Page #1
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান প্ররূপিত
সেবা - পরােপকার
Bengali
তােমার ফল যদি অন্যকে প্রদান করাে তাহলে প্রকৃতি তােমারটা চালিয়ে নেবে
Page #2
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান প্ররূপিত
(C
সেবা-পরােপকার
মূল গুজরাতী সংকলন : ডাঃ নীরুবেন অমিন।
বাংলা অনুবাদ : মহাত্মাগণ
CO2
Page #3
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রকাশক : শ্রী অজিত সি. প্যাটেল
দাদা ভগবান আরাধনা ট্রাস্ট দাদা দর্শন, ৫, মমতাপার্ক সােসাইটি, নবগুজরাট কলেজের পিছনে উসমানপুরা, আহমেদাবাদ – ৩৮০০১৪ ফোন : (০৭৯) ৩৯৮৩০১০০
E-mail : info@dadabhagwan.org কপিরাইট : All Rights reserved - Deepakbhai Desai
Trimandir, Simandhar City, Ahmedabad-Kalol Highway, Adalaj, Dist: Gandhinagar-382421, Gujarat, India. No part of this book may be used or reproduced in any manner whatsoever without written permission from the holder of this copyrights.
ভাবমূল্য : ‘পরম বিনয় আর
‘আমি কিছু জানি না এই জাগৃতি
দ্রব্যমূল্য : ২০ টাকা
প্রথম মুদ্রণ : 1, November 2014
মুদ্রণ সংখ্যা : ১০০০
মুদ্ৰক :
B-99, Electronics G.I.D.C K-6 Road, Sector 25 Gandhinagar - 382044 E-mail : info@ambaoffset.com
ফোন :
(০৭৯) ৩৯৮৩০৩৪১/ ৪২
Page #4
--------------------------------------------------------------------------
________________
20.
ত্ৰি-মন্ত্ৰ
নমো অরিহন্তানম্ নমো সিদ্ধান
নমো আয়রিয়ানম্
নমো উবজ্জ্বায়ানম্ নমো লোয়ে সব্বসাহুনম্ এ্যায়সো পঞ্চ নমুক্কারো ;
সব পাপনাশনো
মঙ্গলানম চ সব্বেসিম্ ; পঢ়মম্ হবই মঙ্গলম্ ১
ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ২
ওঁ নমঃ শিবায় ৩
জয় সচ্চিদানন্দ
Page #5
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রকাশিত হিন্দী পুস্তকসমূহ
O oo Uso
১. জ্ঞানী পুরুষ কি পহেচান
২৪. অহিংসা ২. সর্ব দুঃখে সে মুক্তি
২৫. প্রতিক্ৰমণ (সংক্ষিপ্ত)। ৩. কর্ম কে সিদ্ধান্ত
২৭. কর্ম কা বিজ্ঞান আত্মবােধ
২৮. চমৎকার। অন্তঃকরণ কা স্বরূপ
২৯. বাণী, ব্যবহার ঘেঁ, জগৎকর্তা কৌন ?
৩০. প্যয়সোঁ কা ব্যবহার (সংক্ষিপ্ত) ভুগতে উসী কি ভুল
৩১. পতি-পত্নী কা দিব্য ব্যবহার অ্যাডজাস্ট এভরিহােয়্যার
(সং)। টকরাও টালিয়ে
৩২. মাতা-পিতা ঔর বচ্চোঁ কা ১০. হুয়া সাে ন্যায়
ব্যবহার (সং) ১১. চিন্তা
৩৩. সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (সং) ১২. ক্রোধ।
৩৪, নিজদোষ দর্শন সে, .. নির্দোষ ১৩. ম্যাঁয় কৌন হুঁ ?
৩৫. ক্লেশ রহিত জীবন ১৪. বর্তমান তীর্থঙ্কর শ্রী সীমন্ধর স্বামী ৩৬. গুরু-শিষ্য ১৫. মানব ধর্ম
৩৭. আপ্তবাণী - ১ ১৬. সেবা-পরােপকার
৩৮. আপ্তবাণী - ২ ১৭. ত্রিমন্ত্র
৩৯. আপ্তবাণী - ৩ ১৮. ভাবনা সে সুধরে জন্মেজন্ম ৪০. আপ্তবাণী - ৪ ১৯. দান।
৪১. আপ্তবাণী - ৫ ২০. মৃত্যু সময়, পহেলে ঔর পশ্চাৎ ৪২. আপ্তবাণী - ৬ ২১. দাদা ভগবান কৌন ?
৪৩, আপ্তবাণী - ৭ ২২. সত্য-অসত্য কে রহস্য
৪৪. আপ্তবাণী - ৮ ২৩, প্রেম
৪৫. সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য
(উত্তরা)। * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা গুজরাতী ভাষাতেও অনেক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। এই সমস্ত পুস্তক ওয়েবসাইট www.dadabhagwan.org - তেও উপলব্ধ। * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা “দাদাবাণী” পত্রিকা হিন্দী, গুজরাতী ও ইংরাজী ভাষায় প্রতিমাসে প্রকাশিত হয়। প্রাপ্তিস্থান : ত্রি-মন্দির সঙ্কুল, সীমন্ধর সিটী, আহমেদাবাদ - কালােল হাইওয়ে,
পােস্ট : অডালজ, জিলা : গান্ধীনগর, গুজরাত - ৩৮২৪২১ ফোন : (০৭৯) ৩৯৮৩০১০০, E-mail : info@dadabhagwan.org
Page #6
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কে ?
১৯৫৮ সালের জুন মাসের এক সন্ধ্যায় আনুমানিক ৬ টার সময় ভীড়ে ভর্তি সুরত শহরের রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৩-এর এক বেঞ্চে বসা শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেলরূপী দেহমন্দিরে প্রাকৃতিকভাবে, অক্রমরূপে, বহুজন্ম ধরে ব্যক্ত হওয়ার জন্যে ব্যাকুল দাদা ভগবান পূর্ণরূপে প্রকট হলেন – অধ্যাত্মের এক অদ্ভুত আশ্চৰ্য প্রকট হল। অলৌকিকভাবে এক ঘণ্টাতে ওনার বিশ্বদর্শন হল। ‘আমি কে ? ভগবান কে ? জগত কে চালায় ? কর্ম কি ? মুক্তি কি ?' ইত্যাদি জগতের সমস্ত আধ্যাত্মিক প্রশ্নের সমস্ত রহস্য সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হল । এইভাবে প্রকৃতি বিশ্বকে এক অদ্বিতীয় সম্পূর্ণ দর্শন প্রদান করল যার মাধ্যম হলেন গুজরাত-এর চরোতর ক্ষেত্রের ভাদরন গ্রাম নিবাসী পাটীদার শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেল যিনি কন্ট্রাকটরি ব্যবসা করেও সম্পূর্ণ বীতরাগী ছিলেন।
‘ব্যবসাতে ধর্ম থাকা প্রয়োজন, কিন্তু ধর্মতে ব্যবসা নয়' এই নীতি অনুসারেই তিনি সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন। জীবনে কখনও উনি কারোর কাছ থেকে অর্থ নেননি, উপরন্তু নিজের উপার্জনের অর্থ থেকে ভক্তদের তীর্থযাত্রায় নিয়ে যেতেন।
ওনার অদ্ভুত সিদ্ধজ্ঞান প্রয়োগ দ্বারা ওনার যে রকম প্রাপ্তি হয়েছিল, তেমনই অন্য মুমুক্ষুদেরও তিনি কেবল দু' ঘণ্টাতেই আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করাতেন। একে অক্রম মার্গ বলে। অক্রম অর্থাৎ বিনা ক্রমের আর ক্রম মানে সিঁড়ির পরে সিঁড়ি— ক্রমানুসারে উপরে ওঠা। অক্রম অর্থাৎ লিফট্-মার্গ, সংক্ষিপ্ত রাস্তা।
উনি স্বয়ংই ‘দাদা ভগবান'কে ? এই রহস্য জানাতেন। উনি বলতেন “যাকে আপনারা দেখছেন তিনি দাদা ভগবান নন। তিনি তো এ. এম. প্যাটেল ; আমি জ্ঞানী পুরুষ আর আমার ভিতর যিনি প্রকট হয়েছেন তিনিই ‘দাদা ভগবান’। দাদা ভগবান তো চৌদ্দ লোকের নাথ। উনি আপনার মধ্যেও আছেন, সবার মধ্যেই আছেন, আপনার মধ্যে অব্যক্তরূপে আছেন, আর আমার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত অবস্থায় আছেন। ‘দাদা ভগবান'কে আমিও নমস্কার করি। ”
Page #7
--------------------------------------------------------------------------
________________
আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ লিঙ্ক
‘আমি তাে কিছু লােককে নিজের হাতে সিদ্ধি প্রদান করে যাব। তারপরে অনুগামীর প্রয়ােজন আছে না নেই ? পরের লােকেদের রাস্তার প্রয়ােজন আছে কি না ?
– দাদাশ্রী
পরমপূজ্য দাদাশ্রী গ্রাম-শহরে, দেশ-বিদেশে পরিভ্রমণ করে মুমূক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি করাতেন। দাদাশ্রী তাঁর জীবদ্দশাতেই পূজ্য ডাঃ নীরুবেহন অমিন (নীরুমা) -কে আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করানাের জ্ঞানসিদ্ধি প্রদান করেছিলেন। দাদাশ্রীর দেহত্যাগের পর নীরুমা একইভাবে মুমূক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি নিমিত্তভাবে করাতেন। দাদাশ্রী পূজ্য দীপকভাই দেসাইকে সৎসঙ্গ করার সিদ্ধি প্রদান করেছিলেন। নীরুমার উপস্থিতিতেই তাঁর আশীর্বাদে পূজ্য দীপকভাই দেশ-বিদেশে অনেক জায়গায় গিয়ে মুমূক্ষুদের আত্মজ্ঞান করাতেন যা নীরুমা-র দেহবিলয়ের পর আজও চলছে। এই আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পর হাজার হাজার মুমূক্ষু সংসারে থেকে, সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও আত্মরমণতার অনুভব নিয়ে থাকেন।
পুস্তকে মুদ্রিত বাণী মােক্ষলাভার্থীর পথপ্রদর্শক হিসাবে অত্যন্ত উপযােগী প্রমাণিত হবে, কিন্তু মােক্ষলাভ -এর জন্য আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত হওয়া অপরিহার্য। অক্রম মার্গের দ্বারা আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পথ আজও উন্মুক্ত আছে। যেমন প্রজ্বলিত প্রদীপই শুধু পারে অন্য প্রদীপকে প্রজ্বলিত করতে, তেমনই প্রত্যক্ষ আত্মজ্ঞানীর কাছে আত্মজ্ঞান লাভ করলে তবেই নিজের আত্মা জাগৃত হতে পারে।
Page #8
--------------------------------------------------------------------------
________________
নিবেদন
আত্মবিজ্ঞানীশ্রী অম্বলাল মূলজীভাই প্যাটেল, যাঁকে লােকে ‘দাদা ভগবান’ নামেও জানে, তাঁর শ্রীমুখ থেকে অধ্যাত্ম এবং ব্যবহার জ্ঞান সম্বন্ধীয় যে সমস্ত বাণী নিঃসৃত হয়েছিল , তা রেকর্ড করে সংকলন এবং সম্পাদন করে গ্রন্থরূপে প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমান সংকলন মূল গুজরাতী পুস্তকের অনুবাদ।
জ্ঞানী পুরুষ পরমপুজ্য দাদা ভগবানের শ্রীমুখ হতে অধ্যাত্মতথা ব্যবহার জ্ঞান সম্বন্ধে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্গত সরস্বতীর এক অদ্ভুত সংকলন এই পুস্তক যা পাঠকবর্গের কাছে বরদান স্বরূপ।
এই অনুবাদে বিশেষরূপে এই খেয়াল রাখা হয়েছে যে পাঠক দাদাজীর বাণীই শুনছেন এরকম অনুভব করেন। ওনার হিন্দী সম্পর্কে ওনার কথাতেই বললে, ‘আমার হিন্দী মানে গুজরাতী, হিন্দী আর ইংরাজী-র মিশ্রণ, কিন্তু যখন ‘টী’ (চা) তৈরী হবে তখন ভালােই হবে।'
জ্ঞানীর বাণীকে বাংলা ভাষায় যথার্থরূপে অনুবাদ করার প্রযত্ন। করা হয়েছে কিন্তু দাদাশ্রীর আত্মজ্ঞান -এর যথার্থ আধার, যেমনকার তেমন, আপনি গুজরাতী ভাষাতেই অবগত হতে পারবেন। মূল গুজরাতী শব্দ, যার বাংলা অনুবাদ উপলব্ধ নয় তা ইটালিস-এ লেখা হয়েছে। যিনি জ্ঞান-এর গভীরে যেতে চান, জ্ঞান-এর সঠিক মর্ম অনুধাবন করতে চান তিনি এই কারণে গুজরাতী ভাষা শিখে নিন, এই আমাদের নম্র বিনতি। এই বিষয়ে আপনার কোনাে প্রশ্ন থাকলে প্রত্যক্ষ সৎসঙ্গে তার সমাধান লাভ করতে পারেন।
| এই পুস্তকের কোনাে কোনাে স্থানে পরমপুজ্য দাদাশ্রীর কথিত বাক্যের অধিক স্পষ্টীকরণ বন্ধনীর মধ্যে করা হয়েছে। দাদাশ্রীর শ্রীমুখনিঃসৃত কিছু কিছু গুজরাতী ও ইংরাজী শব্দ অনুবাদ না করে যেমনকার তেমন রাখা হয়েছে।
অনুবাদ সম্পর্কিত ভুল-ত্রুটির জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
Page #9
--------------------------------------------------------------------------
________________
সম্পাদকীয়
এই মন-বচন-কায়া পরের সুখের জন্য ব্যবহার করলে সংসারে নিজের সুখ কোনােদিন কম পড়বে না। আর নিজের স্বয়ং-এর, সেলএর রিয়েলাইজেশান করে তাে তার সনাতন সুখ প্রাপ্তি হয়। মনুষ্য-জীবনের ধ্যেয় এতটুকুই। এই ধ্যেয়-র পথ ধরে যে চলতে শুরু করে সে মনুষ্যজীবনেই জীবনমুক্ত দশা লাভ করে। এই জীবনে এর চেয়ে বেশী আর কিছু পাওয়ার বাকী থাকে না।
আমগাছ নিজের ফল কতগুলাে খায় ? এর ফল, পাতা, কাঠ সব অন্যেই ব্যবহার করে নাকি ? তার ফলে এউর্ধ্বগতি লাভ করে। ধর্মের শুরুই অবলাইজিং নেচার (পরােপকারী স্বভাব) থেকে হয়। অন্যকে কিছুমাত্র দিলে তখন থেকেই নিজের আনন্দ শুরু হয়।
পরমপুজ্য দাদাশ্রী একটি বাক্যেই বলেছেন, মা-বাবার সেবা যে সন্তান করে তার কখনাে অর্থের অভাব হয় না, আর প্রয়ােজনীয় সবকিছুই এসে যায়। আর আত্মসাক্ষাৎকারী গুরুর সেবা যে করে সে মােক্ষে যায়।
দাদাশ্রী সারাজীবন এই একটাই ধ্যেয় রেখেছিলেন যে আমার কাছে যে কেউ এসেছে সে যেন সুখী হয়। নিজের সুখের বিচার পৰ্য্যন্ত করেননি। সামনের ব্যক্তির কি অসুবিধা, কি করলে এর অসুবিধা দূর হয়, সেই ভাবনাই নিরন্তর করতেন। সেজন্যেই তাঁর মধ্যে করুণার প্রকাশ হয়েছিল। অদ্ভুত অধ্যাত্মবিজ্ঞান প্রকট হয়েছিল।
প্রস্তুত সংকলনে দাদাশ্রী সমস্ত দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের ধ্যেয় সেবা-পরােপকার সহিত কি ভাবে সিদ্ধ করতে হবে তার বােধ সরলঅমােঘ দৃষ্টান্ত দ্বারা ফিট করিয়েছেন যা ধ্যেয়স্বরূপ আত্মসাৎ করে নিলে মনুষ্যজীবন সার্থক হলাে বলা যায়।
– ডাঃ নীরুবেহন অমিন -এর জয় সচ্চিদানন্দ
Page #10
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
মনুষ্যজন্মের বিশেষতা
প্রশ্নকর্তা: ‘এই মনুষ্যজন্ম বৃথা না যায়' তার জন্যে কি করতে হবে ? দাদাশ্রী : ‘এই মনুষ্যজন্ম বৃথা না যায়'—এই যদি সারাদিন চিন্তা করে তো তা সফল হয়। এই মনুষ্যজন্মের চিন্তা করার বদলে লোকে লক্ষ্মীর (অর্থের) চিন্তা করে। প্রচেষ্টা করা তোমার হাতে নেই কিন্তু ভাব করা তোমার হাতে আছে। প্রচেষ্টা করাটা অন্যের অধিকারে। ভাবের ফল আসে। সঠিক বলতে গেলে তো ভাবও পরসত্তায় যায় কিন্তু ভাব করলে তার ফল পাওয়া যায়।
প্রশ্নকর্তা : মনুষ্য জন্মের বিশেষতা কি ?
দাদাশ্রী : মনুষ্যজীবন পরোপকারের জন্য আর হিন্দুস্তানের মানুষের জীবন ‘এবসল্যুটিজ্ম্’-এর জন্য, মুক্তির জন্য। হিন্দুস্তান ভিন্ন বাইরের অন্যদেশের যে জীবন তা পরোপকারের জন্য। পরোপকার অর্থাৎ মনকেও অন্যের জন্য ব্যবহার করা, বাণীকেও অন্যের জন্য ব্যবহার করা, আর আচরণও অন্যের জন্য উপযোগ করা। মন-বচন-কায়া দিয়ে পরোপকার করবে। তখন বলবে, তাহলে আমার কি হবে ? কেউ যদি পরোপকার করে তো তার ঘরে কি থাকবে ?
প্রশ্নকর্তা : লাভ তো হবে ?
দাদাশ্রী : হ্যাঁ, কিন্তু লোকেরা তো এইরকমই জানে যে আমি যদি দিই তো আমার কমে যাবে।
প্রশ্নকর্তা : নীচু স্তরের মানুষ হলে তারা এরকম মনে করে।
দাদাশ্রী : উচ্চস্তরের হলে তারা এরকম মনে করে যে অন্যকে দেওয়া যায়।
জীবন পরোপকারের জন্যে...
এর গুহ্য সায়েন্স এই যে মন-বচন-কায়া পরোপকারের জন্যে ব্যবহার
Page #11
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
করলে তােমার কাছে প্রত্যেকটা জিনিস থাকবে। পরােপকারের জন্যে করাে, কিন্তু যদি ফী নিয়ে করাে তাে ?
প্রশ্নকর্তা : ভােগান্তির সৃষ্টি হয়।
দাদাশ্রী : এই যে কোর্টে ফী নেয়। একশাে টাকা লাগবে, দেড়শাে টাকা দিতে হবে। তখন বলে, ‘সাহেব, দেড়শাে টাকা নিয়ে নাও। কিন্তু এতে পরােপকারের নিয়ম তাে মানা হলাে না !
প্রশ্নকর্তা: পেটে আগুন জ্বললে তাে এরকম বলতেই হবে, নয় কি ?
দাদাশ্রী: পেটে আগুন জ্বলছে এরকম বিচারকরবেইনা। যে কোনাে প্রকারের পরােপকার যদি করাে তাে তােমার কোনাে বাধা আসবে না। এখন লােকেদের কি হয় ? সম্পূর্ণ না বুঝে করতে যায়, তাই উল্টো ‘এফেক্ট’ আসে। সে কারণে মনে শ্রদ্ধা থাকে না আর যা ছিল তাও চলে যায়। এখন থেকে করতে শুরু করলে দু'-তিন জন্মে ঠিকমত হয়। এটাই ‘সায়েন্স।
ভালাে-খারাপের জন্যে, পরােপকার একরকম!
প্রশ্নকর্তা: মানুষ অন্যের ভালাে করার জন্যে পরােপকারী জীবনযাপন করে, লােকেদের বলেও, কিন্তু যে ভালাের জন্যে বলছে, লােকেদের স্ব-কল্যাণের জন্যে বলছে, তা কেউ বুঝতে চায় না, তার কি ?
দাদাশ্রী : পরােপকারী অন্য ব্যক্তির বােধ দেখতে যায় না আর যদি পরােপকারী অন্য ব্যক্তির বােধ দেখে তাে তাকে ওকালতি বলে। সেইজন্য অন্য ব্যক্তির বােধ দেখার প্রয়ােজন নেই।
এই যে সমস্ত গাছ রয়েছে, আম গাছ, নিম গাছ এইসব, এতে ফল ধরে, তাে আমের গাছ নিজের কতগুলাে ফল খায় ?
প্রশ্নকর্তা: একটাও নয়। দাদাশ্রী : এ সমস্ত কার জন্যে ? প্রশ্নকর্তা : পরের জন্যে।
Page #12
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা - পরােপকার
দাদাশ্রী : হা, কিন্তু এ কি দেখতে যায় যে কে বদমায়েস আর কে ভালাে ? যে নিয়ে যাবে তার, আমার নয়। এ পরােপকারী জীবন কাটাচ্ছে। এরকম জীবন যাপন করার ফলে এই জীবেদের ধীরে ধীরে উর্ধ্বগতি হয়।
প্রশ্নকর্তা: কিন্তু অনেক সময়ে এমন হয় যেযার উপকার করা হলাে, সে উপকার যে করছে তার উপরেই দোষারােপ করে। | দাদাশ্রী : হ্যা, এটাই তাে দেখার ! যে উপকার করছে তারই অপকার করে।
প্রশ্নকর্তা : বুঝতে না পারার কারণে !
দাদাশ্রী : এই বােধ সে কোথা থেকে আনবে ? বােধ থাকলে তাে। কাজ-ই হয়ে যায়। এরকম বােধ আনবে কোথা থেকে ?
পরােপকার তাে খুবই উঁচু স্থিতি। এই পরােপকারী লাইফ, সমগ্র মনুষ্যজীবনের এটাই ধ্যেয়।
| জীবনে মহৎ কাৰ্য্য এই দুটি! আর দ্বিতীয় কথা, এই হিন্দুস্তানে মনুষ্যজন্ম কিসের জন্য? নিজের এই বন্ধন, চিরকালের বন্ধন ভাঙ্গে— এই হেতুর জন্য, এবসােলুট’ হওয়ার জন্য আর যদি এই এবসােলুট’ হওয়ার জ্ঞান না পাও তাে পরের জন্য জীবন কাটাও। এই দুই কাজ করার জন্যেই হিন্দুস্তানে জন্ম হয়। এই দুই কাজ লােকেরা করে কি ? লােকেরা তাে ভেজাল মিশিয়ে মানুষ থেকে জানােয়ার গতিতে যাওয়ার কলা খুঁজে বার করেছে।
| সরল হওয়ার উপায় ! প্রশ্নকর্তা:জীবন সরল আর সাত্ত্বিক বানানাের উপায় কি ?
দাদাশ্রী : তােমার কাছে যতটুকু আছে তা অবলাইজিং নেচার করে লােককে দাও। এইভাবেই জীবন সাত্তিক হতে থাকবে। অবলাইজিং নেচার তুমি করেছাে কি ? তােমার অবলাইজিং নেচার ভালাে লাগে ?
Page #13
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
প্রশ্নকর্তা : কিছু কিছু করেছি!
:
8
দাদাশ্রী : এ যদি বেশী করে করো তো বেশী লাভ হবে। অবলাইজই করতে থাকবে। কারোর জন্যে ধাক্কা-ধাক্কি সহ্য করে, কারোর জন্যে ঘোরাঘুরি করে, কাউকে পয়সা দিয়ে, কোনো দুঃখীকে দু'টো পোশাক বানিয়ে দিয়ে – এইভাবে অবলাইজ করবে।
ভগবান বলেছেন যে মন-বচন-কায়া আর আত্মা (প্রতিষ্ঠিত আত্মা)-র উপযোগ অপরের জন্য করো। পরে যদি তোমার কোনরকম দুঃখ আসে তো আমাকে বলবে।
ধর্মের শুরুই ‘অবলাইজিং নেচার' থেকে হয়। তুমি তোমার ঘরেরটা অন্যকে দিলে সেখানেই আনন্দ। তার বদলে লোকে নিয়ে নিতে শিখেছে! তোমার জন্যে কিছু করবে না। লোকের জন্যে যদি করো তো তোমার নিজের জন্যে কিছু করতে হবে না।
ভাব তো একশো প্ৰতিশত !
গাছ কি নিজের ফল নিজে খায় ? না। সেইজন্য এই গাছপালা মানুষকে উপদেশ দিচ্ছে যে তুমি তোমার ফল অন্যকে দাও। তোমাকে কুদ্রত্ (প্রকৃতি) দেবে। নিম তেতো ঠিকই, কিন্তু লোকে লাগায়-ও, কারণ এর অন্য লাভ আছে ; না হলে তো চারা উপড়ে ফেলে দেবে। কিন্তু এ অন্যভাবে উপকার করে। এর ছায়া শীতল, এর ওষুধ উপকারী, এর রস হিতকারী। সত্যযুগে লোকে অন্য ব্যক্তিকে সুখ দেওয়ারই চেষ্টা করতো। সমস্তদিন ‘কাকে অবলাইজ্ করবো' –এই চিন্তাই করতো।
বাইরে (কাজে) যদি কম-ও হয় তাহলেও আপত্তি নেই, কিন্তু অন্তরের ভাব তো এরকম হওয়াই চাই যে আমার কাছে পয়সা আছে ; আমাকে কারোর দুঃখ কম করতে হবে। বুদ্ধি থাকলে আমার বুদ্ধি দিয়েও কাউকে বোঝাবো যাতে এর দুঃখ কম করা যায়। যদি নিজের জমা-পুঁজি কিছু থাকে তো হেল্প করবে নয়তো অবলাইজিং নেচার তো রাখা উচিৎ। অবলাইজিং নেচার মানে কি ? পরের সাহায্য করার স্বভাব !
Page #14
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
অবলাইজিং নেচার হলে কেমন সরল স্বভাব হয় ! কাউকে পয়সা দেওয়াটাই অবলাইজিং নেচার নয়। পয়সা তােমার কাছে থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু তােমার ইচ্ছা হয়, এরকম ভাবনা হয় যে একে কিভাবে হেল্প করবাে! তােমার ঘরে কেউ এসেছে তাে তাকে কিভাবে হেল্প করবে এরকম ভাবনা হওয়া উচিৎ। পয়সা দেবে কি দেবে না তা তােমার ক্ষমতা অনুসারে হবে।।
শুধু পয়সা দিয়েই যে ‘অবলাইজ করতে হবে এমন নয়, এ তাে দেওয়ার শক্তির উপর আধারিত। কেবল মনে ভাব রাখবে যে কেমন করে ‘অবলাইজ’ করবাে। এটা যাতে থাকে সেটুকুই দেখার।
| জীবনের ধ্যেয় যা দিয়ে নিজের ধ্যেয়-র দিকে কিছুটা এগােনাে যায়। ধ্যেয় ছাড়া জীবনের কোনাে অর্থই নেই। ডলার আসে আর খেয়ে-দেয়ে মজা করে আর সারাদিন চিন্তা-ওয়রিজ করতে থাকে। একে জীবনের ধ্যেয় কিভাবে বলা যায় ? মনুষ্যজীবন পেয়েছে, তা যদিব্যর্থচলে যায় তাে তার অর্থ কি ? সেইজন্য মনুষ্য জীবন পাওয়ার পরে নিজের ধ্যেয়-তে পৌঁছানাের জন্যে কি করা উচিৎ ? সংসারের সুখ, ভৌতিক সুখ চাইলে তােমার কাছে যা কিছু আছে তা লােকেদের বিলিয়ে দাও। লােকেদের যদি কোনরকম সুখদাও তােতুমি সুখের আশা রাখতে পারাে; নয়তাে তুমি সুখ পাবেনা, আর দুঃখ দিলে তুমিও দুঃখ পাবে।
| এই জগতের নিয়ম একটা বাক্যেই বুঝে নাও, এই জগতের সমস্ত ধর্মের, কি যে মানুষের যাদের সুখ চাই তারা অন্য জীবদের সুখ দাও আর দুঃখ চাইলে দুঃখ দাও। যা অনুকূল মনে হয় তাই দাও। এখন যদি কেউ বলে যে আমি লােকেদের কি করে সুখ দেবাে ? আমার কাছে তাে টাকাপয়সা নেই। এমন নয় যে শুধুমাত্র টাকাই দেওয়া যায়। ওর জন্যে অবলাইজিং নেচার রাখতে পারাে, ওর জন্যে ঘােরাঘুরি করতে পারাে, শলা-পরামর্শ দিতে পারাে, অনেক প্রকারে অবলাইজ করতে পারাে।
Page #15
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
ধর্ম অর্থাৎ কোনাে ভগবানের মূর্তির কাছে বসে থাকার নাম ধর্ম নয়। নিজের ধ্যেয়-তে পৌঁছানােই ধর্ম। সাথে সাথে একাগ্রতার জন্যে কোনরকম সাধনা করা – সে কথা আলাদা, কিন্তু এতে (পরােপকারে) একাগ্রতা করাে তাে এর থেকে সব কিছু একাগ্রই হয়। অবলাইজিং নেচার রাখাে, প্রতিজ্ঞা করাে যে এখন আমাকে অবলাইজ-ই করতে হবে তাে তােমার মধ্যে আমূল পরিবর্তন হবে। প্রতিজ্ঞা করাে যে আমি ওয়াইল্ডনেস (জংলীপনা)
করবােনা।
সামনের ব্যক্তি ওয়াইল্ড হলেও আমি হবােনা, তাে তাহলে এমনটা হতে পারে। হবে না কি ? প্রতিজ্ঞা করলে তখন থেকে একটু একটু পরিবর্তন হবে কি হবে না ?
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু মুশকিল মনে হচ্ছে।
দাদাশ্রী : না, মুশকিল হলেও প্রতিজ্ঞা করবে। কারণ তুমি মানুষ আর ভারতের মানুষ। হেজি-পেজিকি ? ঋষি-মুনিদের পুত্র তুমি! অমিত শক্তি তােমার মধ্যে পড়ে আছে। এই শক্তি আবৃত হয়ে আছে তাে তা তােমার কি কাজে লাগবে ? তুমি যদি আমার এই কথা অনুযায়ী প্রতিজ্ঞা করাে যে আমাকে এটা করতেই হবে তাে তা অবশ্যই ফলিত হবে। নয়তাে এই ওয়াইল্ডনেস কতদিন পর্যন্ত চালাবে ? আর তুমি তাে সুখ পাও না, ওয়াইল্ডনেস-এ সুখ আছে কি ?
প্রশ্নকর্তা: না। দাদাশী:উল্টে দুঃখকেই নিমন্ত্রণ দিচ্ছে।
পরােপকার করলে পুণ্য সাথেই থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত মােক্ষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত একমাত্র পুণ্যই বন্ধুর মত কাজ করে আর পাপশত্রুর মত কাজ করে। এখন তুমি বন্ধু রাখবে কি শত্রু রাখবে তা তােমার যা ভালাে লাগে সেই অনুসারে তােমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বন্ধুর সংযােগ কেমন হয় তা জেনে নেবে আর শত্রুর সংযােগ
Page #16
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
কেমন হয় তাও জেনে নেবে। যদি শত্রু ভালাে লাগে তাে সেই সংযােগ কিভাবে আসে তা যদি জিজ্ঞাসা করাে তাহলে আমি তােমাকে বলবাে যে যত চাও তত ধার করে ঘি খাও, যেখানে পছন্দ হয় ঘুরে বেড়াও, তােমার ইচ্ছেমত মজা করাে, তারপরে আগে যা হবে দেখা যাবে! আর পুণ্যরূপী বন্ধু চাই তাে আমি বলবাে যে ভাই, এই গাছেদের কাছ থেকে শিখেনাও। কোনাে গাছ তার ফল নিজে খায় কি ? কোনাে গােলাপ তার ফুল খেয়ে নেয় ? একটু তাে খেয়ে নেয়, নয় কি ? আমরা যখন রাতে থাকিনা তখন খেয়ে নেয় তাে, না কি ? খায় না ?
প্রশ্নকর্তা: না, খায় না।
দাদাশ্রী : এই গাছপালা তাে মানুষকে ফল দেওয়ার জন্য মানুষের সেবায় থাকে, তাহলে এই গাছেরা কি পায় ? এদের গতি উঁচু হয় আর মানুষও এদের হেল্প নিয়ে এগােয়। যদি মনে করাে যে আমি আম খেলাম তাে আমগাছের কি গেলাে ? আর আমরা কি পেলাম ? তুমি আম খেলে, তাতে তােমার আনন্দ হলাে। এর থেকে তােমার মনােবৃত্তি যে বদলালাে তাতে তুমি একশাে টাকার আধ্যাত্মিকতা উপার্জন করলে। আম খেয়েছাে সেইজন্যে এর পাঁচটাকা আমগাছ পায় তােমার থেকে আর পঁচানব্বই টাকা তােমার ভাগে থাকে। অর্থাৎ এরা তােমার ভাগ থেকে পাঁচ টাকা নিয়ে নেয় আর বেচারারা উঁচু গতিতে যায়। আর তােমারও অধােগতি হয়না, তােমার তাে বাড়ে। সেইজন্যে এই গাছেরা বলে যে আমাদের সবকিছু ভােগ করাে, প্রত্যেক জাতের ফুল-ফল ভােগ করাে।
যােগ – উপযােগ পরােপকারার্থে!
যদি এই জগৎ তােমার পছন্দ হয়, জগৎ যদি তােমার ভালাে লাগে, জগতের বস্তু প্রাপ্তির ইচ্ছা থাকে, তাে এটুকু করাে, ‘যােগ-উপযােগ পরােপকারার্থে। যােগ অর্থাৎ মন-বচন-কায়ার যােগআর উপযােগ অর্থাৎ বুদ্ধির ব্যবহার, মনের ব্যবহার, চিত্তের ব্যবহার সমস্ত কিছু অন্যের জন্য
Page #17
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
ব্যবহার করাে। আর পরের জন্যে যদি না করে তাে আমাদের লােকেরা শেষ অবধি ঘরের জন্যে ব্যবহার করে তাে! এই কুকুরীদের খাবার কিভাবে জোগাড় হয়ে যায় ? এর বাচ্চাদেরভিতর ভগবান আছেন। সেই বাচ্চাদের এ সেবা করে সেইজন্যে এ সবকিছু পেয়ে যায়। সমস্তজগৎ -এর আধারেই চলছে। এই গাছেদের খাবার কোথা থেকে আসছে ? এই গাছেরা কি কোনাে পুরুষাৰ্থ করেছে ? এরা তাে একটুও ‘ইমােশনাল’ নয়। এরা কোনাে দিন ‘ইমােশনাল হয় ? এরা তাে কোনােদিনও এদিক-সেদিক যায় না। এদের কোনাে দিন এরকম হয় না যে এখান থেকে একমাইল দূরে বিশ্বামিত্রী নদী আছে, সেখানে গিয়ে জল খেয়ে আসি!
নীতি আর পরম্পর ‘অবলাইজিং নেচার’, ব্যস, এটুকুরই শুধু প্রয়ােজন। পরস্পরের উপকার করা, এটুকুই মনুষ্যজীবনের উপলব্ধি ! এই জগতে দু'ধরনের লােকের চিন্তা হয় না, এক জ্ঞানীপুরুষের আর দ্বিতীয় পরােপকারীর।
পরােপকারের সঠিক রীতি!
প্রশ্নকর্তা : এই সংসারে ভালাে কাজ কাকে বলে ? এর কোনাে । পরিভাষা দেওয়া যায় কি ?
| দাদাশ্রী : হ্যা, ভালাে কাজ তাে এই সমস্ত গাছেরা করছে, এরা নিখাদ ভালাে কাজই করছে। কিন্তু এরা নিজেরা কর্তা হয়ে করছেনা। এই গাছেরা জীবিত; এরা সবাই নিজেদের সমস্ত ফল পরকে দেয়। তুমি তােমার ফল অন্যকে দিয়ে দাও, তােমার ফল তুমি পেতেই থাকবে। তােমার যে ফল উৎপন্ন হয় – দৈহিক ফল, মানসিক ফল, বাচিক ফল, ‘ফ্রী অফ কস্ট' লােকেদের দিতে থাকো তাে তােমার প্রয়ােজনের প্রত্যেকটি বস্তু পেয়ে যাবে। তােমার জীবনে প্রয়ােজনের বস্তু পেতে কিঞ্চিৎমাত্র বাধা আসবে না। আর এই ফল যদি তুমি নিজেই খেয়ে নাও তাে বাধা এসে উপস্থিত হবে। এই আমগাছ যদি নিজের ফল নিজেই খেয়ে নেয় তাে এর মালিক যেই হােক না কেন সে কি করবে? একে কেটে ফেলবে কিনা ?
Page #18
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
আর এই লোকেরা তো নিজেদের ফল নিজেরাই খেয়ে ফেলছে আর উপর থেকে ফী চাইছে!
৯
একটা আবেদনপত্র লিখে দেওয়ার জন্য বাইশ টাকা চাইছে ! যে দেশে ‘ফ্রী অফ কস্ট' ওকালতি করতো আর তার উপর ঘরের খাবার খাইয়ে ওকালতি করতো সেখানে আজকে এই দশা হয়েছে। গ্রামে দু'পক্ষে ঝগড়া হয়েছে তো দেওয়ান সেই যুযুধান দু'পক্ষকে বলতেন, ‘ভাই চন্দুলাল, তুমি আজ সাড়ে-দশটার সময়ে আমার ঘরে এসো, আর নগীনদাস, তুমিও কিন্তু ওই সময়ে ঘরে এসো।' আর নগীনদাসের জায়গায় যদি কোনো মজুর বা চাষী হয়, যারা ঝগড়া করছে তো তাদের ঘরে ডাকতেন। দু'পক্ষকে ঘরে বসিয়ে তাদের মিটমাট করিয়ে দিতেন। যার পয়সা চুকাতে হবে তাকে কিছু নগদ দিইয়ে বাকিটা কিস্তিতে দেওয়ানোর ব্যবস্থা করে দিতেন। পরে দুজনকেই ডাকতেন যে, ‘চলো, আমার সাথে খেয়ে নেবে চলো।' দু'জনকে ভোজন করিয়ে ঘরে পাঠাতেন! এখন এমন উকিল আছে কি ? সেইজন্যে বোঝো আর সময়কে চিনে চলো। আর যে শুধু নিজের জন্যেই করে সে মৃত্যুর সময়ে দুঃখী হয়। জীবাত্মা (দেহ থেকে) বেরোয় না আর বাংলোমোটরগাড়ি ছেড়ে যেতে পারে না ।
শলা-পরামর্শ দেওয়ার জন্য ওদের কাছ থেকে পয়সা নিতেন না ৷ যেভাবে হোক মিটিয়ে দিতেন। নিজের ঘর থেকে দু'হাজার দিতেন। আর আজকাল তো পরামর্শ নিতে গেলে পরামর্শ দেওয়ার ফী হিসাবে একশো টাকা নিয়ে নেয়! ‘আরে, তুমি তো জৈন’। তাতে বলে, ‘এও তো জৈন, কিন্তু আমার তো ব্যবসা করতে হবে ?' সাহেব, পরামর্শের জন্যেও ফী ? আর তুমি জৈন ? ভগবানকেও লজ্জিত করছো ? বীতরাগদেরও লজ্জায় ফেলছো ? নো হাও (জ্ঞান) - এর ফী ? একি কাণ্ড ?
প্রশ্নকর্তা : এটা অতিরিক্ত বুদ্ধির ফী, এরকম বলছেন কি ?
দাদাশ্রী : বুদ্ধির জন্যে আপত্তি নেই, এই বুদ্ধি তো বাঁকা বুদ্ধি। নিজেরই লোকসান করানোর বুদ্ধি । বিপরীত বুদ্ধি ! ভগবান বুদ্ধির জন্যে
Page #19
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
কোনাে আপত্তি করেন নি। ভগবান বলেছেন যে সম্যক-বুদ্ধিও কিন্তু হতে পারে। সেই বুদ্ধি যদি বেশীহয় তাে এরকম মনে হয় যে কার-কার (সমস্যার) সমাধান করি, কাকে কাকে হেল্প করি, কার কার সার্ভিস নেই, তারা যাতে সার্ভিস পায় তা করি।
অবলাইজিং নেচার!
| প্রশ্নকর্তা : এখন আমার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বলছি যে একটা কুকুর যদি পায়রাকে মারতে যায়, আর আমি তাকে বাঁচাতে যাই তাে আমার দৃষ্টিতে আমি অবলাইজ করলাম ; তাে এতে আমি ব্যবস্থিতের রাস্তায় বাধা দিলাম যে ?
| দাদাশ্রী : এ অবলাইজ হবে কখন ? এর ব্যবস্থিতে থাকলে তবে তুমি কিছু করতে পারবে, নয়তাে কিছুই করতে পারবে না। তুমি অবলাইজিং নেচার রাখবে, এতে খুব পুণ্য হয় আর দুঃখ উৎপন্ন হওয়ার কোনাে রাস্তা থাকে না। পয়সা যদি না থাকে তাে ঘােরাঘুরি করে হােক বা বুদ্ধি (পরামর্শ) দিয়ে হােক, বােধ দিয়ে হােক, যেভাবে হােক অবলাইজ করবে।
পরােপকার, পরিণামে লাভ-ই আর এই জীবন যদি পরােপকারের জন্যে যায় তাে তােমার কোনাে | লােকসান হবে না। কোনাে প্রকারের বাধা-বিঘ্নও আসবে না। তােমার যা যা ইচ্ছে আছে সবই পূরণ হবে আর যদি লাফালাফি করাে তাে একটা ইচ্ছাও পুরাে হবে না। কারণ এই রীতি তাে তােমাকে ঘুমাতেই দেবেনা। এই শেঠদের তাে ঘুমই আসে না ; তিন-তিন, চার-চার দিন পর্যন্ত ঘুমাতেই পারে না। কারণ যাকে পেরেছে তাকেই লুটেছে এরা।
| সেইজন্যে অবলাইজিং নেচার করাে; যেমন ধরাে রাস্তায় যেতে যেতে পাড়া-পড়শীদের জিজ্ঞাসা করে যাও যে, ‘ভাই, আমি পােষ্ট-অফিসে যাচ্ছি, তােমাদের কোনাে চিঠি ডাকে দিতে হবে কি ? এরকম জিজ্ঞাসা
Page #20
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
১১
করতে অসুবিধাটা কোথায় ? কেউ বলতে পারে যে তােমার উপর আমার বিশ্বাস নেই। তাকে বলবে যে ভাই, পায়ে ধরে ক্ষমা চাইছি। কিন্তু অন্য কারাের বিশ্বাস থাকলে তারটা নিয়ে যাবে।
শিশুকাল থেকেই আমার মধ্যে এই অবলাইজিং নেচারের গুণ ছিল, সেটাই বলছি ; আর পঁচিশবছর বয়স হতে হতে তাে আমার সমস্ত ফ্রেণ্ড-সার্কেল আমাকে সুপারহিউম্যান বলতাে। হিউম্যান তাকে বলে যে দেয় এবং নেয়, সমানভাবে ব্যবহার করে। কেউ সুখ দিলে তাকে সুখ দেয় আর কেউ দুঃখ দিলে তাকে দুঃখ দেয়না। এইরকম ব্যবহার করলে তাকে মানুষ বলে।
এতে ইগােইজুম নরম্যাল! প্রশ্নকর্তা: পরােপকারের সাথে ইগােইজম থাকে কি ?
দাদাশ্রী : পরােপকার যে করে তার ইগােইজম সবসময় নরম্যালই থাকে ; তার বাস্তবসম্মত ‘ইগােইজম’ হয়। আর যে কোর্টে দেড়শাে টাকা ফী নিয়ে অন্যের কাজ করে তার ইগােইজম’ খুব বৰ্দ্ধিত থাকে।
| এই জগতের প্রকৃতির নিয়ম এই যে তােমার নিজের ফল অন্যকে দিলে প্রকৃতি তােমারটা চালিয়ে নেবে। এ গৃঢ় সায়েন্স, এই পরােক্ষধর্ম। পরে প্রত্যক্ষধর্ম আসে, শেষে আত্মধর্ম আসে। মনুষ্যজীবনের হিসাব এটুকুই ; সার এটুকুই যে মন-বচন-কায়া অন্যের জন্যে ব্যবহার করাে।
নতুন ধ্যেয় আজকের, রি-অ্যাকশন পূর্বের! প্রশ্নকর্তা: তাে পরােপকারের জন্যেই বাঁচা উচিৎ ?
দাদাশ্রী: হ্যা, পরােপকারের জন্যেই বাঁচা উচিৎ। কিন্তু এখন তুমি এই লাইন যদি বদলাও তাে এতে পূর্বের রি-অ্যাকশন আসবে আর তুমি বিরক্ত হয়ে উঠবে যে এ তাে আমাকে অনেক সহ্য করতে হচ্ছে ! কিন্তু কিছুদিন সহ্য করতে হলেও তারপরে তােমার কোনাে দুঃখ হবেনা। কিন্তু
Page #21
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
এখন তো নতুন করে লাইন বাঁধছো, সেইজন্যে পূর্বের রি-অ্যাকশন তো আসবেই। এতদিন পর্যন্ত যা উল্টো করেছো তার ফল আসবে না কি ?
১২
শেষে উপকার নিজের উপরে করবে!
কারোর উপকার করেছো, কাউকে লাভ পাইয়ে দিয়েছো, কারোর জন্যে বেঁচেছো তো সবসময় তার লাভ তুমি পাবে; কিন্তু এ ভৌতিক লাভ, এর ভৌতিক ফল পাবে।
প্রশ্নকর্তা : কারোর উপকার করার বদলে যদি নিজের উপকার করে তো ?
দাদাশ্রী : ব্যস, নিজের উপকার করার জন্যেই এই সমস্ত করতে হবে। যে নিজের উপকার করে তার তো কল্যাণ হয়, কিন্তু এর জন্যে নিজেকে (নিজের আত্মাকে) জানতে হয় ; ততদিন পর্য্যন্ত অন্যের উপকার করবে কিন্তু এর ভৌতিক ফল পাবে। নিজেকে জানার জন্যে ‘আমি কে’ তা জানতে হবে। বাস্তবে তুমি স্বয়ং শুদ্ধাত্মা কিন্তু তুমি তো এতদিন পৰ্য্যন্ত ‘আমি চন্দুভাই' এটুকুই জেনেছো, না কি অন্য কিছু জেনেছো ? এই ‘চন্দুভাই’–কেই ‘আমি' বলেছো। তারপর এর স্বামী, এর মামা, এর কাকা এইসব পর্যায় চলেছে! এই রকমই হয়েছে কিনা ? এই জ্ঞান-ই তো তোমার কাছে আছে ? এর থেকে আগে তো যাও নি ?
মানব সেবা, সামাজিক ধর্ম !
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু ব্যবহারে তো এরকম হয় যে দয়ার ভাব থাকে, সেবা থাকে, কারোর প্রতি এমন মনোভাব থাকে যে এর জন্যে কিছু করি, কাউকে চাকরি দেওয়ানো, অসুস্থকে হাসপাতালে ভর্তি করা – অর্থাৎ এই সমস্ত ক্রিয়া তো এক ধরণের ব্যবহার ধর্মই হলো ।
দাদাশ্রী : এ সমস্তকে তো সাধারন কর্তব্য বলে।
প্রশ্নকর্তা : তাহলে মানবসেবা এক ধরণের ব্যবহার হলো, এরকমই বুঝবো তো ? এ তো ব্যবহার ধর্মই হলো ?
Page #22
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
দাদাশ্রী : এ ব্যবহার ধর্ম কিন্তু নয়, একে তো সমাজ ধর্ম বলে। যা সমাজের অনুকূল হয় তা লোকেদের অনুকূল হয় ; কিন্তু এই সেবা অন্য সমাজকে করতে গেলে তা তার প্রতিকূল হতে পারে। সেইজন্যে ব্যবহার ধর্ম তাকে বলে যখন সবার জন্যে তা একই হয়! এতদিন পর্য্যন্ত তুমি যা করেছো তাকে সমাজসেবা বলে। প্রত্যেকের সমাজসেবা আলাদা আলাদা প্রকারের হয়। প্রত্যেক সমাজ আলাদা আর তেমনি সেবাও আলাদা আলাদা হয়।
১৩
লোকসেবা, বিগিন্স ফ্রম হোম !
প্রশ্নকর্তা : যারা লোকসেবাতে এসেছে তারা কিসের জন্যে এসেছে ? দাদাশ্রী : এ তো ভাবনা ভালো ছিলো। লোকেদের কি করে ভাল হয় সেই ইচ্ছা ছিল। মনোভাব ভাল ছিল বলেই না ! এ তো লোকেদের প্রতি অনুকম্পা থাকে যে এই লোকেদের যে দুঃখ আছে তা যেন না থাকে ৷ সেই ভাবনা আছে এর পিছনে ; খুব উঁচু ভাবনা। কিন্তু লোকসেবকদের আমি দেখেছি ; তাদের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি তো দেখেছি সেখানে অশান্তি আছে। সেইজন্যে একে সেবা বলে না। সেবা ঘর থেকে শুরু হতে হবে। বিগিন্স ফ্রম হোম, তারপরে নেবারস্ (প্রতিবেশী) আর তার পরে অন্যদের সেবা। এ’তো ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে সেখানে অশান্তি দেখা যায়। তোমার কি রকম লাগছে ? সেইজন্যে প্রথমে ঘর থেকে সেবা হওয়া উচিৎ কিনা ?
প্রশ্নকর্তা : এই ভাই বলছে যে এর ক্ষেত্রে ঘরে অশান্তি নেই । দাদাশ্রী : এর অর্থ এই হল যে এ খাঁটি সেবা করছে।
করো জনসেবা, শুদ্ধ মনোভাব রেখে !
প্রশ্নকর্তা : লোকসেবা করতে করতে এদের মধ্যে ভগবানের দর্শন করে সেবা করলে তা যথার্থ ফল দেবে কি ?
Page #23
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা - পরােপকার
| ১৪
দাদাশ্রী : ভগবানের দর্শন হলে তাে লােকসেবার পিছনে পড়ে না, কারণভগবানেরদর্শন হওয়ার পরে কেউকি ভগবানকে ছাড়বে ? এইজন্যে লােকসেবা করতে হবে যাতে ভগবানকে পাওয়া যায়। লােকসেবা তাে হৃদয় থেকে হওয়া দরকার, হৃদয়পূর্বক হলে সবার কাছে পৌঁছায়। লােকসেবা আর খ্যাতি এই দুই একসাথে হলে মুস্কিলে ফেলে দেয় মানুষকে। খ্যাতি ছাড়া লােকসেবা হলে তা খাঁটি সেবা। খ্যাতি তাে হবে কিন্তু খ্যাতির ইচ্ছারহিত হওয়া চাই।
| লােকসেবা লােকে করে না। এতাে অন্তরে কীর্তির লােভ, মানএর লােভ, সমস্ত ধরণের লােভ পড়ে রয়েছে, তারাই করাচ্ছে। লােকসেবা করার মানুষ কি রকম হয় ? অপরিগ্রহী পুরুষ হয়। সবাই তােনামের জন্য করে। ধীরে ধীরে কোনােদিন মন্ত্রী হবাে’ এই মনে করে জনসেবা করে। অন্তরে চুরির মনােভাব থাকে, সেইজন্যে বাইরে ঝঞ্জাট, বিনা কাজের পরিগ্রহী, সম্পূর্ণ পরিগ্রহী হয় আর অন্যদিকে জনসেবা করতে চায়। দু'টোই কিভাবে সম্ভব ?
প্রশ্নকর্তা : এখন তাে আমি মানবসেবা করছি। ঘরে ঘরে গিয়ে সবার কাছে ভিক্ষে করে গরীবদের দিচ্ছি। এটুকুই এখন করছি।
| দাদাশ্রী : এ সমস্ত তাে তােমার খাতায় জমা হচ্ছে। তুমি যে দিচ্ছাে তা...না, না, তুমি মধ্যে থেকে যে কাজ করছে তার রাশি বের করবে। সেই রাশি এগারাে গুণ করে তার উপরে যে দালালী হবে তা তুমি পাবে। সামনের জন্মে দালালী পাবে আর এর জন্যে শান্তি থাকবে তােমার। এই যে ভালাে কাজ করছে তার জন্যে এখন শান্তি থাকবে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। এ তাে ভালাে কাজ।
নয়তাে সেবা তাে তারই নাম যখন তুমি কাজ করছে কিন্তু তা আমি জানতেও পারি না। একে সেবা বলে। সেবা গুপ্ত হয়। জানাজানি হলে তাকে সেবা বলে না। সুরতের একটা গ্রামে গিয়েছিলাম। একজন এসে
Page #24
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
বললো, ‘আমি সমাজসেবা করি'। আমি বললাম, “কি সমাজসেবা তুমি করো ?' তাতে বললো, “আমি ধনীদের কাছ থেকে এনে গরীবদের দিই।' আমি বললাম যে ‘দেওয়ার পরে খোঁজ নাও কি যে এরা কিভাবে তা খরচ করছে ?’ তাতে বললো “তা আমার দেখার কি দরকার ?' পরে ওকে বোঝাই যে ‘ভাই, আমি তোমাকে রাস্তা দেখাচ্ছি, সেইভাবে করো। ধনীদের কাছ থেকে পয়সা এনে তার থেকে একে একশো টাকার ঠেলা কিনে দাও । ওই যে ঠেলাগাড়ি পাওয়া যায় দু'চাকার, সেইরকম ঠেলা একশো-দেড়শো বা দু'শো টাকার কিনে দাও। এছাড়া পঞ্চাশ টাকা আলাদা দিয়ে বলো যে তুমি শাক-সব্জী কিনে এনে বিক্রি করো ; আমাকে রোজ সন্ধ্যায় তার থেকে মূলধনের টাকা ফেরৎ দেবে। লাভ তোমার আর ঠেলার দরুণ কিছু পয়সা রোজ ফেরৎ দেবে।' সে বললো, “খুব ভালো, খুব ভালো ৷ আপনি আবার সুরত আসার আগে পঞ্চাশ-একশো মানুষ জুটিয়ে আনবো।' এখন কিছু করো, এইসব গরীবদের ঠেলাগাড়ি-টাড়ি দাও। এদের কি কোনো বড় ব্যবসা করার প্রয়োজন আছে ? একটা ঠেলা দিয়ে দাও তো সন্ধ্যা পর্যন্ত কুড়ি টাকা রোজগার করে নেবে। তোমার কি মনে হচ্ছে ? ওদের এরকম দেওয়া হলে আমরা খাঁটি জৈন হলাম তো ? ধূপকাঠিও জ্বলতে জ্বলতে সুগন্ধ দিয়ে জ্বলে, নয় কি ? সমস্ত ঘর সুগন্ধে ভরে দিয়ে যায় না কি ? তো আমাদের থেকেও কি সুগন্ধ ছড়াবে না ?
১৫
এরকম কেন হয় আমার ? আমি তো পঁচিশ-ত্রিশ বছর বয়সেও অহংকার করতাম। তাও আবার বিচিত্র ধরণের অহংকার করতাম। আমার সাথে কারোর পরিচয় হলো আর তাতে যদি এর কোনো লাভ না হয় তো আমার সাথে পরিচয় হওয়াটা ভুল হয়েছে। সেইজন্যে প্রত্যেক মানুষ আমার কাছ থেকে লাভ পেয়েছে। আমার সাথে পরিচয় হলো অথচ কোনো লাভ পেল না, তো সেই পরিচয় কোন কাজের ? আমগাছ কি বলে ? আমের সময়ে আমার কাছে যে আসে সে যদি কোনো লাভ না পায় তো আমি আমগাছই নই। ভালো তা সে ছোট–ই হোক না কেন, তোমার
Page #25
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
যদি ঠিক মনে হয় তাে তুমি এর লাভ তাে পাও! এই আমগাছ কিছু লাভ করে না। এরকম কিছু বিচারধারা তাে হওয়া প্রয়ােজন। এই মনুষ্যদশা কেমন হওয়া উচিৎ ? তা বুঝতে পারলে সবাই দূরদশীহ হয়ে যাবে। এতাে আবরণ পড়ে গেছে ; কেউ কিছু করেছে আর তা দেখে সবাই তা-ই করতে শুরু করে। তােমার কি মনে হয় ?
প্রশ্নকর্তা :হ্যা, আপনি যা বলছেন এরকম সেবা প্রতিষ্ঠান সব জায়গাতেই আছে।
দাদাশ্রী : কিন্তু এখন তাে এরাও মুস্কিলে ফ্যালে! সেইজন্যে কারাের দোষ নেই। যা হওয়ার ছিল হয়ে গেছে, কিন্তু এখন শােধরাতে চাইলে এরকম বিচার করে শােধরাতে পারে আর খারাপ হওয়াকে শােধরানাের নামই ধর্ম। সবাই তাে শুধু শুধরে যাওয়াকেই শােধরানাের জন্যে তৈরী থাকে, কিন্তু বিগড়ে যাওয়াকে শােধরানাে, তাকেই ধর্ম বলে।
| মানবসেবা – এ প্রভুসেবা ? প্রশ্নকর্তা: মানবসেবা তাে প্রভুসেবাই!
দাদাশ্রী : না, প্রভুসেবা নয়। অন্যের সেবা কখন করে ? যখন নিজের ভিতরে দুঃখ হয়। তােমার কোনাে মানুষের উপর দয়া হয় অর্থাৎ এর স্থিতি দেখে তােমার ভিতরে দুঃখ হয় আর এই দুঃখ ঘােচানাের জন্যে তুমি এই সব সেবা করছে। এসব কিছুই নিজের দুঃখ ঘােচানাের জন্যে। এক ব্যক্তি খুব দয়ালু; সে বলে আমি দয়া করে এই লােকেদের এই দিয়েছি। আর তাই দিয়েছি....না, তুমি তােমার দুঃখ ঘােচানাের জন্যে এই লােকেদের দিচ্ছাে। কথাটা বুঝতে পারলে ? খুবই গভীর কথা; হাল্কা কথা নয় এটা। নিজের দুঃখ ঘােচানাের জন্যে দিচ্ছে। কিন্তু এটা ভালাে কাজ। কাউকে দিলে তুমি ফিরে পাবে।
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু জনতা-জনার্দনের সেবা – এটাই ভগবানের সেবা নাকি অমূর্তকে মূর্ত রূপ দিয়ে পূজা, তা ভগবানের সেবা ?
Page #26
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
দাদাশ্রী : জনতা-জনার্দনের সেবা করলে তুমি সংসারের সমস্ত সুখ পাবে, ভৌতিক সুখ আর ধীরে ধীরে স্টেপ বাই স্টেপ মোক্ষের প্রতি অগ্রসর হবে। কিন্তু তা প্রত্যেক জন্মে করতে পারবে এমন নয়। কোনো জন্মে সংযোগ পেয়ে গেলে হবে। নয়তো প্রত্যেক জন্মে হয় না বলে এটা সিদ্ধান্ত নয় ৷
১৭
. কল্যাণ -এর শ্রেণী-ই কি আলাদা !
সমাজ কল্যাণ করাকে জগতের কল্যাণ করছে বলা যায় না। এ’তো এক সাংসারিকভাব, এই সবকিছুকে সমাজকল্যাণ বলে। যে যতটুকু করতে পারে ততটুকু করে ; এসবকে স্থূল ভাষা বলে। আর জগৎ-কল্যাণ করা, এ তো সূক্ষ্ম ভাষা, সূক্ষ্মতর ভাষা এবং সূক্ষ্মতম ভাষা ! শুধুমাত্র এরকম সূক্ষ্মতম ভাব-ই হয় অথবা তার ছিটেফোঁটা হয়।
সমাজসেবা প্রকৃতি স্বভাব
সমাজসেবা তো যার ভেক্ বাঁধা হয়ে গেছে আর ভেক্ নিয়েছে সে যখন ঘরের জন্য বিশেষ কিছু না করে বাইরের লোকের সেবা করে বেড়ায় তাকে বলে। আর দ্বিতীয়তঃ নিজের আন্তরিক ভাব ; এই ভাব তো নিজের মধ্যে আসতেই থাকে। কারোর উপর দয়া হয়, কারোর উপর মমত্ব থাকে আর এসব তো নিজের প্রকৃতিতে নিয়েই আসে। কিন্তু শেষ অবধি এ সবই প্রকৃতি ধর্ম-ই। ওই সমাজসেবাও কিন্তু প্রকৃতি-ধর্ম ; একে প্রকৃতি স্বভাব এইজন্যে বলে যে কারোর স্বভাব এরকম, অন্যের স্বভাব অন্যরকম। কারোর দুঃখ দেওয়ার স্বভাব হয়, কারোর সুখ দেওয়ার স্বভাব হয়। এই দুই ধরণের স্বভাবকেই প্রকৃতি-স্বভাব বলে, আত্ম-স্বভাব নয়। প্রকৃতিতে যেরকম জিনিষ ভরে এনেছে সেরকম জিনিষ বেরোচ্ছে।
সেবা – কুসেবা, প্রাকৃত স্বভাব !
তুমি যে এই সেবা করছো তা প্রকৃতি স্বভাব আর একজন মানুষ
Page #27
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
| ১৮
কু-সেবা করছে তাও কিন্তু প্রকৃতি স্বভাব। এতে তােমারও পুরুষাৰ্থ নেই আর ওর-ও পুরুষার্থ নেই; কিন্তু মনে করছে যে আমি করছি। এখন ‘আমি করছি’– এটাই ভ্রান্তি। এখানে এই জ্ঞান পাওয়ার পরেও তুমি সেবা তাে করবে কারণ প্রকৃতিই এরকম নিয়ে এসেছে কিন্তু এই সেবা পরে শুদ্ধ সেবা হবে ; এখন শুভ সেবা হচ্ছে। শুভ সেবা অর্থাৎ বন্ধনে বাঁধার সেবা; সােনার বেড়ি তাও কিন্তু বন্ধন-ই! এই জ্ঞানের পরে অন্য মানুষের যাই হােক না কেন, তােমার কিন্তু দুঃখ হবে না আর তারও দুঃখ দূর হবে; কারণ তােমার ওর উপর করুণা থাকবে। এখন তাে তােমার দয়া হয় যে বেচারা কি দুঃখ পাচ্ছে! কত দুঃখ হচ্ছে ? এই ভেবে তােমার দয়া হয়। এই দয়া সবসময় তােমাকে দুঃখ দেবে। যেখানে দয়া সেখানে অহংকার থাকেই। দয়ার ভাব ছাড়া প্রকৃতি সেবা করেই না। আর এই জ্ঞান-এর পরে তােমার করুণাভাব থাকবে।
সেবা ভাবের ফল ভৌতিক সুখ আর কু-সেবা ভাবের ফল ভৌতিক দুঃখ। সেবা ভাব থেকে নিজের ‘স্ব’-কে জানা যায় না। কিন্তু যতক্ষণ পৰ্য্যন্ত ‘স্ব’-কে না পাচ্ছাে ততক্ষণ পর্যন্ত পরােপকারী স্বভাব রখো।
খাঁটি সমাজসেবক! তুমি কাকে সাহায্য করাে ? প্রশ্নকর্তা : সমাজের সেবায় অনেকটা সময় ব্যয় করি।
দাদাশ্রী : সমাজসেবা তাে অনেক প্রকারের হয়। যে সমাজসেবায় কিঞ্চিৎমাত্রও ‘আমি সমাজসেবক এই ভান থাকে না, সেই সমাজসেবাই খাঁটি।
প্রশ্নকর্তা; এ কথা তাে ঠিক।
দাদাশ্রী : নয়তাে সমাজসেবক তাে যত্র-তত্র, সর্বত্র দু-চারজন করে। থাকেই। আমি সমাজসেবক বলে সাদা টুপি পরে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু ‘আমি সমাজসেবক’ এই ভানযখন ভুলে যায় তখনই সে খাটি সমাজসেবক হয়।
Page #28
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা - পরােপকার
১১
প্রশ্নকর্তা: কোনও ভাল কাজ করলে অন্তরে অহংকার চলে আসে। যে আমি করেছি।
দাদাশী: এতাে আসেই। প্রশ্নকর্তা : তাে ভােলার জন্য কি করবাে ?
দাদাশ্রী: আমি সমাজসেবক, এই অহংকার আসা উচিৎ নয়। ভালাে কাজ করে যদি তার অহংকারহয় তাে পরে তােমার ইষ্টদেব বা যে ভগবানকে মানাে তাঁকে বলবে যে, হে ভগবান, আমি অহংকার করতে চাই না কিন্তু তবু হয়ে যাচ্ছে, আমাকে ক্ষমা করুন!' এটুকুই করাে। হবে এটুকু ?
প্রশ্নকর্তা: হবে। দাদাশ্রী : এটুকুই করাে না !
সমাজসেবার অর্থ কি ? এ অনেক কিছু ‘মাই'-কে ভেঙ্গে দেয়। ‘মাই’ (আমার) যদি সম্পূর্ণ চলে যায় তাে স্বয়ংই পরমাত্মা ! এ পরে তাে সুখ পাবেই!
সেবাতে অহংকার! প্রশ্নকর্তা: তাে এই জগতের জন্যে কি আমার কিছুই করার থাকবে ? | দাদাশ্রী : তােমার করার ছিলই না, এতাে অহংকার খাড়া হয়ে গেছে। একমাত্র মানুষই কর্তাপনার অহংকার করে।
| প্রশ্নকর্তা: এই বােন ডাক্তার। এক গরীব ‘পেশেন্ট’ এসেছে, তার প্রতি এর অনুকম্পা হয়, সেবা-শুশ্রুষা করে। আপনার কথা অনুসারে তাে এর আর অনুকম্পা করার কোনও প্রশ্নই থাকে না, থাকে কি ?
দাদাশ্রী : এই অনুকম্পাও কিন্তু কুতী (প্রাকৃতিক) হয়। কিন্তু পরে অহংকার করে, আমি কত অনুকম্পা দেখালাম!’ অহংকারনা করলে কোনও অসুবিধা নেই কিন্তু অহংকার না করে তাে থাকতে পারেনা !
Page #29
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
২০
সেবা–তে সমর্পণ ? !
প্রশ্নকর্তা : এই জগতের সেবা পরমাত্মাকে সেবা করছি এমন ভাব নিয়ে করলে তা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে তো ?
দাদাশ্রী : হ্যাঁ, এর ফলে পুণ্য পাওয়া যায়, মোক্ষ পাওয়া যায় না। প্রশ্নকর্তা : এর শ্রেয় যদি সাক্ষাৎ পরমাত্মাকে সঁপে দিই তবুও মোক্ষ পাবো না ?
দাদাশ্রী : এমনভাবে ফল কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় না।
প্রশ্নকর্তা : মানসিক সমর্পণ করি তো ?
দাদাশ্রী : সমর্পণ করলেও কেউ সে ফল নেয় না আর কেউ দেয়ও না। এ তো শুধু কথার কথা। খাঁটি ধর্ম তো ‘জ্ঞানী পুরুষ' যখন আত্মা প্রাপ্ত করিয়ে দেন তখন থেকে স্বয়ং চলতেই থাকে আর ব্যবহার ধর্ম তো আমাদের করতে হয়, শিখতে হয়।
ভৌতিক সমৃদ্ধি, বাই-প্রোডাকশনে !
প্রশ্নকর্তা : ভৌতিক সমৃদ্ধি পাওয়ার ইচ্ছা-প্রচেষ্টা, আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্যে বাধাস্বরূপ কি ? যদি বাধাস্বরূপ হয় তোতা কিভাবে আর যদি বাধাস্বরূপ না হয় তো তা কিভাবে ?
দাদাশ্রী : ভৌতিক সমৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তোমাকে এক দিকে যেতে হবে আর আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তো অন্যদিকে যেতে হবে। অর্থাৎ তোমার একদিকে যাওয়ার হলে তুমি যদি তার বদলে অন্য দিকে যাও তো বাধাস্বরূপ হয় কিনা ?
প্রশ্নকর্তা : হ্যাঁ, একে বাধাস্বরূপ বলে!
দাদাশ্রী : অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বাধাস্বরূপই। আধ্যাত্মিক এই দিকে হলে ভৌতিক অন্যদিকে হবে।
Page #30
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু ভৌতিক সমৃদ্ধি ছাড়া কিভাবে চলবে ?
দাদাশ্রী : ভৌতিক সমৃদ্ধি এই দুনিয়াতে কেউ সত্যিই করেছে কি ? সমস্ত লোক ভৌতিক সমৃদ্ধির পিছনেই পড়ে আছে। সত্যি সত্যিই কেউ পেয়েছে কি ?
প্রশ্নকর্তা : কেউ কেউ পায়, সবাই পায় না ৷
দাদাশ্রী : এই ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই, যেখানে ক্ষমতা নেই সেখানে ব্যর্থ হাঁকাহাঁকি করার মানে কি ? মীনিংলেস্ !
প্রশ্নকর্তা : যতক্ষণ পর্যন্ত এর কোনও কামনা আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আধ্যাত্মিকতাতে কিভাবে যাবে ?
দাদাশ্রী : হ্যাঁ, কামনা হয় তা ঠিক। কামনা হয়, কিন্তু তোমার হাতে এর সত্তা নেই ।
প্রশ্নকর্তা : এই কামনা কিভাবে যাবে ?
দাদাশ্রী : কামনার ধন পরে আসবে। তোমার এর জন্যে মাথাব্যাথা করার দরকার নেই। তুমি আধ্যাত্মিক-এর জন্যে করো। এই ভৌতিক সমৃদ্ধি তো বাই-প্রোডাক্ট। তুমি আধ্যাত্মিক-এর প্রোডাকশন করো, এক দিশাতে যাও আর যদি আধ্যাত্মিক-এর প্রোডাকশন করো, তাহলে ভৌতিক সমৃদ্ধি বাই-প্রোডাক্ট হিসাবে তুমি ফ্রী অফ কস্ট পাবে।
প্রশ্নকর্তা : আধ্যাত্মিক দিকে যেতে বলতে কি বোঝাতে চাইছেন ? কিভাবে যাবো ?
দাদাশ্রী : এটা বুঝতে পেরেছো কি যে আধ্যাত্মিক অর্থাৎ আধ্যাত্মিকএর প্রোডাকশন যদি তুমি করো তো ভৌতিক বাই-প্রোডাক্ট; এটা তুমি বুঝেছো কি না ?
প্রশ্নকর্তা : আপনি বলেছেন তাই মেনে নিচ্ছি কিন্তু এ আমি বুঝতে পারিনি ।
দাদাশ্রী : এটা মেনে নাও তো এই সবই বাই-প্রোডাক্ট। বাইপ্রোডাক্ট অর্থাৎ ফ্রী অফ কস্ট। এই সংসারের বিনাশী সুখ সবই বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে পাওয়া যায়। আধ্যাত্মিক সুখ প্রাপ্ত করার রাস্তায় যেতে যেতে বাই প্রোডাকশনে পাওয়া যায় এ সব ।
Page #31
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
| প্রশ্নকর্তা : আমি তাে অনেক লােককে এরকম দেখেছি যারা আধ্যাত্মিক দিকে যায় না, কিন্তু ভৌতিক দিকে খুবই সমৃদ্ধ আর এতেই এরা সুখী।
| দাদাশ্রী : হা, কিন্তু এদের আধ্যাত্মিক দিকে যেতে দেখা না গেলেও এরা আধ্যাত্মিক কাজ করেছে বলেই তার ফলস্বরূপ পেয়েছে এটা।
প্রশ্নকর্তা: অর্থাৎ এই জন্মে আধ্যাত্মিক কাজকরে সেইজন্যে পরের জন্মে ভৌতিক সুখ পায় ?
দাদাশী: হ্যা, এর ফল তুমি পরের জন্মে পাবে। আজ এদের ফল দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এখন এরা আধ্যত্মিকতাতে নাও থাকতে পারে।
কার্যের হেতু, সেবা না কি লক্ষ্মী ? প্রত্যেক কাজের একটা হেতু থাকে যে এই হেতুর জন্যে এই কাজ করা হচ্ছে। এতে উচ্চ হেতু যদি কেউ স্থির করে, অর্থাৎ যদি চিকিৎসালয় তৈরী করার হয় তাহলে পেশেন্ট কেমন করে আরােগ্য হবে, কি করে সুখী হবে, কি করে এই লােকেরা আনন্দে থাকবে, কি করে এদের জীবনীশক্তি বাড়বে এরকম সব উচ্চ হেতু যদি স্থির করা হয় আর সেবাভাব থেকে যদি এই কাজ করা হয় তাে তার বাই-প্রােডাকশন কি ? লক্ষ্মী ! অর্থাৎ লক্ষ্মী তােবাই-প্রােডাক্ট, একে প্রােডাকশন ধরে নিও না। সমস্ত জগৎ লক্ষ্মীকেই প্রােডাকশন করেছে, সেইজন্যে এরা বাই-প্রােডাকশনের লাভ পায় না।
| সেইজন্য শুধুমাত্র সেবাভাবকেই যদি তুমি হেতু করাে তাে বাই| প্রােডাকশনে পরে লক্ষ্মী অনেক আসবে। অর্থাৎ লক্ষ্মীকে বাই-প্রােডাক্টে রাখলে লক্ষ্মী বেশী করে আসে কিন্তু এরা তাে লক্ষ্মী প্রাপ্তির হেতুতে লক্ষ্মীর জন্যে করে তাই লক্ষ্মী আসে না। সেইজন্য তােমাকে হেতু বলছি যে নিরন্তর সেবাভাব' এই হেতু স্থির করাে, তাহলে বাই-প্রােডাক্ট আপনা থেকেই আসতে থাকবে। যেমন বাই-প্রােডাক্টের জন্যে কোনও পরিশ্রম করতে হয়না, খরচা করতে হয়না, এ ফ্রী অফ কস্ট আসে তেমনি লক্ষ্মীও কিন্তু ফ্রী অফ কস্ট পাওয়া যায়। তুমি এইরকম লক্ষ্মী চাও, না কি দুনীতির
Page #32
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
লক্ষ্মী চাও ? দুর্নীতির লক্ষ্মী চাও না তো ? তাহলে ভালো! যা ফ্রী অফ কস্ট পাওয়া যায় তা কত ভালো !
২৩
সেইজন্য সেবাভাব নিশ্চিত করো, মনুষ্যমাত্রের সেবা। যদি তুমি চিকিৎসালয় করো তাহলে তুমি যে বিদ্যা জানো তা সেবাভাবে ব্যবহার করো – এটাই তোমার হেতু হওয়া উচিৎ। এর ফলস্বরূপ অন্যসব বস্তু ফ্রী অফ কস্ট পাবে আর পরে কোনোদিনও লক্ষ্মী কম পড়বে না। আর যে লক্ষ্মীর জন্যে করতে গেছে তার লোকসান হয়েছে। হ্যাঁ, যদি লক্ষ্মীর জন্যে কারখানা খোলো তাহলে বাই-প্রোডাকশনে তো কিছু থাকলো না ! কারণ লক্ষ্মীই বাই-প্রোডাকক্ট, বাই-প্রোডাকশনের! সেইজন্যে তুমি প্রোডাকশন স্থির করবে তাহলে বাই-প্রোডাকশন ফ্রী অফ কস্ট পাবে ।
জগৎ-কল্যাণই প্রোডাকশন্ !
আত্মা প্রাপ্ত করার জন্য যা করতে হয় তা প্রোডাকশন; এর কারণে বাই-প্রোডাক্ট পাওয়া যায় আর সংসারের সমস্ত প্রয়োজন পুরো হয়ে যায় । আমি তো আমার একটাই প্রোডাকশন রেখেছি, ‘জগৎ পরম শান্তি পায় আর অনেকে মোক্ষ লাভ করে।' এই আমার প্রোডাকশন আর এর কারণে আমি বাই-প্রোডাকশন পেয়েই যাচ্ছি। এই যে চা-জল আমি তোমার থেকে আলাদা ধরণের পাই, এর কারণ কি ? তোমার থেকে আমার প্রোডাকশন উচ্চস্তরের। তোমার প্রোডাকশন যদি এরকম উচ্চস্তরের হয় তাহলে বাই-প্রোডাকশনও উচ্চস্তরের আসবে। প্রত্যেকটা কাজের হেতু থাকে। হেতু যদি সেবাভাব হয় তো লক্ষ্মী ‘বাই-প্রোডাক্ট’ আসবেই।
পরোক্ষে ভগবানের সেবা
অন্য সব প্রোডাকশন বাই-প্রোডাক্টই হয়। এতে তোমার প্রয়োজনের সমস্ত বস্তু পেয়েই যাবে আর ইজিলি পাবে। দ্যাখো, এ প্রোডাকশন পয়সার করেছে, তাই আজ পয়সা ইজিলি পাচ্ছে না। দৌড়াদৌড়ি করে, হড়বড় হড়বড় করে, এত ঘোরাঘুরি করে আর মুখ এমন দেখায় যেন মুখে এরণ্ড-র তেল মেখে ঘুরছে! ঘরে ভালো খাওয়া
Page #33
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
২৪
দাওয়ার ব্যবস্থা আছে, কত সুবিধা আছে, এখন রাস্তা কত সুন্দর, রাস্তা দিয়ে চললে পা ধুলাে ভর্তি হয়ে যায় না। অতএব মানুষের সেবা করাে। মানুষের মধ্যেই ভগবান আছেন। ভগবান অন্তরেই বিরাজমান। বাইরে ভগবানকে খুঁজতে গেলে তাঁকে পাওয়া যাবেনা।
তুমি মানুষের ডাক্তার সেইজন্যে তােমাকে মানুষের সেবা করার কথা বলছি। পশু চিকিৎসক হলে পশুদের সেবা করতে বলতাম। পশুদের অন্তরেও ভগবান আছেন কিন্তু মানুষের ভিতরে ভগবান বিশেষরূপে প্রকট হয়েছেন।
সেবা-পরােপকারের আগে মােক্ষমার্গ! প্রশ্নকর্তা: সমাজসেবার মার্গের থেকে মােক্ষমার্গ কিভাবে ভালাে তা একটু বুঝিয়ে বলুন।
দাদাশ্রী: সমাজসেবককে তুমি জিজ্ঞাসা করাে যে তুমি কে ? তাতে বলবে, আমি সমাজসেবক। কি বলবে ? এই তাে বলবে, কি অন্য কিছু বলবে ?
প্রশ্নকর্তা : এই বলবে!
| দাদাশী; অর্থাৎ আমি সমাজসেবক’ বলা ইগােইজম আর এই ভাইকে যদি বলি যে তুমি কে ?' তাতে বলবে ‘বাইরের পরিচয়ের জন্যে আমি চন্দুভাই, কিন্তু সঠিক বললে আমি তাে শুদ্ধাত্মা।' এটা বলায় ইগােইজ নেই। উইদাউট ইগােইজ।
সমাজসেবার ইগাে (অহং) ভালােকাজের জন্য, কিন্তু ইগাে-ই তাে।। খারাপ কাজের জন্যে ইগাে হলে তাকে রাক্ষসবলে। ভালাে কাজের জন্যে ইগাে হলে তাকে দেবতা বলে। ইগাে অর্থাৎ ইগাে। ইগাে অর্থাৎ ঘুরে মরা আর ইগাে যদি চলে যায় তাে এখানেই মােক্ষ হয়ে যাবে।
‘আমি কে’ এটা জানা-ই ধর্ম! প্রশ্নকর্তা : প্রত্যেক জীবের কি করা উচিৎ ? এদের ধর্ম কি ? দাদাশ্রী : যে যা করছে সেটাই তার ধর্ম। কিন্তু আমি বলছি যে।
Page #34
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
আমার ধর্ম এতটুকুই ; যার আমি ইগােইজকরছি যে এটা আমি করেছি। সেইজন্যে এখন তােমাকে আমি কে' এইটুকু জানতে হবে, এর জন্যে প্রচেষ্টা করতে হবে। তাহলে সমস্ত পা সম্ভ হয়ে যাবে। পরে আর পাজ খাড়া হবে না আর পাজ খাড়া না হলে স্বতন্ত্র হয়ে যাবে।
লক্ষ্মী, সে তাে বাই-প্রােডাকশনে!
প্রশ্নকর্তা : প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য তাে এইরকমই হয় যে। মনুষ্যমাত্রেরই ভালাে করতে হবে তা সে উকিল-ই হােক আর ডাক্তার-ই। হােক।
| দাদাশ্রী : হ্যা, কিন্তু এ তাে ভালাে করবাে এরকম স্থির না করেই শুধু করে চলেছে ; কোনও ডিসিশন নেয় নি, কোনরকমের হেতু স্থির না। করেই গাড়ি এমনি এমনি চালিয়ে যাচ্ছে। কোথায় যেতে হবে তা জানা নেই আর কোথায় নামতে হবে তাও জানে না ; রাস্তায় কোথায় চাজলখাবার খাবে তাও জানে না, অর্থাৎ এতই বিক্ষিপ্ত অবস্থা যে শুধুমাত্র দৌড়াদৌড়ি-ই করছে। হেতু স্থির করার পরে সব কাজ করতে হয়।
তােমার তাে শুধু হেতুই বদলাতে হবে আর অন্য কিছু করার নেই। পাম্পের ইঞ্জিনের একটা পাটা এদিকে দাও তাে জল বেরােয় আর অন্যদিকে পাটা দাও তাে ধান থেকে চাল বেরােয়। অর্থাৎ পাটার ব্যবহারেই পার্থক্য থাকে। হেতু নিশ্চিত করতে হবে আর এই হেতু তােমাকে লক্ষ্যে রাখতে হবে। ব্যস, অন্য আর কিছু নয়। লক্ষ্মী লক্ষ্যতে থাকা উচিৎ নয়।
‘স্বয়ং’ এর সেবায় সমাবিষ্ট সমস্ত ধর্ম! ধর্ম দুই ধরণের, তৃতীয় কোনও ধর্ম হয়না। যে ধর্মে জগতের সেবা করা হয় তা এক ধরণের ধর্ম, আর যেখানে নিজের (স্বয়ং-এর আত্মার) সেবা তা দ্বিতীয় ধরণের ধর্ম। স্বয়ং-এর সেবা যারা করে তারা হােম ডিপার্টমেন্ট-এ (আত্মস্বরূপে) যায় আর এই জগতের সেবা করে যারা, তারা সাংসারিক লাভ আর ভৌতিক সুখ পায়। আর যাতে জগতের
Page #35
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
কোনও ধরণের সেবা নেই, যেখানে স্ব-এর সেবা নেই সে সবই এক ধরণের সামাজিক ভাষণ ! আর নিজের উপর, স্ব-এর উপর ভয়ঙ্করভাবে (অহংকার-এর) নেশা চড়ায়। জগতের কোনও ধরণের সেবা যেখানে হয় সেখানে ধর্ম থাকে। জগতের সেবা না হলে স্ব-এর সেবা করাে। যে স্বএর সেবা করে সে জগতের সেবা করার চেয়েও ভালাে কাজ করে। কারণ যে স্ব-এর সেবা করে সে কাউকে দুঃখ দেয় না !
প্রশ্নকর্তা: কিন্তু ‘স্ব’-এর সেবা করা খেয়ালে আসা চাই তাে! দাদাশ্রী: এটা খেয়ালে আসা সহজ নয়। প্রশ্নকর্তা : তাে কিভাবে করবাে ?
দাদাশ্রী: এতাে স্ব-এর সেবা করছেন এমন কোনও জ্ঞানীপুরুষকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘সাহেব, আপনি পরের সেবা করছেন কি স্ব-এর ? তাতে সাহেব যদি বলেন যে, আমি স্ব-এর সেবা করছি’ তাহলে তাঁকে বলবে, আমাকেও এর রাস্তা দেখান !
|
‘স্ব’-এর সেবার লক্ষণ!
প্রশ্নকর্তা : ‘স্ব’-এর সেবার লক্ষণ কি ?
দাদাশী: ‘স্ব’-এর সেবার সর্বপ্রথম লক্ষণ কাউকে দুঃখ না দেওয়া। এতেই সমস্ত কিছু এসে যায়। এতে অ-ব্রাহ্মচর্য করে না। অ-ব্রহ্মচর্য করা অর্থাৎ কাউকে দুঃখ দেওয়ার সমান হয়ে যায়। যদি এমন ধরে নাও | যে সহমতের ভিত্তিতে অ-ব্রহ্মচর্য করছে তাে এতে কত জীব মারা যায়। সেইজন্যে এ দুঃখ দেওয়ার সমান। তাই এতে সেবাই বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া মিথ্যে বলে না, চুরি করে না, হিংসা করে না, পয়সা জমায় না। পরিগ্রহ করা, পয়সা জমা করা – এ হিংসাই। তাই অন্যকে দুঃখ দেয়। স্ব-এর সেবাতে সব কিছু এসে যায়।
প্রশ্নকর্তা: ‘স্ব’-এর সেবার অন্যান্য লক্ষণ কি কি ? কখন বলা যায় যে ‘স্ব’-এর সেবা করছে ?
Page #36
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার।
দাদাশ্রী: ‘স্ব’-এর সেবা যে করছে তাকে এই জগতের সব মানুষও যদি দুঃখ দেয় তাহলেও এ' কাউকে দুঃখ দেয় না। দুঃখ তাে দেয়-ই না এমনকি খারাপ ভাবও করে না যে তােমার খারাপ হােক ! তােমার ভাল হােক’ এরকম-ই বলে। হ্যা, তবুও যদি অন্য ব্যক্তি খারাপ বলে তাে আপত্তি নেই। অন্য ব্যক্তি যদি বলে, তুমি অপদার্থ, বদমায়েশ, তুমি দুঃখ দিচ্ছ,' তাে এতে আমার আপত্তি নেই। আমি কি করছি সেটাই দেখতে হবে। ব্যক্তি তাে রেডিয়াের মত বলতেই থাকবে; যেমন রেডিও বাজে তেমনি।
| প্রশ্নকর্তা : জীবনে সমস্ত লােক আমাকে দুঃখ দিলে সব দুঃখ আমাকে সহ্য করতে হবে এরকম তাে সম্ভব নয়। ঘরের মানুষ সামান্য অপমানজনক ব্যবহার করলে তাই সহ্য হয় না !
দাদাশ্রী: তাে কি করবে ? এতে না থাকলে কিসে থাকবে ? সেটা আমাকে বলাে। আমি যা বলছি সে লাইন যদি পছন্দ না হয় তাে সেই মানুষ। কিসে থাকবে ? সেফসাইড হয় এমন কোনাে জায়গা আছে কি ? কোথাও থাকে তাে আমাকে দেখাও।
প্রশ্নকর্তা : না, এরকম নয়। কিন্তু আমার ইগাে তাে আছে ?
দাদাশ্রী:জন্ম থেকেই ইগাে সবাইকে আটকায় কিন্তু তুমি আটকাবে । ইগাে তাে যেমন ইচ্ছা হয় তেমন নাচে। তােমার নাচার দরকার নেই। তুমি এর থেকে আলাদা।
এ ছাড়া আর সব ধার্মিক মনােরঞ্জন! অর্থাৎ ধর্ম দুই ধরণের হয়, তৃতীয় হয় না। আর সব তাে অর্নামেন্ট ! অর্নামেন্ট পাের্শন আর লােকে ‘বাহ বাহ করে!
যেখানে সেবা নেই, কোনও প্রকারের সেবা হয় না, জগৎ-সেবা নেই সে সমস্তই ধার্মিক মনােরঞ্জন আর সবই অর্নামেন্টাল পাের্শন!
বুদ্ধির ধর্ম তাে সেই অবধি স্বীকার্য যে পৰ্য্যন্ত সেবা করার বুদ্ধি,
Page #37
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
লােকেদের সুখ দেওয়ার বুদ্ধি আছে। এরকম বুদ্ধি হয় তাে ভালাে। বাকি অন্য সব বুদ্ধি অকাজের। অন্য সব বুদ্ধি উল্টে বন্ধনে বাঁধে। বেঁধে মার খাওয়ার আর যেখানে দ্যাখাে সেখানে শুধু লাভ-লােকসান দ্যাখে। বাসে উঠে আগে দেখে নেয় যে জায়গা কোথায় আছে। এই বুদ্ধি এখানেসেখানে ঘুরিয়ে মারে। অন্যের সেবা করার বুদ্ধি ভালাে। নয়তাে নিজের সেবা করার বুদ্ধির মত ভালাে আর কিছু নেই। যে নিজের সেবা করে সে সমস্ত জগতের সেবা করছে।
| জগতের কারাের দুঃখ না হয়। সেইজন্য আমি সকলকে বলি যে ভাই, সকালে বাইরে বেরােনাের সময় আর কিছু না পারাে তাে এটুকু তাে বলাে যে, ‘মন-বচন-কায়া দ্বারা এই জগতের কোনও জীবের যেন কিঞ্চিৎমাত্রও দুঃখ না হয়। এরকম পাঁচবার বলে বেরােও। বাকি সব দায়িত্ব আমার। হ্যা, অন্য কিছু না পারাে তাে আমি সামলে নেব। এতটুকু তাে বলাে ! পরে যদি কেউ দুঃখ পায় তাে তা আমি বুঝবাে। কিন্তু এটুকু তুমি বলাে। এতে আপত্তি আছে ?
প্রশ্নকর্তা: এতে কোনাে আপত্তি নেই।
দাদাশ্রী : তুমি বলবে কিন্তু। তাতে তুমি যদি বলাে যে, আমি যদি দুঃখ দিয়ে দিই তাে ?' এ তােমার দেখার প্রয়ােজন নেই। আমি পরে হাইকোর্টে সব সামলে নেব। এ তাে উকিলই দেখবে না কি ? আমি সব ঠিক করে দেব। সকালের প্রহরে তুমি আমার এই বাক্য পাঁচবার বলাে। এতে আপত্তির কিছু আছে ? খুব কঠিন কি ? খাঁটি হৃদয়ে দাদা ভগবানকে স্মরণ করে বলাে না, এতে আপত্তির কি আছে ?
প্রশ্নকর্তা : আমি এমনটাই করি।।
দাদাশ্রী : ব্যস, এটুকুই করাে। এই জগতে অন্য আর কিছু করার মতােইনয়।
Page #38
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
সংক্ষেপে ব্যবহার ধর্ম
সংসারের লোকেদের ব্যবহারধর্ম শেখাবার সময়ে আমি বলি যে পরানুগ্রহী হও (অন্যকে অনুগ্রহ করো)। নিজের জন্যে বিচারও যেন না আসে। লোককল্যাণের জন্যে পরানুগ্রাহী হও। যদি নিজের জন্যে খরচ করো তো গাটারে (নালায়) যাবে আর অন্যের জন্যে যদি একটুও কিছু খরচ করো তো তা ভবিষ্যতের অ্যাডজাস্টমেন্ট হবে।
শুদ্ধাত্মা ভগবান এই কথা বলেন, যে অন্যেরটা সামলায় তারটা আমি সামলে নিই আর যে নিজেরটাই সামলায় তারটা আমি তারই উপর ছেড়ে দিই ।
জগতের কাজ করো তো তোমার কাজ হতেই থাকবে। জগতের কাজ করলে তোমার কাজ আপনা আপনিই হতে থাকবে আর তখন তোমার আশ্চর্য্য মনে হবে।
সংসারের স্বরূপ কেমন ? জগতের জীবমাত্রের মধ্যে ভগবান বাস করেন, সেইজন্যে কোনো জীবকে যদি কোনোরকম ত্রাস দাও, দুঃখ দাও তো অধর্ম করা হবে। কোনো জীবকে সুখ দিলে ধর্ম হবে। অধর্মের ফল তোমার ইচ্ছা অনুসারে কাজ হবে না আর ধর্মের ফল তোমার ইচ্ছা অনুসারে কাজ হবে।
এই সংসারের মার্গ, সমাজসেবার মার্গ, এ ‘রিলেটিভ মার্গ’, মোক্ষের মার্গ সমাজসেবার মার্গ থেকে আলাদা, স্বরমণতার মার্গ ।
ধর্মের শুরু
মানুষ যখন থেকে অন্যকে সুখ দিতে শুরু করলো তখন থেকে ধর্মের শুরু হলো। নিজের সুখের জন্য নয় কিন্তু অন্য ব্যক্তির অসুবিধা কেমন করে দূর করা যায় তাই যখন মনে হতে থাকে সেখান থেকে করুণার শুরু হয়। আমি শিশুকাল থেকেই অন্য ব্যক্তির অসুবিধা দূর করায় লেগে থাকতাম। নিজের জন্য বিচারও না এলে তাকে করুণা বলে। এর থেকেই জ্ঞান প্রকট হয়।
Page #39
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
কেউ অনারারী প্রেসিডেন্ট হয়, অনারারী এটা-সেটা হয়। আরে, আপদ কি জন্যে ডেকে আনছাে ? এখন রিটায়ার্ড হওয়ার সময় এসে গেছে তাও ? আপদ-ই খাড়া করছে ; সব আপদ-ই খাড়া করেছে।
আর সেবা যদি না করা যায় তা হলে কারাের দুঃখ না হয় তা দেখতে হবে। কেউ যদি লােকসান করে যায় তবুও। কারণ এ আগের কোনাে হিসাব হবে। তবুও তােমাকে এর যেন কোনও দুঃখ না হয় তা করতে হবে।
ব্যস্, এটাই শেখার মত!
প্রশ্নকর্তা : অন্যকে সুখ দিয়ে সুখী হতে হবে।
দাদাশ্রী : হ্যা, ব্যস্ এটুকুই শেখাে না! অন্য কিছু শেখার মত নয়। জগতে আর অন্য কোনাে ধর্ম নেই। এই এটুকুই ধর্ম; অন্য কোনাে ধর্ম নেই। অন্যকে সুখ দাও, তাতেই সুখী হবে।
এই যে তুমি ব্যবসা-বাণিজ্য করছাে তাতে তাে কিছু উপার্জন করছাে; তাে কোনাে গ্রামে কেউ গরীব থাকলে তাকে কিছু খাবার-দাবার দাও, মেয়ের বিয়ের সময় কিছু টাকা দাও; কিন্তু এর গাড়ী (জীবন) রাস্তায় এনে দেওয়া তাে চাই ! কারাের হৃদয়কে শাস্তি দিলে ভগবান তােমার হৃদয়কে শান্ত করবেন।
জ্ঞানী দেন গ্যারান্টি-পত্র ! প্রশ্নকর্তা:কারাের হৃদয়কে শান্তি দিতে গেলে তাে আজকাল পকেট খালি হয়ে যায়। | দাদাশ্রী : পকেট খালি হােক না। এ পূর্বজন্মের হিসাব আছে যা চুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তুমি এখন শান্তি দাও তাে এর ফল পাবেই। এর একশাে শতাংশ গ্যারান্টী আমি তােমাকে দিচ্ছি। আমি আগে দিয়েছিলাম তাই আমি এখন সুখ পাচ্ছি। আমার তাে ব্যবসাই সুখের
Page #40
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
দোকান দেওয়া। তুমি দুঃখের দোকান খুলবে না। সুখের দোকান থেকে যার দরকার সে সুখ নিয়ে যাবে। আর কেউ দুঃখ দিতে এলে বলবে, ও হাে হাে, এখনও আমার বাকী আছে, আনাে, আনাে। একে তুমি পাশে সরিয়ে রাখবে। অর্থাৎ দুঃখ দিতে এলে তা নিয়ে নেবে। তােমার হিসাব বাকী আছে বলেই তাে দিতে আসবে ? নয়তাে আমাকে তাে কেউ দুঃখ দিতে আসে না।
সেইজন্যে এমন সুখের দোকান খােলাে যে ব্যস, সবাইকে সুখ দেবে। কাউকে দুঃখ দেবে না। আর যে দুঃখ দেয় তাকে কোনদিন কেউ ছুরি মেরে যায় না কি ? এ সুযােগের অপেক্ষায় থাকে। এই যে শত্রুতা করছে সে এমনি এমনি শত্রুতা করছে না ; দুঃখের বদলা নিচ্ছে।
সেবা করলে সেবা পায়! এই জগতে সর্বপ্রথম তাে বাবা-মায়ের সেবা করা কর্তব্য। মাবাবার সেবা করলে কখনও শান্তি যাবে না। কিন্তু আজকাল খাঁটি হৃদয়ে বাবা-মা’র সেবা কেউ করে না। ত্রিশ বছরের হলে তাে গুরু (পত্নী) আসে। সে বলে, “আমাকে নতুনঘরে নিয়ে যাও।” গুরু দেখেছাে তুমি ? পঁচিশ-ত্রিশ বছরে ‘গুরু’ পেয়ে যায়, আর ‘গুরু’ পেয়ে যায় অর্থাৎ বদলে যায়। গুরু বলে যে মা-কে তুমি চেনাে না। এ একবারে কানে নেয় না। কিন্তু দু'-তিনবার বলার পরে মােড় ঘুরে যায়।
| নয়তাে, এই জগৎ এমন যে মা-বাবার শুদ্ধ সেবা করলে তার অশান্তি হয় না। এই জগৎ কিছু ফেলে দেওয়ার মত নয়। লােকেরা বলে ছেলেদেরই দোষ, ছেলেরা মা-বাবার সেবা করে না। এতে মা-বাবার কি। দোষ ? তাতে আমি বলি এরা মা-বাবার সেবা করে নি, তাই নিজেরা পাচ্ছে না। অর্থাৎ এই পরম্পরাই ভুল। এখন নতুনভাবে পরম্পরা তৈরী করা হলে ভালাে হয়। সেইজন্যে আমি প্রত্যেক ঘরে ঘরে এটা তৈরী করছি। সমস্ত ছেলেরা অলরাইট হয়ে গেছে। মা-বাবাও অলরাইট আর ছেলেরাও অলরাইট !
Page #41
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরোপকার
৩২
বড়দের সেবা করলে আমার এই বিজ্ঞান বিকশিত হয়। মূর্তিদের কোনও সেবা হয় কি ? মূর্তিদের কি পায়ে ব্যথা হয় ? সেবা তো অভিভাবকদের, বড়দের বা গুরু থাকলে তাঁদের করতে হয়।
সেবাকে তিরস্কার করে ধর্ম করা যায় ?
বাবা-মার সেবা করা ধর্ম। হিসাব যা খুশী হতে পারে কিন্তু এই সেবা করা তোমার ধর্ম আর যতটুকু তোমার ধর্ম পালন করবে ততটুকু সুখ তুমি পাবে। বড়দের সেবা করলে সাথে সাথে সুখ আসে। বাবা-মার সেবা করলে তুমি সুখী হবে। মা-বাবাকে সুখী করলে সেই মানুষ কোনো সময়েই দুঃখী হয় না ।
এক বড় আশ্রমে একজন পরিচিত ব্যক্তিকে আমি দেখেছিলাম। তাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি এখানে কোথা থেকে ?' সে বললো যে, ‘এই আশ্রমে আমি গত দশবছর থেকে আছি।' আমি তাকে বললাম, ‘তোমার মা-বাবা গ্রামে শেষ বয়সে খুবই দারিদ্রের মধ্যে থেকে কষ্ট পাচ্ছেন।' সে বললো, ‘এক্ষেত্রে আমি কি করবো ? আমি এদের জন্যে করতে গেলে আমার ধর্ম-কর্ম করা বাদ পড়ে যাবে।' একে ধর্ম কিভাবে বলে ? ধর্ম তো তার নাম যে মা-বাবার সাথে কথা বলবে, ভাইয়ের সাথে কথা বলবে, সবার সাথে কথা বলবে। ব্যবহার আদর্শ হওয়া উচিৎ। যে ধর্ম নিজের ব্যবহারকে তিরস্কার করে, মা-বাবার সম্বন্ধকে তিরস্কার করে, তাকে ধর্ম কিভাবে বলে ?
তোমার মা-বাবা আছেন, না নেই ?
প্রশ্নকর্তা : মা আছেন ।
দাদাশ্রী : এখন ভালোভাবে সেবা করো। বার বার এর লাভ পাবে না। আর কোন মানুষ যদি বলে যে আমি দুঃখী তো আমি তাকে বলি তোমার মা-বাবার ভালো করে সেবা করো। তাহলে সংসারে তুমি দুঃখ পাবে না। ধনী না হতে পারো কিন্তু দুঃখ পাবে না। ধর্ম পরে হওয়া উচিৎ। এর নাম ধর্ম কি করে হয় ?
আমিও মায়ের সেবা করেছি। কুড়ি বছর বয়স ছিল অর্থাৎ যুবা
Page #42
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
অবস্থা ছিল। তাই মায়ের সেবা করতে পেরেছিলাম। বাবাকে কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাই সেবা হয়েছিল। ফের মনে হলাে, এরকম তাে কতজন কত জন্মে বাবা হয়েছেন, এখন কি করবাে ? উত্তর এলাে, ‘যিনি আছেন তাঁর সেবা করাে।' যিনি চলে গেছেন তিনি গেছেন। কিন্তু বর্তমানে যিনি আছেন তাঁর সেবা করাে আর না থাকলে তার চিন্তা করাে না। সব-ই অনেক হয়ে গেছে। ভুলে গেলে সেখান থেকে আবার গােনাে। মা-বাবার সেবা করলে তাে প্রত্যক্ষ, নগদ পাওয়া যায়। ভগবানকে দেখা যায়না, এঁদের তাে দেখা যায়। ভগবানকে কোথায় দেখা যায় ? আর মাবাবাকে তাে দেখা যায় !
সব থেকে প্রয়ােজন, বৃদ্ধদের সেবার! এখন যদি কেউ সবথেকে বেশী দুঃখী তাে তাদের মধ্যে বাড়ির ষাট-পঁয়ষট্টি বছরের ব্যক্তিরা খুব দুঃখী থাকেন আজকাল। কিন্তু এরা কাকে বলবেন ? ছেলেরা শােনেনা। পুরােনাে যুগ আর নতুন যুগের মধ্যে অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে। বৃদ্ধেরা পুরােনাে সময়কে ছাড়তে পারে না ; কষ্ট পায়, তবুও ছাড়তে পারে না।
প্রশ্নকর্তা : পঁয়ষট্টি বছরে প্রত্যেকেরই তাে এই অবস্থাই হয়!
দাদাশ্রী: হ্যা, এমনই অবস্থা। এদের তাে এমনই অবস্থা। সেইজন্যে বাস্তবে এই সময়ে কি করা প্রয়ােজন ? তাই আমি ভেবেছিলাম যে কোনও জায়গায় যদি এরকম বৃদ্ধদের থাকার আস্তানা করা যায় তাে খুব ভালাে হয়। আমি বলেছিলাম, এরকম যদি কিছু করা যায় তাে আগে আমি এই জ্ঞান দিয়ে দেব। পরে এদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা এখানে পাবলিককে বা অন্য সামাজিক সংস্থাকে দিয়ে দিলেও চলবে। কিন্তু এই জ্ঞান যদি পায় আর দর্শন করে তাে তাতেও কাজ চলে। এই জ্ঞান পেলে তবেই শান্তি পাবে বেচারারা, নয়তাে শান্তি কিসের আধারে থাকবে ? তােমার কি মনে হয় ?
প্রশ্নকর্তা : হ্যা, ঠিক আছে। দাদাশ্রী : পছন্দ হওয়ার মত কথা নয় কি ?
Page #43
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
৩৪
বৃদ্ধাবস্থায় ষাট-পঁয়ষট্টি বছরের মানুষ যদি ঘরে থাকে আর কেউ তাকে গুণতির মধ্যে না আনে তাে কি হয় ? মুখে কিছু বলে না কিন্তু অন্তরে খারাপ কর্ম বেঁধে নেয়। সেইজন্যে লােকেরা যে বৃদ্ধাশ্রমের ব্যবস্থা করেছে, সে ব্যবস্থা খারাপ নয়, হেল্পিং। কিন্তু একে বৃদ্ধাশ্রম নয়, খুব সম্মানসূচক এমন নাম দেওয়া উচিৎ যে সম্মানজনক মনে হয়।
| সেবা দ্বারা জীবনে সুখ-সম্পত্তি প্রথমে মা-বাবা, যাঁরা জন্ম দিয়েছেন তাঁদের সেবা। পরে গুরুর সেবা। গুরুর সেবা আর মা-বাবার সেবা তাে অবশ্য করা উচিৎ। তবে গুরু যদি ভাল না হয় তাে সেবা ছেড়ে দেওয়াই উচিৎ।
প্রশ্নকর্তা : এখন যে মা-বাবার সেবা করে না, তাে তার কি গতি হবে ?
দাদাশ্রী : মা-বাবার সেবা না করলে সে এ জন্মে সুখী হবে না। মাবাবার সেবা করার প্রত্যক্ষ প্রমাণ কি ? তাতে বলা হয় যে মা-বাবার সেবা করলে সমস্ত জীবনে দুঃখ আসেনা, বাধা-বিঘ্ন আসেনা।
আমাদের হিন্দুস্তানের বিজ্ঞান তাে খুব সুন্দর ছিল। সেইজন্যেই শাস্ত্রকাররা ব্যবস্থা করেছিলেন যে মা-বাবার সেবা করবে যাতে জীবনে তােমার অর্থকষ্ট না হয়। এখন এটা ন্যায়সঙ্গত অথবা ন্যায়সঙ্গত নয় তা আলাদা কথা কিন্তু মা-বাবার সেবা তাে অবশ্য করার যােগ্য। কারণ যদি তুমি সেবা না করাে তাে তুমি কার সেবা পাবে ? তােমার পরের প্রজন্ম কিভাবে শিখবে যে তুমি সেবা পাওয়ার যােগ্য ? ছেলেরা সব কিছু দ্যাখে।। এ দ্যাখে যে আমার ফাদার তাে কোনােদিনও তার বাবার সেবা করে নি! সেক্ষেত্রে সংস্কার-সিঞ্চন হয় না।
প্রশ্নকর্তা: আমি এটাই বলতে চাইছিলাম যে পিতার প্রতি পুত্রের কর্তব্য কি ?
দাদাশ্রী : ছেলেদের পিতার প্রতি কর্তব্য পালন করা উচিৎ। আর ছেলেরা যদি কর্তব্য পালন করে তাে কি লাভ পায় ? যে ছেলেরা মা
Page #44
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার
বাবার সেবা করে তাদের কোনদিন পয়সার কষ্ট হয় না, এদের সমস্ত প্রয়ােজন পুরাে হয়ে যায়। আর গুরুর সেবা করলে মােক্ষে যাবে। কিন্তু আজকালকার লােকেরা মা-বাবার কিংবা গুরুর সেবা করে না তাে ? এইসব লােকেরা দুঃখীই হবে।
মহান উপকারী, মা-বাবা যে মানুষ মা-বাবার দোষ দ্যাখে তার কোনদিন সমৃদ্ধি আসবে না। পয়সা থাকতে পারে হয়তাে কিন্তু আধ্যাত্মিক উন্নতি কখনও হয় না। মাবাবার দোষ দেখতে হয় না। উপকার কিভাবে ভুলে যাবে ? কেউ চা খাওয়লে তার উপকার ভােলারনয়। তাে তুমি মা-বাবার উপকার কিভাবেই। বা ভুলবে ? বুঝতে পারলে ? হ্যা, ... খুব উপকার মানবে। খুব সেবা করবে। ফাদার-মাদার -এর খুব সেবা করা উচিৎ।
| এই জগতে তিনজন মহান উপকারী। এই উপকারকে ভুলবেই ; ফাদার-মাদার আর গুরুর! তােমাকে যারা রাস্তায় তুলেছেন তাঁরা – এই তিনজনের উপকার ভােলার নয়।
‘জ্ঞানী’র সেবার ফল আমার সেব্যপদ গুপ্ত রেখে সেবকভাবে আমাকে কাজ করতে হবে। জ্ঞানীপুরুষ’কে তাে সমস্ত ওয়ার্ল্ড-এর সেবক আর সেব্য বলে। সমস্ত জগতের সেবা ‘আমি’ করছি আর সমস্ত জগতের সেবাও ‘আমি’ নিচ্ছি। এ যদি তুমি বুঝতে পারাে তাে তােমার কার্যোদ্ধার হয়ে যাবে !
‘আমি’ এতদূর পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়েছি যে কোনও মানুষ আমার সাথে দেখা করতে এলে তার যেন ‘দর্শন’ এর লাভ হয়। আমার কেউ সেবা করলে তার দায়িত্ব আমার উপরও এসে পড়ে আর আমার তাকে মােক্ষে নিয়ে যেতেই হয়।
-জয় সচ্চিদানন্দ
Page #45
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবা – পরােপকার।
শুদ্ধাত্মার প্রতি প্রার্থনা (প্রতিদিন একবার বলতে হবে ) হে অন্তর্যামী পরমাত্মা! আপনি প্রত্যেক জীবের অন্তরে বিরাজমান, তেমনি আমার অন্তরেও বিরাজমান। আপনার স্বরূপ-ই আমার স্বরূপ। আমার স্বরূপ শুদ্ধাত্মা।
হে শুদ্ধাত্মা ভগবান! আমি আপনাকে অভেদভাবে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করছি।
অজ্ঞানবশতঃ আমি যে যে ** দোষ করেছি, সেই সমস্ত দোষ আপনার সম্মুখে স্বীকার করছি। হৃদয়পূর্বক তার অনেক পশ্চাতাপ করছি। এবং আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হে প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন এবং পুনরায় এমন দোষ না করি, আপনি আমাকে এমন শক্তি দিন, শক্তি দিন, শক্তি দিন।
হে শুদ্ধাত্মা ভগবান ! আপনি এই কৃপা করুনযাতে আমার ভেদভাব দূর হয় এবং অভেদ স্বরূপ প্রাপ্তি হয়। আমি আপনার সাথে অভেদ স্বরূপে তন্ময়াকার হয়ে থাকি। ** যা যা দোষ হয়েছে, তা মনে মনে বলতে হবে।
প্রতিক্ৰমণ বিধি প্রত্যক্ষ দাদাভগবানকে সাক্ষী রেখে, দেহধারী(যার প্রতি দোষ হয়েছে। সেই ব্যক্তির নাম) -র মন-বচন-কায়ার যােগ, ভাবকর্ম-দ্রব্যকর্ম-নােকর্ম থেকে ভিন্ন এমন হে শুদ্ধাত্মা ভগবান আপনাকে সাক্ষী রেখে আজকের দিন পর্যন্ত আমার যা যা ** দোষ হয়েছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হৃদয়পূর্বক অনেক পশ্চাতাপ করছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আর পুনরায় এমন দোষ কখনও করবনা, এরকম দৃঢ় নিশ্চয় করছি। আমাকে এর জন্য শক্তি দিন, শক্তি দিন, শক্তি দিন।
** ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ, বিষয়-বিকার, কষায় ইত্যাদি দ্বারা কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকলে সেইসব দোষ মনে করতে হবে।
Page #46
--------------------------------------------------------------------------
________________
সেবার ফল.....
জগতের কাজ করো তোমার কাজ হতেই থাকবে । জগতের কাজ করলে তোমার কাজ আপনা থেকেই হতে থাকবে আর তখন তোমার আশ্চর্য্য লাগবে ।
মানুষ যখন থেকে কাউকে সুখ দিতে শুরু করলো তখন থেকে ধর্মের শুরু হলো । নিজের সুখ নয় কিন্তু সামনের ব্যক্তির অসুবিধা কি করে দূর করা যায় এটাই যখন থাকে করুণার সূত্রপাত হয় । শিশুকাল থেকেই আমার অন্যের অসুবিধা দূর করার প্রচেষ্টা ছিল । নিজের জন্যে যখন বিচার না আসে তখন তাকে করুণা বলে । তার থেকেই 'জ্ঞান' প্রকট হয় ।
দাদাশ্রী
मूल दीपक मे प्रकटे दीपमाला
"
dadabhagwan.org
ISBN 978-93-87551-12-1
9 789387 551121
Printed in India Price ₹20