Page #1
--------------------------------------------------------------------------
________________
মালা।
-
$
$
#
૨
શ્રી યશોવિજયજી - જૈન ગ્રંથમાળા
છે દાદાસાહેબ, ભાવનગર, ફોન : ૦૨૭૮-૨૪૨૫૩૨૨
૩૦૦૪૮૪૬
পার্শ্বনাথ।
ગતી પાર્શ્વનાથ
Siળા ની ભાષામા
(૧૨ - শ্রীহরিশ চন্দ্র সরাক
বীরাব্দ ২৪৬৩
বঙ্গাব্দ ১৩৪৪
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #2
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্রীজৈন ধৰ্ম্ম প্রচারক সভা হইতে শ্রীমাধব সিংহ জৈন কর্তৃক ৯৬নং ক্যানিং ষ্ট্রীট, কলিকাতা হইতে প্রকাশিত ৷
সর্ববসত্ব সংরক্ষিত
শ্রীহিমাংশু কুমার ভট্টাচাৰ্য্য কর্তৃক ভ্যারাইটী প্রিন্টার্স
৬নং ওয়েলিংটন স্কোয়ার হইতে মুদ্রিত।
www.umaragyanbhandar.com
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
Page #3
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্ৰীপাৰ্থ মাখ
মৃদুগতি গঙ্গাতীরে কাশী নামে একটা রড নগরী আসছে। প্রাচীনকালে তথায় অশ্বসেন নামক এক নৃপতি পালন করিতেন। অশ্বসেনের প্রধানা মহিষীর নাম ছিল বামাদেবী। অশ্বসেন ও বামাদেবী সুখে রাজ্যসুখ ভোগ করিতেন।
একদিন ঘোর অন্ধকার রাত্রে বামাদেবী নিজ শয্যায় শুইয়া আছেন, এমন সময় একটা কালো সাপ তাঁহার কাছ দিয়া চলিয়া যায়।
একে ঘোর অন্ধকার তার উপর আবার কালো সাপ, অন্ধকারে কালো সাপকে কেউ কি কখন দেখিতে পারে ? কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে বামাদেবী সেই অবস্থাতেও সাপটীকে দেখিয়া ফেলিলেন। সাপটীকে দেখিয়া মোটেই তাঁহার ভয় হইল না ৷ পরদিন তিনি এই কথাটী রাজার কাছে বলিলেন ।
অশ্বসেন উত্তর দিলেন-রাণী, অন্ধকার রাত্রে কালো সাপকে দেখিতে পারা অসম্ভব। তুমি যে দেখিতে পারিয়াছ, ইহা নিশ্চয়ই তোমার পুণ্যময় গর্ভের প্রভাব। আমার মনে হইতেছে যে তোমার গর্ভে, একটী অশেষ-গুণবিশিষ্ট সন্তান জন্মগ্রহণ
করিবে ।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #4
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্ৰীপাৰ্শ্বনাথ
যথাসময়ে, বামাদেবীর গর্ভে একটী পুত্র জন্মগ্রহণ করিল। তাহার সৌন্দর্য্যের পারাবার ছিল না । সকলেই ভাবিল যে এই পুত্র অত্যন্ত বিদ্বান, সুন্দর ও সর্ববগুণ বিশিষ্ট হইবে।
তাহার নাম রাখা হইল পার্শ্বকুমার ।
রাজপুত্রের কি জিনিষের অভাব থাকিতে পারে ? পার্শ্বকুমারের সেবায় সর্ববদা শত শত দাস দাসী খাটিত ।
সুখে লালিত পালিত হইয়া পার্শ্বকুমার কৈশোরে পৌঁছিলেন । লোকে বুঝিতে পারিয়াছিল যে তাঁহার শক্তি অতুলনীয়। সমস্ত সংসারে তাঁহার প্রশংসা হইতে লাগিল ৷
এই সময়ে ভারতবর্ষে কুশস্থল নামে আর একটা বড় নগরী ছিল। প্রসেনজিৎ ছিলেন সেখানকার রাজা ৷
প্রসেনজিতের কন্যার নাম ছিল প্রভাবতী। রাজা প্রসেনজিৎ অনেক পরিশ্রমে প্রভাবতীকে রূপে গুণে অতুলনীয় করিয়া গড়িয়া তুলিয়াছিলেন ৷
প্রভাবতী কৈশোরে উপনীত হইল। প্রসেনজিৎ কন্যার যোগ্য পাত্র খুঁজিতে ব্যস্ত হইলেন। অনেক রাজপুত্র, রাজা, প্রভাবতীকে বিবাহ করিতে ইচ্ছুক হইল, কিন্তু প্রসেনজিৎ তাহাদিগকে প্রভাবতীর যোগ্য বলিয়া মনে করিতে পারিলেন না । একদিন প্রভাবতী সখীগণকে সঙ্গে লইয়া উদ্যানে বেড়াইতে ছিলেন ।
প্রসেনজিতের এই উদ্যানটী অপূর্বর শোভাময় ছিল। উদ্যানের
প্রত্যেকটী গাছ ফলের ভারে নত ।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #5
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্ৰপার্শ্বনাথ কোথাও সুন্দর সময় কুঞ্জ, কোথাও কমল শশাভিত সরােবর। সরােবরে রাজহংস ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল। | প্রভাবতী অত্যন্ত আমােদিত হইয়া চতুর্দিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল; এমন সময় সে একটী গান শুনিতে পাইল।
গানটী পার্শ্বকুমারের প্রশংসায় রচিত। প্রভাবতী এই গানটী শুনিয়া পার্শ্বকুমারের গুনে মােহিত হইয়া গেল। সে প্রতিজ্ঞা করিল যে বিবাহ করিলে এই পার্শ্বকুমারের সঙ্গেই বিবাহ করিবে আর কাহারও সহিত নয়। | প্রভাবতী এখন কৈশাের উত্তীর্ণ হইয়া যৌবনে পদার্পণ করিল। সর্বদাই পার্শ্বকুমারের চিন্তায় মগ্ন থাকার ফলে, সে অত্যন্ত কৃশ ও ক্ষীণ হইয়া পড়িল।
| প্রভাবতীর সখীরা তাহার চিন্তার কথা জানিতে পারিল। তাহারা প্রভাবতীকে এই চিন্তা হইতে মুক্ত করিবার জন্য, এই কথা তাহার মাতা পিতাকে জানাইয়া দিল।
তাহারা বলিলেন—পার্শ্বকুমার পুরুষগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। প্রভাবতী নিজের যােগ্য বরই খুঁজিয়া বাহির করিয়াছে, আমরা তাহার নির্বাচনে অত্যন্ত আনন্দিত হইয়াছি।
মাতাপিতার কথা শুনিয়া প্রভাবতী অত্যন্ত সুখী হইল বটে, কিন্তু পার্শ্বকুমার ছাড়া তাহার আর কিছু ভাল লাগিতেছিল না। দিন রাত্রি এই কথাই চিন্তা করিতে করিতে তাহার শরীর অত্যন্ত কৃশ হইয়া গেল।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #6
--------------------------------------------------------------------------
________________
পার্শ্বনাথ তাহার শরীরের অবস্থা দেখিয়া প্রসেনজিৎ ও রাণী ভাবিলেন যে, প্রভাবতীকে পার্শ্বকুমারের নিকট পাঠাইয়া দেওয়া উচিৎ।
যে কন্যা নিজেই নিজ পতি খুঁজিয়া বাহির করে তাহাকে স্বয়ম্বরা বলে।
প্রভাবতী অত্যন্ত রূপবতী, বিদুষী ও সর্বগুণ সম্পন্ন ছিলেন। সমস্ত দেশেই তাহার প্রশংসা হইতে লাগিল। এই কারণেই ভারতবর্ষের প্রায় বড় বড় নৃপতিই তাহাকে বিবাহ করিতে উৎসুক ছিলেন।
কলিঙ্গ দেশের রাজা যবন অত্যন্ত প্রবল নৃপতি ছিল। সেও প্রভাবতীকে বিবাহ করিতে অত্যন্ত উৎসুক হইয়া পড়িল।
| ক্রমে ক্রমে সমস্ত দেশেই এই বার্তা প্রচারিত হইয়া গেল যে, প্রভাবতী স্বয়ম্বরা হইয়া পাশ্বকুমারের কাছে যাইতেছেন।
রাজা যবন এই সংবাদ শুনিয়া অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইল। সে ভাবিল আমি বাঁচিয়া থাকিতে প্রভাবতীকে পাশ্বকুমার বিবাহ করিবার কে ? আর প্রসেনজিতের এমন সাহস যে, আমার সঙ্গে প্রভাবতীকে বিবাহ না দিয়া, আর এক জনের সঙ্গে দিতে প্রস্তুত ? প্রভাবতীর বিবাহ পাশ্বকুমারের সঙ্গে কি প্রকারে হয়, তাহা আমি দেখিব।
রাজা যবন সেনা সজ্জিত করিয়া কুশস্থল নগরী আক্রমণ করিল, এবং নগরীর চতুর্দিকে এমন ভাবে ব্যুহ রচনা করিল যে, একজন লােকও বাহির না হইতে পারে।
রাজা প্রসেনজিৎ অত্যন্ত চিন্তায় পড়িলেন। তিনি মনে মনে Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #7
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্ৰীপাৰ্শ্বনাথ
ভাবিতে লাগিলেন, এত বড় সেনার হাত হইতে আমি কিরূপে নগর রক্ষা করিব। তবে একটী মাত্র পথ আছে। রাজা অশ্বসেন হইতে যদি কোন প্রকার সাহায্য পাওয়া যায়, তাহা হইলে নগরী রক্ষা পাইতে পারে। কিন্তু রাজা অশ্বসেনকে কিরূপে সংবাদ দেওয়া যায় ?
a
এই কথা ভাবিতে ভাবিতে তাঁহার মনে বন্ধু পুরুষোত্তমের কথা জাগিয়া উঠিল, পুরুষোত্তম প্রসেনজিতের স্বার্থের জন্য নিজের জীবন পর্য্যন্ত বিসর্জ্জন দিতে প্রস্তুত ছিলেন।
অতএব তিনি একদিন রাত্রে গোপনে কুশস্থল হইতে বাহির হইয়া যত শীঘ্র সম্ভব কাশী পৌঁছিলেন ।
রাজা অশ্বসেন নিজ সভায় সিংহাসনে বসিয়া ছিলেন ৷ ধৰ্ম্ম ও সঙ্গীত চর্চ্চা হইতে ছিল, এমন সময়, প্রহরী সংবাদ দিল যে, একজন দূরদেশের লোক তাঁহার সহিত দেখা করিতে চায়।
তিনি লোকটীকে তাঁহার সম্মুখে লইয়া আসিতে আদেশ দিলেন ।
পুরুষোত্তম ভিতরে প্রবেশ করিলেন। তিনি রাজা অশ্বসেনকে প্রণাম করিয়া কুশস্থলের সমস্ত সংবাদ তাঁহাকে জানাইলেন ।
সংবাদ শুনিয়া অশ্বসেন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইলেন, এবং বলিলেন, যবন রাজার কি শক্তি যে, সে প্রসেনজিতকে আক্রমণ করিবে। আমি আমার সমস্ত সৈন্য লইয়া কুশস্থলে যাত্রা করিতেছি।
যুদ্ধভেরী বাজাইয়া দেওয়া হইল ও সমস্ত সৈন্য যাত্রা করিতে প্রস্তুত হইল ।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #8
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্রীপার্শ্বনাথ | পার্শ্বকুমার বন্ধুবান্ধব সহ ক্রীড়ামােদ করিতেছিলেন। তিনিও যুদ্ধভেরীর শব্দ শুনিতে পাইলেন। তিনি খেলা ছাড়িয়া পিতার নিকট আসিলেন। অশ্বসেনের চতুর্দিকে সেনাপতিগণ সুসজ্জিতবেশে বসিয়া ছিলেন।
পার্শ্বকুমার পিতাকে নম্রতাপূর্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, “পিতা আপনার এমন কোন্ শত্রু যাহাকে পরাজিত করার জন্য আপনার এ বিরাট অভিযান ?
আপনার চেয়ে শক্তিমান অথবা আপনার মত শক্তিশালী কাহাকেও ত আমি দেখিতেছি না। এই অভিযানের কারণ কি ?”
অশ্বসেন উত্তর করিলেন—“এই লােকটা সংবাদ আনিয়াছে যে, যবন রাজার আক্রমণ হইতে প্রসেনজিতকে রক্ষা করা দরকার তাহারই জন্য এ অভিযান।” | পার্শ্বকুমার কহিলেন—“যুদ্ধে দেব অথবা দানবের কাহারও আপনার সম্মুখে টিকিবার শক্তি নাই, এ যবন রাজার ত কোনও কথাই নাই। কিন্তু তাহার সহিত যুদ্ধে আপনার যাওয়ার কোনও প্রয়ােজন নাই, আমিই সেথায় গিয়া তাহাকে দণ্ড দিয়া আসিতে পারিব।”
অশ্বসেন উত্তর দিলেন—“বৎস যুদ্ধক্ষেত্র অতি ভীষণ স্থান। সেখানে তােমাকে পাঠান আমার উচিত বলিয়া মনে হইতেছে না।
আমি জানি, তােমার প্রচুর শক্তি ও সাহস আছে, কিন্তু আমার ইচ্ছা যে, তুমি গৃহে থাকিয়াই আনন্দ উপভােগ কর।”
পিতার এই কথা শুনিয়া পার্শ্বকুমার বলিলেন—“পিতৃদেব !
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #9
--------------------------------------------------------------------------
________________
শপার্শ্বনাথ
যুদ্ধে আমার একটুও ভয় হয় না, আমার কাছে তাহা খেলার মত। আপনি এইখানে থাকুন, আমাকে যাইতে দিন”।
পার্শ্বকুমারের একান্ত ইচ্ছা দেখিয়া রাজা অশ্বসেন তাহার কথায় সম্মত হইলেন এবং তাহাকে যুদ্ধে যাইতে অনুমতি দিলেন।
শুভ মুহুর্তে পার্শ্বকুমার সেনার সহিত কুশস্থলের দিকে যাত্রা করিলেন। সেখানে উপস্থিত হইয়া তিনি রাজনীতি অনুসারে যবন রাজার কাছে দূত পাঠাইলেন—
“হে যবনরাজ—প্রসেনজিত আমার পিতার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছেন। অতএব তুমি ইহাকে আক্রমণ করিও না ; পিতৃদেব নিজেই যুদ্ধে আসিতেছিলেন, কিন্তু আমি অতিকষ্টে তাঁহাকে বিরত করিয়া নিজেই আসিয়াছি। অতএব আমি তােমাকে সূচনা দিতেছি যে, তুমি নিজ রাজ্যে ফিরিয়া যাও। তাহা করিলে আমি তােমার অপরাধ ক্ষমা করিয়া দিব।”
পার্শ্বকুমার যবন রাজার হিতের জন্যই এই কথা বলিয়াছিলেন, কিন্তু সে গর্বিত হইয়া দূতকে উত্তর দিল, “যদি পার্শ্বকুমার জীবিত থাকিতে চান, তাহা হইলে তাহারই ফিরিয়া যাওয়া উচিৎ।”
| যবন রাজাকে এই উত্তর দিতে শুনিয়া তাহার এক বৃদ্ধ মন্ত্রী তাহাকে বলিল, “যাহাই বলুন, কিন্তু যুদ্ধে তাঁহার সম্মুখে আমরা দাড়াইতে পারিব না। তাহা ছাড়াও আমাদের এ যুদ্ধ ন্যায়সঙ্গত। Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #10
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্রীপার্শ্বনাথ নহে। সুতরাং অনর্থক রক্তপাত করিয়া কি লাভ? আমার মতে পার্শ্বকুমারের কথা মানিয়া লওয়া উচিৎ।”
যবন রাজা এই পরামর্শ টী যুক্তিসঙ্গত দেখিয়া বৃদ্ধ মন্ত্রীর কথা মানিয়া লইল।
| সে পার্শ্বকুমারের শিবিরে আসিয়া যুক্ত করে কহিল—“হে পার্শ্বকুমার ! আমার অপরাধ ক্ষমা করুন।” | পার্শ্বকুমার উত্তর দিলেন—“হে রাজা, তােমার কল্যাণ হউক, আমাকে ভয় করিও না। রাজ্যে গিয়া সুখে রাজ্যশাসন কর কিন্তু ভবিষ্যতে এরূপ করিও না।”
কুশস্থলের চারিধার হইতে সেনা সরাইয়া রাজা কলিঙ্গে ফিরিয়া গেল। প্রসেনজিৎ ইহাতে অত্যন্ত প্রসন্ন হইলেন। তাঁহার ইহাতে দুইটী লাভ হইল। এক এই যে শত্রুভয় দূর হইল অথচ ইত্যবসরে পার্শ্বকুমারের সহিত দেখা হইয়া গেল।
তিনি প্রভাবতীকে সঙ্গে নিয়া পার্শ্বকুমারের শিবিরে আসিয়া বলিলেন—“যবন রাজার হাত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিয়া আপনি আমাদের অশেষ উপকার সাধন করিয়াছেন। এখন প্রভাবতীকে বিবাহ করিয়া আমাদিগকে কৃতার্থ করুন। প্রভাবতী আপনাকে ভাল বাসিয়াছে, এবং আপনারই চিন্তাতে অহরহ
মগ্ন।”
ইহা শুনিয়া পার্শ্বকুমার উত্তর দিলেন—“রাজ, আমি তােমাকে শত্রুর হাত হইতে রক্ষা করিতে আসিয়াছি, বিবাহ
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #11
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্ৰীপার্শ্বনাথ করিতে আসি নাই। আমার কাজ শেষ হইয়াছে, আমি এখন যাত্ৰা করিব।”
| পার্শ্বকুমারের এই উত্তর শুনিয়া, প্রভাবতীর মনে অত্যন্ত দুঃখ হইল। তিনি অত্যন্ত চিন্তায় পড়িলেন, এবং উপায় ভাবিতে লাগিলেন।
প্রসেনজিতও অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া, অতঃপর কি করা যায়, তাহাই ভাবিতে লাগিলেন।
অবশেষে তিনি স্থির করিলেন,—“পার্শ্বকুমার নিজে এই প্রস্তাবে স্বীকৃত হইবেন না কিন্তু রাজা অশ্বসেনের আদেশে তিনি হয়ত ইহা স্বীকার করিয়া লইবেন, সুতরাং তাহার সহিত দেখা করিবার জন্য আমার পার্শ্বকুমারের সঙ্গে কাশী যাওয়া দরকার।”
তিনি পাশ্বকুমারকে কহিলেন—“রাজা অশ্বসেনকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতে আমি আপনার সঙ্গে কাশী যাইতে চাই।”
পার্শ্বকুমার ইহাতে প্রসন্নচিত্তে অনুমতি দিলেন। রাজা প্রসেনজিত প্রভাৰতীকে সঙ্গে নিয়া পাশ্বকুমারের সহিত কাশী যাত্রা করিলেন।
রাজা প্রসেনজিত কাশী পেীছিয়া অশ্বসেনকে নমস্কার জানাইয়া তাহার প্রার্থনা জানাইলেন।
অশ্বসেন তাহার উত্তরে বলিলেন—“পার্শ্বকুমার বাল্যকাল হইতেই বৈরাগ্যপ্রিয়, এই জন্য তাহার জীবনের লক্ষ্য আমরা এখনও জানিতে পারি নাই। তবে আমাদের বড়ই ইচ্ছা যে পার্শ্বকুমারের সঙ্গে কোন সুলক্ষণা যােগা কন্যার বিবাহ হউক।” Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #12
--------------------------------------------------------------------------
________________
১০
শ্রীপাশ্বনাথ “যদিও পার্শ্বকুমারের বিবাহের প্রতি কোনরূপ আগ্রহ নাই তথাপি আপনার অনুরােধে আমরা এই বিবাহে স্বীকৃত।” | রাজা অশ্বসেন প্রসেনজিতকে সঙ্গে নিয়া পার্শ্বকুমারের নিকটে গিয়া কহিলেন—“বৎস! প্রভাবতী তােমাকে অত্যন্ত ভালবাসে, তােমার সহিত বিবাহ হইবার জন্য সে অনেক কষ্ট সহ্য করিয়াছে। সত্যই তােমার সহিত বিবাহ দিবার মত ইহা অপেক্ষা যােগ্যতর কন্যা আমি দেখি না। তুমি প্রভাবতীকে বিবাহ করিয়া সুখী হও ইহাই আমার ইচ্ছা।” | পার্শ্বকুমার বলিলেন—“পিতা, বিবাহ করা আমি পছন্দ করি না।” তাঁহার এই উত্তর শুনিয়া অশ্বসেন তাঁহাকে অনেক প্রকারে বুঝাইলেন এবং এই বিবাহে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করিলেন। অবশেষে পিতার আগ্রহ দেখিয়া পার্শ্বকুমার বিবাহে স্বীকৃত হইলেন। | প্রভাবতী আনন্দে মাতিয়া উঠিল। তাহার সুখের অন্ত রহিল না। | একদিন পার্শ্বকুমার, নিজ প্রাসাদের গবাক্ষ হইতে কাশীর শােভা উপভােগ করিতেছিলেন, এমন সময় দেখিলেন যে লােকেরা ভিড় করিয়া হাতে ফুল ও নানাবিধ পূজোপচার লইয়া নগরীর বাহিরে যাইতেছে।
| পার্শ্বকুমার ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন--“আজ কি কোনও পর্বেবাৎসব যে, ইহারা এত ব্যস্ত হইয়া নগরের বাহিরে যাইতেছে ?”
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #13
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্রীপার্শ্বনাথ। ভৃত্য উত্তর করিল—“কমঠ নামীয় একটী তাপস নগরীর বাহিরে আসিয়াছে। সে তাহার চারিদিকে অগ্নি প্রজ্বলিত রাখে, এবং মাথায় সূর্যের তাপ সহ্য করে। অর্থাৎ সে পঞ্চাগ্নি সাধন করে। তাহারই পূজা করিতে লােকে নগরের বাহিরে যাইতেছে।”
পাকুমারের এই তাপসটীকে দেখিবার ইচ্ছা হইল। তিনি ভৃত্য সহ তাপসের কাছে আসিলেন। তাপস তাহার চারিদিকে আগুন জ্বালাইয়া রৌদ্র সেবন করিতেছিল।
চতুর পার্শ্বকুমার দেখিতে পাইলেন যে একটা বড় সাপ কাষ্ঠপের ভিতরে পুড়িতেছে। তাঁহার হৃদয় করুণায় আপ্লুত হইল। তিনি বলিলেন— | “কি মূখত! কেবল শরীরকে কষ্ট দিলে ধৰ্ম্ম হয় না। পশুর মত শীত গ্রীষ্ম সহ্য করিয়া কি লাভ ? অহিংসা ছাড়া তপ ইত্যাদি ধর্মের অঙ্গ কোনও কাজের নয়। অহিংসাই সব চেয়ে মহৎ ও পবিত্র ধর্ম।”
ইহা শুনিয়া কমঠ উত্তর করিল—“রাজপুত্র, ধৰ্ম্মের কোন কিছুই তুমি জান না। তুমি সুখ ও ঐশ্বর্যে লালিত পালিত, এসব বুঝিবে না। আমরা তাপস, ধৰ্ম্ম কিসে হয়, ভাল করেই জানি।”
পার্শ্বকুমার কমঠের উত্তর শুনিয়া মনে মনে ভাবিলেন“মানুষ অভিমানেই ভুলিয়া থাকে। দয়া অহিংসা করুণা ইত্যাদির কোন ধারই এই তাপস ধারে না, অথচ মনে করে সে নিজে
একজন উচ্চস্তরের ধার্মিক।” Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #14
--------------------------------------------------------------------------
________________
১২
শ্রীপার্শ্বনাথ | তিনি লােকেদের বলিলেন—এই কাষ্ঠক্তৃপ আগুন হইতে বাহির কর এবং ইহা চিরিয়া ফেল।”
লােকে তাহাই করিল এবং দেখিল যে একটি সাপ তাহার ভিতর দগ্ধ হইতেছে। সাপটীর অত্যন্ত কষ্ট হইতেছিল, তখন তাহার মুমূর্ষ অবস্থা। পার্শ্বকুমার তাহাকে পবিত্র মন্ত্র (নবকার মন্ত্র ) শােনাইলেন। সাপটার তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হইল। | কমঠ অত্যন্ত লজ্জা পাইল। তাহার মনে হইল যে পার্শ্বকুমার তাহাকে লজ্জা দিবার জন্যই ইচ্ছা করিয়া এই কাজ করিয়াছেন।
সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইল, কিন্তু তবুও সে তাহার তপ বন্ধ করিল । অল্প দিনেই এই প্রকার তপ করিতে করিতে তাহার মৃত্যু হইল, এবং মৃত্যুর পর তাহার নাম হইল মেঘমালী।
| সেই সাপটী নাগরাজ পদ প্রাপ্ত হইল এবং ধরণেন্দ্র নামে বিখ্যাত হইল।
বসন্ত আগমনে চারিদিকের শােভা অপূর্ব হইয়া উঠিল। প্রত্যেকটী গাছ ফলে ফুলে পল্লবিত। মধুপানাকুল ভ্রমর দলের গুঞ্জনে চারিদিক গুঞ্জিত।
পার্শ্বকুমার, প্রভাবতীকে সঙ্গে নিয়া একদিন বনের শােভা দেখিতে বাহির হইলেন। বেড়াইতে বেড়াইতে তিনি একটী প্রাসাদের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। প্রাসাদের শােভা ও কারুকাৰ্য্য অবর্ণনীয়। তঁাহারা তাহার ভিতর প্রবেশ করিলেন।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #15
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্ৰীপাৰ্শ্বনাথ
প্রাচীরের গাত্রের একটি ছবি দেখিয়া তাঁহারা তাহার সৌন্দর্য্যে ও ভাবের গভীরতায় আশ্চৰ্য্য হইয়া গেলেন । ছবিটীতে “শ্রীনেমিনাথজী”র বৈরাগ্য গ্রহণের দৃশ্য দেখান হইয়াছিল ।
১৩
ছবিটাকে দেখিয়া পার্শ্বকুমার জীবনের অসারতা সম্বন্ধে ভাবিতে লাগিলেন । তিনি ভাবিলেন—“সুখে জীবন যাপন করাই জীবনের মূল ও চরম উদ্দেশ্য নহে। জীবনের চরম উদ্দেশ্য নিজের প্রকৃত রূপকে চিনিয়া তাহাকে সু-আচরণে আবৃত করা ৷ ” ক্রমে পার্শ্বকুমারের সাংসারিক বিষয়-ঐশ্বর্য্যের প্রতি ঘৃণা জন্মিয়া গেল । উচ্চ ধাৰ্ম্মিক জীবন যাপন করাই তাঁহার একমাত্র লক্ষ্য হইয়া গেল ।
এই ইচ্ছার নামই বৈরাগ্য ।
পার্শ্বকুমার ছিলেন দুঃখীর আশ্রয়দাতা, পতিতের উদ্ধারকর্তা। সৰ্ব্বদাই তিনি চিন্তা করিতেন—শরীর মন বা কর্ম্ম দ্বারা কাহারও কোনও প্রকার অনিষ্ট না হয়।
ক্রমেই তাঁহার বৈরাগ্য গ্রহণের ইচ্ছা বলবতী হইয়া উঠিল 1
অবশেষে, তিনি বৈরাগ্যের বাহ্য চিহ্নস্বরূপ এক বৎসর পর্য্যন্ত প্রতিদিন ১০৮০০০০০ স্বর্ণমুদ্রা দান করিতে লাগিলেন।
অবশেষে তিনি তিনটী উপবাস করিলেন এবং পিতা মাতা সকলের সহিত সম্বন্ধ ত্যাগ করিয়া বিরাট বিশ্বজগতের সহিত সম্বন্ধ স্থাপিত করিলেন ; অর্থাৎ তিনি সাধু হইলেন ।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #16
--------------------------------------------------------------------------
________________
১৪
শ্রীপাশ্বনাথ
তাহার সহিত আরও অনেকে সাধু হইল। তিনি দেশ পৰ্যটন আরম্ভ করিলেন।
| শ্রীপাশ্বকুমার একদিন ভ্রমণ করিতে কাশী নগরীর উপকণ্ঠে কমঠ তাপসের আশ্রমের নিকট উপস্থিত হইলেন। রাত্রি আগত প্রায়, এই জন্য তিনি সেইখানেই একটী বট বৃক্ষের তলে রাত্রি যাপন করিতে স্থির করিলেন এবং ধ্যান অবলম্বন করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন।
মেঘমালী, পূর্বের বৈরভাব স্মরণ করিয়া সেই রাত্রে অনেক বার তাহাকে উত্যক্ত করিল। ব্যাঘ্র, সিংহ, সাপ ইত্যাদির রূপ ধরিয়া তাহাকে ভয় দেখাইতে আরম্ভ করিল, কিন্তু তিনি তাহাতে বিচলিত হইলেন না।
| মেঘমালী, তাহার সমস্ত উপায় ব্যর্থ হইতেছে দেখিয়া ভয়ঙ্কর বর্ষা আরম্ভ করিল। আকাশ, কালবৈশাখীর কালাে মেঘে ছাইয়া গেল। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাইতে ও বজ্রপাত হইতে আরম্ভ করিল। মূষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হইল। | গাছগুলি সমূলে উৎপাটিত হইল, পৃথিবী জলমগ্ন হইয়া গেল।
শ্ৰীপার্শ্বকুমারের কটিদেশ পৰ্য্যন্ত জলে ডুবিয়া গেল। একটু পরেই তাহার বক্ষ ও কণ্ঠদেশ জলে নিমগ্ন হইল, তবুও তাহার ধ্যানভঙ্গ হইল না। ক্রমেই তাহার নাসিকা পর্যন্ত জলে ডুবিবার উপক্রম হইল।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #17
--------------------------------------------------------------------------
________________
পার্শ্বনাথ। এদিকে ধরনেন্দ্র (নাগরাজ) এই উৎপাত দেখিয়া আর থাকিতে পারিল না, সে নিজে আসিয়া এই উৎপাত বন্ধ করিল।
পার্শ্বকুমার এখনও সেই অবস্থাতেই দণ্ডায়মান তাহার নিকট ধরনেন্দ্র ও মেঘমালী উভয়েই সমান, অর্থাৎ শত্ৰুমিত্র উভয়েই সমান।
যাহারা মহৎ এবং শক্ৰমিত্রতে ভেদ দেখে না তাহারা ধন্য।
পার্শ্বকুমার এই ঘটনার অল্প কয়েক দিন পরেই “কেবলজ্ঞান” অর্থাৎ পূর্ণ ও প্রকৃত জ্ঞান লাভ করিলেন। তিনি “শ্ৰী পার্শ্বনাথ” নামে বিখ্যাত হইলেন। | তিনি এখন লােককে পবিত্র জীবন যাপন করিতে উপদেশ দিতে আরম্ভ করিলেন। তাঁহার উপদেশে অনেক নরনারী পবিত্র জীবন যাপন করিতে আরম্ভ করিল। তাহাদের একটী সংঘ স্থাপিত হইল। এই সংঘে সাধু, সাধ্বী, শ্রাবক, শ্ৰাবিকা এই চারিটী পদ আছে।
সংসার ত্যাগী বিরাগীরা, যাহারা অহিংসা, সত্য, অস্তেয় ও ত্যাগ এই চার মহাব্রত পূর্ণরূপে পালন করে, তাহারা সাধু বা সাধ্বী বলিয়া অভিহিত হয়।
যাহারা গৃহস্থধৰ্ম্ম পালন করতঃ শ্রাবকের বারটী ব্রত পালন করে, যাহারা নিজকে আদিদেব গােত্রী ভূত বলিয়া পরিচয় দেয়, তাহাদিগকে শ্রাবক বা শ্ৰাবিক বলে।
পার্শ্বনাথ এইরূপে সংঘ বা তীর্থ স্থাপন করিলেন বলিয়া তিনি তীর্থঙ্কর হইলেন।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #18
--------------------------------------------------------------------------
________________
শ্রীপার্শ্বনাথ তাঁহার পিতা মাতা প্রভৃতি সকলেই এই সংঘে মিলিত হইলেন।
শত বৎসর আয়, পূর্ণ হইলে পর পার্শ্বনাথ শ্রীসমেতশিখরে নির্বাণ পদ লাভ করিয়া পূর্ণ মুক্ত হইলেন। অর্থাৎ সর্ব কৰ্ম্ম বন্ধন ত্যাগ করতঃ পরম মুক্তি পদ প্রাপ্ত হইলেন।
“ভগবতে পার্শ্বনাথায় নমঃ”
ওঁ শান্তি ।
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #19
--------------------------------------------------------------------------
________________
যে ক্রিয়ার দ্বারা মনোবৃত্তিগুলি শুদ্ধ হয় তাহারই নাম ধাৰ্ম্মিক ক্রিয়া ৷
—বিজয় ধর্ম্মমূরি
Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat
www.umaragyanbhandar.com
Page #20
--------------------------------------------------------------------------
________________ alchbllo oil51 Giler! @KC0Z00 0x30090gz0Z0a3@ 37-38 আরমেনিয়ান ষ্ট্রীট, কলিকাতাস্থ। শাহ চমনলাল বাড়ীলাল এণ্ড কোং। এই পুস্তক প্রকাশনের সমূহ ব্যয়। বহন করিয়াছেন। %e00x3000000@ @@300CC(c) Shree Sudharmaswami Gyanbhandar-Umara, Surat www.umaragyanbhandar.com