দিলে ক্রুদ্ধ হত, প্রহার করতাে, কিন্তু তিনি প্রতিশােধ নেবার স্পৃহা না রেখে সমভাবে অবস্থান করতেন। ‘ঘরের মধ্যে কে ?'—এই প্রশ্ন করলে যদি তিনি ধ্যানে না থাকতেন। তবে অনর্থ নিবারণের জন্য ‘ভিক্ষু’ বলে প্রত্যুত্তর দিতেন, ধ্যানে থাকলে প্রত্যুত্তর না দিয়ে অবস্থান করতেন। For Personal & Private Use Only Page #69 -------------------------------------------------------------------------- ________________ 30 শীত ঋতুতে হিম শীতল বায়ু প্রবাহিত হলে অন্য-তীর্থিক সাধুরা যখন . অগ্নি প্রজ্বালিত করত, অধিক বস্ত্রের কামনা করত, এমনকি পরিগ্রহহীন শ্রমণেরাও যখন বায়ুহীন স্থানের অন্বেষণ করত, তখন তিনি উন্মুক্ত বা ঈষৎ আচ্ছাদিত স্থানে অবস্থান করে নিস্পৃহভাবে সেই শীতের তীক্ষ্ণতা সহ্য করতেন। 11 8 11 দুর্গম রাঢ়দেশের বজ্র ও সুক্ত ভূমিতে বিচরণকালে তাঁকে বহুবিধ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে, বালু ও কঙ্করময় ভূমিতে অবস্থান করতে হয়েছে। রাঢ়দেশের অধিবাসীরা রুক্ষ ও শুষ্ক ভোজী ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিল, তাই রাঢ় দেশে তাঁকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে ৷ সেখানে তিনি রুক্ষ, শুষ্ক ও অল্প পরিমিত For Personal & Private Use Only Page #70 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আহারই প্রাপ্ত হতেন। কুকুরেরা তার ওপর উৎপতিত হত দংশন করত। কুকুরের আক্রমণ হতে তাকে কেউ রক্ষা করত না, বরং চু চু শব্দ করে। আরাে লেলিয়ে দিত। সেখানে পরিব্ৰজনের সময় অন্য শ্রমণেরা দণ্ড বা নালিকা নিয়ে পথ চলতেন তা সত্বেও কুকুরেরা তাদের দংশন করত, শরীর হতে মাংস ছিড়ে নিত। শরীরের প্রতি মমত্ব পরিত্যাগ করে, প্রাণী হিংসা হতে বিরত হয়ে, গ্রামবাসীদের অত্যাচার ও পীড়ন সহ্য করে, সেই রাঢ় দেশে তিনি বহুবার প্ৰব্ৰজন করেছেন। রাঢ়দেশের গ্রামগুলি দূরে দূরে অবস্থিত ছিল, তাই রাত্রিতে অবস্থানের জন্য তিনি প্রায়ই গ্রাম পর্যন্ত পৌছতে পারতেন না, পৌছলেও গ্রামবাসীরা। গ্রামে তাকে প্রবেশ করতে দিত না, প্রহার করে গ্রাম হতে দূর করে দিত। For Personal & Private Use Only Page #71 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কখনাে ঢিল, কখনাে নরকপাল, কখনাে কলসীর কানা ছুড়ে মারত, কখনাে ঠেলে ফেলে দিত, কখনাে বা ওপরে তুলে নীচে গড়িয়ে দিত, বুকের ওপর বসে মাথার চুল ছিড়ে নিত, গায়ে মুখে ধূলাে বালি ছড়িয়ে দিত, শরীর হতে মাংস কেটে নিত, শরীরের প্রতি মমত্বহীন সেই সব অত্যাচার তিনি বিনম্রভাবে সহ্য করতেন। সংগ্রামের পুরােভাগে অবস্থিত হস্তীর ন্যায় সেসব অত্যাচার সহ্য করে। তিনি অবিচলিত ভাবে অবস্থান করতেন। উপধান শ্রুত। অচারাঙ্গ For Personal & Private Use Only Page #72 -------------------------------------------------------------------------- ________________ বীরস্তব তিনি ছিলেন খেদজ্ঞ, কুশল ও প্রত্যুৎপন্নমতি, অনন্ত জ্ঞান ও দর্শন সম্পন্ন, যশস্বী ও লােকনন্দন। তিনি ছিলেন লােকস্থিত সমস্ত জীবের জ্ঞাতা ও দ্রষ্টা, তমঃনাশী দীপশিখার মতাে নির্মল আত্মধর্মের প্রকাশক। তিনি ছিলেন ক্রাদি ও সর্বদর্শী, উত্তম চরিত্র সম্পন্ন ও ধৃতিমান, আত্মস্থিত, বিদ্বান ও মেধাবী, গ্রন্থিহীন, নির্ভয় ও নিরায়ু। তিনি ছিলেন সর্বজ্ঞ ও অনিয়তচারী, সংসার সমুদ্র পারকৃৎ ও ধীর, সূর্যের মতাে দ্যুতিমান ও তেজঃপুঞ্জ, অগ্নির মতাে তিমির-বিদার ঔজ্বল্য। তিনি ছিলেন জিন প্রবর্তিত অনুপম ধর্মের শ্রেষ্ঠ নেতা, For Personal & Private Use Only Page #73 -------------------------------------------------------------------------- ________________ মহান প্রভাবশালী ও শক্তিমান, সর্বােেক নিয়ন্তা ও অদ্বিতীয় বাসব। তিনি ছিলেন সাগরের মতো প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানে মহােদধির মতাে দুরতিক্রম্য, অনাবিল ও সর্বদোষ হীন, শুক্রের মতাে ঋদ্ধি সম্পন্ন ও তেজস্বী। তিনি ছিলেন অমিতবীর্য ও সাহসী, সুমেরু পর্বতের মতো স্থির ও নিরভিমান, সর্বগুণের আকর ও সদাচারী, স্বর্গের মতাে নয়নাভিরাম ও আনন্দমূল। তিনি ছিলেন পৃথিবীর মতাে সর্বংসহ ও সর্বাধার, ক্ষীণ কর্ম, অভিলাষহীন ও অপরিগ্রহী, বন্ধনহীন, মুক্ত ও অপ্রতিবদ্ধ, সর্বজীবে অভয়দানকারী ও অনন্তচক্ষু। পর্বতে যেমন সুমেরুপৰ্বত শ্রেষ্ঠ, বৃক্ষে শাল্মলী বৃক্ষ, বনে নন্দন বন, জ্ঞান ও চরিত্রে তেমনি ভগবান মহাবীর শ্রেষ্ঠ। For Personal & Private Use Only Page #74 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ধ্বনিতে যেমন মেঘমন্দ্র শ্রেষ্ঠ, নক্ষত্রে শশাঙ্ক সৌরভে চন্দন বাস, মুনিদের মধ্যে তেমনি ভগবান মহাবীর শ্রেষ্ঠ। হস্তীতে যেমন ঐরাবত শ্রেষ্ঠ, বনচরে সিংহ, জলে গঙ্গোদক, পক্ষীতে বেণুদেব গরুড়, নির্বাণবাদীদের মধ্যে তেমনি ভগবান মহাবীর শ্রেষ্ঠ। যােদ্ধায় যেমন বিশ্বসেন শ্রেষ্ঠ, ফুলে অরবিন্দ, ক্ষত্রিয়ে দান্তবাক্য, ঋষিদের মধ্যে তেমনি ভগবান মহাবীর শ্রেষ্ঠ। দেবতায় যেমন বৈমানিক দেবতা শ্রেষ্ঠ, .. সভায় সুধর্ম দেবসভা, ধর্মে মােক্ষধর্ম, জ্ঞানীদের মধ্যে তেমনি ভগবান মহাবীর শ্রেষ্ঠ। দানে যেমন অভয় দান শ্রেষ্ঠ, সত্যে অনবদ্য বাক্য, For Personal & Private Use Only Page #75 -------------------------------------------------------------------------- ________________ তপস্যায় ব্রহ্মচর্য, তেমনি লােকোত্তম। ভগবান মহাবীর শ্রেষ্ঠ। অনুপম ছিল তার ধর্ম, অনুপম ছিল তার ধ্যান, সেই ধ্যান। শঙ্খের চাইতেও শুক্ল, চন্দ্রিকার চাইতেও ধবল । তিনি উত্তম ধ্যানে। ক্ষয় করেছিলেন কর্মরজঃ, লাভ করেছিলেন পরমা সিদ্ধি, যার আদি আছে কিন্তু অন্ত নেই। বীরস্তুতি। সূত্ৰকৃতাঙ্গ For Personal & Private Use Only Page #76 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কয়েকটী পারিভাষিক শব্দ। উপসর্গ–বিঘ্ন বা বাধা। প্রলােভনাদিও শ্রমণ জীবনের বাধা। সেগুলি অনুকূল উপসর্গ। একত্ব ভাবনা—একাই এসেছি, একাই যেতে হবে, আমার কৃতকর্মের ফল আমাকেই ভােগ করতে হবে এই ভাবনা। । কষায়—যা আত্মাকে ক্লিষ্ট করে। ক্রোধ, মান, মায়া ও লােভ এই চারটীকে কষায় বলা হয়। গন্ধন জাতীয় সর্প—মন্ত্রের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে গন্ধন জাতীয় সর্প দষ্ট স্থান হতে বিষ আকর্ষণ করে নেয়। অগন্ধন জাতীয় সৰ্পকে অগ্নিতে দগ্ধ করলেও তা করে না। শ্রমণের অগন্ধন সর্পের মতাে হওয়া উচিত। যে সংসার তিনি পরিত্যাগ (বমন) করে এসেছেন তার দিকে আকৃষ্ট হওয়া উচিত নয়। | গুপ্তি—কায়িক, বাচিক ও মানসিক ভেদে ত্রিবিধ। গুপ্তির উদ্দেশ্য দেহ, মন ও বাক্যের নিয়মন যাতে সেগুলি উন্মার্গে না গিয়ে সন্মার্গে প্রবর্তিত হয়। পরিগ্রহ-সঞ্চয়, মমত্ববােধ। মহাব্ৰত—অহিংসা, সত্য, অচৌর্য, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ এই পাঁচটি মহাব্রত। রজোহরণ—মােটা সুতাের সম্মার্জনী। শ্রমণেরা এই সম্মার্জনী দিয়ে বসবার বা চলবার আগে মাটি ঝাড় দিয়ে নেন যাতে ক্ষুদ্র জীব শরীর বা পায়ের চাপে পিষ্ট না হয়। For Personal & Private Use Only Page #77 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সংবর—যে সমস্ত ক্রিয়ায় কর্মের আগমন নিরুদ্ধ হয় তাই সংবর। সংযম, শুভধ্যান, ইচ্ছা নিরোধ ইত্যাদি সংবর সাধনার অন্তর্গত। ・ সমিতি –সমিতি পাঁচটী : ঈর্য!, ভাষা, এষণা, আদান নিক্ষেপ ও উৎসর্গ। ঈর্যা অর্থাৎ পথ চলবার সময় সংযত হয়ে পথ চলা, ভাষা অর্থাৎ বাক্য প্রয়োগে সংযত হওয়া, এষণা অর্থাৎ ভিক্ষা গ্রহণের সময় যথা নিয়ম ভিক্ষাগ্রহণ, আদান নিক্ষেপ অর্থাৎ কোন বস্তু তোলা বা রাখার সময় সতর্কতা ও উৎসর্গ অর্থাৎ মলমূত্র পরিত্যাগের সময় সাবধানতা। সমিতির উদ্দেশ্য কোন প্রকারে জীবকে কষ্ট না দেওয়া । জ্ঞান-দর্শন-চারিত্র— এই তিনটীকে একত্রে ত্রিরত্ন বলা হয় ৷ জ্ঞান অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞান। দর্শন সেই তত্ত্বে শ্রদ্ধা। চারিত্র তদনুরূপ এই তিনটির সাধনায় সিদ্ধি । এইটিই জিন জীবন যাপন । প্রবর্তিত পথ ৷ For Personal & Private Use Only Page #78 -------------------------------------------------------------------------- ________________ Serving Jin Shasan 047198 gyanmandir@kobatirth.org For Personal & Private Use Only