Page #1
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কথিত
জাখ
Page #2
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কথিত
( ক্রোধ
মূল গুজরাতী সংকলন : ডাঃ নীরুবেহন অমিন।
অনুবাদ :মহাত্মাগণ
Page #3
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রকাশক ও অজীত সি. প্যাটেল,
দাদা ভগবান আরাধনা ট্রাস্ট দাদা দর্শন, ৫, মমতাপার্ক সােসাইটি, নবগুজরাট কলেজের পিছনে উসমানপুরা, আহমেদাবাদ - ৩৮০০১৪ ফোন ঃ (০৭৯) ৩৯৮৩০ ১০০
E-mail : info@dadabhagwan.org
. All Rights reserved - Deepakbhai Desai
Trimandir, Simandhar City, Ahmedabad-Kalol Highway, Adalaj, Dist: Gandhinagar - 382421, Gujarat, India. No part of this book may be used or reproduced in any manner whatsoever without written permission from the holder of this copyrights.
First Edition : 2000 Copies, November 2016
ভাবমূল্য ঃ পরম বিনয়’ আর।
‘আমি কিছু জানি না এই জাগৃতি
দ্রব্যমূল্য ঃ ১০ টাকা
মুদ্রক
ঃ অম্বা অফসেট, মহাবিদেহ ফাউন্ডেশন
পার্শ্বনাথ চেম্বার্স (বেসমেন্ট), আর. বি. আই-এর নিকট, উসমানপুরা, আহমেদাবাদ - ৩৮০০১৪
ফোনঃ (০৭৯) ২৭৫৪২৯৬৪, ৩০০০৪৮২৩/২৪
Page #4
--------------------------------------------------------------------------
________________
(ত্রি-মন্ত্র
વર્તમાનતીર્થકર શ્રી સીમંધરસ્વામી
নমাে অরিহন্তান
নমাে সিদ্ধান
নমাে আয়রিয়ানম্
নমাে উবজ্জায়ানম্
নমাে লােয়ে সব্বসাহুনম্
এ্যায়সাে পঞ্চ নমুক্কারাে;
সব্ব পাবপ্লনাশনাে
মঙ্গলানম চ সব্বেসি;
পঢ়মম্ হবই মঙ্গলম্ ১ ওম নমাে ভগবতে বাসুদেবায় ২
ওম্ নমঃ শিবায় ৩
জয় সৎ চিৎ আনন্দ
Page #5
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কে?
১৯৫৮ সালের জুন মাসের এক সন্ধ্যায় আনুমানিক ৬টার সময় ভীড়ে ভর্তি সুরত শহরের রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৩-এর এক বেঞ্চে বসা শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেলরূপী দেহমন্দিরে প্রাকৃতিকভাবে, অমরূপে, বহুজন্ম ধরে ব্যক্ত হওয়ার জন্যে ব্যাকুল দাদা ভগবান পূর্ণরূপে প্রকট হলেন - অধ্যাত্মের এক অদ্ভূত আশ্চর্য্য প্রকট হল। অলৌকিকভাবে এক ঘন্টাতে ওনার বিশ্বদর্শন হল। আমি কে? ভগবান কে? জগত কে চালায়? কর্ম কি? মুক্তি কি?’ ইত্যাদি জগতের সমস্ত আধ্যাত্মিক প্রশ্নের সমস্ত রহস্য সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হল। এইভাবে প্রকৃতি বিশ্বকে এক অদ্বিতীয় সম্পূর্ণ দর্শন প্রদান করল। যার মাধ্যম হলেন গুজরাত-এর চরােতর ক্ষেত্রের ভাদরন গ্রামনিবাসী পাটীদার শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেল যিনি কন্ট্রাকটরি ব্যবসা করেও সম্পূর্ণ বীতরাগী ছিলেন।
‘ব্যবসা-তে ধর্ম থাকা প্রয়ােজন, কিন্তু ধর্ম-তে ব্যবসা নয়’ এই নীতি অনুসারেই তিনি সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন। জীবনে কখনও উনি কারাের কাছ থেকে অর্থ নেন নি, উপরন্তু নিজের উপার্জনের অর্থ থেকে ভক্তদের তীর্থযাত্রায় নিয়ে যেতেন।
ওনার অদ্ভুত সিদ্ধজ্ঞান প্রয়ােগ দ্বারা ওনার যে রকম প্রাপ্তি হয়েছিল তেমনই অন্য মুমুক্ষুদের-ও তিনি কেবল দু'ঘন্টাতেই আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করাতেন। একে অক্রম মার্গ বলে। অক্ৰম অর্থাৎ বিনা ক্রমের আর ক্রম মানে সিঁড়ির পরে সিঁড়ি - ক্রমানুসারে উপরে ওঠা। অক্রম অর্থাৎ লিফট-মার্গ, সংক্ষিপ্ত রাস্তা।
উনি স্বয়ংই ‘দাদা ভগবান’কে? এই রহস্য জানাতেন। উনি বলতেন “যাকে আপনারা দেখছেন তিনি দাদা ভগবান নন। তিনি তাে এ.এম.প্যাটেল; আমি জ্ঞানী পুরুষ আর আমার ভিতর যিনি প্রকট হয়েছেন তিনিই ‘দাদা ভগবান’। দাদা ভগবান তাে চৌদ্দ লােকের নাথ। উনি আপনার মধ্যেও আছেন, সবার মধ্যেই আছেন; আপনার মধ্যে অব্যক্তরূপে আছেন, আর আমার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত অবস্থায় আছেন। দাদা ভগবান’কে আমিও নমস্কার করি।”
[১]
Page #6
--------------------------------------------------------------------------
________________
আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ লিঙ্ক
“আমি তো কিছু লোককে নিজের হাতে সিদ্ধি প্রদান করে যাব। তারপরে অনুগামীর প্রয়োজন আছে না নেই? পরের লোকেদের রাস্তা প্রয়োজন আছে কি না?
--দাদাশ্রী
পরমপূজ্য দাদাশ্রী গ্রাম-শহরে, দেশ-বিদেশে পরিভ্রমণ করে মুমুক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি করাতেন। দাদাশ্রী তাঁর জীবদ্দশাতেই পূজ্য ডাঃ নীরুবেহন আমিন (নীরুমা)-কে আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করানোর জ্ঞানসিদ্ধি প্রদান করেছিলেন। দাদাশ্রীর দেহত্যাগের পর নীরুমা একইভাবে মুমুক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি নিমিত্তভাবে করাতেন। দাদাশ্ৰী পূজ্য দীপকভাই দেসাইকে সৎসঙ্গ করার সিদ্ধিপ্রদান করেছিলেন। নীরুমা-র উপস্থিতিতেই তাঁর আশীর্বাদে পূজ্য দীপকভাই দেশ-বিদেশে অনেক জায়গায় গিয়ে মুমুক্ষুদের আত্মজ্ঞান করাতেন যা নীরুমা-র দেহবিলয়ের পর আজও চলছে। এই আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পর হাজার হাজার মুমুক্ষু সংসারে থেকে, সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও আত্মরমণতার অনুভব নিয়ে থাকেন।
পুস্তকে মুদ্রিত বাণী মোক্ষলাভার্থীর পথপ্রদর্শক হিসাবে অত্যন্ত উপযোগী প্রমাণিত হবে, কিন্তু মোক্ষলাভ-এর জন্য আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত হওয়া অপরিহার্য। অক্রম মার্গের দ্বারা আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পথ আজও উন্মুক্ত আছে। যেমন প্রজ্বলিত প্রদীপই শুধু পারে অন্য প্রদীপকে প্রজ্বলিত করতে, তেমনই প্রত্যক্ষ আত্মজ্ঞানীর কাছে আত্মজ্ঞান লাভ করলে তবেই নিজের আত্মা জাগৃত হতে
পারে।
[ 2 ]
Page #7
--------------------------------------------------------------------------
________________
সম্পাদকীয়
ক্রোধ একটি দুর্বলতা, কিন্তু লােক একে বাহাদুরি মনে করে। ক্রোধ যে করে তার চেয়ে যে ক্রোধ করে না তার প্রভাব কিছু অন্য রকমেরই হয়!
সাধারণতঃ যখন আমার ধারণা অনুযায়ী কিছু না হয়, আমার কথা অন্যজন বুঝতে না পারে, ডিফারেন্স অফ ভিউপয়েন্ট হয়, তখন ক্রোধ হয়ে যায়। প্রায় আমার সাথে হােলে তাে কেউ আমাদের কে মিথ্যা বললে ক্রোধ হয়ে যায়। কিন্তু আমি ঠিক, সেটা তাে আমার দৃষ্টিবিন্দু থেকে, নয় কি? অন্যজনও নিজের দৃষ্টিতে নিজেকে ঠিকই মনে করবে, তাই না? অনেক সময়ে বােধশক্তি কাজ করে না, সামনে কিছু দেখা না পেলে কি করা উচিত তা বােঝা যায় না। তখন ক্রোধ হয়ে যায়।
যখন অপমান হয় তখন ক্রোধ হয়ে যায়, যখন লােকসান হয় তখন ক্রোধ হয়ে যায়। এইভাবে মান-এর রক্ষণের জন্য, লােভের রক্ষণের জন্য ক্রোধ হয়ে যায়। সেখানে মান আর লােভ-এর দুর্বলতা থেকে মুক্ত হওয়ার জাগৃতিতে আসা জরুরী। চাকর চায়ের কাপ ভেঙে ফেললে তখন ক্রোধ হয়ে যায় কিন্তু জামাইয়ের হাতে ভাঙলে তখন ? সেখানে ক্রোধ কেমন করে কনট্রোলে থাকে! অর্থাৎ বিলীফএর উপরেই আধারিত, নয় কি?
| কেউ আমার লােকসান করে অথবা অপমান করে তাে তা আমারই কর্মের ফল, যে করেছে সে নিমিত্তমাত্র, এই বােধ ফিট হয়ে গেলে তবেই ক্রোধ যাবে।
যেখানে-যেখানে আর যখন যখন ক্রোধ আসে, তখন তখন তা টুকে নিতে হবে আর তার উপর জাগৃতি রাখতে হবে। আর আমার ক্রোধের কারণে যার দুঃখ হয়েছে তার প্রতিক্ৰমণ করতে হবে, পশ্চাতাপ করতে হবে এবং আর এরকম না করার দৃঢ় নিশ্চয় করতে হবে। কেননা যার উপর ক্রোধ হয়েছে তার দুঃখ হবে এবং বৈরীভাব উৎপন্ন হবে। তাতে সামনের জন্মে আবার তার সাথে মিলতে হবে।
[৩]
Page #8
--------------------------------------------------------------------------
________________
মা-বাপ নিজের সন্তানের প্রতি আর গুরু নিজের শিষ্যের প্রতি ক্রোধ করলে তাতে পূণ্যলাভ হয় কারণ এর পিছনে উদ্দেশ্য, তার ভাল করার জন্য, শােধরানাের জন্য। স্বার্থের জন্যে হলে তাতে পাপ-বন্ধন হবে। বীতরাগদের বােধের সূক্ষ্মতা তাে দ্যাখাে!!
প্রস্তুত পুস্তকে ক্রোধ, যা খুব হয়রান করা প্রকট কষায়, তার সম্বন্ধে সমস্ত কথা বিস্তারিতভাবে সংকলিত করে প্রকাশ করা হয়েছে যা বিচক্ষণ পাঠককে ক্রোধ থেকে মুক্ত হতে সম্পূর্ণ সহায়ক হবে, এই কামনা।
-ডঃ নীরুবেহন অমীন।
Page #9
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রকাশিত হিন্দী পুস্তকসমূহ ১. জ্ঞানীপুরুষ কি পহেচান
২৪. মানব ধর্ম ২. সর্ব দুঃখোঁ সে মুক্তি
২৫. সেবা-পরােপকার। ৩. কর্ম কে সিদ্ধান্ত
২৬. মৃত্যু সময়, পহেলে ঔর পশ্চাৎ ৪. আত্মবােধ
২৭. নিজদোষ দর্শন সে...নির্দোষ। ৫. ম্যায় কৌন হু?
২৮. পতি-পত্নী কা দিব্য ব্যবহার ৬. বর্তমান তীর্থঙ্কর শ্রী সীমন্ধর স্বামী। | ২৯. ক্লেশ রহিত জীবন ৭. ভুগতে উসি কি ভুল
৩০. গুরু-শিষ্য। ৮. অ্যাডজাস্ট এভরিহােয়্যার ৩১. অহিংসা। ৯. টকরাও টালিয়ে
৩২. সত্য-অসত্য কে রহস্য ১০. হুয়া সাে ন্যায়
৩৩. চমৎকার ১১. চিন্তা
৩৪. পাপ-পুণ্য ১২. ক্রোধ
৩৫. বাণী, ব্যবহার মে... ১৩. প্রতিক্ৰমণ
৩৬. কর্ম কে বিজ্ঞান ১৪. দাদা ভগবান কৌন ?
৩৭. আপ্তবাণী ১ ১৫. প্যয়সোঁ কা ব্যবহার।
৩৮. আপ্তবাণী ২ ১৬. অন্তঃকরণ কা স্বরূপ
৩৯. আপ্তবাণী ৩ ১৭. জগৎ কর্তা কৌন ?
৪০. আপ্তবাণী ৪ ১৮. ত্রিমন্ত্র
৪১. আপ্তবাণী ৫ ১৯. ভাবনা সে সুধরে জন্মেজন্ম। ৪২. আপ্তবাণী ৬ ২০. মাতা-পিতা ঐর বচ্চো কা ব্যবহার ৪৩. আপ্তবাণী ৭ ২১. প্রেম
৪৪. আপ্তবাণী ৮ ২২. সমঝ সে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (সংক্ষিপ্ত) ৪৫. আপ্তবাণী ১৩ (পুবাধ)। ২৩. দান।
৪৬. সমঝ সে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (পুর্বার্ধ) ৪৭. সমঝ সে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (উত্তরার্ধ) * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা গুজরাতী ভাষাতেও ৫৫টি পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে।
ওয়েবসাইট www.dadabhagwan.org থেকেও এই পুস্তক প্রাপ্ত করা যায়। *দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা “দাদাবাণী” মাসিক পত্রিকা হিন্দী, গুজরাতী এবং
ইংরাজী ভাষায় প্রকাশিত হয়।
| [ ৪ ]
Page #10
--------------------------------------------------------------------------
________________
ক্রোধ কে মানে, ‘আমি মিথ্যা?’
প্রশ্নকর্তা ঃ আমি ঠিক কিন্তু তবুও কেউ যদি আমাকে ভুল প্রতিপন্ন করে তাে ভিতরে তার উপর ক্রোধ হয়ে যায়। তাহলে এই ক্রোধ জলদি
আসে তার জন্যে কি করব? | দাদাশ্রী ? হা, কিন্তু তুমি ঠিক হবে, তবেই না? তুমি কি বাস্তবিকই ঠিক? তুমি যে ঠিক এটা তুমি কি করে জানলে ?
প্রশ্নকর্তা ও আমাকে আমার আত্মা বলে যে আমি ঠিক।
দাদাশ্রী ? এ তাে তুমি নিজেই জজ, নিজেই উকিল আর নিজেই আসামী, তাহলে তাে তুমি ঠিকই হবে, না? তুমি তাে কখনই ভুল হবে । অন্যজনেরও এইরকমই মনে হয় যে আমি-ই ঠিক। বুঝতে পারছাে ?
| এ সমস্তই হল দুর্বলতা প্রশ্নকর্তা ও কিন্তু আমার এটাই জিজ্ঞাসা করার ছিল যে অন্যায়ের প্রতি বিরক্তি হয়, সেটা তাে ভালই না? কোন কিছুতে স্পষ্টভাবে অন্যায় আমার নজরে এলে তখন যে ক্রোধ হয়, তা কী উচিৎ?
| দাদাশ্রী ঃ এই ক্রোধ আর বিরক্তি, এ সবই দুর্বলতা, শুধুই উইকনেস্। সমস্ত জগতেরই এই দুর্বলতা আছে। কেউ তােমাকে ধমকালে তুমি উগ্র হয়ে যাও না?
প্রশ্নকর্তা ঃ হ্যা, হয়ে যাই।। দাদাশ্রী ? তাহলে সেটা দুর্বলতা বলবে না বাহাদুরী বলবে?
প্রশ্নকর্তা ও কিন্তু কোন জায়গায় তাে ক্রোধ হওয়াই দরকার! দাদাশ্রী : না, না। ক্রোধ তাে নিজেই এক দুর্বলতা। কোথাও কোন জায়গায় ক্রোধ হওয়া উচিৎ, এটা তাে সংসারী কথা। এ তাে নিজের ক্রোধ
[৫]
Page #11
--------------------------------------------------------------------------
________________
যায় না, সেইজন্যে বলে ক্রোধ হওয়াই দরকার।
মন-ও বিগড়ায় না, সেই বলবান
প্রশ্নকর্তা ঃ তাহলে কেউ যদি আমায় অপমান করে আর আমি চুপ। করে বসে থাকি তাে সেটাকে নির্বলতা বলবে না?
দাদাশ্রী ? না, ওহােহাে! অপমান সহ্য করা, তাকে তাে মহান বলশালী বলবে! এখন আমাকে কেউ গালি দিলে আমার কিছুই হবে না। তার প্রতি মন-ও খারাপ হবে না, এটাই বলবত্তা। আর নির্বলতা তাে এরা সবাই কিকিচ্ করতেই থাকে না, জীবমাত্র লড়াই-ঝগড়া করতেই থাকে, এসবই নির্বলতা বলা হবে। অর্থাৎ অপমান শান্তভাবে সহ্য করা, তা বিরাট বাহাদুরী আর এরকম অপমান একবার পেরিয়ে যেতে পারলে, একটা স্টেপ ডিঙিয়ে যেতে পারলে একশােটা স্টেপ ডিঙিয়ে যাওয়ার শক্তি এসে যায়। কথাটা বুঝতে পারলে তাে ? কেউ যদি বলবান হয় তাে তার সামনে জীবমাত্র নির্বল হয়েই যায়, ওটা তাে তার স্বাভাবিক গুণ। কিন্তু যদি নির্বল মানুষ। আমাকে বিরক্ত করে আর তবুও যদি আমি তার কিছু না করি তাহলে। তাকে বাহাদুরী বলা হবে। | বাস্তবে তাে নির্বলকে রক্ষা করা উচিৎ আর বলবানের মােকাবিলা করা উচিৎ, কিন্তু এই কলিযুগে এরকম মানুষ আর কোথায়! এখন তাে নিবলকেই মারতে থাকে আর বলবানের থেকে পালায়। খুব কম লােক এরকম আছে যারা নির্বলের রক্ষা করে আর বলবানের প্রতিকার করে। এরকম যদি হয় তাে তাকে যােদ্ধা বলে। নয়তাে সারা সংসার কমজোরকেই মারতে থাকে। ঘরে গিয়ে লােক স্ত্রীর উপর বাহাদুরী দেখায়। খুঁটিতে বাঁধা গরুকে মারলে সে কোথায় যাবে? আর খুলে রেখে মারে তাে? পালিয়ে যাবে অথবা মােকাবিলা করবে।
নিজের শক্তি থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি অন্যকে উত্যক্ত না করে, নিজের শত্রুকেও উত্যক্ত না করে, তাকে বাহাদুরী বলে। এখন কেউ যদি তােমার উপর ক্রোধ করে আর তুমিও তার উপর ক্রোধ করাে তাে তাকে ভীতু বলবে না কি? অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি এই ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ এ
[ ৬ ]
Page #12
--------------------------------------------------------------------------
________________
সমস্তই নির্বলতা। যে বলবান তার ক্রোধ করার প্রয়োজন কোথায় ? এ তো ক্রোধের যে উত্তাপ আছে সেই উত্তাপ দিয়ে সামনের জনকে বশ করতে যায়, কিন্তু যার ক্রোধ নেই তার কাছেও তো কিছু থাকবে কি না? তার কাছে ‘শীল’ নামের যে চরিত্র আছে তাতে জানোয়ার-ও বশীভূত হয়। বাঘ, সিংহ, সমস্ত শত্রু সব বশে এসে যায় !
ক্রোধী তো অবলা-ই
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু দাদাজী, যদি কোন ব্যক্তি আমার সামনে গরম হয়ে যায় তখন কি করা উচিৎ?
দাদাশ্রী : গরম তো হয়েই যাবে! ওর হাতে মোটেই নেই। ভিতরের যন্ত্রপাতি ওর বশে নেই। এ তো যেমন-তেমন করে ভিতরের মেশিনারী চলতে থাকে। যদি নিজের বশে হতো তাহলে গরম হতেই দিত না! একটুও গরম হওয়া মানে গাধা হয়ে যাওয়া, মানুষ হয়েও গাধা! কিন্তু এরকম তো কেউ করবেই না। যেখানে নিজের বশে নেই সেখানে আর কি হবে?
এই সংসারে কখনও ক্রোধ হওয়ার কোন কারনই নেই। কেউ যদি বলে যে, ‘এই ছেলেটা আমার কথা শোনে না।' তাহলেও ক্রোধ হওয়ার কোন কারণই নেই। ওখানে তোমাকে শান্ত ভাবে কাজ করে নিতে হবে। এ তো তুমিই নির্বল সেইজন্যে গরম হয়ে যাও। আর গরম হয়ে যাওয়াকে ভয়ঙ্কর নির্বলতা বলে। মানে, যখন নির্বলতা অনেক বেশী থাকে তখনই গরম হয়ে যায়। অতএব যে গরম হয়ে যায় তার উপর তো দয়া হওয়া উচিৎ যে এই বেচারার ক্রোধের উপর একদম নিয়ন্ত্রন নেই। যার নিজের স্বভাবের উপর কন্ট্রোল নেই, তার উপর দয়া করাই উচিৎ।
গরম হওয়া মানে কি? প্রথমে নিজে জ্বলা আর পরে সামনের জনকে জ্বালানো। এই দেশলাই ঘষলে প্রথমে নিজে ভড়-ভড় করে জ্বলে আর তারপরে সামনের জনকে জ্বালায়। অর্থাৎ গরম হওয়া নিজের অধীন হলে কেউ গরম হতো-ই না! জ্বলন কার ভাল লাগে? যদি কেউ এরকম বলে যে, ‘সংসারে কখনও-কখনও ক্রোধ করা দরকার হয়ে পড়ে', তাহলে আমি
[ 7 ]
Page #13
--------------------------------------------------------------------------
________________
বলবাে না, এরকম কোন কারণ নেই যে যেখানে ক্রোধ করা দরকার। ক্রোধ তাে নির্বলতা, সেইজন্যে হয়ে যায়। সেইজন্যে ভগবান ক্রোধীকে ‘অবলা বলেছেন। পুরুষ কাকে বলবে? ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ প্রভৃতি নির্বলতা যার মধ্যে নেই, তাকে ভগবান ‘পুরুষ’ বলেছেন। অর্থাৎ এই যে সমস্ত পুরুষ নজরে আসে তাদেরকেও ‘অবলা বলেছেন, কিন্তু এদের লজ্জা হয় না; এ তাে ভালাে, নয়তাে ‘অবলা’ বললে লজ্জিত হয়ে যেত না! কিন্তু এদের তাে কোন বােধ-ই নেই। কতটা বােধ আছে? স্নান করার জল রাখলে স্নান করে নেবে। খাওয়া, শােয়া, স্নান করা এই সমস্ত বােধ আছে, কিন্তু অন্য কোন কিছুর বােধ নেই। মনুষ্যত্বের বিশেষ বােধ যাকে বলা হয়, যে ইনি ‘ভদ্রলােক বলে,। পুরুষ’; এরকম ভদ্রলােক লােকে দেখতে পায় তার বােধ নেই।
ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ, এরা তাে প্রকট দুর্বলতা আর খুব ক্রোধ হয়ে গেলে নিজের হাত-পা এভাবে কাপতে দেখ নি ?
প্রশ্নকর্তা ও শরীর-ও বারণ করে যে তােমার ক্রোধ করা উচিৎ নয়।
দাদাশ্রী ঃ হ্যা, শরীর-ও বারণ করে যে ‘এ শােভা দেয় না। অর্থাৎ ক্রোধ কত বড় দুর্বলতা বলা যায়! এইজন্য তােমার ক্রোধ করা উচিৎ নয়।
প্রভাব পড়ে, দুর্বলতা না থাকলে প্রশ্নকর্তা ঃ কোন লােক একটা ছােট বাচ্চাকে খুব মারছে আর আমি সেই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছি, তখন ওকে এরকম করতে বারণ করলে ও যদি না শােনে তাে শেষে ওকে ধমক দিয়ে বা ক্রোধ করে বাধা দেওয়া উচিৎ কি না? | দাদাশ্রী ও ক্রোধ করলেও ও না মেরে থাকবে না। আরে, তােমাকেও মারবে! তবুও তুমি ওর উপর ক্রোধ কেন করছাে? ওকে শান্তভাবে বলাে, ব্যবহারিক কথাবার্তা বলাে। নয়তাে ওর উপর ক্রোধ করলে সেটা তাে উইনেস্!
প্রশ্নকর্তা ঃ তাহলে বাচ্চাকে মারতে দেব? দাদাশ্রী ? না, ওখানে গিয়ে তুমি বলাে যে, ‘ভাই, তুমি এরকম কেন
| [৮]
Page #14
--------------------------------------------------------------------------
________________
করছাে? এই বাচ্চা তােমার কি ক্ষতি করছে? এইভাবে ওকে বুঝিয়ে কথা বলতে পার। তুমি ওর উপর ক্রোধ করলে সে তাে তােমার দুর্বলতা। প্রথমতঃ নিজের মধ্যে দুর্বলতা থাকা চলবে না। যার মধ্যে দুর্বলতা নেই তার প্রভাব পড়বেই! উনি তাে এমনি, সাধারণভাবেও যদি বলেন, তাে সবাই মেনে নেবে।
প্রশ্নকর্তা ঃ না-ও মানতে পারে। | দাদাশ্রী ঃ না মানার কারণ কি? তােমার প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ দুর্বল হওয়া উচিৎ নয়, চরিত্রবান হওয়া চাই। মেন অফ পারসােন্যালিটি’ হওয়া দরকার। লাখ গুন্ডা ওনাকে দেখলেই পালিয়ে যাবে। বিরক্ত মানুষ কাছ থেকে তাে কেউ পালায় না, বরং মারবেও। সংসার তাে কমজোরকেই মারতে থাকে না !!
অর্থাৎ মেন অফ পারসনালিটি হওয়া চাই। পারসনালিটি কখন আসে ? বিজ্ঞান জানলে পারসন্যালিটি আসে। এই জগতে যা ভুলে যায় তা (রিলেটিভ) জ্ঞান আর যা কখনও ভােলা যায় না, তা বিজ্ঞান!
| গরমের থেকেও ভারী হিম। | হিমবর্ষা যে হয় তা কি তুমি জান ? এখন হিম তাে খুব-ই ঠান্ডা হয়।
কি? ওই হিম থেকে গাছ জ্বলে যায়, তুলাে-ঘাস সব-ই জ্বলে যায়, এটা। তুমি জান কি? ওই ঠান্ডাতে কেন জ্বলে যায় ? | প্রশ্নকর্তা ও ‘ওভার লিমিট’ ঠান্ডার কারণে। দাদাশ্রী ঃ হ্যা, যদি তুমি ঠান্ডা থাক তাে এইরকম শীল’ উৎপন্ন হবে।
যেখানে ক্রোধ বন্ধ, সেখানে প্রতাপ প্রশ্নকর্তা ঃ কিন্তু দাদাজী, দরকারের চেয়ে বেশী ঠান্ডা হওয়াতাে এক ধরনের দুর্বলতা, নয় কি?
দাদাশ্রী ও প্রয়ােজনের চেয়ে বেশী ঠান্ডা হওয়ার দরকারই নেই। আমাকে তাে লিমিট-এর মধ্যে থাকতে হবে, তাকে নর্মালিটী’ বলে। বিলাে
[ 9 ]
Page #15
--------------------------------------------------------------------------
________________
নর্মাল ইজ দ্য ফিভার, অ্যাবাভ নর্মাল ইজ দ্য ফিভার, নাইন্টী এইট ইজ দ্য নর্মাল। অর্থাৎ আমার নর্মালিটী-ই চাই।।
ক্রোধীর পরিবর্তে যে ক্রোধ করে না তাকে লােক বেশী ভয় পায়। এর কারণ কি? ক্রোধ বন্ধ হয়ে গেলে প্রতাপ উৎপন্ন হয়, প্রকৃতির এইরকমই নিয়ম! নয়তাে ওকে রক্ষণ দেওয়ার কাউকে পাওয়াই যাবে না! ক্রোধ তাে রক্ষণ ছিল, অজ্ঞানতায় ক্রোধ দ্বারা রক্ষণ হচ্ছিল।
বদমেজাজী লােকের জায়গা শেষে প্রশ্নকর্তা ও সাত্ত্বিক বিরক্তি অথবা সাত্ত্বিক ক্রোধ কি ভাল, না ভাল নয় ?
| দাদাশ্রী ঃ লােকেরা ওকে কি বলবে? এই বাচ্চা-ও ওকে বলবে যে, ‘এ তাে চিড়চিড়-ই করে। বিরক্তি মূখর্তা, ফুলিশনেস! বিরক্ত হওয়াকে। দুর্বলতা বলে। বাচ্চাদের যদি জিজ্ঞাসা করাে যে, তােমার বাবা কিরকম? তখন তারাও বলবে, উনি তাে খুবই চিড়চিড় করেন। বলাে, এখন আবরু বাড়লাে না কমলাে? এরকম দুর্বলতা হওয়া উচিৎ নয়। অর্থাৎ যেখানে সাত্ত্বিকতা থাকবে, সেখানে দুর্বলতা থাকবে না।
ঘরে ছােট বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, তােমার বাড়ীতে প্রথম নম্বর কার? তখন সে খুঁজে বার করবে যে আমার ঠাকুমা বিরক্ত হন না; এইজন্য উনি সবথেকে ভালাে আর ওনার নম্বরই প্রথমে আসবে। এরকম দ্বিতীয়, তৃতীয় করতে করতে বাবার নম্বর একদম শেষে আসে! এরকম কেন? কারণ উনি বিরক্ত হন। চিড়-চিড়ে স্বভাবের, সেইজন্য। আমি বলি, ‘বাবা রােজগার করে খরচা করেন, তবুও ওনার নম্বর শেষে?' তখন ও ‘হ্যা’ বলে। এবার বলাে, পরিশ্রম করাে, খাওয়াও, পয়সা এনে দাও, তবুও শেষ নম্বর তােমারই আসে, না?
ক্রোধ মানে অন্ধত্ব
প্রশ্নকর্তা ও সাধারণভাবে মানুষের ক্রোধ হওয়ার মুখ্য কারণ কি হতে
[১০]
Page #16
--------------------------------------------------------------------------
________________
পারে?
দাদাশ্রী : দেখতে পায় না, সেইজন্যে! মানুষ দেওয়ালে কখন ধাক্কা খায়? যখন সে দেওয়াল দেখতে পায় না তখন ধাক্কা মারে, নয় কি? এইভাবেই যখন অন্তরে দেখা বন্ধ হয়ে যায়, তখন মানুষের ক্রোধ হয়। সামনে রাস্তা খুঁজে পায় না, তাই ক্রোধ হয়ে যায়।
বোধ কাজ করে না, তখন ক্রোধ
ক্রোধ কখন আসে? বলা হয়, ‘দর্শন বন্ধ হয়ে গেলে জ্ঞান-ও বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন ক্রোধ উৎপন্ন হয়।' মান-ও এইরকম। দর্শন বন্ধ হয়ে গেলে জ্ঞান-এ বাধা আসে, তখন মান উৎপন্ন হয়।
প্রশ্নকর্তা : উদাহরণ দিয়ে বোঝালে বেশী সহজ হবে।
দাদাশ্রী : লোকে বলে না যে ‘কি খুব রেগে গেছ?' তখন বলে, ‘আমি কিছু বুঝতে পারছি না, সেইজন্যে রাগ হয়ে যাচ্ছে।' যখন কিছু বুঝতে পারে না, তখন মানুষ রেগে যায়। যার বোধ কাজ করছে সে কি ক্রোধ করবে? ক্রোধ করলে সেই ক্রোধ প্রথম পুরস্কার কাকে দেয়? যেখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে ওখানে প্রথমে নিজেকে জ্বালায়, পরে অন্যকে জ্বালায়।
ক্রোধাগ্নি জ্বালায় স্ব-পর কে
ক্রোধ মানে স্বয়ং নিজের ঘরে আগুন লাগানো। নিজের ঘরে ঘাস ভর্তি হয়ে আছে আর তাতে দেশলাই জ্বালায়, তার নাম ক্রোধ। অর্থাৎ প্রথমে নিজে জ্বলে আর পরে প্রতিবেশীকে জ্বালায়। ঘাসের বড়-বড় গাঁটরি কারো ক্ষেতে একত্র করে রাখা আছে, কিন্তু মাত্র একটা দেশলাই জ্বালালে কি হবে ?
প্রশ্নকর্তা : জ্বলে যাবে।
দাদাশ্রী ঃ সেইভাবেই একবার ক্রোধ করলে দু'বছরে যা উপার্জন করেছো তা মাটিতে মিশে যাবে। ক্রোধ মানে প্রকট অগ্নি। ও নিজেও বুঝতে পারে না যে আমি মাটিতে মিশিয়ে দিলাম। কারণ বাহ্য বস্তুর কোন অভাব
[ ১১ ]
Page #17
--------------------------------------------------------------------------
________________
হয় না কিন্তু অন্তরে সব শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী জন্মের যা কিছু প্রস্তুতি ছিল তার থেকে কিছু খরচ হয়ে যায়। আর বেশী খরচ হয়ে গেলে কি হবে? এখানে মানুষ হয়ে রুটি খেতো আর ওখানে (জানোয়ার হয়ে) ঘাস খেতে হবে। এই রুটি ছেড়ে ঘাস খেতে যাওয়া, সেটা কি ভালো বলবে?
সারাজগতে কোন মানুষ ক্রোধকে জয় করতে পারবে না। ক্রোধের দুই রূপ, এক কঢ়াপা (জ্বলন) আর দ্বিতীয় অজম্পা (অশান্তি রূপে)। যে সমস্ত লোক ক্রোধকে জয় করে তারা কঢ়াপাকে জয় করে। এতে এরকম হয় যে একদিকে চেপে রাখতে গেলে অন্যদিক বাড়ে আর বলে ‘আমি ক্রোধকে জয় করেছি, তো তখন মান বাড়ে। বাস্তবিক তো ক্রোধকে সম্পূর্ণ জেতা যায় না। দৃশ্য (যে ক্রোধ দেখা যায়) ক্রোধকে জয় করেছি, এরকম বলা যায়।
তন্ত (রেশ), সেটাই ক্রোধ
যে ক্রোধে তন্ত (সূত্র বা রেশ থেকে যাওয়া) থাকে, তাকেই ক্রোধ বলে। উদাহরণস্বরূপ, স্বামী-স্ত্রী রাতে খুব ঝগড়া করল, ক্রোধাগ্নি ধকধক করে জ্বলল, সারা রাত দুজনে জেগে শুয়ে থাকল। সকালে স্ত্রী চায়ের কাপ ঠক্ করে রাখল, স্বামী বুঝে যাবে এখনও তন্ত আছে! এটাই ক্রোধ। এখন এই তন্ত যতটুকু সময়ের জন্যে হোক না কেন! আরে, কোন কোন লোকের তো সারাজীবন থেকে যায়! বাবা ছেলের মুখ দেখে না আর ছেলেও বাবার মুখ দেখে না! ক্রোধের তন্ত তো মুখের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।
তন্ত তো এমনই একটা জিনিষ যে পনেরো বছর আগে কেউ তোমাকে অপমান করেছে আর ওই ব্যক্তির সাথে পনেরো বছর তোমার দেখা হয় নি কিন্তু আজ তার সাথে দেখা হতেই সব মনে পড়ে গেল, ওটাই তন্ত। আর তন্ত কারোর-ই যায় না। বড়-বড় সাধু-মহারাজও তত্তওয়ালাই হন। রাতে যদি কিছু হাসি-ঠাট্টা করেছ তো পনেরো দিন তোমার সাথে কথা বলবে না, এমনই তন্ত !
[ ১২ ]
Page #18
--------------------------------------------------------------------------
________________
পার্থক্য, ক্রোধ আর গুত্সায় (রাগ) প্রশ্নকর্তা ও দাদাজী, ক্রোধ আর গুসা (রাগ), এর মধ্যে পার্থক্য কি?
দাদাশ্রী ও ক্রোধ তাকেই বলে যা অহংকারের সাথে হয়। রাগ আর অহংকার দুই-ই একসাথে থাকলে ক্রোধ বলে। আর ছেলের প্রতি বাবা রাগ করে, তাকে ক্রোধ বলে না। ওই ক্রোধে অহংকার থাকে না তাই তাকে রাগ বলে। তখন ভগবান বলেন, এ রাগ করছে কিন্তু তবুও ওর পুণ্য জমা করাে। তখন যদি বলা হয়, এ রাগ করছে, তবুও? তখন বলবেন, ক্রোধ করলে পাপ, রাগে পাপ নেই। ক্রোধে অহংকার মিশে। থাকে আর যখন তােমার রাগ হয় তখন ভিতরে খারাপ লাগে না কি?
ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ দু’রকমের হয়। | এক ধরনের ক্রোধ যার মােড় ফেরানাে সম্ভব-নিবার্য। কারাের উপর ক্রোধ হলে ভিতরে ভিতরেই তার মােড় ফিরিয়ে দেওয়া যায় আর শান্ত করে দেওয়া যায়, এইভাবে মােড় ফিরিয়ে দেওয়া যায় এরকম ক্রোধ। এই স্টেজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে ব্যবহার খুব সুন্দর হয়ে যায় ! | দ্বিতীয় প্রকার ক্রোধ হল যার মােড় ফেরানাে যায় না-অনিবার্য। অনেক চেষ্টা করলেও পটকা না ফেটে ছাড়বে না! ওর মােড় ফেরানাে যায় না এরকম, অনিবার্য ক্রোধ। এমন ক্রোধ নিজেরও ক্ষতি করে আর অন্যের ক্ষতি করে।
ভগবান সাধুদের জন্যে আর চরিত্রবান লােকেদের জন্য কতদুর পর্যন্ত ক্রোধকে মেনে নিয়েছেন? যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যের দুঃখদায়ী না হয় ততটা ক্রোধ ভগবান মেনে নিয়েছেন। আমার ক্রোধ শুধু আমাকেই দুঃখ দেয় কিন্তু অন্য কারাের দুঃখদায়ী হয় না ততটা ক্রোধ মেনে নিয়েছেন।
যে জানে তাঁকে চেনাে প্রশ্নকর্তা : আমরা সবাই জানি যে ক্রোধ করা ভুল, কিন্তু তবুও...
দাদাশ্রী ও ব্যাপার এই, যে ক্ৰোধী সে জানে না, লােভী যে সে জানে না, যে মানী সেও জানে না, যে জানে সে আলাদাই। আর এই সব লােকেরা
[ ১৩ ]
Page #19
--------------------------------------------------------------------------
________________
মনে করে যে, আমি জানি’ তবু কেন হয়ে যায়? এখন জানি একথা কে বলেছে? সেটা জানে না। কে জানে’ তা জানে না, আর এটাই খুঁজতে হবে। যে জানে তাকে খুঁজে বার করাে তাহলে সব চলবে। জানেই না, জানা তাে তাকেই বলে যে চলেই যায়, দাঁড়িয়ে থাকে না।
সম্যক উপায় একবার জেনে নাও প্রশ্নকর্তা ঃ এটা জানার পরও ক্রোধ হয়ে যায়, তার উপায় কি?
দাদাশ্রী ঃ কে জানে ? জানার পরে তাে ক্রোধ হবেই না। ক্রোধ হয়। মানে জানে-ই না, শুধু অহংকার করে যে “আমি জানি।
প্রশ্নকর্তা ও ক্রোধ হয়ে যাওয়ার পর খেয়াল আসে যে আমার ক্রোধ করা উচিৎ হয়নি।
দাদাশ্রী ? না, কিন্তু জানার পরে ক্রোধ হয় না। যদি এখানে দুটো বােতল রাখা হয় আর কেউ বুঝিয়ে দেয় যে একটা বােতলে ওষুধ আর অন্য বােতলে পয়জন (বিষ) আছে। দুটো একই রকম দেখতে, কিন্তু এতে ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে তাে বুঝতে হবে এ জানতােই না। ভুল-ত্রুটি না হলে বলতে পারি যে জানতাে, কিন্তু ভুলত্রুটি হয়েছে মানে একথা তাে পরিষ্কার হয়ে গেল যে ও জানতাে না। সেইরকমই যখন ক্রোধ হয় তখন কিছু জানে না অথচ জানার অহংকার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আলােতে কখনও ঠোক্কর লাগে কি? এইজন্যে যতক্ষণ ঠোক্কর লাগে ততক্ষণ জানেই নি। এ তাে অন্ধকারকেই আলাে বলে, সেটাই আমাদের ভুল। অতএব একবার সৎসঙ্গে বসে ‘জানাে’, তারপর ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ সব চলে যাবে।
প্রশ্নকর্তা ও কিন্তু ক্রোধ তাে সবার হয়েই যায়, না! দাদাশ্রী ? এই ভাইকে জিজ্ঞাসা করাে, ও তাে অস্বীকার করছে। প্রশ্নকর্তা ও সৎসঙ্গে আসার পর তাে ক্রোধ হয় না!
দাদাশ্রী ঃ তাই? উনি কি ওষুধ নিয়েছেন ? দ্বেষ-এর মূল শেষ হয়ে যায়, এরকম ওষুধ নিয়েছিল।
[১৪]
Page #20
--------------------------------------------------------------------------
________________
বুঝে চলাে
প্রশ্নকর্তা ও আমার এক নিকট আত্মীয় আছে যার উপর আমি ক্রোধিত হয়ে যাই। ও হয়তাে ওর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ঠিক কিন্তু আমি নিজের দৃষ্টি থেকে ক্রোধিত হয়ে যাই। কি কারণে ক্রোধিত হয়ে যাই ?
দাদাশ্রী ঃ তুমি আসছাে আর এই বাড়ী থেকে একটা পাথর তােমার মাথায় পড়লাে আর রক্তপাত হল, তাে সেই সময় খুব ক্রোধ করবে?
প্রশ্নকর্তা ঃ না, ও তাে হয়ে গেছে।
দাদাশ্রী ঃ না, কিন্তু ওখানে ক্রোধ কেন করাে না? মানে যদি নিজে কাউকে না দেখে থাকো তাে ক্রোধ কি করে হবে?
প্রশ্নকর্তা ঃ কেউ জেনে-বুঝে মারে নি।
দাদাশ্রী ঃ আর এখন বাইরে যাও আর কোন ছেলে যদি পাথর ছোঁড়ে, সেটা লেগে যায় আর রক্ত বেরােতে থাকে, তাে তার উপর ক্রোধ করাে - সেটা কেন? ও আমাকে পাথর মেরেছে তাই রক্ত বেরিয়েছে এইজন্যে ক্রোধ করাে যে, ‘তুই কেন মারলি? আর যখন পাহাড়ে ধাক্কা খেতে খেতে পড়া পাথর এসে লাগে আর মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে, তাে দ্যাখে কিন্তু ক্রোধ করে না।
| ওর এরকম মনে হয় যে এ-ই করছে। কোন লােক জেনে-বুঝে মারতেই পারে না। অর্থাৎ পাহাড়ের উপর থেকে পাথর পড়া আর এই ব্যক্তির পাথর ছোঁড়া, দু’টো একইরকম। কিন্তু ভ্রান্তি থেকে এরকম মনে হয় যে এ-ই করছে। এই ওয়ার্লডে কোন মানুষের মলত্যাগ করারও শক্তি নেই।
| যদি আমি বুঝতে পারি যে কেউ জেনে-শুনে মারে নি, তাে সেখানে ক্রোধ করি না। আবার বলে, আমার ক্রোধ হয়ে যায়, আমার স্বভাব ক্রোধী। মুয়া (মরণশীল, দাদাশ্রীর ভাষায়), স্বভাব থেকে ক্রোধ হয় না। ওখানে পুলিশদের সামনে হয় না কেন? পুলিশরা বকাবকি করলে কেন ক্রোধ হয়না? স্ত্রীর উপর রাগ হয়, বাচ্চাদের উপর ক্রোধ হয়, পড়শীর উপর, ‘আন্ডারহ্যান্ড’ (অধীনস্থ)-এর উপর ক্রোধ হয়, কিন্তু ‘বস’ (উপরওয়ালা)
| [১৫]
Page #21
--------------------------------------------------------------------------
________________
-র প্রতি হয় না কেন? এ তাে স্বভাব থেকে মানুষের ক্রোধ হয় না। এখানে তাে ও নিজের খেয়ালখুশী মতাে করতে থাকে।
প্রশ্নকর্তা ও কি করে কন্ট্রোল করব?
দাদাশ্রী ও বােধ থেকে। এরা যে তােমার সামনে আসে তারা তাে নিমিত্তমাত্র আর তােমার কর্মেরই ফল দেয়। ও নিমিত্ত হয়ে গেছে। এখন এটা বুঝে নিতে পারলে তবেই ক্রোধ কন্ট্রোলে আসবে। যখন পাথর পাহাড় থেকে পড়ছে, এরকম দেখেছে তখন ক্রোধ কন্ট্রোলে এসে যায়। তাে এতেও বুঝে নিতে হবে যে, “ভাই, এরা সব পাহাড়েরই মত।
রাস্তায় কোন গাড়ীওয়ালা যখন ভুল রাস্তা দিয়ে তােমার সামনে চলে আসে, তখনও তাে লড়াই করতে যাও না, নয় কি? ক্রোধ করাে না তাে? | কেন? তুমি ধাক্কা মেরে ওকে ভেঙে দাও কি? না? তাে ওখানে কেন করাে
? ওখানে বুঝে যাও যে আমি মরে যাব। আরে ভাই, ওর চেয়ে বেশী তাে এখানে ক্রোধ করলে মারা যাও, কিন্তু এই ছবি নজরে আসে না আর। ওটা খােলাখুলি দেখা যায়, এইটুকুই পার্থক্য। ওখানে রাস্তায় তাে মারামারি করাে না? ক্রোধ করাে না। সামনের লােকের ভুল সত্ত্বেও ?
প্রশ্নকর্তা ঃ না। দাদাশ্রী ও ওইরকমই জীবনেও বুঝে নেওয়ার প্রয়ােজন আছে।
পরিণাম তাে কজেজ (কারণ) বদলালেই বদলাবে
এক ভাই আমাকে বললাে যে, ‘অনন্ত জন্ম থেকে তাে ক্রোধ দূর করেই যাচ্ছি, তবুও তা শেষ হয় না কেন? আমি বললাম, তুমি ক্রোধকে দূর করার উপায় জানাে না বােধহয়। তখন সে বললাে, “ক্রোধ দূর করার উপায় তাে শাস্ত্রে লেখা আছে, সে সবই করি, তাও তাে ক্রোধ যায় না। আমি বললাম, ‘সম্যক উপায় হওয়া চাই। তখন সে বললাে, ‘সম্যক উপায়। তাে অনেক পড়েছি, কিন্তু তার কিছুই কাজে আসে নি। আমি আবার বললাম, ক্রোধকে বন্ধ করার উপায় খোঁজা মূখতা, কেননা ক্রোধ তাে পরিণাম (result)। যেমন ধরাে তুমি পরীক্ষা দিয়েছাে আর তার রেজাল্ট
[ ১৬ ]।
Page #22
--------------------------------------------------------------------------
________________
এসেছে। এখন যদি তুমি রেজাল্টকে শেষ করার চেষ্টা করাে, এটা সেরকম কথা হল। এই যে রেজাল্ট এসেছে, এটা কিসের পরিণাম? তাতেই তােমার পরিবর্তন আনা দরকার।
লােকে বলে, ক্রোধকে চেপে রাখাে, ক্রোধকে দূর করাে। আরে! এরকম কেন করছাে? বিনা কারণে মাথা খারাপ করছাে! তবুও তাে ক্রোধ দূর হয় না। তবু ওরা বলবে, ‘না সাহেব, ক্রোধ অল্প-বিস্তর তাে চাপা পড়েছে। আরে, ও যতক্ষণ পর্যন্ত ভিতরে আছে ততক্ষণ পর্যন্ত ওকে চেপে রাখা গেছে বলা যাবে না। তখন সেই ভাই আবার বললাে, “তাহলে আপনার কাছে আর অন্য কোন উপায় আছে? আমি বললাম, হ্যা, উপায় আছে। তুমি করবে? ও বললাে, “হ্যা। তখন আমি বললাম, একবার নােট তাে করাে যে এই সংসারে মুখ্যরূপে কার উপর ক্রোধ হয় ? যেখানেসেখানে ক্রোধ হয় তা নােট করে নাও, আর যেখানে ক্রোধ হয় না তাকেও জানাে। একবার লিস্ট তৈরী করে নাও যে এই ব্যক্তির উপর ক্রোধ হয় না। কিছু লােক উল্টোপাল্টা করলেও তার উপর ক্রোধ আসে না। আর কিছু তাে বেচারা ঠিক করলেও তার উপর ক্রোধ হয়। অতএব এর কিছু কারণ তাে থাকবে? | প্রশ্নকর্তা ও ওদের প্রতি মনে গ্রন্থি পড়ে গেছে?
দাদাশ্রী হ্যা, গ্রন্থি পড়ে গেছে। ওই গ্রন্থি-কে ছাড়ানাের জন্যে এখন কি করবে? পরীক্ষা তাে দিয়ে দিয়েছে। যার উপর যতবার ক্রোধ হওয়ার আছে, ততবার তার উপর ক্রোধ হয়েই যাবে আর তার জন্যে গ্রন্থি-ও পড়েই গেছে, কিন্তু এখন আমাকে কি করতে হবে? যার উপরে ক্রোধ হচ্ছে তার প্রতি মনে খারাপ ভাব হতে দেবে না। মনকে শুধরাবে এই বলে যে, ‘ভাই, আমার প্রারব্ধ-এর হিসাবে এই ব্যক্তি এইরকম করছে। ও যা কিছু করছে তা আমার কর্মের উদয়ের কারণে করছে। এইভাবে মনকে শুধরে নেবে। মনকে শুধরাতে থাকবে আর যখন অন্যজনের প্রতি মন শুধরে যাবে তখন তার প্রতি ক্রোধ হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু সময়ের জন্য পুরােনাে এফেক্ট থাকে, এই এফেক্ট কেটে গেলে তারপর বন্ধ হয়ে যায়।
| [ ১৭ ]
Page #23
--------------------------------------------------------------------------
________________
এ খুব সূক্ষ্ম কথা যা লােকেরা পায় নি। সবকিছুরই উপায় তাে থাকেই, তাই না? উপায় বিনা তাে সংসার হয়ই না! সংসার তাে পরিণামকেই শেষ করতে চায়। অর্থাৎ ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ-এর উপায় এই যে পরিণামের কিছুই কর না, তার কারণেকে নষ্ট করে দাও তাে সব পরিণাম চলে যাবে। মানে নিজেকেই বিচারক হতে হবে। নয়তাে যদি অজাগৃত থাকো তাে উপায় কি ভাবে করবে?
প্রশ্নকর্তা ও কারণগুলােকে-কে কি করে নষ্ট করতে হবে তা আবার একটু বুঝিয়ে দিন।
দাদাশ্রী ও এই ভাইয়ের উপর যদি আমার ক্রোধ হয় তাে তাহলে আমি বুঝব যে এর উপর যে ক্রোধ হচ্ছে তা পরিণাম-স্বরূপ, আমি আগে ওর দোষ দেখেছিলাম এটা তার পরিণাম। এখন ও যা যা দোষ করবে তা যদি আমি মনে না রাখি তাে ওনার প্রতি যে ক্রোধ আছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পূর্বের পরিণাম কিছু থাকবে, সেটুকুই আসবে, তার পরে বন্ধ হয়ে যাবে।।
প্রশ্নকর্তা : অন্যের দোষ দেখি সেইজন্যে ক্রোধ হয় ? | দাদাশ্রী ঃ হ্যা। এই যে দোষ দেখাে, বুঝে নেবে যে-এসবও ভুল পরিণাম। যখন এই ভুল পরিণাম দেখা বন্ধ হয়ে যাবে তারপরে ক্রোধ । বন্ধ হয়ে যাবে। তােমার দোষ দেখা বন্ধ হয়ে গেল, অর্থাৎ সমস্তই বন্ধ হয়ে গেল।
ক্রোধের মূলে আছে অহংকার লােকজন প্রশ্ন করে, আমার এই ক্রোধের চিকিৎসা কি?” আমি বলি, ‘এখন তুমি কি করাে? তখন বলে, ক্রোধকে চেপে রাখি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “চিনে নিয়ে চেপে রাখাে নাকি না চিনেই? ক্রোধকে চিনতে তাে হবে? ক্রোধ আর শান্তি দুজনে একসাথেই থাকে। ক্রোধকে না চিনে শান্তিকে চেপে দিলে তাে শান্তি মারা যাবে! অতএব চেপে রাখার মত বস্তু নয়। তখন ও বুঝতে পারল ক্রোধ অহংকারের রূপ। এখন কোন
[১৮]
Page #24
--------------------------------------------------------------------------
________________
ধরণের অহংকার থেকে ক্রোধ হয় তার খোঁজখবর করা দরকার।
ছেলে গেলাস ভেঙে ফেললে ক্রোধ হয়ে গেল, ওখানে আমার অহংকার কোথায় ? এই গেলাসের ক্ষতি হবে, এরকম অহংকার আছে। লাভলােকসানের অহংকার আছে আমার। সুতরাং লাভ-লােকসানের অহংকারকে বিবেচনা করে নির্মূল করাে। ভুল অহংকারকে সামলে রাখলে ক্রোধ হতেই থাকবে। ক্রোধ আছে, লােভ আছে, বাস্তবে এ সমস্তই মূলতঃ সব অহংকারই।
ক্রোধকে শান্ত করা, কোন বিবেচনা দিয়ে? | ক্রোধ স্বয়ং-ই অহংকার। এখন এটা বুঝতে হবে যে কিভাবে তা অহংকার। এটা খুঁজে বার করতে পারলে তবে বুঝতে পারবে যে ক্রোধ অহংকার-ই। এই ক্রোধ কেন উৎপন্ন হল? তাতে বলে, ‘এই বােন কাপপ্লেট ভেঙে ফেলেছে, তাই ক্রোধ উৎপন্ন হয়েছে। এখন কাপ-প্লেট ভেঙেছে তাে তাতে আমার অসুবিধা কোথায়? তখন বলে,আমার ঘরের লােকসান হয়েছে। আর লােকসান হলেই তাকে বকাবকি করতে হবে? এই অহংকার করা, বকাবকি করা, এই সব যদি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মরূপে চিন্তা-ধারনা করা যায়, তাে চিন্তা করলে এই সমস্ত অহংকার ধুয়ে যায়। এখন এই কাপ ভেঙে গেছে তা নিবার্য না অনিবার্য? অনিবার্য সংযােগ হয় কি হয় না? মালিক চাকরকে বকাবকি করে, আরে, কাপ-প্লেট কেন ভেঙে ফেললি? তাের হাত কি ভাঙা ছিল ? আর তুই এইরকম, তুই ওইরকম। অনিবার্য হলে কি ওকে বকুনি দেওয়া চলে? জামাইয়ের হাতে কাপ-প্লেট ভাঙলে সেখানে কিছুই বলবে না! কারণ যেখানে কেউ সুপীরিয়র থাকে, সেখানে চুপ! আর ইনফিরিয়র কেউ এলে সেখানে অপমান করে দাও!!! এই সমস্ত কিছু ইগােইজম্। সুপীরিয়র এর সামনে সবাই চুপ হয়ে যায় না কি? ‘দাদাজী’র হাতে যদি কিছু ভেঙে যায় তাে কিছুই মনে হবে না আর চাকরের হাতে যদি ভাঙে তাে? | এই জগৎ কখনও ন্যায় দেখেনি। না বােঝার কারণেই এসমস্ত কিছু হয়েছে। যদি বুদ্ধিপুর্বক বিচার-বিবেচনা হয় সেটাই ঠিক। বুদ্ধি যদি বিকশিত
[ ১৯ ]
Page #25
--------------------------------------------------------------------------
________________
হত, বিচারশীল হত তাহলে কোথাও কোন ঝগড়া হয় এরকম হতােই না। এখন ঝগড়া করলে কি কাপ-প্লেট জোড়া লেগে যাবে? শুধু সন্তোষ হয়, এইটুকুই না! আর মনে ক্লেশ আর আস্থা হয় সে তাে আলাদা। অর্থাৎ এই ঘটনায় এক তাে কাপ গেল সেটা এক ক্ষতি, এই ক্লেশ হওয়া দ্বিতীয় ক্ষতি আর চাকরের সাথে শত্রুতা হল, সেই ক্ষতি!!! চাকর শত্রুতা বেঁধে নেবে যে আমি গরীব’ সেইজন্যে আমাকে এরকম বলছে! কিন্তু ও শত্রুতা ছাড়বে না আর ভগবানও বলেছেন কারাে সাথে শত্রুতা বেঁধে নেবে না। যদি সম্ভব হয় তাে প্রেমের বন্ধনে বাঁধবে কিন্তু শত্রুতা বাঁধবে না। কারণ প্রেমের বন্ধনে বাঁধলে এই প্রেম-ই স্বয়ং শত্রুতাকে উপড়ে ফেলবে। প্রেম তাে এমন যে শত্রুতার কবর খুঁড়ে দেয়, শত্রুতা থেকে তাে শত্রুতা বাড়তেই থাকে। নিরন্তর বাড়তেই থাকে। শত্রুতার কারণেই তাে এইভাবে ঘুরে | বেড়ানাে! মানুষ কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে? তীর্থঙ্কর-এর সাক্ষাৎ হয় নি ? তখন বলে, ‘তীর্থঙ্কর-এর সাক্ষাৎ তাে হয়েছিল, ওনার দেশনা (উপপদেশ)-ও শুনেছি কিন্তু কোন কাজ হয় নি। | কোন কোন বস্তু থেকে বাসা আসছে, কোথায় কোথায় বিরােধ হচ্ছে, তাে ওই সমস্ত বিরােধ মিটিয়ে নাও না। বিরােধ হয়, সেখানে দৃষ্টি সঙ্কুচিত থাকে। এইজন্য জ্ঞানীপুরুষ লং-সাইট (দূরদৃষ্টি) দিয়ে দেন। লং-সাইটের। আধারে সব কিছু যেমন আছে তেমন’ দেখতে পাওয়া যায়।
সন্তানের উপর ক্রোধ হয় তখন...
প্রশ্নকর্তা ও ঘরে বাচ্চাদের উপর ক্রোধ হয়, তাে কি করব?
দাদাশ্রী ও ক্রোধ না বােঝার কারণে হয়। ওকে তুমি জিজ্ঞাসা করাে | যে, তােমার খুব ভাল লেগেছিল ? তখন ও বলবে ‘আমার খুব খারাপ লেগেছিল, ভিতরে খুব দুঃখ হয়েছিল। ওর-ও দুঃখ হয়, তােমারও দুঃখ হয়। তাে এতে বাচ্চার উপর বিরক্ত হওয়ার দরকারই বা কোথায় ? আর বিরক্ত হলে যদি শুধরে যায় তাে বিরক্ত হও। রেজাল্ট (পরিণাম) ভাল
[ ২0]
Page #26
--------------------------------------------------------------------------
________________
হলে বিরক্ত হওয়া কার্যকর, রেজাল্টই ভালাে হলাে না তাে বিরক্ত হওয়ার অর্থ কি? ক্রোধ করলে যদি লাভ হয় তাে করাে আর যদি লাভ
হয় তাে এমনিই চালিয়ে নাও না! | প্রশ্নকর্তাঃ যদি আমি ক্রোধ না করি তাহলে ও আমার কথা শুনবেও , খাবেও না। দাদাশ্রী ও ক্রোধ করার পরেও কোথায় শােনে?
বীতরাগদের সূক্ষ্ম দৃষ্টি তাে দ্যাখাে! এ সত্ত্বেও লােকে কি বলে যে এই পিতা নিজের সন্তানের প্রতি এত ক্রোধিত হয়ে গেছে, সেইজন্য এ পিতা না-লায়েক। আর প্রকৃতি এখানে তাকে কিরকম ন্যায় দেয় ? পিতার পূণ্য জমা হয়। হ্যা, কারণ সন্তানের ভালাের জন্য ইনি অশান্তি নিজের উপর নিয়েছেন। সন্তানের সুখের খাতিরে নিজের উপর অশান্তি টেনে আনার কারণেই পূণ্য জমা হয়। বাকী সমস্ত প্রকার ক্রোধ পাপ-ই জমা করে। এই এক প্রকার ক্রোধ যা সন্তানের বা শিষ্যের মঙ্গলের জন্যে করে। নিজেকে জ্বালিয়েও এদের সুখের জন্য করে, তাই পুণ্য হয়। তাও লােকে তার নিন্দাই করতে থাকে। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে যথার্থ ন্যায় আছে না নেই? নিজের ছেলে-মেয়ের উপর যে ক্রোধ করে তাতে হিংসকভাব থাকে না। অন্য সমস্ত-তে হিংসকভাব থাকে। তবু এতে তন্ত (সূত্র) তাে থাকেই, কারণ ওই মেয়েকে দেখলেই ভিতরে ক্লেশ শুরু হয়ে যায়।
যদি ক্রোধে হিংসকভাব আর তন্ত, এই দুইই না থাকে তাে মােক্ষ হয়ে যাবে। আর যদি হিংসকভাব না থাকে, শুধুই তন্ত থাকে, তাহলে পূণ্য জমা হয়। কিরকম সূক্ষ্মতায় ভগবান খুঁজে বার করেছেন!
ক্রোধ করে তবুও লাভ করে পূণ্য
ভগবান বলেছেন, যে যদি অন্যের ভালাের জন্যে ক্রোধ করে, পরমার্থ | হেতু ক্রোধ করে তাহলে তার ফল পূণ্যলাভ।।
| [ ২১ ]
Page #27
--------------------------------------------------------------------------
________________
এখন এই ক্রমিক মার্গে তাে শিষ্য ঘাবড়াতেই থাকে যে এখনই কিছু বলবেন, আর উনি (গুরু)-ও সকাল থেকে সারাদিন উত্যক্ত হয়েই বসে থাকেন। তাে একদম দশম গুনকস্থান (জৈনধর্মাবলম্বীদের আধ্যাত্মিক প্রগতির পরিমাপক) অবধি এই হাল। উনি চোখ লাল করলে ভিতরে আগুন জ্বলে। এই ব্যথা, কতটা ব্যথা এতে হয়! তাহলে কি করে পৌঁছাবে? মােক্ষলাভ কি কোন লাড়ু খাওয়ার খেলা? এ তাে কখনও কখনও এরকম অক্রমবিজ্ঞান প্রাপ্ত হয়।
ক্রোধ মানে এক প্রকারের সিন্যাল সংসারের লােক বলে যে এই ভাই ছেলের উপর ক্রোধ করেছে সুতরাং এ দোষী এবং এর পাপ হয়েছে। ভগবান এরকম বলেন না। ভগবান বলেন যে, “ছেলের উপর ক্রোধ করে নি এইজন্য ওর পিতা দোষী। অতএব ওর একশাে টাকা দন্ড। তখন বলে, ‘ক্রোধ করা কি ঠিক? তাতে বলেন, না, কিন্তু এখন তার প্রয়ােজন ছিল। যদি এখানে ক্রোধ না করতাে তাে ছেলে উল্টো রাস্তায় চলে যেত।
অর্থাৎ ক্রোধ এক প্রকারের লাল সিগন্যাল, আর কিছু নয়। যদি চোখ রাঙাতে, যদি ক্রোধ না করতে তাে ছেলে উল্টো রাস্তায় চলে যেত। এইজন্যে ভগবান তাে পিতা সন্তানের উপর ক্রোধ করে, তবু তাকে একশাে টাকা পুরস্কার দেন।
| ক্রোধ তাে লাল ঝান্ডা। শুধু পাবলিকের জানা নেই আর কতক্ষণ লাল ঝান্ডা দেখাতে হবে, কত সময় ধরে দেখাতে হবে তা বােঝার প্রয়ােজন আছে। এখন মেলগাড়ী যাচ্ছে আর আড়াই ঘন্টা লাল ঝান্ডা নিয়ে অকারণে দাঁড়িয়ে থাকবে তাে কি হবে? অর্থাৎ লাল ঝান্ডার প্রয়ােজন আছে কিন্তু কতটা সময় দেখাতে হবে তাও বােঝার প্রয়ােজন আছে।
ঠান্ডা (শান্ত থাকা) হল সবুজ সিন্যাল।
রৌদ্রধান পরিবর্তিত ধর্মধ্যানে সন্তানের উপর ক্রোধ করলে, কিন্তু ভিতরে তােমার ভাব এইরকম
[[ ২২ ]
Page #28
--------------------------------------------------------------------------
________________
যে এটা হওয়া উচিৎ নয়। ভিতরে তােমার ভাব কিরকম থাকে? প্রশ্নকর্তা : এইরকম হওয়া উচিৎ ছিলনা।
দাদাশ্রী ? অর্থাৎ এটা রৌদ্রধ্যান ছিল, তা ধর্মধ্যানে পরিবর্তিত হয়ে গেল। ক্রোধ হল তবু পরিণামে এল ধর্মধ্যান।
প্রশ্নকর্তা ও এরকম হওয়া উচিৎ নয়, এই ভাব ছিল, সেইজন্যে ?
দাদাশ্রী ? এর পিছনে হিংসকভাব নেই। হিংসকভাব বিনা ক্রোধ হয়ই না, কিন্তু ক্রোধের এক বিশেষ দশা আছে যে যদি নিজের ছেলে, নিজের মিত্র, নিজের স্ত্রীর উপর ক্রোধ করে তাে পূণ্য হয়। কারণ এটাই দেখা হয় যে ক্রোধ করার পিছনে হেতু কি?
প্রশ্নকর্তা ও প্রশস্ত ক্রোধ। (যার উদ্দেশ্য অন্যের লাভ আছে) দাদাশ্রী ঃ অপ্রশস্ত ক্রোধকে খারাপ বলে।
অর্থাৎ এই ক্রোধের-ও এত ভাগ আছে। অন্যদিকে, পয়সারজন্যে ছেলেকে ভাল-মন্দ বলে যে তুই ব্যবসায় ঠিকমতাে মন দিচ্ছিস না, সেই ক্রোধ আলাদা। সন্তানকে সংশােধন করার জন্যে, চুরি করছে বা অন্য কিছু উল্টোপাল্টা কাজ করছে, তার জন্যে ছেলেকে বকাবকি করে, ক্রোধ করে তাে তার ফল ভগবান পূণ্য বলেছেন। ভগবান কত বিবেচক!
ক্রোধ দূর করাে এইভাবে প্রশ্নকর্তা : আমরা ক্ৰোধ করি কার উপর? বিশেষ করে অফিসে সেক্রেটারির উপর ক্রোধ করি না আর হাসপাতালে নার্সের উপর করি কিন্তু ঘরে স্ত্রীর উপর আমরা ক্ৰোধ করি।
দাদাশ্রী ও এইজন্যেই তাে যখন একশােজন বসে আছে আর শুনছে। তখন সবাইকে বলি যে অফিসে বস্ (মালিক) ধমকালে বা কেউ বকাবকি করলে সেই সব ক্রোধ ঘরে বসে স্ত্রীর উপর চাপিয়ে দেয় লােকে। এইজন্যে আমাকে বলতে হয় যে, আরে! স্ত্রীকে কেন ধমকাচ্ছাে, বেচারীকে! অকারণে স্ত্রীকে বকাবকি করছাে! বাইরে কেউ ধমকালে তার সাথে লড়াই করাে না। এখানে কেন বেচারীর সাথে লড়াই করছাে?
[ ২৩ ]
Page #29
--------------------------------------------------------------------------
________________
এক ভাইসাহেব ছিল, আমার পরিচিত। সে আমাকে প্রায়ই বলতো, ‘সাহেব, একবার আমার এখানে পদার্পণ করুন। রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। একবার আমি ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তো ওর সাথে দেখা হয়ে গেল আর বললো, “কিছুক্ষণের জন্যে আমার ঘরে চলুন।' তো আমি ওর ঘরে গেলাম। এখানে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আরে, দুটো রুমে তোর কুলিয়ে যায়?' তো ও বললো, “আমাকে তো কারিগর বলে না!' এ তো আমার সময়ের, ভাল সময়ের কথা বলছি। এখন তো একটা রুমেও থাকতে হয়। কিন্তু ভাল সময়েও বেচারার দুটো রুম-ই ছিল। তখন আমি আবার প্রশ্ন করলাম, ‘স্ত্রী তোমাকে বিরক্ত করে না কি? তাতে বললো যে, ‘স্ত্রী-র ক্রোধ হয় কিন্তু আমি ক্রোধ করি না।' আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এরকম কেন?' ও বললো, “তাহলে ও যদি ক্রোধ করে আর আমিও ক্রোধ করি তো এই দুটো রূমে আমি কোথায় শুই আর ও কোথায় শোয়?!' ও ওদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে আর আমি এদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ি, এই অবস্থায় তো আমি সকালে ভাল চা-ও পাব না। ও-ই আমাকে সুখ দেয়, ওর কারণেই আমার সুখ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘স্ত্রী যদি ক্রোধ করে তো?' তখন বললো, ‘ওকে মানিয়ে নিই। বন্ধু, যেতে দাও না, আমার অবস্থা আমিই জানি। এ রকম করে মানিয়ে নিই। কিন্তু ওকে খুশী রাখি। বাইরে মারপীট করে আসি কিন্তু ঘরে ওর সাথে মারপীট করি না।' আর কিছু লোক তো বাইরে মার খেয়ে এসে ঘরে মারপীট করে।
এ তো সারাক্ষণ ক্রোধ করে। গরু-মোষও ভাল যে ক্রোধ করে না। জীবনে একটু শান্তি তো থাকা চাই না! দুর্বল হওয়া উচিৎ নয়। এ তো সব সময় ক্রোধ করে। তুমি গাড়ীতে করে এসেছো না? গাড়ী যদি সারা রাস্তায় ক্রোধ করতে থাকে তো কি হবে?
প্রশ্নকর্তা ঃ তো এখানে এসে পৌছাতে পারতাম না।
দাদাশ্রী ঃ তো যদি তুমি এমন ক্রোধ করো তো ওর গাড়ী কিরকম চলবে? তুমি ক্রোধ করো না তো?
প্রশ্নকর্তা : কখনও কখনও হয়ে যায়।
[ 24 ]
Page #30
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদাশ্রী ? আর যদি দুজনেরই হয়ে যায় তাে বাকী কি থাকলাে ? প্রশ্নকর্তা ও পতি-পত্নীর মধ্যে কম-বেশী ক্রোধ তাে হওয়াই চাই না?
দাদাশ্রী ? না। এরকম কোন নিয়ম নেই। পতি-পত্নীর মধ্যে তাে খুব শান্তি থাকা চাই। যদি দুঃখ হয় তাে তাদের পতি-পত্নীই বলবে না। সত্যিকারের। ফ্রেন্ডশিপ-এ দুঃখ হয় না, আর এ তাে সবথেকে বড় ফ্রেন্ডশিপ। এখানে। ক্রোধ হওয়া উচিৎ নয়। এ তাে লােকেরা জোর করে মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে, নিজের হয়, তাই নিয়মই এরকম আছে বলে দেয়। বাকী সব জায়গায় হলেও পতি-পত্নীর মধ্যে একটুও দুঃখ হওয়া উচিৎ নয়।
জেদ-এর মার।
প্রশ্নকর্তা ও ঘরে অথবা বাইরে বন্ধুদের সাথে সব জায়গায় প্রত্যেকের মত ভিন্ন ভিন্ন হয় আর তাতে আমার ধারণা অনুসার না হলে আমার ক্রোধ কেন হয়? তখন আমার কি করা উচিৎ?
| দাদাশ্রী ঃ সবাই যদি নিজের নিজের ধারণা অনুযায়ী করতে যায় তাে কি হবে? এরকম বিচার-ই কেন আসে? সাথে-সাথেই চিন্তা করা উচিৎ যে সকলেই যদি নিজের ধারণা অনুযায়ী করতে শুরু করে তাে একে অন্যের সাথে প্রতিস্পর্ধায় সমস্ত বাসন ভেঙে ফেলবে আর খাওয়ারও কিছু থাকবে।
। সেইজন্য ধারণা অনুসারে কখনাে করবেই না। ধারণাই করবে না, তাতে ভুল বুঝবে না। যার দরকার সে ধারণা করবে এইরকম মনে রাখবে। | প্রশ্নকর্তা ঃ আমি যতই শান্ত থাকি না কেন তাও যদি পতি ক্রোধ করে তাে আমার কি করা উচিৎ?
দাদাশ্রী ঃ ও ক্রোধ করে আর ওর সাথে যদি ঝগড়া করতে হয় তাে | তােমাকেও ক্রোধ করতে হবে, অন্যথা নয়! যদি ফিল্ম বনধ করতে চাও।
তাে শান্ত হয়ে যাবে। আর ফিল্ম বন্ধ করতে না চাইলে সারারাত চলতে দাও, কে বারণ করেছে? কি তােমার এরকম ফিল্ম পছন্দ?
প্রশ্নকর্তা ঃ না, এরকম ফিল্ম পছন্দ নয়। দাদাশ্রী ও ক্রোধ করে কি করবে? ওই লােক স্বয়ং ক্রোধ করছে না,
[ ২৫ ]
Page #31
--------------------------------------------------------------------------
________________
ও তো ‘মেকানিক্যাল অ্যান্ড্লামেন্ট্' (যান্ত্রিক সামঞ্জস্যতা) ক্রোধ করছে। এই কারণে ফের নিজের মনে পশ্চাতাপ হয় যে এই ক্রোধ না করলেই ভাল হতো।
প্রশ্নকর্তা ঃ ওকে শান্ত করার কি উপায় ?
দাদাশ্রী : ও তো যদি মেশিন গরম হয়ে যায় আর ঠান্ডা করতে হয় তো কিছুক্ষণ বন্ধ রাখলে নিজেই ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর যদি হাত দিই বা ঘাঁটাতে যাই তো নিজেই জ্বলে যাব।
প্রশ্নকর্তা : আমার আর আমার হাজব্যান্ড-এর মধ্যে ক্রোধ আর তর্কবিতর্ক হয়ে যায়। তো আমি কি করব?
দাদাশ্রী : ক্রোধ তুমি কারো কি ও করে, কে ক্রোধ করে?
প্রশ্নকর্তা ঃ ও, ফের আমারও হয়ে যায়।
দাদাশ্রী : তো তুমি নিজেই নিজেকে ভর্ৎসনা করবে, ‘কেন তুমি এরকম করছো? আগে যা করেছো তা তো ভুগতেই হবে, না!” কিন্তু প্রতিক্রমণ করলে এই সমস্ত দোষ কেটে যায়। নয়তো আমার দেওয়া ঘুসি ফের আমাকেই ভুগতে হবে। কিন্তু প্রতিক্রমণ করলে কিছুটা কম হয়ে যায়।
তো এক ধরনের পাশবতা (পশুতা)
প্রশ্নকর্তা : আমার যদি ক্রোধ হয়ে যায় আর গালি-গালাজ বেরিয়ে পড়ে তো কি করে শুধরাবো?
দাদাশ্রী ঃ ক্রোধ যে করে আর গালাগালি দেয় তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন নেই। সেইজন্যে এসব হয়ে যায়। কনট্রোল করার জন্যে প্রথমে কিছু বোঝার দরকার আছে। যদি আমার উপর কেউ ক্রোধ করে তো তা আমার সহ্য হবে কি হবে না তা আমার ভাবা দরকার। আমি ক্রোধ করার আগে যদি আমার উপর কেউ ক্রোধ করে তো আমার সহ্য হবে কি? ভালো লাগবে কি লাগবে না? আমার যা ভালো লাগে সেইরকম ব্যবহারই অন্যের সাথে করা উচিৎ।
কেউ তোমাকে গালাগালি দেয় আর তোমার খারাপ না লাগে, ডিপ্রেসান না হয় তো তুমিও দেবে। নয়তো বন্ধ করে দেবে। গালাগালি তো দেওয়াই [ 23 ]
Page #32
--------------------------------------------------------------------------
________________
উচিৎ নয়। এ তাে এক ধরনের পাশবতা। আন্ডারডেভেল পিপল্স, আনকাল্ডার (স্বল্পবিকশিত মানুষ, অসংস্কৃত)।
প্রতিক্ৰমণ-ই সত্যিকারের মােক্ষমার্গ প্রথমে দয়া রাখাে, শান্তি রাখাে, সমতা রাখাে, ক্ষমা রাখাে এরকম উপদেশ শেখায়। তখন লােকে কি বলে, আরে! আমার ক্রোধ হতেই থাকে আর তুমি বলছাে ক্ষমা রাখাে কিন্তু কিভাবে ক্ষমা রাখবাে? অতএব এদের। উপদেশ এইভাবে দিতে হবে যে তােমার ক্রোধ হলে তুমি এইভাবে মনে পশ্চাতাপ করবে, আমার কি দুর্বলতা আছে যে আমি এরকম ক্রোধ করে। ফেলি ? এ আমি ভুল করে ফেলেছি। এইভাবে পশ্চাতাপ করবে আর যদি কোন গুরু থাকেন তাে তার সাহায্য নেবে, আর এরকম দুর্বলতা আবার উৎপন্ন না হয় এই নিশ্চয় করবে। তুমি আর ক্রোধের রক্ষণ করবে না, বরং তার প্রতিক্ৰমণ করবে।
প্রতিক্ৰমণে কি করতে হবে? তােমার ক্রোধ হয়েছে আর সামনের। ব্যক্তি তাতে দুঃখ পেয়েছে, তাে তার আত্মাকে স্মরণ করে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে। অর্থাৎ যা হয়েছে তার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নেবে এবং আর কখনও করব না এই প্রতিজ্ঞা করবে, আর আলােচনা করবে মানে আমার কাছে দোষ খােলাখুলি বলবে যে আমার এই দোষ হয়ে গেছে।
মনে-মনেও ক্ষমা চাও প্রশ্নকর্তা ঃ দাদাশী, পশ্চাতাপ বা প্রতিক্ৰমণ করার সময় অনেকবার এরকম হয় যে ভুল করে ফেলেছি, কারাের উপর ক্রোধ হয়ে গেছে, তখন ভিতরে দুঃখ হয় যে এটা ভুল হয়ে গেছে কিন্তু সামনের ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সাহস হয় না।
দাদাশ্রী ? এরকম ক্ষমা চাইবেন না, নয়তাে ওই ব্যক্তি তার দুরুপযােগ করবে। হ্যা, এখন পথে এসেছাে তাে? এইরকমই এরা সব! নাে (উদার) মানুষ নয়! ক্ষমা চাওয়ার মত লােক নয় এরা! সেইজন্যে তার। শুদ্ধাত্মাকে স্মরণ করে মনে-ই ক্ষমা চেয়ে নেবে। হাজারের মধ্যে হয়তাে জনদশেক এরকম ব্যক্তি পাবে যারা ক্ষমা চাওয়ার আগেই ক্ষমা করবে।
[ ২৭ ]
Page #33
--------------------------------------------------------------------------
________________
নগদ পরিণাম, হার্দিক প্রতিক্রমণের প্রশ্নকর্তা ঃ কারাের উপর খুব ক্রোধ হয়ে গেছে, তাে বলে চুপ হয়ে যাই, পরে এই যে বললাম তার জন্যে ভিতরে বার-বার জ্বালা হতে থাকে। এর জন্যে কি একবারের বেশী প্রতিক্ৰমণ করতে হবে?
দাদাশ্রী ও এতে দু-তিনবার সত্যিকারের হৃদয় দিয়ে প্রতিক্ৰমণ করবে আর একদম ভালােভাবে হয়ে গেলে পুরাে হয়ে যাবে। হে দাদা ভগবান! আমার অত্যন্ত ক্রোধ হয়ে গেছে, সামনের ব্যক্তির খুব কষ্ট হয়েছে! এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনার সম্মুখে খুব ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
| দোষ, কিন্তু নিপ্রাণ প্রশ্নকর্তা ও অতিক্রমণে যে উত্তেজনা হয়, তা প্রতিক্ৰমণে শান্ত হয়ে যায় কি?
দাদাশ্রী ঃ হ্যা, শান্ত হয়ে যায়। চিকনী (যে চিপকে যায়) ফাইল (গাঢ় হিসাবযুক্ত) হলে সেখানে তাে পাঁচ-পাঁচ হাজার প্রতিক্ৰমণ করতে হয়, তাহলে শান্ত হয়। বিরক্তি বাইরে প্রকাশিত হয় নি কিন্তু ভিতরে অস্থিরতা | তৈরী হয়েছে, তাহলেও যদি আমি তার জন্যে প্রতিক্ৰমণ না করি তাে। ততটা দাগ আমার উপর থেকে যাবে। প্রতিক্রমন করলে পরিস্কার হয়ে যায়। অতিক্রমণ করেছাে এইজন্যে প্রতিক্ৰমণ করাে।
প্রশ্নকর্তা ও কারাের উপর ক্রোধ হয়ে যাওয়ার পরে খেয়াল হয় আর সেই সময় তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই, তাে তাকে কি বলব?
দাদাশ্রী ঃ এখন জ্ঞান নেওয়ার পরে ক্রোধ হয়ে যায় আর ফের ক্ষমা | চেয়ে নাও তাে কোন অসুবিধা নেই। মুক্ত হয়ে গেলে! আর এরকম সামনে গিয়ে যদি ক্ষমা চাইতে না পার, যদি এরকম হয় তাে মনে চেয়ে নেবে, তাহলেই হবে।
প্রশ্নকর্তা ও প্রত্যক্ষ সবার সামনে ?
দাদাশ্রী ও কোন অসুবিধা নেই। কেউ যদি এরকম না করে আর ভিতরেই প্রতিক্রমণ করে তাহলেও চলবে। কারণ এই দোষ জীবন্ত নয়,
[ ২৮ ]
Page #34
--------------------------------------------------------------------------
________________
এ ‘
ডিস্টার্জ। ডিস্টার্জ’ দোষ অর্থাৎ এই দোষ চার্জ হওয়া দোষ নয়। তাই এত খারাপ ফল দেয় না।
প্রতিষ্ঠা করলেই কষায় উৎপন্ন হয় এ সমস্ত তুমি চালাও না, ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ প্রভৃতি কয় চালায়। “কযায়” - এরই রাজত্ব চলছে। “আমি কে”-এর ধারনা হলে তবে কয় যাবে। ক্রোধ হলে পশ্চাতাপ হয়, কিন্তু ভগবানের বলা প্রতিক্ৰমণ করতে না জানাে তাে কি হবে? প্রতিক্ৰমণ করতে জানলে মুক্তি পাবে।
এই ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ-এর সৃষ্টি কতদিন থাকবে? ‘আমি চান্দুলাল আর আমি এইরকমই এই দৃঢ়বিশ্বাস যতদিন আছে ততদিনই থাকবে। যতদিন আমি প্রতিষ্ঠা করেছি যে আমি চালাল’, এই সমস্ত লােকজন আমার প্রতিষ্ঠা করেছে আর আমিও তা মেনে নিয়েছি যে আমি চান্দুলাল, ততদিন এই ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ ভিতরে থাকবে।
| নিজের প্রতিষ্ঠা তখনই সমাপ্ত হবে যখন ‘আমি শুদ্ধাত্মা’ এই বােধ আসবে। অর্থাৎ স্বয়ং যখন স্ব-স্বরূপে যাবে তখন প্রতিষ্ঠা চূর্ণ হবে। তখন ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ যাবে, তা নইলে যাবে না। মারতে থাকলেও যাবে না বরং বাড়তে থাকবে। একজনকে মারলে দ্বিতীয়জন বাড়বে আর দ্বিতীয়জন-কে মারাে তাে তৃতীয়জন বাড়বে।
যেখানে ক্রোধ দুর্বল, সেখানে মান সবল | এক মহারাজ বলেন, আমি ক্রোধকে চাপা দিয়ে দিয়ে নির্মূল করেছি। আমি বললাম, তার পরিণাম স্বরূপ এই ‘মান’ নামের মহিষ বেশী তাগড়া হয়েছে। মান তাগড়া হতে থাকবে, কারণ মায়ার এই পুত্র মরবে এরকম নয়। এর উপায় করাে তাে যাবে, নয়তাে যাওয়ার পাত্র এরা নয়। এরা মায়ার সন্তান। ওই মান নামক মােষ এত তাগড়া হয়েছে, আমি ক্রোধকে দাবিয়ে দিয়েছি, আমি ক্রোধকে দাবিয়ে দিয়েছি। ফের ও তাগড়া হয়েছে। এর চেয়ে তাে চারজনই সমান ছিল, সেটাই ঠিক ছিল।
| [ ২৯ ]
Page #35
--------------------------------------------------------------------------
________________
ক্রোধ আর মায়া হল রক্ষক
| ক্রোধ আর মায়া, এরা তাে রক্ষক। এরা তাে লােভ আর মানের রক্ষক। লােভ-এর যথার্থ রক্ষক মায়া আর মান-এর যথার্থ রক্ষক ক্রোধ। আবার মান-এর জন্যেও মায়ার কম-বেশি উপযােগ হয়, কপট করে। কপট করেও মান প্রাপ্ত করে, লােকে এরকম করে কি?
আর ক্রোধ করে লােভ করে নেয়। লােভী ক্রোধী হয় না আর যদি ক্রোধ করে তাে বুঝতে হবে যে ওর লােভে কোন বাধা এসেছে, সেইজন্যে ক্রোধ করছে। নয়তাে লােভী তাে, যদি কেউ ওকে গালাগালিও দেয় তবু বলবে, “ও যতই শােরগােল করুক না কেন, আমি তাে আমার টাকা পেয়ে গেছি। লােভী এরকমই হয় কারণ কপট সবকিছুর রক্ষণ তাে করবেই। কপট মানে মায়া আর ক্রোধের রক্ষক সব। | ক্রোধ তাে নিজের মান-এর উপর যখন আঁচ আসে তখন ক্রোধ করে। নিজের মান ভঙ্গ হয়, সেখানে।
ক্রোধ তাে সরল। সরলের প্রথমে নাশ হয়। ক্রোধ তাে গােলা-বারুদ, আর যেখানে গােলা-বারুদ সেখানে তাে সৈন্য লড়বেই। ক্রোধ গেলে আর সৈন্য কি জন্যে লড়বে? পরে তাে সখা-সখী সব পালিয়ে যাবে। কেউ দাঁড়িয়ে থাকবে না।
ক্রোধ-এর স্বরূপ
ক্রোধ হল উগ্র পরমাণু। তুবড়ীর মধ্যে বারুদ ভরা থাকে আর জ্বললে আগুনের ফুলকি বার হতে থাকে। যখন ভিতরের বারুদ শেষ হয়ে যায়, তখন তুবড়ী নিজেই নিভে যায়। এই রকমই ক্রোধেরও হয়। ক্রোধ উগ্র পরমাণু, আর যখণ ‘ব্যবস্থিত’-এর নিয়ম অনুসারে ফাটে তখন সবদিক থেকে জ্বলতে থাকে। উগ্রতা আছে, তাকে ক্রোধ বলে না, যে ক্রোধে তন্ত আছে তাকেই ক্রোধ বলে। ক্রোধ তাে তখনই বলবে যখন ভিতরে জ্বালা থাকে। জ্বালা আছে আর তার ফুকি বেরােতে থাকে আর অন্যের উপরেও তার প্রভাব পড়ে। তাকে কুড়ন (যে নিয়ে পীড়িত আর অন্যগুলােকেও
[ ৩০ ]
Page #36
--------------------------------------------------------------------------
________________
পীড়িত করে) বলবে আর অজপাতে (যে নিয়ে ভেতরে পীড়িত থাকে) নিজে একলাই ভিতরে ভিতরে জ্বলতে থাকে, কিন্তু তন্ত তাে দুইয়ের ক্ষেত্রেই থাকে। আর উগ্রতা তাে অন্য বস্তু।
গুমরানাে, সহ্য করা, তাও ক্রোধ ক্রোধভরা বাণী না বললে সামনের জন আঘাত পায় না। মুখে বলা, শুধুমাত্র তাকেই ক্রোধ বলে এরকম নয়। ভিতরে ক্লেশ হতে থাকে তাকেও। ক্রোধ বলে। আর একে সহ্য করা তাে ডবল (দ্বিগুণ) ক্রোধ। সহ্য করা মানে চেপে রাখা। ও তাে যখন একদিন স্প্রিং লাফিয়ে উঠবে তখন বােঝা যাবে। সহ্য কেন করতে হবে? এর তাে জ্ঞান দিয়ে সমাধান করতে হবে।
ক্রোধে বড় হিংসা বুদ্ধি ইমােশনাল হয়, জ্ঞান মােশনে থাকে। যেমন ট্রেন মােশনে চলে, যদি ইমােশনাল হয়ে যায় তাে ?
প্রশ্নকর্তা ঃ অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যায়। | দাদাশ্রী ঃ এরকম-এরকম করে চলে তাে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। এইভাবেই মানুষ যখন ইমােশনাল হয় যায় তখন ভিতরে অনেক জীব মারা যায়। ক্রোধ হয়েছে কি কত রকমের ছােট ছােট জীব মরে শেষ হয়ে যায়। তার উপর আবার স্বয়ং দাবী করে, “আমি তাে অহিংসা ধর্ম পালন করি, জীব-হিংসা তাে করি-ইনা। আরে, কিন্তু ক্রোধ থেকে তাে অসংখ্য জীব-ইমারা যায়, ইমােশনাল হয়ে।।
ক্রোধকে এইভাবে জয় করা যায় দ্রব্য অর্থাৎ বাইরের ব্যবহার পাল্টায় না কিন্তু যদি ভাব পাল্টায় তাে অনেক হল। কেউ যদি বলে যে ক্রোধ বন্ধ করতে চাই, তাে আজই ক্রোধ বন্ধ হয়ে যাবে না। ক্রোধকে তাে চিনতে হবে যে ক্রোধ কি? কেন উৎপন্ন হয় ? ওর জন্ম কিসের আধারে হয় ? ওর মা-কে? বাপ কে? সবকিছু জানার পর ক্রোধকে চেনা যাবে।।
[ ৩১ ]
Page #37
--------------------------------------------------------------------------
________________
| যে মুক্ত সেই ছড়াতে পারে তােমার সব কিছু বের করে ফেলতে হবে? কি কি বের করতে হবে বলাে। লিস্ট বাড়িয়ে আমাকে দাও। ওসব বের করে দেব। তুমি ক্রোধ-মানমায়া-লােভ দিয়ে বাঁধা পড়েছাে?
প্রশ্নকর্তা ঃ একদম।
দাদাশ্রী ঃ যে ব্যক্তি বাঁধা হয়ে আছে সে নিজে নিজে কিভাবে মুক্ত হবে? এরকমভাবে চারদিক থেকে হাত-পা সব শক্ত করে বাঁধা থাকলে সে নিজে কি করে মুক্ত হবে?
প্রশ্নকর্তা ঃ ওকে কারাের সাহায্য নিতে হবে। দাদাশ্রী ঃ যে বাঁধা হয়ে আছে তার সাহায্য নিতে হবে? প্রশ্নকর্তা : যে স্বতন্ত্র তার হেল্প নিতে হবে।
দাদাশীঃ আমি কাউকে প্রশ্ন করি যে,“ভাই, এখানে কেউ এমন আছে কি যার বন্ধন নেই? মুক্ত আছে? তাহলে আমাকে এখানে হেল্প করাে।' অর্থাৎ যে মুক্ত আছে সেই মুক্ত করতে পারে। তাছাড়া, আর অন্য কেউ করতে পারবে ।।
ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ-এর আহার
কিছু লােক জাগৃত হয়, তারা বলে এই যে ক্রোধ হয়ে যাচ্ছে তা আমার পছন্দ নয়, কিন্তু তবুও করতে হচ্ছে।
আর কিছু তাে ক্রোধ করে আর বলে, ক্রোধ না করলে আমর গাড়ী তাে চলবেই না, আমার গাড়ী বন্ধ হয়ে যাবে। এরকমও বলে। | ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ নিরন্তর নিজেরটাই চুরি করে খাচ্ছে, কিন্তু লােকেরা তা বুঝতে পারে না। এই চারটিকে যদি তিন বছর উপবাসী রাখাে, তাে এরা পালিয়ে যাবে। কিন্তু যে খাদ্য দিয়ে এরা বেঁচে আছে সেই খাদ্য কি? যদি তা।
জানাে, তাে এরা কি করে উপবাসী হয়ে মরবে? এটা না বােঝার কারণেই এরা আহার পেতে থাকে। ওরা কিভাবে বেঁচে আছে? আর তাও অনাদিকাল
[ ৩২ ]
Page #38
--------------------------------------------------------------------------
________________
| থেকে বেঁচে আছে! এইজন্যে ওদের আহার বন্ধ করে দাও। এরকম বিচার তাে কেউ করেই না আর সবাই জোর করে এদের বের করতে থাকে। এই চারটি এমনিই চলে যাবে এমন নয়। ও তাে যখন আত্মা বাইরে বেরিয়ে আসে তখন ভিতরের সবকিছু ঝাড়া-মােছা করে, তারপরে বেরােয়। ওদের হিংসক মার এর প্রয়ােজন নেই, ওদের তাে অহিংসক মার চাই।
| আচাৰ্য শিষ্যকে কখন ধমকান? ক্রোধ এলে তখন। সেইসময় যদি কেউ বলে, “মহারাজ, একে কেন ধমকাচ্ছেন?’ তখন মহারাজ বলেন, “ও তাে ধমক খাওয়ারই যােগ্য। ব্যস, তাহলে তাে হয়ে গেল শেষ। এরকম বলা সেটাই ক্রোধের আহার। ক্রোধ করে তার রক্ষণ করা, সেটাই ওর অহার।
এই ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ যদি তিন বছর পর্যন্ত আহার না পায় তাে নিজেরাই পালিয়ে যাবে। আমাকে বলতেই হবে না। কারণ প্রত্যেকটি বস্তু নিজের নিজের আহার দ্বারা জীবিত থাকে আর সংসারের লােক কি করে ? প্রত্যেকদিন ক্রোধ-মান-মায়া-লােভকে খাবার দিতে থাকে। রােজ আহার করায় আর ফের এরা হৃষ্ট-পুষ্ট হয়ে ঘুরতে থাকে।
বাচ্চাদের মারে, খুব রেগে গিয়ে মারধাের করে, তখন স্ত্রী বলে, ‘বেচারা বাচ্চাদের এত মারলে কেন?’ তখন বলে, তুমি বুঝবে না, এরা মার খাওয়ারই যােগ্য। এতে ক্রোধ বুঝে যায়, ‘আরে বাহ্, আমাকে আহার দিল! ভুল হয়েছে। এটা বুঝলাে না আর মারার মত এরকম অভিপ্রায় দিল, সেইজন্যে এ আমাকে খাবার দিচ্ছে। একে আহার দেওয়া বলে। আমরা ক্রোধকে এনকারেজ (উৎসাহিত) করলে, তাকে ভাল মনে করলে ওকে খাবার দেওয়া হল এরকম বলা যায়। ক্রোধকে, ক্রোধ করা খারাপ’ এরকম মনে করলে তাকে খাবার দেওয়া হল না বলতে হবে। ক্রোধের পক্ষপাত করলে, তার পক্ষ নিলে, সে খাবার পেয়ে গেল। আহার থেকেই তাে ও বেঁচে থাকছে। লােকে তাে ওর পক্ষ নেয়, কি না?
| ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ, কাউকে আমি রক্ষণ দিই নি। ক্রোধ হয়ে গেছে আর তখন কেউ বলে যে, এইরকম ক্রোধ কেন করছাে?' তখন আমি বলে দিই, এই ক্রোধ অতি খারাপ বস্তু, আমার দুর্বলতার কারণে হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমি রক্ষণ করলাম না। কিন্তু লােকেরা রক্ষণ করে।
[ ৩৩ ]
Page #39
--------------------------------------------------------------------------
________________
| এই সাধু নস্যি নেন আর আমি বলি, ‘সাহেব, আপনি নস্যি নেন ? তখন যদি বলে, নস্যি নিতে কোন বাধা নেই। তাহলে বেড়ে যাবে। এই চার, ক্রোধমান-মায়া-লােভ-এর মধ্যে কোন একজনের উপর প্রেম বেশী, সে প্রথম নম্বরে, দ্বিতীয়ের উপর তার থেকে কম হয়। এই ভাবে যার প্রতি পক্ষপাত বেশী, তার প্রতি ভালবাসাও বেশী।
স্কুল কর্ম ও সূক্ষ্ম কর্ম। স্থূল কর্ম মানে কি, তা বুঝে নাও। তুমি একদম রেগে গেলে, তুমি ক্রোধ করতে চাইছ না তবুও হয়ে গেল, এরকম হয় না কি হয় না ?
প্রশ্নকর্তা ও হয়।।
দাদাশ্রীঃ এই যে ক্রোধ হল তার ফল এখানেই সাথে সাথে পেয়ে যাবে। | লােকেরা বলে, “ওর কথা বাদ দাও, ও তাে খুব-ই ক্রোধী। কেউ হয়তাে ওকে সামনে এসে থাপ্পড়ও মেরে দেবে। মানে বদনাম হওয়া সে রকম পেয়ে যাবে। অর্থাৎ ক্রোধ হওয়া, তা স্কুল-কর্ম। আর ক্রোধ হলে তার পিছনে তােমার আজকের ভাব কি, ক্রোধ করাই দরকার। তাহলে সেটা সামনের জন্মের ক্রোধের হিসাব হল। তােমার আজকের ভাব যদি এই হয় যে ক্রোধ করা উচিৎ নয়, তুমি মনে সংকল্প করেছাে যে ক্রোধ করবেই না, তারপরেও যদি হয়ে যায় তাে সামনের জন্মের জন্যে তােমার কোন বন্ধন (কর্ম) হবে না। এই স্থূল কর্মতে তােমার ক্রোধ হয়ে গেলে এই জন্ম তােমাকে মার খেতে হবে। তবুও সামনের জন্মের জন্যে তােমার বন্ধন থাকবে না, কারণ সূক্ষ্ম কর্মতে তােমার সংকল্প আছে যে ক্রোধ করাই উচিৎ নয়। আর আজ যদি কোন ব্যক্তি কারাের উপর ক্রোধ না করে কিন্তু মনে ভাবে যে, এদের উপর ক্রোধ করলে তবেই এরা সােজা হবে, এইরকমই লােক এরা। তাহলে এর ফলে সামনের জন্মে আবার ক্রোধ হবে! অর্থাৎ বাইরে যে ক্রোধ হচ্ছে তা স্কুল কর্ম। আর | সেইসময় ভিতরে যে ভাব হয় তা সূক্ষ্ম কর্ম। যদি এটা বুঝে নিতে পারি তাহলে স্কুল কর্ম... থেকে একদম-ই বন্ধন উৎপন্ন হয় না। এইজন্য আমি এই নতুন ধরনের সায়েন্স (বিজ্ঞান) দিয়েছি। এতদিন পর্যন্ত স্কুল কর্ম থেকে বন্ধন হয়’ এইরকম লােকেদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সেইজন্যে লােকে ভয় পায়।
[ ৩৪ ]
Page #40
--------------------------------------------------------------------------
________________
ভেদজ্ঞান কষায় মুক্ত করে প্রশ্নকর্তা ও চার কয়কে জেতার জন্য কোন প্রাথমিক ভূমিকা তৈরী করা কি দরকার? যদি দরকার তাে তার জন্যে কি করতে হবে?
দাদাশ্রীঃ কি জান, যদি ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ এই চারটি চলে যায় তাে সে ভগবান হয়ে যায়!
ভগবান তাে বলেছেন, তােমার ক্রোধ এমন যে তােমার নিজের মামার সাথে যদি ক্রোধ করাে তাে ওর মন তােমার থেকে আলাদা হয়ে যায়, সারা জীবনের জন্যে আলাদা হয়ে যায়, তাহলে তােমার ক্রোধ করা ভুল। যে ক্রোধ কারাের মনকে এক-দু বছরের জন্যে আলাদা (মনকে ভেঙে দেয়) করে দেয় আর পরে আবার একতা ফিরে আসে, তাকে অ-প্রত্যাখানী ক্রোধ বলে। যা। মনকে একেবারে ভেঙে দেয় তাকে অন্তিমপর্যায়ের ইউজলেস ক্রোধ বলে। একে অনন্তানুবন্ধী ক্রোধ-ও বলা হয়। আর লােভ-ও এইরকমই, তারপর মান, এরা সমস্ত এত শক্তিশালী যে এদের যাওয়ার পরেই মানুষ সঠিক রাস্তায় আসে আর গুণস্থান প্রাপ্ত করে, নয়তাে গুণস্থানেই আসে না। ক্রোধ-মান-মায়ালােভ এই চার যার জন্যে অনন্তবার জম নিতে হয়। কষায় দূর হয় তাে তাহলেও অনেক হল।
এখন যখন ‘জিন’-এর কথা শুনবে, তখন এরা যাবে। জিন’ মানে আত্মজ্ঞানী, তিনি যে কোন ধর্মের আত্মজ্ঞানী হতে পারেন, বেদান্তের হতে পারেন, জৈন হতে পারেন, কিন্তু আত্মজ্ঞানী হওয়া চাই। তার উপদেশ শুনলে শ্রাবক হয়। আর শ্রাবক হয়ে গেলে তার অনন্তানুবন্ধী কয় চলে যায়। তখন স্বয়ংই কর্ম উঠে আর শেষ হতে থাকে।
আর দ্বিতীয় উপায় এই যে আমি ওকে ভেদজ্ঞান করিয়ে দিই। তখন সমস্ত কষায় চলে যায়, শেষ হয়ে যায়। এটা এই কালের আশ্চর্য। এইজন্যেই ‘অক্রম বিজ্ঞান বলেছে!
– জয় সচ্চিদানন্দ
[ ৩৫ ]
Page #41
--------------------------------------------------------------------------
________________
সম্পর্ক সূত্র দাদা ভগবান পরিবার
অডালজ ও ত্রিমন্দির, সীমন্ধর সিটী, অহমদাবাদ - কলােল হাইওয়ে, পােঃ
অডালজ, জিলা - গাঁধীনগর, গুজরাত - 382421 ফোন ঃ (079) 39830100, e-mail : info@dadabhagwan.org
oo
oo
oo
oo
oo
o
oo
মুম্বাই ? কোলকাতা ঃ জয়পুর : ইন্দৌর : রায়পুর : পাটনা : বেঙ্গলুর : পুনে ও
9323528901 9830093230 9351408285 ) 9039936173 9329644433 7352723132 9590979099 9422660497
দিল্লী : চেন্নাই ? ভােপাল : জব্বলপুর : | ভিলাই ঃ
অমরাবতী : হায়দ্রাবাদ : জলন্ধর :
9810098564 9380159957 9425024405 9425160428 9827481336 9422915064 9989877786 9814063043
oo
oo
oo
oo
U.S.A.
U.K.
Kenya UAE : Australia : New Zealand : Singapore :
DBVI Tel. : +1 877-505-DADA (3232), Email : info@us.dsdabhagwan.org +44 330-111-DADA (3232) +254 722 722 063 +971557316937 +61 421127947 +64 21 0376434 +65 81129229 www.dadabhagwan.org
| [ ৩৬ ]
Page #42
--------------------------------------------------------------------------
________________ ક્રોધ કરતાં શીલનો તાપ વિશેષ এই ক্রোধ, মান, মায়া, লােভ এ সমস্তই নিৰ্বলতা। যে বলবান তার ক্ৰোথ করার প্রয়ােজন কোথায় ? কিন্তু এ তাে ক্রোথের যে উত্তাপ আছে সেই উত্তাপ দিয়ে সামনের জনকে বশ করতে যায়, কিন্তু যার ক্রোধ নেই তার কাছেও তাে কিছু থাকবে কি না ? তার কাছে ‘শীল’ নামের যে চরিত্র আছে তাতে জানােয়ার-ও বশীভূত হয়। বাঘ, সিংহ, সমস্তু শত্রু, সব সৈন্য-সামন্ত বশে এসে যায়। =-দাদাশ্রী At op. g4344aa9e3 Printed in India Price 10 dadabhagwan.org