Book Title: The Essence Of All Religion Bengali
Author(s): Dada Bhagwan
Publisher: Dada Bhagwan Aradhana Trust
Catalog link: https://jainqq.org/explore/034331/1

JAIN EDUCATION INTERNATIONAL FOR PRIVATE AND PERSONAL USE ONLY
Page #1 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দাদা ভগবান প্ররূপিত ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর নয় কলম - সার , সমস্ত শাস্ত্রের Bengali Page #2 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দাদা ভগবান প্ররূপিত ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর মূল গুজরাতী সংকলন : ডাঃ নীরুবেন অমীন | বাংলা অনুবাদ : মহাত্মাগণ। ১ Page #3 -------------------------------------------------------------------------- ________________ প্ৰকাশক : E-mail : info@dadabhagwan.org শ্রী অজিত সি. প্যাটেল দাদা ভগবান আরাধনা ট্রাস্ট দাদা দর্শন, ৫, মমতাপার্ক সোসাইটি, নবগুজরাট কলেজের পিছনে উসমানপুরা, আহমেদাবাদ - ৩৮০০১৪ ফোন : (০৭৯) ৩৯৮৩০ ১০০ কপিরাইট : All Rights reserved Deepakbhai Desai দ্রব্যমূল্য : ভাবমূল্য : ‘পরম বিনয়' আর Trimandir,Simandhar City, Ahmedabad - Kalol Highway, Adalaj, Dist: Gandhinagar - 382421, Gujarat, India. No part of this book may be used or reproduced in any manner whatsoever without written permission from the holder of this copyrights. মুদ্ৰক : ‘আমি কিছু জানি না” এই জাগৃতি ২০ টাকা প্রথম সংস্করণ : ১০০০, নভেম্বর ২০১৮ বি - - ৯৯, ইলেকট্রনিক্স জি. আই. ডি. সি কে ৬ রোড, সেক্টর ২৫, গান্ধীনগর – ৩৮২০৪৪ e-mail : info@ambaoffset.com ফোন : (০৭৯) ৩৯830341/42 Page #4 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ত্রি-মন্ত্র વર્તનાતૃપ્રેકર ઐીમી, নমাে অরিহন্তান নমাে সিদ্ধান নমাে আয়রিয়ান নমাে উবঙ্খায়ানম্ নমাে লােয়ে সব্বসাহুন এ্যায়সাে পঞ্চ নমুক্কারাে , সব্ব পাবল্পনাশননা মঙ্গলানম চ সব্বেসিং ; পঢ়মং হবই মঙ্গল ১ ওঁ নমাে ভগবতে বাসুদেবায় ২ ওঁ নমঃ শিবায় ৩ জয় সচ্চিদানন্দ Page #5 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দাদা ভগবান কে ? ১৯৫৮ সালের জুন মাসের এক সন্ধ্যায় আনুমানিক ৬টার সময় ভীড়ে ভর্তি সুরত শহরের রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৩-এর এক বেঞ্চে বসা শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেলরূপী দেহমন্দিরে প্রাকৃতিকভাবে, অমরূপে, বহুজন্ম ধরে ব্যক্ত হওয়ার জন্যে ব্যাকুল দাদা ভগবান পূর্ণরূপে প্রকট হলেন - অধ্যাত্মের এক অদ্ভুত আশ্চৰ্য্য প্রকট হল। অলৌকিকভাবে এক ঘন্টাতে ওনার বিশ্বদর্শন হল। আমি কে? ভগবান কে? জগত কে চালায়? কর্ম কি? মুক্তি কি?’ ইত্যাদি জগতের সমস্ত আধ্যাত্মিক প্রশ্নের সমস্ত রহস্য সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হল। এইভাবে প্রকৃতি বিশ্বকে এক অদ্বিতীয় সম্পূর্ণ দর্শন প্রদান করল যার মাধ্যম হলেন গুজরাত-এর চরােতর ক্ষেত্রের ভাদরন গ্রামনিবাসী পাটীদার শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেল যিনি কন্ট্রাকটরি ব্যবসা করেও সম্পূর্ণ বীতরাগী ছিলেন। | ‘ব্যবসা-তে ধর্ম থাকা প্রয়ােজন, কিন্তু ধর্ম-তে ব্যবসা নয়’ এই নীতি অনুসারেই তিনি সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন। জীবনে কখনও উনি কারাের কাছ থেকে অর্থ নেন নি, উপরন্তু নিজের উপার্জনের অর্থ থেকে ভক্তদের তীর্থযাত্রায় নিয়ে যেতেন। ওনার অদ্ভুত সিদ্ধজ্ঞান প্রয়ােগ দ্বারা ওনার যে রকম প্রাপ্তি হয়েছিল , তেমনই অন্য মুমুক্ষুদের-ও তিনি কেবল দু'ঘণ্টাতেই আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করাতেন । একে অক্রম মার্গ বলে। অক্রম অর্থাৎ বিনা ক্রমের আর ক্রম মানে সিঁড়ির পরে সিড়ি - ক্রমানুসারে উপরে ওঠা। অক্রম অর্থাৎ লিফট-মার্গ, সংক্ষিপ্ত রাস্তা। উনি স্বয়ংই ‘দাদা ভগবান’কে ? এই রহস্য জানাতেন। উনি বলতেন “যাকে। আপনারা দেখছেন তিনি দাদা ভগবান নন। তিনি তাে এ. এম. প্যাটেল ; আমি জ্ঞানী পুরুষ আর আমার ভিতর যিনি প্রকট হয়েছেন তিনিই ‘দাদা ভগবান’। দাদা ভগবান তাে চৌদ্দ লােকের নাথ। উনি আপনার মধ্যেও আছেন, সবার মধ্যেই আছেন; আপনার মধ্যে অব্যক্তরূপে আছেন, আর আমার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত অবস্থায় আছেন। দাদা ভগবান’কে আমিও নমস্কার করি।” *** Page #6 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ লিঙ্ক ‘আমি তাে কিছু লােককে নিজের হাতে সিদ্ধি প্রদান করে যাব । তারপরে অনুগামীর প্রয়ােজন আছে না নেই ? পরের লােকেদের রাস্তার প্রয়ােজন আছে কি না ? - দাদাশ্রী পরমপূজ্য দাদাশ্রী গ্রাম-শহরে , দেশ-বিদেশে পরিভ্রমণ করে মুমুক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি করাতেন । দাদাশ্রী তাঁর জীবদ্দশাতেই পূজ্য ডাঃ নীরুবেহন আমিন (নীরুমা)-কে আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করানাের জ্ঞানসিদ্ধি প্রদান করেছিলেন । দাদাশ্রীর দেহত্যাগের পর নীরুমা একইভাবে মুমুক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি নিমিত্তভাবে করাতেন। দাদাশ্রী পূজ্য দীপকভাই দেসাইকে সৎসঙ্গ করার সিদ্ধি প্রদান করেছিলেন । নীরুমা-র উপস্থিতিতেই তাঁর আশীর্বাদে পূজ্য দীপকভাই দেশ-বিদেশে অনেক জায়গায় গিয়ে মুমুক্ষুদের আত্মজ্ঞান করাতেন যা নীরুমা-র দেহবিলয়ের পর আজও চলছে । এই আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পর হাজার হাজার মুমুক্ষু। সংসারে থেকে , সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও আত্মরমণতার অনুভব নিয়ে থাকেন। পুস্তকে মুদ্রিত বাণী মােক্ষলাভার্থীর পথপ্রদর্শক হিসাবে অত্যন্ত উপযােগী প্রমাণিত হবে , কিন্তু মােক্ষলাভ-এর জন্য আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত হওয়া অপরিহার্য । অক্রম মার্গের দ্বারা আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পথ আজও উন্মুক্ত আছে। যেমন প্রজ্বলিত প্রদীপই শুধু পারে অন্য প্রদীপকে প্রজ্বলিত করতে , তেমনই প্রত্যক্ষ আত্মজ্ঞানীর কাছে আত্মজ্ঞান লাভ করলে তবেই নিজের আত্মা জাগৃত হতে পারে । Page #7 -------------------------------------------------------------------------- ________________ নিবেদন আত্মজ্ঞানী শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই পটেল , যাকে লােকে ‘দাদা ভগবান’ নামেও জানে, তাঁর শ্রীমুখ থেকে অধ্যাত্ম এবং ব্যবহার জ্ঞান সম্বন্ধে যে বাণী নিঃসৃত হয়েছিল , তার রেকর্ড করে, সংকলন আর সম্পাদন করে গ্রন্থরূপে প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমান সংকলন মূল গুজরাতী পুস্তকের অনুবাদ। এই বইতে পরমপূজ্য দাদা ভগবান দ্বারা উদ্ভাসিত নয় কলমকে বিস্তারিতভাবে বােঝানাে হয়েছে। পরমপূজ্য দাদাজী বলতেন যে এই নয় কলম তাে সকল শাস্ত্রের সার, বিচক্ষণ পাঠক এই ভাবনা করতে থাকলে তার জন্ম-জন্মান্তর শুধরে যাবে। ‘অম্বালালভাই’-কে সবাই ‘দাদাজী’ বলতেন। “দাদাজী’ মানে পিতামহ আর ‘দাদা ভগবান’ তাে উনি নিজেই নিজের ভিতরের পরমাত্মাকে বলতেন। নশ্বর দেহ ভগবান হতে পারে না, সে তাে বিনাশশীল। ভগবান তাে অবিনাশী আর উনি তাঁকে ‘দাদা ভগবান’ বলতেন ; যিনি জীবমাত্রের অন্তরে আছেন। এই অনুবাদে বিশেষরূপে এই খেয়াল রাখা হয়েছে যে পাঠক দাদাজীর বাণীই শুনছেন এরকম অনুভব করেন । ওনার হিন্দী সম্পর্কে ওনার কথাতেই বললে , ‘আমার হিন্দী মানে গুজরাতী, হিন্দী আর ইংরাজী-র মিশ্রণ, কিন্তু যখন ‘টী’ (চা) তৈরী হবে তখন ভালােই হবে । জ্ঞানীর বাণীকে বাংলা ভাষায় যথার্থ রূপে অনুবাদ করার প্রযত্ন করা হয়েছে কিন্তু দাদাশ্রীর আত্মজ্ঞান-এর যথার্থ আধার , যেমনকার তেমন , আপনি গুজরাতী ভাষাতেই অবগত হতে পারবেন। মূল গুজরাতী শব্দ, যার বাংলা অনুবাদ উপলব্ধ নয় তা ইটালিকস্-এ লেখা হয়েছে । যিনি জ্ঞান-এর গভীরে যেতে চান , জ্ঞান-এর সঠিক মর্ম অনুধাবন করতে চান তিনি এই কারণে গুজরাতী ভাষা শিখে নিন , এই আমাদের নম্র বিনতি। এই বিষয়ে আপনার কোনাে প্রশ্ন থাকলে প্রত্যক্ষ সৎসঙ্গে তার সমাধান লাভ করতে পারেন। এই পুস্তকের কোনাে কোনাে স্থানে পরমপূজ্য দাদাশ্রীর কথিত বাক্যের অধিক স্পষ্টীকরণ বন্ধনীর মধ্যে করা হয়েছে । দাদাশ্রীর শ্রীমুখনিঃসৃত কিছু কিছু গুজরাতী ও ইংরাজী শব্দ অনুবাদ করে যেমনকার তেমন রাখা হয়েছে কারণ এই সমস্ত শব্দের যথার্থ অনুবাদ সম্ভব নয় ; সমার্থক শব্দ বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া হয়েছে।। অনুবাদ বিষয়ক ভুল-ত্রুটির জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। Page #8 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সম্পাদকীয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরের, বাইরের ব্যবহারে লােকেদের মুখে এরকম শােনা যায় যে যা করতে চাই না তা হয়ে যাচ্ছে ! যা করতে চাইছি তা হচ্ছে না ! খুব ভাবনা করছি, করার দৃঢ় নিশ্চয় আছে, প্রচেষ্টাও করছি, তবুও হচ্ছে না ! সাধকদের নিয়ে সমস্ত ধর্ম উপদেশকদের চিরকালের অভিযােগ এই যে আমরা যা বলছি তা তােমরা আত্মসাৎ করছে না। শ্রোতারাও হতাশায় মুহ্যমান হয়ে পড়ে যে । এত এত ধর্ম করা সত্ত্বেও আচরণে কেন আসে না । এর রহস্য কি ? কোথায় আটকাচ্ছে ? কি ভাবে এই ভুল ভাঙা যায় ? | পরমপূজ্য দাদাশ্রী এই কালের মানুষের ক্ষমতা দেখে সেই অনুসারে এর সমাধান এক নতুন দৃষ্টিকোন থেকে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দিয়েছেন। পূজ্য দাদাশ্রী বৈজ্ঞানিক স্পষ্টীকরণ করেছেন যে ব্যবহার তাে পরিণাম বা এফেক্ট আর ভাব তার। কারণ বা কজ। পরিণামে সােজাসুজি কোন পরিবর্তন করা যায় না ; কিন্তু এই পরিবর্তন বৈজ্ঞানিক রীতি অনুসারে আনা যায়। কারণ বদলালে তাে পরিণাম স্বয়ং-ই বদলে যাবে! কারণ বদলানাের জন্যে এখন এই জন্মে নতুন করে ভাব বদলাও। এই ভাব বদলানাের জন্যে পূজ্য দাদাশ্রী নয় কলম-এ দেওয়া ভাবনা ভাবতে শিখিয়েছেন। সমস্ত শাস্ত্র যে উপদেশ দিচ্ছে কিন্তু যা পরিণাম পাচ্ছে না তার সার পূজ্যশ্রী নয় কলম-এর মাধ্যমে দিয়েছেন একেবারে মূল থেকে পরিবর্তন করার চাবিকাঠিরূপে, যা অনুসরন করে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই জীবন তাে বটেই, জন্ম-জন্মান্তরও শুধরে নিয়েছে। বাস্তবে এই জন্মে। বাহ্য পরিবর্তন হয় না কিন্তু এই নয় কলমের ভাবনা ভাবাতে অন্তরে নতুন কারণ। চিরকালের জন্যে বদলে যায় আর অসীম শান্তি থাকে। অন্যের দোষ দেখা বন্ধ হয়ে যায় যা পরম শান্তি লাভের পরম কারণ স্বরূপ হয় ! আর এদের মধ্যে অনেকেই। পূর্বজন্মে এই নয় কলমের সমার্থক ভাবনা ভেবে এসেছিল যার ফলস্বরূপ এখন এই লিংক (সূত্র) পেয়ে তা ব্যবহারে তাড়াতাড়ি পরিণাম পেয়েছে ! Page #9 -------------------------------------------------------------------------- ________________ কোনাে প্রকারের সিদ্ধি প্রাপ্ত করতে হলে তার জন্যে শুধু নিজের অন্তরে বিরাজমান ভগবানের কাছে বারবার শক্তি চাইতে হবে, যা নিশ্চিতরূপে ফল দেবেই । পরমপূজ্য দাদাশ্রী নিজের সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, এই নয় কলম আমি সমস্ত জীবন পালন করে আসছি ; এতাে মূলধন। অর্থাৎ এ আমার দৈনন্দিন-এর জিনিস (অনুভব) যা ব্যক্ত করলাম। আমি আমার ভিতরের এই নয় কলম যা নিরন্তর চল্লিশ-চল্লিশ বছর ধরে চলে আসছে অন্তরে তা শেষপর্যন্ত লােককল্যান হেতু ব্যক্ত করলাম।' অনেক সাধকের মধ্যে এই মান্যতা দৃঢ় হয়ে যায় যে আমি এই নয় কলমের সব কিছু জানি এবং আমার ব্যবহারেও এটা থাকে। কিন্তু তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে তােমার থেকে কেউ কি দুঃখ পায় ? ঘরের বা কাছের লােকেদের জিজ্ঞাসা করলে তারা “হ্যাঁ” বলে। তার অর্থ এই যে সে এটা ঠিকভাবে বােঝে নি। এইরকম জানা কোনাে কাজে লাগে না। আসলে জ্ঞানীপুরুষ যা নিজের জীবনে সিদ্ধ করেছেন তা অনুভবী বাণী। দ্বারা দিলে তবেই ক্রিয়াকারী হয়। অর্থাৎ এই ভাবনা জ্ঞানীপুরুষের দেওয়া ডিজাইন অনুযায়ী হলে তবেই কাজে আসবে আর মােক্ষমার্গে দ্রুত প্রগতি করাবে ! আর শেষে তাে এই পর্যন্ত পরিণাম আসে যে নিজের দ্বারা কোনাে জীবের কিঞ্চিৎমাত্র দুঃখ হয় ! এটুকুই নয়, এই নয় কলমের ভাবনা প্রতিদিন ভাবলে অনেক দোষ ধুয়ে যায় আর মােক্ষমার্গে এগিয়ে যেতে পারে । - ডাঃ নীরবেন অমিন Page #10 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর (নয় কলম - সার , সকল শাস্ত্রের ) এর থেকে ভাঙে সমস্ত অন্তরায় আমি তােমাকে একটা বই পড়তে দিচ্ছি। বড় বই নয় , ছােট-ই দিচ্ছি । এটা এমনিই একটু পড়াে । প্রশ্নকর্তা : ঠিক আছে । দাদাশ্রী : একবার এটা পড়ে নাও, পুরােটাই পড়ে নাও। এই যে ওষুধ দিচ্ছি তা পড়ার ওষুধ। এই যে নয় কলম তা শুধু পড়তেই হবে, এ ওষুধ অন্য কিছু করার নয়। তুমি আর যা করছে তা ঠিক আছে কিন্তু এটা শুধু ভাবনা করারই ওষুধ ; সেইজন্যে এটা যে দিচ্ছি তা পড়তে থাকবে। এর থেকে সমস্ত ধরনের অন্তরায় ভেঙে যাবে । তাই আগে এক-দু মিনিটের জন্যে এই নয় কলম পড়ে নাও। প্রশ্নকর্তা : নয় কলম .. ১. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার অহং-কে কিঞ্চিৎমাত্রও দুঃখ না দিই, দুঃখ না দেওয়াই অথবা দুঃখ দেওয়ার প্রতি অনুমােদন না করি । এমন পরম শক্তি আমাকে দিন। আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার অহম্ কিঞ্চিৎমাত্র দুঃখ না পায় এমন স্যাদ্বাদ বাণী , স্যাদ্বা ব্যবহার আর স্যাদ্বা মনন করার পরম শক্তি দিন । Page #11 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর ২. হে দাদা ভগবান ! আমাকে, যেন কোনাে ধর্মের মান্যতাকে কিঞ্চিৎমাত্রও আঘাত না করি , আঘাত না করাই অথবা আঘাত করার প্রতি অনুমােদন না করি এমন পরম শক্তি দিন। আমাকে, কোনাে ধর্মের মান্যতার প্রতি কিঞ্চিৎমাত্রও আঘাত না পৌছায় এমন। স্যাদ্বা বাণী , স্যাদ্বাদ ব্যবহার আর স্যাদ্বা মনন করার পরম শক্তি দিন । ৩. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী উপদেশক, সাধু-সাধী বা আচার্যর অবর্ণবাদ, অপরাধ, অবিনয় না করার পরম শক্তি দিন। ৪. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার প্রতি কিঞ্চিৎমাত্রও অভাব, | তিরস্কার কখনও না করার , না করানাের অথবা কর্তাকে অনুমােদন না করার পরম। শক্তি দিন। ৫. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার সাথে কখনও কঠোর ভাষা, তন্তীলী ভাষা না বলার, না বলানাের বা বলার প্রতি অনুমােদন না করার পরম শক্তি দিন। কেউ কঠোর ভাষা, তন্তীলী ভাষা বললে আমাকে মৃদু, ঋজু ভাষা বলার শক্তি দিন। ৬. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার প্রতি, স্ত্রী, পুরুষ অথবা নপুংসক, যে কোনাে লিঙ্গধারী হােক না কেন তার সম্বন্ধে কিঞ্চিৎমাত্রও বিষয়-বিকার সম্পর্কিত দোষ, ইচ্ছা, চেষ্টা বা বিচার সম্পর্কিত দোষ না করার, না করানাের অথবা কর্তাকে অনুমােদন না করার পরম শক্তি দিন। আমাকে নিরন্তর নির্বিকার থাকার পরম শক্তি দিন। ৭. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে প্রকার রসের প্রতি লােভ না করার শক্তি দিন। সৰ্বরসযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার পরম শক্তি দিন। Page #12 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর ৮. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার, প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষ, জীবন্ত অথবা মৃত কারাের প্রতি কিঞ্চিৎমাত্র অবর্ণবাদ, অপরাধ, অবিনয় না করার, করানাের অথবা কর্তাকে অনুমােদন না করার পরম শক্তি দিন। ৯. হে দাদা ভগবান ! আমাকে জগৎকল্যাণ করার নিমিত্ত হওয়ার পরম শক্তি দিন, শক্তি দিন, শক্তি দিন। ( দিনে তিনবার করে বলার )। | এইটুকু তােমাকে ‘দাদা’-র কাছে চাইতে হবে। এ প্রত্যেকদিন শুধু যন্ত্রবৎ পড়ে যাওয়ার বস্তু নয়, অন্তরের অন্তঃস্থলে রাখার বস্তু। এ প্রত্যেকদিন উপযােগপূর্বক ভাবনা করার বস্তু। এটুকু পাঠে সমস্ত শাস্ত্রের সার চলে আসে। দাদাশ্রী : প্রত্যেকটা শব্দ পড়লে ? প্রশ্নকর্তা : হ্যাঁ, সব ভালাে করে পড়ে নিয়েছি । অহং দুঃখ না পায় ... প্রশ্নকর্তা : ১. ‘হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার অহং-কে কিঞ্চিৎমাত্রও দুঃখ না দিই, না দেওয়াই অথবা দুঃখ দেওয়ার প্রতি অনুমােদন না করি এমন পরম শক্তি দিন।। আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার অহম্ কিঞ্চিৎমাত্র দুঃখ না পায় এমন স্যাদ্বাদ বাণী , স্যাদ্বাদ ব্যবহার আর স্যাদ্বাদ মনন করার পরম শক্তি দিন । এটা বুঝিয়ে দিন। দাদাশ্রী : কারাের অহংকার দুঃখ না পায় সেইজন্য আমরা স্যাদ্বাদ (সর্বজনগ্রাহ্য) বাণী প্রার্থনা করি। এরকম বাণী আমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে উৎপন্ন হবে। আমি যে বাণী বলছি তা এই ভাবনা ভাবার ফলরূপে পেয়েছি। Page #13 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর | প্রশ্নকর্তা : কারাের অহংকারকে দুঃখ দেওয়া উচিৎ নয় তাে তার অর্থ এই নয় তাে যে কারাের অহংকারকে পুষ্টি দিতে হবে ? | দাদাশ্রী : না, এ কারাের অহংকারকে পুষ্ট করার নয়। এ তাে কারাের অহংকারকে দুঃখ না দেওয়া হয় সেটা দেখতে হবে। আমি বলছি কাচের পেয়ালা ভেঙে ফেলাে না। তার অর্থ এই নয় যে কাচের পেয়ালা সামলাতে থাকো। এ নিজের জায়গাতে সুরক্ষিতই আছে ; একে ভেঙো না। যদি এটা ভেঙে যাচ্ছে তাে তুমি তােমার নিমিত্তে একে ভেঙো না। আর তােমাকে শুধু এই ভাবনা করতে হবে যে আমার জন্যে। কোনাে জীব যেন কিঞ্চিৎমাত্রও দুঃখ না পায়। এর অহংকার যেন ভেঙে না যায় । একে উপকারি বলে মনে করি। প্রশ্নকর্তা : কাজে-কর্মে বা ব্যবসায়ে সামনের জনের অহংকার দুঃখ না পায়। এরকম সব সময় হয় না ; কারাের না কারাের অহংকারে তাে আঘাত লেগেই যায়। দাদাশ্রী : একে অহংকারকে দুঃখ দেওয়া বলে না। অহংকারকে দুঃখ দেওয়া মানে কি ? ধরাে কেউ কিছু বলতে গেলাে আর তুমি তাকে বললে, ‘বােস, বােস, তুমি কিছু বলবে না। এইভাবে এর অহংকারকে দুঃখ দেওয়া উচিৎ নয়। আর কাজে-কর্মে যে অহংকার দুঃখ পায় বলছাে বাস্তবে তা অহংকারের দুঃখ হয় না ; এ তাে মন ভিতরে দুঃখ পায় । প্রশ্নকর্তা : কিন্তু অহংকার ভাল জিনিস নয় তাে অহংকারকে দুঃখ দিলে আপত্তি কোথায় ? | দাদাশ্রী : ও নিজেই এখন অহংকার-স্বরূপ হয়ে আছে তাই ওকে দুঃখ দেওয়া উচিৎ নয়। ও যা কিছু করে তাতে ‘আমিই করছি’ এরকম মনে করে। সেইজন্যে দুঃখ দেবে না। তুমি তােমার ঘরেও কাউকে বকাবকি করবে না, কারাের অহংকারে আঘাত পৌঁছায় সেভাবে চলবে। কারাের অহংকারকে আঘাত দেওয়া উচিৎ নয়। অহংকারকে আঘাত করলে মানুষের মধ্যে ভেদ তৈরী হয়ে যায় ; পরে আর কোনােদিন একাত্ম হতে পারে না। তুমি কাউকে এরকম বলবে না যে, ‘তুই তাে ইউজলেস্ Page #14 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর (অপদার্থ), তুই এরকম, তুই সেরকম। এরকম করে কাউকে নীচে নামাবে না। হ্যাঁ, বকতে পারাে, বকাতে কোনাে অসুবিধা নেই, কিন্তু যে কোনাে উপায়ে হােক এর অহংকারকে দুঃখ না দিয়ে। মাথায় আঘাত লাগলে কোনাে অসুবিধা নেই কিন্তু কোনােভাবেই যেন ওর অহংকারের উপর আঘাত না লাগে। কারাের অহংকার ভাঙা উচিৎ নয়। কোনাে মজদুরকেও কখনও তিরস্কার করবে না। তিরস্কার করলে ওর অহংকার আঘাত পায়। তােমার যদি ওকে প্রয়ােজন না হয় তাে বলবে, “ভাই, আমার আর । তােমাকে দরকার নেই। আর ওর অহংকার যাতে আঘাত না পায় সেজন্যে একে পাঁচটাকা বেশী দিয়ে বিদায় করবে। পয়সা তাে এসে যাবে কিন্তু ওর অহংকার যেন আঘাত না পায়। নয়তাে সে শত্রুতা করবে , ভয়ঙ্কর দ্বেষ বাধবে ! তােমার কল্যাণ। হতে দেবে না, মাঝখানে চলে আসবে। | এ খুব গভীর কথা। এ সত্ত্বেও যদি কারাের অহংকারকে তুমি আঘাত দিয়েছাে তাে এখানে আমার কাছে (এই কলম অনুসারে) শক্তি চাইবে। অর্থাৎ যা হয়ে গেছে। তার থেকে অভিপ্রায় আলাদা রাখলে বেশী দায়িত্ব থাকে না। কারণ তােমার অভিপ্রায় এখন আলাদা হয়ে গেছে। অহংকারকে আঘাত দেওয়ার যে অভিপ্রায় ছিল তা এই। শক্তি চাওয়াতে আলাদা হয়ে গেছে। প্রশ্নকর্তা : অভিপ্রায় থেকে আলাদা হওয়ার মানে কি ? দাদাশ্রী : ‘দাদা ভগবান’ তাে বুঝে গেছেন যে এখন এই বেচারার আর কারাের অহংকারকে দুঃখ দেওয়ার ইচ্ছা নেই। নিজের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও হয়ে যাচ্ছে। আর । জগতের লােকেদের তাে ইচ্ছাকৃত হচ্ছে। অর্থাৎ কলম বললে এই হয় যে আমাদের। অভিপ্রায় আলাদা হয়ে যায়। সেইজন্য আমরা এদিক থেকে মুক্ত হয়ে যাই। অর্থাৎ শক্তি-ই চাইতে হবে। তােমার কিছু করার নেই শুধু শক্তি-ই চাইবে। এতে কাজ কিছু করার নেই । Page #15 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর প্রশ্নকর্তা : শক্তি চাওয়ার কথা তাে ঠিক আছে, কিন্তু আমার কি করা উচিৎ যাতে অন্যের অহংকারকে দুঃখ না দিয়ে দিই ? দাদাশ্রী : না, এরকম কিছু করার নেই। এই কলম অনুসারে তুমি শুধু বলবে, ব্যস ! আর কিছু করার নেই। এখন যে অহংকারকে আঘাত করা হয়ে যাচ্ছে সেটা ফল (ডিস্টার্জে) এসেছে । এখন যা হয়ে যাচ্ছে তা ‘ডিসাইডেড হয়ে আছে , একে আটকানাে যায় না। একে বদলাতে যাওয়া মানে শুধু মাথা কোটা । কিন্তু এই কলম বলার পরে আর দায়িত্ব থাকে না । প্রশ্নকর্তা : আর এতাে খাটি হৃদয়ে বলতে হবে । | দাদাশ্রী : এ সব কিছুই খুঁটি হৃদয় দিয়েই করতে হবে। আর যে মানুষ করে সে। খাঁটি হৃদয়েই করে, মিথ্যা করে না। কিন্তু এতে নিজের অভিপ্রায় আলাদা হয়ে গেলাে। এ তাে এক প্রকার খুব বড় বিজ্ঞান , বােঝার মত । তােমাকে তাে নয় কলম শুধু বলতেই হবে, এর অনুসারে কিছু করতে হবে না। শক্তি-ই চাইবে যে, ‘দাদা ভগবান, আমাকে শক্তি দিন। আমার এই শক্তির প্রয়ােজন আছে। তাতে তুমি শক্তি পাবে আর তােমার দায়িত্ব চলে যাবে। কিন্তু জগৎ কি জ্ঞান। দিচ্ছে ? এরকম করাে না। আরে ভাই, আমি করতে চাই না, তবুও হয়ে যাচ্ছে। সেইজন্যে তােমার এই জ্ঞান আমার ‘ফিট’ (অনুকূল) হচ্ছে না। এই যে তুমি বলছাে এতে ভবিষ্যতে কিছু বন্ধ হবে না আর বর্তমানেও কিছু বন্ধ হচ্ছে না ; এতে দুদিকেই লােকসান হচ্ছে। সেইজন্যে ‘ফিট’ হয় এমন কিছু দরকার । ভাব প্রতিক্ৰমণ , তৎক্ষণাৎ-ই প্রশ্নকর্তা : যখন অন্যের অহংকারকে আঘাত দিয়ে ফেলি, তখন এরকম মনে হয় যে আমার অহংকার-ই তাে বললাে ? দাদাশ্রী : না, এরকম মানে করার দরকার নেই। আমাদের জাগৃতি কি বলছে ? Page #16 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর এ হলাে আমাদের মােক্ষমার্গ অর্থাৎ অন্তরমুখী মার্গ। অন্তরের জাগৃতিতে নিরন্তর থাকা আর অন্যের অহংকারকে আঘাত দিলে তৎক্ষণাৎ তার প্রতিক্ৰমণ করে নেওয়াই আমাদের কাজ। তুমি তাে অনেক প্রতিক্ৰমণ করাে, তাতে আর একটা বেশী করবে ! আমিও কখনও কারাে অহংকারকে আঘাত দিয়ে ফেললে সাথে সাথেই প্রতিক্ৰমণ করে নিই। সেইজন্য রােজ সকালে এই বলবে যে, আমার মন-বচন-কায়া দিয়ে কোনাে জীবের কিঞ্চিৎমাত্রও দুঃখ যেন না হয়। এটা পাঁচবার বলে ঘর থেকে বেরােবে আর তার পরে যদি কেউ দুঃখ পায় তাে তা তােমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হচ্ছে। সন্ধ্যাবেলায় তার প্রতিক্ৰমণ করে নেবে। প্রতিক্ৰমণ মানে কি ? দাগ লাগআর সাথে সাথেই ধুয়ে নেবে। তাহলে পরে কোনাে অসুবিধা হবে না। ঝঞ্চাট-ও হবে না। প্রতিক্ৰমণ কে করে না ? যার জ্ঞান নেই, অজ্ঞানরূপী বেহুঁশ অবস্থায় আছে সেই মানুষ প্রতিক্ৰমণ করে না। নয়তাে আমি যাদের জ্ঞান দিয়েছি তারা কিরকম মানুষ হয়ে গেছে ? তারা বিচক্ষণ পুরুষ হয়ে গেছে। প্রতি মুহুর্তে বিচার করতে থাকে। বাইশ তীর্থঙ্করের অনুগামীরা বিচক্ষণ ছিলেন, তাঁরা ‘শুট অন সাইট’ প্রতিক্ৰমণই করতেন। দোষ হলাে কি সাথে সাথেই ‘শু্যট’ ! আর আজকের মানুষ এরকম করতে অক্ষম , তাই ভগবান রায়শী-দেবশী (সারা রাতে যে দোষ হয়েছে তার জন্যে সকালে ক্ষমা চাওয়া আর সারা দিনে যে দোষ হয়েছে তার। জন্যে রাতে ক্ষমা চাওয়া) , পক্ষকালের আর পষনে সারা বছরের প্রতিক্রমণের কথা বলেছেন। স্যাদ্বাদ বাণী , ব্যবহার , মনন ... প্রশ্নকর্তা : এখন ‘কারাের অহংকার আঘাত না পায় এরকম স্যাদ্বাদ বাণী, স্যাদ্বা ব্যবহার আর স্যাদ্বা মনন করার শক্তি দিন’ - এই তিনটে একটু বােঝান । দাদাশ্রী : স্যাদ্ব-এর অর্থ এই যে সবাই কোন ভাব থেকে, কোন ‘ভিউপয়েন্ট (দৃষ্টিকোন) থেকে বলছে তা আমাদের বুঝতে হবে । Page #17 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর প্রশ্নকর্তা : অন্য ব্যক্তির ‘ভিউপয়েন্ট বুঝতে পারাকে কি স্যাদ্বা বলে ? দাদাশ্রী : অন্য ব্যক্তির ‘ভিউপয়েন্ট’ বুঝে সেই অনুযায়ী তার সাথে ব্যবহার। করাকেই স্যাদ্বা বলে। ওর ভিউপয়েন্ট’কে আঘাত না দেওয়া হয় এরকম ব্যবহার করবে। চোরের ‘ভিউপয়েন্ট’-এরও দুঃখ না হয় এইভাবে যদি কথা বলাে তাে তার নাম স্যাদ্বাদ ! এই যে আমি কথা বলি তা মুসলিম হােক বা পারসী হােক , সবাই সমানভাবে বুঝতে পারে। কারাের মান্যতাকে আঘাত দেওয়া হয় না যে, ‘পারসীরা তাে এরকম বা স্থানকবাসী (জৈন)-রা তাে ওইরকম। কারাের দুঃখ যেন না হয় । প্রশ্নকর্তা : এখানে কোনাে চোর বসে আছে আর আমি যদি তাকে বলি যে চুরি। করা ভালাে নয় তাহলে তার মনে দুঃখ তাে হবেই ? দাদাশ্রী : না, এরকম বলবে না। তােমার ওকে বােঝানাে উচিৎ যে, ‘চুরি করার ফল এরকম আসে, তােমার যদি তা ঠিক লাগে তাে করাে। এরকম বলবে, অর্থাৎ কথা রীতি-নিয়ম মেনে বলতে হবে। তাহলেই সে শুনবে ; নয়তাে ও তাে শুনবেই না। আর তােমার কথা বলাই ব্যর্থ হবে। তােমার বলা ব্যর্থ তাে হবেই , উল্টে তােমার সাথে শত্রুতা বেঁধে নেবে যে, ‘বড় উপদেশক এসেছেন ! এমনটা হওয়া উচিৎ নয়। লােকেরা বলে যে চুরি করা খারাপ কাজ। কিন্তু চোর মনে করে যে চুরি করা ওর ধর্ম। কেউ যদি আমার কাছে চোরকে নিয়ে আসে তাে আমি একান্তে ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করবাে যে, ‘ভাই, এই বিজনেস্ তােমার ভাল লাগে কি ? তােমার পছন্দ হয় কি ? তখন ও ওর সব বৃত্তান্ত বলবে। আমার কাছে ওর ভয় লাগবে না। মানুষ ভয়ের জন্য মিথ্যা কথা বলে। পরে আমি ওকে বােঝাবাে যে, এই কাজ যে তুমি করছাে তার জবাবদিহি কি , তার ফল কি তা কি তুমি জানাে ?’ আর ‘এ চুরি করে’ এমনটা আমার মনের মধ্যে থাকে না। এরকম যদি আমার মনে থাকত তাে তার প্রভাব ওর ওপর পড়তাে। প্রত্যেকে নিজের ধর্মতে থাকে। কোনাে ধর্মের মান্যতাকে যেন দুঃখ দেওয়া না হয় ; এরই নাম স্যাদ্বা বাণী। স্যাদ্বাদ বাণী সম্পূর্ণ হয়। প্রত্যেকের Page #18 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর প্রকৃতি আলাদা আলাদা হয় , তবুও স্যাদ্বা বাণী কারাের প্রকৃতির প্রতি দ্বেষ রাখে । প্রশ্নকর্তা : স্যাদ্বা মনন মানে কি ? দাদাশ্রী : স্যাদ্বাদ মনন অর্থাৎ মনের মধ্যেও, চিন্তা-ভাবনা দ্বারা কোনাে ধর্মের মান্যতা যেন কিছুমাত্র আঘাত না পায়। ব্যবহারে তাে হওয়া উচিত-ই নয় কিন্তু এরকম। ভাবনা করাও অনুচিত। মুখে বলা তাে আলাদা কিন্তু মনেও যেন এরকম ভালাে ভাবনাই আসে যা অন্য ব্যক্তির মান্যতাকে আঘাত দেয় না, কারণ মনের ভাবনার স্পন্দন অন্য ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যায়। তাই এরা মুখ ফুলিয়ে থাকে। কারণ তােমার। (খারাপ) ভাবনা ওর মনে পৌছে ওর উপর প্রভাব ফ্যালে । প্রশ্নকর্তা : কারাের প্রতি মনে খারাপ ভাবনা এলে কি প্রতিক্ৰমণ করবাে ? দাদাশ্রী : হ্যাঁ, নয়তাে পরে ওর মন বিরূপ হবে। আর প্রতিক্ৰমণ করলে এর । মন যদি বিরূপ হয়েও থাকে তাে পরে ঠিক হয়ে যাবে। কারাের জন্যেই খারাপ বা। এটা-সেটা বিচার-ও করবে না। কিছুই করবে না। সবাই নিজেরটা সামলাও। নিজে নিজেরটা সামলাও , আর অন্য কোনাে ঝামেলায় যাবে না । ধর্মের মান্যতা আঘাত না পায় ... প্রশ্নকর্তা : ২. হে দাদা ভগবান ! আমি যেন কোনাে ধর্মের মান্যতাকে। | কিঞ্চিৎমাত্রও আঘাত না করি , কাউকে দিয়ে আঘাত না করাই । অথবা কাউকে আঘাত করার অনুমােদন না করি এমন পরম শক্তি আমাকে দিন । আমার দ্বারা যেন কোনাে ধর্মের মান্যতার প্রতি কিঞ্চিৎমাত্রও আঘাত পৌছায় এমন স্যাদ্বা বাণী , স্যাদ্বাদ ব্যবহার আর স্যাদ্বা মনন করার পরম শক্তি আমাকে দিন । Page #19 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধায় জন্ম-জন্মান্তর দাদাশ্রী : কারাের মান্যতাকে আঘাত দেওয়া অনুচিত । কেউ ভুল - এমনটাও যেন মনে না হয়। এক’-কে সংখ্যা বলে কি বলে না ? প্রশ্নকর্তা : হ্যাঁ। দাদাশ্রী : তাে ‘দুই’-কে সংখ্যা বলে কি বলে না ? প্রশ্নকর্তা : হ্যাঁ , বলে । দাদাশ্রী : তাে একশাে’ সংখ্যাওয়ালারা কি বলে ? আমারটা ঠিক আর তােমারটা ভুল। এরকম বলতে নেই। সবারটাই ঠিক। এক’-টা এক’-এর মত, ‘দুই’-টা ‘দুই’-এর মত, প্রত্যেকে তার নিজের নিজের জায়গায় ঠিক থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেকের (ভিউপয়েন্ট) যে স্বীকার করে নেয় তাকেই স্যাদ্বা বলে। একটি বস্তু তার গুণধর্মতে থাকে কিন্তু তুমি যদি এর কিছু গুণকে স্বীকার করাে আর অন্য সব গুণকে অস্বীকার করাে তাে তা ভুল। স্যাদ্বা মানে প্রত্যেকের মান্যতা অনুসারে হওয়া। 360 ডিগ্রীতে পৌছালে সবারটাই ঠিক লাগে কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত এর ডিগ্রী অনুযায়ী এ ঠিক আর ওর ডিগ্রী অনুযায়ী ও ঠিক। কোনাে ধর্ম খারাপ এরকম আমরা বলতে পারি না। প্রত্যেক ধর্মই ঠিক, কেউ ভুল নয়। আমরা কাউকে ভুল বলতেই পারি না। সেটা তার ধর্ম। মাংসাহার করলে আমরা তাকে ভুল কি করে বলতে পারি ? ও বলবে, ‘মাংসাহার করা আমার ধর্ম। তাে আমরা তাকে মানা করতে পারি না। এটাই ওর মান্যতা, ওর বিলীফ। আমরা কারাের বিলীফকে খন্ডন করতে পারি না। কিন্তু কেউ শাকাহারী পরিবারে জন্মে যদি মাংসাহার করে তাে তাকে আমরা বলতে পারি যে, ‘ভাই, এটা ঠিক নয়। তার পরেও যদি সে মাংসাহার করে তাে আমরা তার বিরােধ করতে পারি না। আমাদের বােঝাতে হবে যে এই বস্তু হেল্পফুল (সহায়ক) নয় । | স্যাদ্বাদ অর্থাৎ কোনাে ধর্মের মান্যতাকে আঘাত না দেওয়া। যতটুকু সত্য এতে আছে তাকে সত্য বলে আর যতটুকু অসত্য আছে তাকে কিন্তু অসত্যও বলে। একেই Page #20 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর মান্যতাকে আঘত না দেওয়া বলে। ক্রীশ্চান মান্যতা , মুসলিম মান্যতা , কোনাে ধর্মেরই মান্যতাকে আঘাত দেওয়া উচিত নয়। কারণ সবাই একসময় 360 ডিগ্রীর মধ্যে চলে আসবে। রিয়্যাল ইজ দ্য সেন্টার অ্যান্ড অল দীজ, আর রিলেটিভ ভিউজ (মধ্যবিন্দুই। সত্যি আর বাকি সব সাপেক্ষ দৃষ্টিকোণ)। সেন্টারে যারা আছে তাদের জন্যে রিলেটিভ ভিউ সবই সমান। ভগবানের স্যাদ্বাদ মানে কারাের কিঞ্চিৎমাত্রও দুঃখ না হয় ; তা সে যে ধর্মই হােক না কেন ! অর্থাৎ স্যাদ্বা মার্গ এরকমই হয়। প্রত্যেকের ধর্মকে স্বীকার করতে হবে। সামনের ব্যক্তি দুই ঘুষি মারলেও তা তােমাকে স্বীকার করতে হবে কারণ সম্পূর্ণ জগৎ নির্দোষ। দোষী যে দেখাচ্ছে তা তােমার দোষের কারণে দেখাচ্ছে। বাস্তবে জগৎ দোষী নয়-ই। কিন্তু তােমার বুদ্ধি দেখাচ্ছে যে এ ভুল করলাে । অবর্ণবাদ , অপরাধ , অবিনয় .. | প্রশ্নকর্তা : ৩. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী উপদেশক, সাধু-সাধী বা আচার্যর অবর্ণবাদ, অপরাধ, অবিনয় না করার পরম শক্তি দিন। এর মধ্যে যে অবর্ণবাদ শব্দ আছে তার যথার্থ মানে কি ? দাদাশ্রী : যে কোনাে উপায়ে যেটা যেমন তাকে সেরকম না বলে উল্টো বলাকে অবর্ণবাদ বলে। যেমন আছে তেমন তাে বলেই না , তার উপর আবার উল্টো বলে। যেমনটি আছে ঠিক তেমনটি চিত্রণ করে আর ভুলকে ভুল এবং ঠিককে ঠিক বললে তাকে অবর্ণবাদ বলে না। কিন্তু সবই ভুল বললে তাকে অবর্ণবাদ বলে। যে কোনাে মানুষের মধ্যে কিছু ভাল তাে থাকে, না কি থাকে না ? আর কিছু খারাপও থাকে। কিন্তু যদি একে পুরােই খারাপ বলা হয় তাে তাকে অবর্ণবাদ বলে। এই ব্যাপারে একটু এরকম আর অন্য ব্যাপারে খুব ভালাে’ এরকম বলা উচিৎ। অবর্ণবাদ অর্থাৎ তুমি কারাের সম্পর্কে জানাে যে তার কিছু গুণ আছে , তা । জানা সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে বলাে ; যে গুণ এর নেই তার সম্বন্ধে অনেক কিছু বলাে তাে তা সবই অবর্ণবাদ। বর্ণবাদ অর্থাৎ যা আছে সেটা বলা আর অবর্ণবাদ অর্থাৎ যা নেই Page #21 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর তা বলা। একে তাে খুব বড় বিরাধনা বলে, সব থেকে বড় বিরাধনা বলে। অন্য সাধারন মানুষের সম্বন্ধে বললে তাকে নিন্দা বলে আর মহান পুরুষদের সম্পর্কে বললে তাকে অবর্ণবাদ বলে। মহান পুরুষ অর্থাৎ যারা অন্তরমুখী হয়েছেন তাঁরা , মহান পুরুষ অর্থাৎ যারা ব্যবহারে বড় যেমন প্রেসিডেন্ট - তাদের জন্যে নয় কিন্তু যারা অন্তরমুখী। তাদের জন্যে অবর্ণবাদ বলে। এরকম বলা খুব বিপজ্জনক !! এ তাে বিরাধনার। চেয়েও খারাপ। প্রশ্নকর্তা : উপদেশক, সাধু, আচাৰ্য্যদের জন্যে বলছেন কি ? দাদাশ্রী : হ্যাঁ, এরা সবাই৷ এঁরা রাস্তায় আছেন কি নেই, জ্ঞান আছে না নেই তা তােমার দেখার দরকার নেই। এঁরা ভগবান মহাবীরের আরাধনা করছেন তাে । এঁরা যাই করুন না কেন, ঠিক অথবা ভুল তা ভগবান মহাবীরের নাম নিয়েই করছেন তাে? সেইজন্যে এঁদের অবর্ণবাদ করতে পারাে না। প্রশ্নকর্তা : অবর্ণবাদ আর বিরাধনার মধ্যে পার্থক্য কি ? দাদাশ্রী : যারা বিরাধনা করছে তারা তাে উল্টো চলেছে, নীচে যাচ্ছে, অধােগতিতে যায়। আর যারা অবর্ণবাদ করছে তারা যদি পরে প্রতিক্রমণ করে নেয় তাে তাদের কোনও অসুবিধা হয় না ; পরে রেগুলার হয়ে যায়। কারাের অবর্ণবাদ করে পরে প্রতিক্ৰমণ করে নিলে পরিষ্কার হয়ে যায় । প্রশ্নকর্তা : অবিনয় আর বিরাধনার বিষয়ে একটু বােঝান । দাদাশ্রী : অবিনয়কে বিরাধনা বলে না। অবিনয়কে তাে নিচের স্টেজ বলে আর বিরাধনা তাে সত্যিকারের অবজ্ঞা, বিরােধ করাকে বলে। অবিনয় অর্থাৎ আমার কিছু লেনা-দেনা নেই , এরকম। বিনয় দেখায় না , তাকে অবিনয় বলে । প্রশ্নকর্তা : অপরাধ মানে কি ? Page #22 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর দাদাশ্রী : আরাধনা করলে মানুষ উঁচুতে ওঠে আর বিরাধনা করলে নীচে নামে। কিন্তু অপরাধ করলে তাে দু’দিক দিয়েই মার খায়। অপরাধ যারা করে তারা নিজেরাও এগােয় না আর কাউকে এগােতেও দেয় না। একেই অপরাধী বলে। প্রশ্নকর্তা : আর বিরাধনাতেও কাউকে এগােতে দেয় না তাে ? | দাদাশ্রী : কিন্তু বিরাধনা যারা করে তারা তবুও ভালাে। কেউ জানতে পারলে যদি বলে যে, “কি জন্যে তুমি এদিকে যাচ্ছাে ? আমেদাবাদ কি এদিকে ?! তাে ও পিছনে ফিরে আসে কিন্তু অপরাধী তাে পিছনেও ফেরে না আর আগেও যায় না। যারা বিরাধনা করে তারা উল্টো চলে বলে তাে পড়ে যায় ! প্রশ্নকর্তা : কিন্তু যারা বিরাধনা করে তারা পিছনে ফেরার সুযােগ পায় কি ? দাদাশ্রী : হ্যা, ফিরে আসার সুযােগ তাে পায় ! প্রশ্নকর্তা : অপরাধ যারা করে তারা পিছনে ফেরার সুযােগ পায় কি ? দাদাশ্রী : এ তাে পিছনে ফিরতেও পারে না আর এগােতেও পারে না। ওর তাে কোনও শ্রেণী-ই নেই ; এগােয়-ও না আর পিছােয়-ও না। যখনই দ্যাখাে তখনই যেখানকার সেখানেই আছে – এরই নাম অপরাধ। প্রশ্নকর্তা : অপরাধের ডেফিনেশন কি ? দাদাশ্রী : বিরাধনা অনিচ্ছাকৃত হয় আর অপরাধ ইচ্ছাকৃত হয়। প্রশ্নকর্তা : এ কিভাবে হয় দাদাজী ? দাদাশ্রী : জেদ চড়ে তাে অপরাধ করে। এখানে বিরাধনা করা অনুচিত তা জানা সত্ত্বেও বিরাধনা করে - তা অপরাধে যায়। যারা বিরাধনা করে তারা মুক্তি পেতে Page #23 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর পারে কিন্তু যারা অপরাধ করে তারা মুক্তি পায় না । প্রচন্ড বেশী অহংকার হলে তবেই অপরাধ করতে পারে । সেইজন্যে নিজেই নিজেকে বলতে হবে যে, “ভাই, তুমি তো পাগল ! অকারণে মেজাজ (অহংকারের) নিয়ে চলেছো। লোকেরা জানে না, কিন্তু আমি তো জানি তুমি কিরকম ? তুমি তো পাগল !' এইভাবে নিজেকে উপায় বের করতে হয়। প্লাস আর মাইনাস করতে হয়। শুধুমাত্র গুণ করতে থাকলে কোথায় পৌঁছাবে ? সেইজন্য তুমি ভাগাকার করবে । যোগ-বিয়োগ প্রকৃতির অধীন হয়, কিন্তু ভাগ-গুণ মানুষের হাতে । অহংকার দিয়ে যদি সাতগুণ করা হয়ে থাকে তো সাত দিয়ে ভাগ করবে তাহলে হল নিঃশেষ ! প্রশ্নকর্তা : কারোর নিন্দা করাটা কিসের মধ্যে পড়ে ? দাদাশ্রী : নিন্দাকে তো বিরাধনা বলে। কিন্তু প্রতিক্রমণ করলে তা চলে যায় অবর্ণবাদের মত। তাই তো আমি বলি যে কারোর নিন্দা করো না। তবুও লোকে পিছনে নিন্দা করে। আরে, নিন্দা করতে নেই। এই বাতাবরন সমস্তটাই পরমানুতে ভরা, সেইজন্য সব ওর কাছে পৌঁছে যায়। কারোর জন্যে একটা শব্দও কিন্তু দায়িত্ব না নিয়ে বলতে পারো না। আর কিছু বলতে হয় তো ভালো বলবে। কীর্তির কথা বলবে, অপকীর্তির কথা বলবে না । ১৪ সেইজন্যে কারোর নিন্দার মধ্যে যাবে না। গুনগান করতে না পারলে আপত্তি নেই কিন্তু নিন্দা করবে না। নিন্দা করলে তোমার লাভ কিছু হবে কি ? এতে তো খুব লোকসান হয়। অত্যন্ত লোকসান যদি এই জগতে কিছুতে হয় তো তা নিন্দা করার জন্য হয়। সেইজন্য কারোরই নিন্দা করার কারণ হওয়া উচিৎ নয় । এখানে তো নিন্দা বলে কোনো বস্তু হয় না। আমরা বোঝার জন্যে কথা বলছি যে কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ ! ভগবান কি বলেছেন ? বলেছেন যে খারাপকে খারাপ বলে জানো আর ভালো-কে ভালো বলে জানো। কিন্তু খারাপকে চেনার সময় এর উপর কিঞ্চিৎমাত্র দ্বেষ-ও যেন না হয় আর ভালো-কে চেনার সময়ে এর উপর কিঞ্চিৎমাত্র রাগ-ও যেন না হয় । খারাপকে খারাপ বলে না চিনলে ভালো-কে ভালো বলে চেনা যায় না। সেইজন্য আমি বিশদভাবে বলছি ; জ্ঞানীর কাছ থেকেই জ্ঞানকে Page #24 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর বোঝা যায় । অভাব " তিরস্কার করতে নেই . ১৫ প্রশ্নকর্তা : ৪. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনো দেহধারী জীবাত্মার প্রতি কিঞ্চিৎমাত্রও অভাব, তিরস্কার কখনও না করার না করানোর অথবা কর্তাকে অনুমোদন না করার পরম শক্তি দিন । " দাদাশ্রী : হ্যাঁ, ঠিক আছে। তোমার কারোর প্রতি অভাব আছে, যেমন ধরো তুমি অফিসে বসে আছো আর কেউ এলো ; তার প্রতি তোমার মনে অভাব, তিরস্কারভাব হলো। তাহলে তোমাকে মনে মনে ভাল করে বিচার করে ওর জন্যে অনুশোচনা করতে হবে যে এরকম হওয়া উচিৎ হয় নি । এই তিরস্কার থেকে কখনও মুক্ত হওয়া যায় না। এতে তো নিখাদ শত্রুতাই বেঁধে নেয়। কাউকে কিঞ্চিৎমাত্রও তিরস্কার করলে, আরে এই নির্জীবকেও তিরস্কার করলে তুমি মুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ কাউকে কিঞ্চিৎমাত্রও তিরস্কার করা চলবে না। আর যতক্ষণ পর্য্যন্ত কারোর প্রতি কিঞ্চিৎমাত্রও তিরস্কার থাকবে ততক্ষণ পর্য্যন্ত বীতরাগ হতে পারবে না। বীতরাগ হতে হবে, তবেই মুক্তি পাবে ! কঠোর - তন্তীলী ভাষা বলতে নেই প্রশ্নকর্তা : ৫. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনো দেহধারী জীবাত্মার সাথে কখনও কঠোর ভাষা, তন্তীলী ভাষা না বলার, না বলানোর বা বলার প্রতি অনুমোদন না করার পরম শক্তি দিন। কেউ কঠোর ভাষা, তন্তীলী ভাষা বললে আমাকে মৃদু, ঋজু ভাষা বলার শক্তি দিন। দাদাশ্রী : কঠোর ভাষা বলা উচিৎ নয়। কাউকে কঠোর ভাষায় বলা হয়ে গেলে আর তার খারাপ লাগলে তার কাছে গিয়ে বলবে যে, “ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা চাইছি।' আর সাক্ষাতে বলা যদি সম্ভব না হয় তো অন্তরে অনুশোচনা করবে যে এরকম বলা উচিৎ হয় নি। Page #25 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর প্রশ্নকর্তা : আর আবার চিন্তা করতে হবে যে এরকম যেন না বলি। | দাদাশ্রী : হ্যা, এই চিন্তা করবে আর অনুশােচনাও করবে। অনুশােচনা করলে। তবেই এটা বন্ধ হবে নয়তাে এমনি এমনি বন্ধ হবে না। শুধু বললেই বন্ধ হবে না । প্রশ্নকর্তা : মৃদু , ঋজু ভাষা মানে কি ? দাদাশ্রী : ঋজু অর্থাৎ সরল হবে আর মৃদু অর্থাৎ নম্র হবে। অত্যন্ত নম্র হলে তাকে মৃদু বলে। অর্থাৎ সরল, নম্র ভাষাতে বলবে আর এরজন্যে শক্তি চাইবে। এরকম করতে করতে এই শক্তি আসবে। কঠোর ভাষা বললে আর ছেলের খারাপ লাগলাে তাে তার জন্যে অনুশােচনা করবে। আর ছেলেকেও বলবে যে, আমি ক্ষমা চাইছি। এরকমভাবে আর বলবাে না। এটাই বাণী শুধরানাের রাস্তা আর ‘এ’ একটাই কলেজ আছে। প্রশ্নকর্তা : কঠোর ভাষা , তন্তীলী ভাষা আর মৃদু-ঋজুর মধ্যে পার্থক্য কি ? দাদাশ্রী : অনেকে কঠোর ভাষায় বলে তাে যে, ‘তুই অপদার্থ, বদমায়েশ, চোর। যে শব্দ তুমি শােন নি এমন কঠোর ভাষা বলার সাথে সাথেই তােমার হৃদয় স্তম্ভিত। হয়ে যায়। এই কঠোর ভাষা একটুও প্রিয় লাগে না। উল্টে মনে প্রশ্ন আসে যে এসব কি ? কঠোর ভাষা অহংকারী হয়। | আর তন্তীলী ভাষা মানে কি ? রেষারেষিতে যেমন একটা কথার পরম্পরা (তন্ত। বা তার) চলতে থাকে না ? ‘দ্যাখাে, আমি কত ভালাে খাবার বানিয়েছি আর এতাে কিছু জানেই না। এরকম কথার পরম্পরা (তন্ত) চলতে থাকে , রেষারেষি বাড়তে থাকে। এই তন্তীলী ভাষা খুব খারাপ হয়। কঠোর আর তন্তীলী ভাষা বলতে নেই। ভাষার সমস্ত দোষ এই দুই শব্দের মধ্যে চলে আসে। তাই অবসর পেলে ‘দাদা ভগবান’-এর কাছে শক্তি চাইতে থাকবে। কর্কশ ভাষায় বলা হলে তার বিপরীত শক্তি চাইবে যে আমাকে শুদ্ধবাণী বলার শক্তি দিন , Page #26 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর স্যাদ্বা বাণী বলার শক্তি দিন , মৃদু-ঋজু ভাষা বলার শক্তি দিন। এরকমভাবে চাইতে থাকবে। স্যাদ্বা বাণী অর্থাৎ কারাের দুঃখ না হয় এরকম বাণী । ... নির্বিকার থাকার শক্তি দিন ! প্রশ্নকর্তা : ৬. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার প্রতি, স্ত্রী, পুরুষ অথবা নপুংসক, যে কোনাে লিঙ্গধারী হােক না কেন তার সম্বন্ধে কিঞ্চিৎমাত্রও বিষয়-বিকার সম্পর্কিত দোষ, ইচ্ছা, চেষ্টা বা বিচার সম্পর্কিত দোষ না করার, না করানাের অথবা কর্তাকে অনুমােদন না করার পরম শক্তি দিন।। আমাকে নিরন্তর নির্বিকার থাকার পরম শক্তি দিন। দাদাশ্রী : তুমি যদি কারাের প্রতি কুদৃষ্টি দাও তাে সঙ্গে সঙ্গেই অন্তরে ‘চন্দুভাই’ (পাঠক ‘চন্দুভাই’-এর জায়গায় নিজেকে বুঝে নেবেন)-কে বলবে যে, এরকম করা উচিৎ নয়। এরকম করা আমাদের শােভা দেয় না। আমরা খানদান কোয়ালিটির। (গুণের) মানুষ। যেমন আমার বােন আছে , ও তেমনি অন্য কারাের বােন ! আমার বােনের উপর কেউ কুদৃষ্টি দিলে আমার কিরকম দুঃখ হয় ! এরকম অন্যেরও দুঃখ হয়। কি হয় না ? সেইজন্যে আমাদের এটা শােভা দেয় না। অর্থাৎ দৃষ্টি খারাপ হলে অনুশােচনা করতে হবে । প্রশ্নকর্তা : চেষ্টার অর্থ কি ? দাদাশ্রী : দেহ দ্বারা যে সমস্ত ক্রিয়া হয় , যার ফটো তােলা যায় সে সবকিছুকেই চেষ্টা বলে। তুমি ঠাট্টা-তামাশা করছাে তাকে চেষ্টা বলে। এইভাবে হাসছাে তাে তাকেও চেষ্টা বলে। প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ কাউকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা , কাউকে নিয়ে মশকরা করা - এ সবই চেষ্টা ? দাদাশ্রী : হ্যা, এরকম অনেক প্রকারের চেষ্টা আছে । Page #27 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর প্রশ্নকর্তা : তাে এই বিষয়-বিকার সম্পর্কিত চেষ্টা কি ধরনের হয় ? | দাদাশ্রী : বিষয়-বিকার সম্বন্ধেও দেহ যা যা কাজ করে , যার ফটো নেওয়া যায়। সে সব কিছুকেই চেষ্টা বলে। দেহ দিয়ে যে কাজ হয় না তাকে চেষ্টা বলে না। কখনাে কখনাে ইচ্ছা হয় , মনে বিচার আসে কিন্তু চেষ্টা হয় না। বিচার সম্পর্কিত দোষ মনের দোষ ! ‘আমাকে নিরন্তর নির্বিকার থাকার শক্তি দিন’ , এটুকু তুমি ‘দাদা’র কাছে। চাইবে। ‘দাদা’ তাে দানেশ্বর। রসে লুব্ধতা করতে নেই ... প্রশ্নকর্তা : ৭. হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোনাে প্রকার রসের প্রতি লােভ না। করার শক্তি দিন। সৰ্বরসযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার পরম শক্তি দিন। দাদাশ্রী : খাবার খাওয়ার সময় তােমার যে সজী যেমন টমাটোর সজী ভাল লাগে আর তা বারবার মনে পড়তে থাকে তাে তাকে লুব্ধতা (লােভ) বলে। টমাটো খেলে অসুবিধা নেই কিন্তু আবার তা মনে আসা উচিৎ নয়। নয়তাে তােমার সমস্ত শক্তি লুব্ধতাতে চলে যাবে। সেইজন্যে তুমি বলবে যে, ‘যা আসবে তাই আমার স্বীকার্য। কোনও ধরনের লুব্ধতা থাকা উচিৎ নয়। থালাতে যা খাবার আসবে তা যদি আমের রস আর রুটি হয় তাে তাই শান্তিতে খাবে। তাতে কোনাে আপত্তি নেই। কিন্তু যা আসবে তা ‘একসেপ্ট’ করবে ; অন্য এটা-ওটা মনে করবে না। প্রশ্নকর্তা : সমরসী মানে কি ? দাদাশ্রী : সমরসী মানে পুরণপুরী, ডাল, ভাত, সজী সব খাও কিন্তু শুধুমাত্র পুরণপুরীই ঠেসে ঠেসে খাবে না । কিছু লেক মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দেয় ; তাে মিষ্টি এদের নালিশ করে যে আমার Page #28 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর সাথে তােমার কি অসুবিধা ? দোষ মােষের আর দন্ড রাখালের ? আরে, জিভের কি দোষ ? দোষ তাে মােষের। মােষের দোষ মানে অজ্ঞানতার দোষ। প্রশ্নকর্তা : কিন্তু সমরসী আহার মানে কি ? এতে ভাবের সমানতা কিভাবে থাকে? দাদাশ্রী : তােমাদের সমাজে যে আহার বানানাে হয় তা তােমাদের সমাজের রুচি অনুসারে সমরসী মনে হয় এরকম আহার বানানাে হয়। আর অন্য লােককে তােমাদের সমাজের খাবার খাওয়ালে তা তাদের কাছে সমরসী মনে হবে না। তােমরা ঝাল-লঙ্কা ইত্যাদি কম খাও। প্রত্যেক জাতির সমরসী আহার আলাদা আলাদা হয়। সমরসী মানে টেস্টফুল, স্বাদিষ্ট আহার। ঝাল বেশী নয়, অন্য কিছু বেশী নয়, সব ঠিক। মাত্রাতে দিয়ে বানানাে আহার। কতজন বলে যে, আমি তাে শুধু দুধ খেয়ে থাকি। একে সমরসী আহার বলে না। সমরসী অর্থাৎ ছয় প্রকারের রস একসাথে খাও, ভালােভাবে টেস্টফুল বানিয়ে খাও। অন্য কোনাে তেতাে না খেতে পারলে করলা খাও, মেথি খাও কিন্তু তেতাে খাওয়া উচিৎ। তেতাে খায় না বলে নানারকমের রােগ হয়। সেইজন্যে ‘কুইনাইন’ (তেতাে ওষুধ) নিতে হয় ! এই রস কম বলেই এই সমস্ত দুর্ভোগ আসে। সব ধরনের রস নিতে হয়। প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ রস নেওয়ার জন্যেই শক্তি চাইতে হবে যে, হে দাদা ভগবান! শক্তি দিন যেন আমি সমরসী আহার নিতে পারি। | দাদাশ্রী : হ্যা, তুমি এই শক্তি চাইবে। তােমার ভাবনা কি ? সমরসী আহার নেওয়ার ভাবনা হলে তাই তােমার পুরুষার্থ । আর আমি শক্তি দিই তাতে তােমার পুরুষার্থ দৃঢ় হল ! প্রশ্নকর্তা : কোনাে রকমের রসে লুব্ধ হওয়া উচিৎ নয়, এটা ঠিক কি ? দাদাশ্রী : হঁ্যা, অর্থাৎ কারাের এমন হওয়া অনুচিত যে আমার টক ছাড়া অন্য কিছু ভালাে লাগে না। কতজনে বলে যে, ‘মিষ্টি ছাড়া আমার চলে না। তাে ঝাল কি Page #29 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর দোষ করলাে ? অনেকে বলে, “আমার মিষ্টি ভালাে লাগে না। শুধু ঝাল-ই ভালাে লাগে। এদেরকে সমরসী বলে না। সমরসী অর্থাৎ সবকিছু ‘একসেপ্টেড’ (স্বীকার্য) ; কম-বেশী মাত্রাতে হলেও কিন্তু স্বীকার করে নিতে হবে। | প্রশ্নকর্তা : সমরসী আহার আর জ্ঞান এই দুইয়ের মধ্যে কোনাে সম্পর্ক আছে। কি ? জ্ঞানের জাগৃতির জন্যে সমরসী আহার না হলে নেওয়া যায় না কি ? দাদাশ্রী : সমরসী আহারের জন্যে তাে এরকম যে, আমার মহাত্মা (জ্ঞানপ্রাপ্ত)-দের যখন ‘ব্যবস্থিত’(এর জ্ঞান) দিয়েছি তখন কি খাবে আর কি খাবে না তার ঝগড়া কোথায় ? এ তাে সাধারন লােকেদের জন্যে বলেছি আর আমার মহাত্মাদের মনেও তাে এটুকু বিচার আসবে যে সমরসী আহার যদি হয় তাে ভাল। আমি-ই বলি যে, “ভাই, একটু তাে লঙ্কা খেতে হবে ; আবার পরে এও বলি যে। কাশির ওষুধ খাচ্ছি ! আর ওষুধ যে নেয় তাকেও ‘আমি’ জানি কারণ এ তাে প্রকৃতি! প্রকৃতির গুণ-ভাগ প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ প্রকৃতি সমরসী হতে হবে ? দাদাশ্রী : প্রকৃতি মানে কি ? তেরাে দিয়ে গুণ করা বস্তু তেরাে দিয়ে ভাগ করলে তবে প্রকৃতি পুরাে হবে। এখন সতেরাে দিয়ে গুণ করা বস্তুকে কেউ তেরাে দিয়ে ভাগ করলে কি হবে ? প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ তেরাে দিয়ে গুণ করলে তেরাে দিয়েই ভাগ করতে হবে ? দাদাশ্রী : এরকম করলে অবশিষ্ট কিছু থাকবে না ! প্রশ্নকর্তা : এর উদাহরণ কি হবে ? Page #30 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর | দাদাশ্রী : প্রকৃতি অর্থাৎ আগে যা ভাব করেছিলে তা কিসের আধারে করেছিলে? যা আহার গ্রহণ করেছিলে তার আধারে ভাব করেছিলে। এই ভাবকে তেরাে দিয়ে গুণ করেছিলে। এই ভাবকে এখন নিঃশেষ করতে হলে তাকে তেরাে দিয়ে ভাগ করলে তা নিঃশেষ হবে। আর নতুন করে কোনাে ভাব উৎপন্ন না হলে ওই খাতা বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন ইচ্ছা হচ্ছে না তাই খাতা বন্ধ হয়ে গেছে। খাতা বন্ধ করে দিতে হবে । ... সেখানে প্রকৃতির শূন্যতা ! | প্রশ্নকর্তা : শুদ্ধাত্মার জ্ঞান তাে দিয়েছেন। এখন এই প্রকৃতিকে শূণ্য করার জন্যে। নয় কলম বললে তা সাহায্য করবে ? | দাদাশ্রী : সাহায্য তাে হবে। যত দিয়ে গুণ করেছাে তত দিয়ে ভাগ করবে। আমাকে ডাক্তার বলে যে, এটা খান। আমি বলি, ‘ডাক্তার, এই উপদেশ অন্য রােগীকে দিও। আমার গুণ অন্য ধরনের। সে যদি আমাকে ভাগ করতে বলে তাে তা কিভাবে মিলবে ? প্রশ্নকর্তা : আপনি তাে লঙ্কা উপর থেকে বেশী করে নিয়ে ভাগ করছেন ? দাদাশ্রী : লঙ্কা খাওয়ার সময় আমি সবাইকে বলি যে এটা কাশির ওষুধ খাচ্ছি। আর কাশি হলে বলি যে দ্যাখাে, কাশি হলাে তাে ? প্রশ্নকর্তা : এতে ভাগ কি করে হলাে ? দাদাশ্রী : একেই ভাগ করা বলে। লঙ্কা না নিলে ভাগ পুরাে করা হতাে না। প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ আগে প্রকৃতিতে যা ভরা হয়েছে তা এখন পুরাে করতে হবে। দাদাশ্রী : হ্যা, পুরাে করতে হবে । Page #31 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ২২ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর নীরুবেনকে আমি জিজ্ঞাসা করি যে, তুমি যদি বলাে তাে সুপারি খাই। কিন্তু সুপারি খাওয়ার সময় বলি যে এ কাশি হওয়ার ওষুধ। ও তাে অনেকসময় ‘না’ বলে দেয় তাে তখন খাই না। পরে আবার বলে যে, ‘নিন’, তখন খাই। সেইজন্যে কাশি হয় আর তখন সুপারি খাই না। আমার কোনাে বস্তুর নেশা নেই। কিন্তু মাল ভরা হয়ে গেছে, তাই খাওয়া হচ্ছে। আমার এ অক্রম বিজ্ঞান’! এ তাে পূর্বের অভ্যাস থেকে গেছে তাই হচ্ছে। তাই শক্তি চাও। পরে যদি লােভনীয় আহার নাও তাতেও আপত্তি নেই কিন্তু এই কলম। বললে তুমি আগের চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছ। প্রশ্নকর্তা : আমার যে প্রকৃতি তাকে গুণ করলে তা বেড়ে যাবে। একে ভাগ। করতে হবে। প্রকৃতিকে প্রকৃতি দিয়ে ভাগ করাটা একটু বােঝান।। দাদাশ্রী : যদি এই কলম বার বার বলাে তাে এতে ভাগ হয়ে যায় আর কম হয়ে যায়। এই কলম যদি না বলাে তাে (প্রকৃতিরূপী) চারাগাছ আপনা থেকেই পল্লবিত। হতে থাকবে। সেইজন্যে এটা বার বার বললে কম হয়ে যায়। এই কলম বলতে থাকলে। প্রকৃতিকে যে গুণ করা হয়েছিল তা ভেঙ্গে যাবে ; আত্মা গুণ হতে থাকবে আর প্রকৃতি ভাগ হতে থাকবে। সেইজন্যে আত্মা পুষ্ট হতে থাকে। সময় পেলে নয় কলম রাত-দিন বলতে থাকো। অবকাশ পেলে বলবে। আমি তাে সব ওষুধ দিয়ে দিই, বুঝিয়ে দিই তারপরে যা করার তা করবে। প্রত্যক্ষ - পরােক্ষ , জীবিত - মৃত .... প্রশ্নকর্তা : ৮. হে দাদা ভগবান । আমাকে কোনাে দেহধারী জীবাত্মার, প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষ, জীবন্ত অথবা মৃত কারাের প্রতি কিঞ্চিৎমাত্র অবর্ণবাদ, অপরাধ, অবিনয় করার, না করানাের অথবা কর্তাকে অনুমােদন না করার পরম শক্তি দিন। দাদাশ্রী : অবর্ণবাদ অর্থাৎ কোনাে মানুষের বাইরে মান আছে, ইজ্জত আছে, কীর্তি আছে তা তুমি উল্টো বলে ভেঙ্গে দিলে তাকে অবর্ণবাদ বলে। এর সম্পর্কে Page #32 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর উল্টো বলা। প্রশ্নকর্তা : এতে মৃতের কাছেও যে আমি ক্ষমা চাইছি, সম্বোধন করছি তা ওদের কাছে পৌঁছায় কি ? ২৩ দাদাশ্রী : ওদের কাছে পৌঁছানোর জন্যে নয়। যে মানুষ মারা গেছে এখন তার নাম নিয়ে গালি দাও তো তুমি ভয়ঙ্কর দোষ করবে ; এতে এটাই বলতে চাইছি। এইজন্যে আমি বারণ করছি যে মৃতেরও নাম দেবে না (খারাপ কিছু বলবে না)। নয়তো পৌঁছাচ্ছে কি পৌঁছাচ্ছে না তার জন্যে নয়। খুব খারাপ মানুষ যে সব কিছুই খারাপ কাজ করে মরে গেছে, তবুও পরে আর এর সম্পর্কে খারাপ বলবে না । রাবনের সম্পর্কেও খারাপ বলতে নেই কারণ উনি এখন দেহধারীরূপে (অন্য জন্মে) আছেন। সেইজন্য ওর ‘ফোন’ পৌঁছে যায়। ‘রাবন এরকম ছিল আর ওরকম ছিল' বললে তা পৌঁছে যায় তার কাছে। তোমার কোনো আত্মীয় মারা গেছে আর লোকেরা তার নিন্দা করছে তো তুমি এতে সায় দেবে না। সায় দিলে পরে অনুশোচনা করবে যে এমন বলা উচিৎ হয়নি। কোনো মৃত মানুষের সম্পর্কে কিছু বলা ভয়ঙ্কর দোষ, যে মরে গেছে তাকেও আমাদের লোকেরা ছেড়ে দেয় না। লোকে এরকম করে কি করে না ? আমি এটাই বলতে চাইছি যে এমন করবে না ; এতে খুব বড় বিপদ আছে। সেই সময় আগের বেঁধে নেওয়া অভিপ্রায় থেকে বলা হয়ে যায় ; তো এই কলম যদি বলতে থাকো তো কিছু বলা হয়ে গেলেও তার দোষ হবে না। হুঁকো খেতে থাকে আর বলতে থাকে যে, ‘খেতে হয় না, খাওয়াতে হয় না, আর কর্তার (যে খাচ্ছে) প্রতি অনুমোদন না করার শক্তি দিন' তো এতে সব চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যায় ; নয়তো পুদ্‌গলের স্বভাবই ডিগবাজি খাওয়ার। সেইজন্যে এই ভাবনা ভাবা উচিৎ। ; Page #33 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ২৪ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর জগৎ - কল্যাণ করার শক্তি দিন প্রশ্নকর্তা : ৯. হে দাদা ভগবান । আমাকে জগৎকল্যাণ করার নিমিত্ত হওয়ার পরম শক্তি দিন, শক্তি দিন, শক্তি দিন। আমি এই কল্যাণের ভাবনা করলে তা। কিভাবে কাজ করবে ? দাদাশ্রী : তােমার শব্দ এমন নির্গত হবে যে অন্য ব্যক্তির কাজ হয়ে যাবে । প্রশ্নকর্তা : আপনি পুগলের না কি ‘রিয়েল’-এর (আত্মার) কল্যাণের কথা বলছেন ? দাদাশ্রী : পুল নয়, তােমাকে তাে যা ‘রিয়েল’-এর দিকে নিয়ে যাবে তারই আবশ্যকতা আছে। ফের ‘রিয়েল’-এর সাহায্যে আগের (মােক্ষ পৰ্য্যন্ত ) কাজ হয়ে যাবে। এই রিয়েল’কে যদি পাও তাে “রিলেটিভ’কে পাবেই। সমস্ত জগতের কল্যাণ হােক - এরকম ভাবনা করবে। এ শুধু বলার জন্যে বলবে না ; ভাবনা করবে। এ তাে লােকেরা শুধু বলার জন্যেই বলে , যেমন শ্লোক বলে তেমনি । | প্রশ্নকর্তা : বিনা কাজে শুধুই বসে থাকার চেয়ে এই ভাবনা ভাবলে তাকে ভালাে। বলে তাে ? দাদাশ্রী : খুব ভালাে । খারাপ ভাব তাে নষ্ট হয়ে যায়। এতে যেটুকু হলাে। সেটুকুই ঠিক ; সেটুকু তাে উপার্জন হলাে ! প্রশ্নকর্তা : এই ভাবনাকে কি মেকানিকাল ভাবনা বলা যায় ? দাদাশ্রী : না, মেকানিকাল কিভাবে বলবে ? মেকানিকাল তাে যখন বেশি বেশি করে বলেই যাচ্ছে অথচ নিজের খেয়ালে নেই যে কি বলছে তখন তাকে বলে ! Page #34 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর এতে করার কিছু নেই ! প্রশ্নকর্তা : এতে লিখেছে যে, ‘আমাকে শক্তি দিন, শক্তি দিন’ তাে এটা পড়লে আমি কি শক্তি পাবাে ? দাদাশ্রী : নিশ্চয়ই ! এ ‘জ্ঞানী পুরুষ’-এর শব্দ !! প্রধানমন্ত্রীর চিঠি আর এখানকার এক ব্যবসায়ীর চিঠিতে পার্থক্য নেই ?! কেন, তুমি বলাে নি কি ? হ্যাঁ , অর্থাৎ এ ‘জ্ঞানী পুরুষ’-এর কথা। এতে বুদ্ধি খাটালে মানুষ পাগল হয়ে যাবে । এতাে বুদ্ধির থেকে উপরের বস্তু । | প্রশ্নকর্তা : কিন্তু আচরণে আনার জন্যে এতে লেখা হয়েছে, এরকম করতে হবে। তাে ? | দাদাশ্রী : না , এ শুধু পড়ার। আচরণে নিজে থেকেই এসে যাবে। সেইজন্য এই বই (নয় কলমের) তােমার সাথেই রাখবে আর রােজ পড়বে। এর মধ্যের সমস্ত জ্ঞান। তােমার এসে যাবে। রােজ পড়তে পড়তে এর প্র্যাক্টিস হয়ে যাবে। সেইরূপ হয়ে যাবে। আজকে তােমার জানা নেই যে এতে তােমার কি লাভ হলাে ! কিন্তু ধীরে ধীরে তুমি ‘যথার্থ’ অর্থ বুঝে যাবে। এই শক্তি চাওয়াতে এর ফল পরে আচরণে চলে আসবে। সেইজন্যে তুমি ‘দাদা ভগবান’-এর কাছে শক্তি চাইবে। যা চাইবে তাই পাবে ! তাই এটা চাইলে কি হবে ? প্রশ্নকর্তা : শক্তি পাবে। দাদাশ্রী : হ্যা, এটা পালন করার শক্তি এলে তার পরে পালন করতে পারবে। এ এমনি এমনি পালন করতে পারবে না। সেইজন্যে তােমাকে বার বার শক্তি চাইতে হবে। অন্য কিছু করার নেই। যা লেখা আছে তা সাথে সাথেই হয়ে যাবে এমন নয় আর হওয়া সম্ভবও নয়। যেটুকু তােমার দ্বারা হবে সেটুকু তুমি জানবে যে এটুকু হলাে আর এটুকু হলাে না। তার জন্যে ক্ষমা চাইবে আর সাথে সাথে শক্তিও চাইবে তাহলে। Page #35 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর শক্তি পাবে। শক্তি চেয়ে কার্য সিদ্ধ করাে ! | এক ভাইকে আমি বললাম যে, এই নয় কলমে সবকিছু সমাবিষ্ট হয়েছে। এতে। কিছু বাদ যায় নি। তুমি এই নয় কলম রােজ পড়বে ! পরে সে বললাে যে, কিন্তু এ সম্ভব হবে না। আমি বললাম, “আরে, আমি কিছু করতে বলি নি। হবে না এরকম কেন বলছাে ? তুমি তাে শুধু এটুকুই বলবে যে, ‘হে দাদা ভগবান, আমাকে শক্তি। দিন। শক্তি চাইতে বলেছি। তখন সে বললাে যে, ‘এ তাে মজার কাজ ! লােকে তাে (সংসারে) করতেই শেখায় ! তারপর সে আমাকে বললাে, “এই শক্তি কে দেয় ? আমি বললাম ‘শক্তি আমি দিই। তুমি যা চাইবে আমি সে শক্তি দেওয়ার জন্যে তৈরী। তুমি নিজে চাইতে জানাে না তাই আমাকে শেখাতে হচ্ছে যে এইভাবে শক্তি চাও। শেখাতে হচ্ছে না কি? তখন সে বুঝতে পারলাে , পরে বললাে যে এটুকু তাে করতে পারবাে , এতেই সব সমাবিষ্ট হয়ে গেছে ! এ তােমার করার নয়, তুমি কিছু করবে না। একান্তে বসে অন্যদিনের চেয়ে দুটো রুটি বেশি খাও কিন্তু এই শক্তি চাইতে থাকো। তাতে আমাকে বললাে, এ কথা আমার পছন্দ হয়েছে।” প্রশ্নকর্তা : প্রথমে তাে এই শঙ্কা হয় যে শক্তি চাইলে পাবাে কি পাবাে না ? দাদাশ্রী : এই শঙ্কা তাে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন এই শক্তি চাইছাে তাে ? তােমার মধ্যে এই শক্তি উৎপন্ন হওয়ার পরে এই শক্তিই কাজ করাবে। তােমার করার কিছু নেই। তুমি করলে অহংকার বেড়ে যাবে। আমি করতে যাচ্ছি কিন্তু হচ্ছে না, এরকম হয়ে যাবে। সেইজন্যে আগে শক্তি চাও। প্রশ্নকর্তা : এই নয় কলমে আমি শক্তি চাইছি যে এরকম করবাে না, করাবাে না, Page #36 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর আর অনুমােদন করবাে না। তাে এর অর্থ এই কি যে, ভবিষ্যতে এরকম যেন না হয় তার জন্যে আমি শক্তি চাইছি অথবা পূর্বের করা দোষ ধুয়ে যাবে তার জন্যে শক্তি চাইছি। কিসের জন্যে এটা ? | দাদাশ্রী : আগেরটা ধুয়ে যাবে আর শক্তি উৎপন্ন হবে। শক্তি তাে আছেই কিন্তু তা (পূর্বের দোষ) ধুয়ে গেলে ব্যক্ত হবে। শক্তি তাে আছেই কিন্তু তা ব্যক্ত হওয়া চাই। সেইজন্যে দাদা ভগবানের কৃপা চাইছাে যে, এ তােমার ধুয়ে যায় তাে শক্তি ব্যক্ত হবে। প্রশ্নকর্তা : এই সব পড়ার পরে মনে হচ্ছে যে এতাে অত্যন্ত গভীর, শক্তিশালী কথা। সাধারন মানুষও যদি বুঝে যায় তাে তার সমস্ত জীবন সুখময় হয়ে যাবে । | দাদাশ্রী : হ্যা, নইলে বােঝার উপযুক্ত কথা তাে আজ অবধিও পায় নি। এই । প্রথমবার শুদ্ধ বােঝার উপযুক্ত কথা পেয়েছে। এখন এটা পাওয়াতে সমাধান আসবে ।। | এই নয় কলমে যা আছে তা তুমি আপনা থেকে যেটুকু পালন করতে পারলে। তা করবে । কিন্তু পালন করতে না পারলে মনে কোনাে খেদ রাখবে না। তােমার শুধুমাত্র এটুকুই বলার যে আমাকে শক্তি দিন। তাে শক্তি জমা হতে থাকবে। পরে কাজ আপনা থেকেই হতে থাকবে। শক্তি চাইছাে সেইজন্যে সমস্ত নয় কলম-ই সেট হয়ে যাবে ! সেইজন্যে শুধু যদি বলাে তাহলেও অনেক হয়ে গেলাে। বলছাে , মানে। শক্তি চাইছাে আর তাই শক্তি পাচ্ছাে । ‘ভাবনা থেকে ভাবশুদ্ধি প্রশ্নকর্তা : আপনি তাে বললেন যে হুঁকো খাও কিন্তু ভিতরে বলতে থাকো যে খাওয়া উচিৎ নয় , খাওয়ানাে উচিৎ নয় আর যে খাচ্ছে তাকে অনুমােদন করাও উচিৎ নয় . . . দাদাশ্রী : হ্যা, এর অর্থ এটাই যে, এতে তােমার সম্মতি নেই। এটুকুই বলতে চাইছি। অর্থাৎ এর থেকে তুমি আলাদা , আর হুঁকো খাওয়া যদি আপনা থেকে বন্ধ। Page #37 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর হয়ে যায় তাে ভালাে। কিন্তু এখন তুমি এতে সেঁটে নেই , ও তােমাতে সেঁটে আছে। এটাই বলতে চাইছি যে ওর সময় পুরাে হলে ও চলে যাবে। একদিকে হুঁকো খেতে থাকো আর অন্যদিকে এই ভাবনা ভাবতে থাকো। তাে (আস্তে আস্তে) খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আর এই ভাবনা শুরু হয়ে গেছে । যেখানে লােকে বলে যে, ‘এসাে সাহেব, এসাে সাহেব, কিন্তু মনে ভাবে যে, এখন কোত্থেকে এসে হাজির হলাে ? সেখানে তুমি কি বলছাে ? হুঁকো খাচ্ছ কিন্তু ভাবছ যে এরকম করা উচিৎ নয়। সেইজন্যে তুমি এর বিরুদ্ধে বলছাে। বাইরে বলছে যে, ‘এসাে, বসাে, কিন্তু ভিতরে হচ্ছে , কোত্থেকে এলাে ? তাতে এ ভালােটাকে খারাপ করছে। আর তুমি খারাপকে শােধরাচ্ছ । প্রশ্নকর্তা : সমস্ত ‘অক্রম বিজ্ঞান’-এর আশ্চৰ্য্য এই যে বাইরে খারাপ হয়ে আছে। আর ভিতরে শােধরাচ্ছে । দাদাশ্রী : হ্যা, সেইজন্যেই নিজের সন্তোষ থাকে তাে ? যাই হােক, এ খারাপ হয়ে গেছে তাে খারাপই কিন্তু নতুন ঘান (কড়াইতে একবারে ভেজে তােলা বস্তু) তাে ভালাে হবে। একবার ঘান খারাপ হয়ে গেলাে তাে তা গেলাে কিন্তু নতুন তাে ভালাে। হবে ? তাতে লােকেরা বলে, “এই ঘানকেই শােধরাতে হবে। আরে, ছেড়ে দাও না ; যেতে দাও এখান থেকে। নতুনটাও খারাপ হয়ে যাবে। ঘান-ও গেলাে আর তেল-ও গেলাে। প্রশ্নকর্তা : আজকে যা খারাপ তার দায় তাে আমার নয় কারণ এ তাে আগের জন্মের পরিণাম। দাদাশ্রী : হঁ্যা, আজকে তুমি এর জন্যে দায়ী নও। এখন এর দায়িত্ব অন্যের হাতে। তােমার হাতে দায়িত্ব নেই। এর তাে পরিবর্তন হবে না আর অকারণে হায় হায় কেন করছাে ?! কিন্তু ওখানে তাে ফের গুরু মহারাজ-ও বলেন যে, “এরকম যদি না হয় তাে তােমাকে এখানে আসতেই দেব না। তখন ও বলে যে, ‘সাহেব, আমাকে তাে অনেক কিছু করতে হবে কিন্তু হচ্ছে না, তার কি করবাে ? অর্থাৎ বুঝতে না-পারার। Page #38 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর কারণে এই আরােপ-প্রত্যারােপ চলছে । প্রশ্নকর্তা : এ তাে প্রকৃতিকে একেবারে উল্টো-পাল্টা করে দেয় আর তাতে এর ভিতরে খুব সাফোকেশন হতে থাকে । | দাদাশ্রী : আরে, এতদূর পর্যন্ত হয় যে পাঁচ-পাঁচ দিন কিছুই খায় না। আরে, দোষ কার আর কাকে মারছে ? পেটকে কেন মারছাে ?! দোষ মনের আর মারছে পেটকে। বলে, তুমি খাবে না। তাে এতে দেহ বেচারা কি করবে ?! বেচারার শক্তি চলে যাবে। যদি ও খায় তাে অন্য কিছু কাজ করতে পারবে। সেইজন্যে আমাদের লােকেরা বলে যে, “মােষের দোষের দন্ড ভিস্তীকে কেন দিচ্ছ ? দোষ মােষের (মনের) , এই ভিস্তী (দেহ) বেচারার কি দোষ ?! বাইরে ঝাড়াঝাড়ি করে লাভ কি ? যা তােমার সত্ত্বাতে নেই তার জন্য অনর্থক চেঁচামেচি করার মানে কি ? কিন্তু ভিতরের সমস্ত ময়লা জ্বালাতে হয় , ভিতরের সব কিছু ধুয়ে ফেলতে হয়। এ তাে বাইরেটা পােয় ; গঙ্গাতে গিয়ে দেহকেই বারবার। ডােবাতে থাকে। আরে, দেহকে ডুবিয়ে কি সিদ্ধ হবে ?! মনকে ভােবাও না ! মনকে, বুদ্ধিকে, চিত্তকে, অহংকারকে - এই পুরাে অন্তঃকরণকে ডােবাতে হবে। এ তাে কোনােদিন সাবানও দেয় নি ; তাে এ নষ্ট হবে কি হবে না ? যতদিন ছােট থাকে ততদিন ভাল থাকে। পরে দিন-প্রতিদিন ময়লা জমা হতে থাকে আর নষ্ট হতে থাকে। সেইজন্যে আমি বলেছি যে তােমার আচার-ব্যবহার (এখানে) রাখতে থাকো আর এই নয় কলম নিতে থাকো। এ সবই মিথ্যে , তাকে বাইরে রাখতে থাকো আর এই নয় কলমের ভাবনা ভাবতে থাকো, তাহলে আগামী জন্ম ভালাে হয়ে যাবে । | প্রশ্নকর্তা : এই ‘জ্ঞান’ যারা নেয় নি সেই সব লােকেরাও কি এইভাবে আচার । বদলাতে পারে ? দাদাশ্রী : হঁ্যা, সবাই করতে পারে। সবার-ই এটা বলার অনুমতি আছে। Page #39 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ৩০ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর প্রশ্নকর্তা : খারাপ কিছু করে ফেললে তা ধুয়ে ফেলার জন্যে এই কলম তাে খুব শক্তিশালী উপায় রয়েছে । দাদাশ্রী : এ তাে খুব বড় পুরুষার্থ । আমি তাে খুব বড় বিজ্ঞান এর মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছি। কিন্তু এখন লােকেদের বুঝতে হবে তাে। সেইজন্যে এটা অনিবার্য করে দিয়েছি যে এটুকু তােমাকে করতে হবে। বুঝতে যদি নাও পারাে তবু এটা তাে (নয় কলমরূপী ওষুধ) খেয়ে নাও ! প্রশ্নকর্তা : ভিতরের রােগ সেরে যায়। দাদাশ্রী : হঁ্যা, সেরে যায়। দাদা বলেছেন যে “পড়াে’ তাই শুধুমাত্র পড়বে , তাহলেই অনেক হলাে। এ তাে হজম করার জন্যে নয়। এ তাে পুরিয়া গুলে খেয়ে নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলার জন্যে ! প্রশ্নকর্তা : এটা কি ঠিক যে ভাব করলে যােগ্যতা বাড়ে ? | দাদাশ্রী : ভাব-ই যথার্থ পুরুষার্থ। আর অন্য সব অকাজের কথা। কর্তাপদ তাে বন্ধনপদ, আর এই ভাব তাে মুক্ত করার পদ। এটা করাে, ওটা করাে, সেটা করাে’ - এতে লােকেরা বন্ধনে বেঁধে যায় ! ভাবনা ফল দেয় পরের জন্মে ! প্রশ্নকর্তা : যখন এমন ব্যবহার হয়ে যায় যে আমি কারাের অহংকারকে দুঃখ দিলাম তাে সেইসময় এই কলম বলতে পারি কি যে কারাের অহংকারকে যেন দুঃখ না দিই .... ? দাদাশ্রী : তখন তাে তুমি ‘চন্দুভাই’-কে বলবে যে, ‘ভাই, প্রতিক্ৰমণ করাে, এর দুঃখ হয়েছে তাকে মুছে দাও। যেখানে কারাের অহংকার আঘাত পেয়েছে এমন লক্ষণ খুব বেশী নেই সেখানে আর অন্য ছােটো ছােটো প্রসঙ্গে তাে কোনাে ঝঞ্চাট করার Page #40 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর দরকার নেই। আর অল্প দুঃখ দেওয়া হয়ে গেছে এমন অবস্থায় তাে ‘চন্দুভাই’-কে দিয়ে প্রতিক্ৰমণ করাবে ।। | এ তাে ভাবনাই ভাবতে হবে। এখনও তাে একজন্ম বাকী আছে না, তখন এই ভাবনা ফল দেবে। তখন হয়তাে তুমি এই ভাবনার মূর্ত প্রকাশ-ই হয়ে যাবে। যেরকম ভাবনা লেখা আছে সেরকমই ব্যবহার হবে কিন্তু তা সামনের জন্মে ! এখন বীজ বােনা হলাে তাে তুমি যদি আমাকে বলাে যে, ‘চলুন, ওকে ভিতর থেকে খুঁড়ে বার করে। খেয়ে নিই’, তাে তা চলবে না। প্রশ্নকর্তা : পরিণাম এই জন্মে নয়, সামনের জন্মে আসবে ? দাদাশ্রী : হঁা, এখনও এক-দুই জন্ম বাকী আছে। সেইজন্য এই বীজ বুনছি। যাতে সামনের জন্মে ক্লীয়ার (পরিষ্কার) হয়ে আসে। এ তাে যে (ভালাে) বীজ বুনবে তার জন্যে। প্রশ্নকর্তা : তাে এটা নিরন্তর অর্থাৎ যখন যখন এরকম ব্যবহার হবে তখন ভাবার ? দাদাশ্রী : না, এই ব্যবহার আর এই ভাবনার মধ্যে কোনাে লেনা-দেনা নেই। ব্যবহারের সাথে কিসের লেনা-দেনা ?! ব্যবহার বেচারা তাে নিরাধার ! আর এই ভাবনা তাে আধারযুক্ত বস্তু। এই ভাবনা তাে সাথে যাবে আর ব্যবহার তাে শেষ হয়ে যাবে । প্রশ্নকর্তা : কিন্তু ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাবনা করতে পারি কি ? দাদাশ্রী : না, ব্যবহারের সাথে কোনাে লেনা-দেনা নেই। ভাবনাই সাথে যাবে। ব্যবহার তাে আধারহীন, এ তাে চলে যাবে। যত ভালাে ব্যবহারই হােক না কেন, তাও চলে যাবে। কারণ এই সংযােগ প্রাপ্ত হয়েছিল। আর এই ভাবনা তাে ভাববার জন্যে ; এর সংযােগ জমা হতে এখনও দেরী আছে। Page #41 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর প্রশ্নকর্তা : কিন্তু এই ব্যবহারের জন্যে যে নিজের ভাব বদলাচ্ছে, তখন এই ভাবনা ভেবে নতুন করে ভাব বদলাতে হবে কি ? | দাদাশ্রী : কিন্তু এ কিছু হেল্প করবে না। আগে যতটুকু করেছে তা আজকে সাহায্য করবে। হ্যা, এরকম হতে পারে যে আগে কিছু কিছু করে এসেছে, তাহলেই এ-জন্মে সবকিছুর পরিবর্তন হবে । প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ পূর্বজন্মের ভাব অনুসারেই পরিণামরূপে আজকের ব্যবহার হচ্ছে ? দাদাশ্রী : সেই পরিণামই আসে, অন্য কিছু আসে না। ভাব মানে বীজ আর দ্রব্য মানে পরিণাম। বাজরার একটা দানা বুনলে তার এতােবড়াে শীষ আসে। এই কলম তাে শুধু বলারই জন্যে। রােজ শুধু ভাবনাই করার । এ তাে বীজ বুনতে হবে আর বীজ বােনার পরে যখন ফল আসবে তখন দেখতে পাবে। ততদিন। পৰ্য্যন্ত সার দেবে। এই ব্যবহারে সত্যিই কোনাে পরিবর্তন আনার নেই, কোনাে রকমের নয়। আর এই যে আছে তা পুরানাে যা ছিল তাই। অর্থাৎ এই নয় কলম কি বলছে ? ‘হে দাদা ভগবান , আমাকে শক্তি দিন। আর লােকেরা কি বলছে ? এ তাে পালন করা যায় এরকম নয়। কিন্তু এ করার নয়। আরে, অবুঝের মত কথা বলছাে ! এ জগতে সবাই বলে যে, ‘করাে, করাে, করাে’, আরে , করার কিছু হয়-ই না। জানার-ই আছে। ফের, ‘আমি এরকম করতে চাই না আর (যা হয়ে গেছে। তার জন্যে আমি অনুশােচনা করছি। এমনি করে ‘দাদা ভগবান’-এর কাছে ক্ষমা চাইবে। এখন এই যে করবাে না এরকম বলছাে সেখান থেকেই তােমার অভিপ্রায় আলাদা হয়ে গেল। ফের যদি করাে তাে তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু অভিপ্রায় আলাদা হওয়াতে মুক্তি পেলে ! এ তাে মােক্ষমার্গের রহস্য, তা জগতের দৃষ্টিতে নেই ! প্রশ্নকর্তা : লােকেরা তাে ‘ডিশ্চার্জ’-এ পরিবর্তন চায়, পরিণামকে বদলাতে চায় । Page #42 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর দাদাশ্রী : হঁ্যা, জগৎ এই লক্ষ্যের সন্ধান পায় নি ; এর ভান-ই নেই। আমি এদের অভিপ্রায় থেকে মুক্ত করতে চাইছি। এখন ‘এটা খারাপ’ এরকম অভিপ্রায় তােমার আগে তৈরী হয়ে গেছে। কারণ এটা ভালাে’ এমন অভিপ্রায় ছিল আর তা থেকেই এই সংসার সৃষ্টি হয়েছে। আর এখন ‘এটা খারাপ এই অভিপ্রায় হলাে তাই মুক্ত হলে। এখন এই অভিপ্রায় ফের কোনাে সংযােগে যেন বদলে না যায় ! | এই নয় কলম রােজ যদি বলাে তাে ধীরে ধীরে লােকের সাথে ঝগড়াঝাঁটি দূর হয়ে যাবে কারণ তােমার নিজের ভাব ভেঙ্গে গেছে। এখন ‘রিঅ্যাকশনারি’ যা তাই শুধু আছে। তা ধীরে ধীরে কম হয়ে যাবে । মহাত্মাদের জন্যে , এটা চার্জ কি ডিস্টার্জ ? প্রশ্নকর্তা : ভাব আর ভাবনার মধ্যে পার্থক্য কি ? দাদাশ্রী : এই দুই-ই ‘চন্দুভাই’-এর মধ্যে এসে যায় ! কিন্তু ঠিক বলতে গেলে ভাব আর ভাবনার মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রশ্নকর্তা : ভাবনা পবিত্র হয় কিন্তু ভাব ভালাে-ও হয় আবার খারাপ-ও হয়। দাদাশ্রী : না, ভাবনা পবিত্র হয় এমন নয়। ভাবনা তাে অপবিত্র সম্বন্ধেও বলা হয়। কারাের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ভাবনাও হতে পারে আবার কারাের বাড়ি তৈরী করিয়ে দেওয়ার ভাবনাও হতে পারে । অর্থাৎ ভাবনা দু-রকমেরই হতে পারে কিন্তু ভাবকে চার্জ বলে আর ভাবনাকে ডিস্টার্জ বলে। তােমার যে মনে হয় আমার এরকম করার ভাব হচ্ছে, এটা করতে হবে, তাও কিন্তু ভাবনা , এ ভাব নয়। সত্যি কথা বলতে ভাব তাে যখন (কর্ম) চার্জ হচ্ছে তখন তাকে বলে। সেইজন্য ভাবকর্ম থেকে এই জগৎ উৎপন্ন হয়েছে। তুমি কোনাে কাজ করতে না Page #43 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ৩৪ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর পারলেও করার ভাবটা রাখবে। আমাদের এখানে (অক্ৰমমার্গে) তাে ভাবকর্ম (চার্জ)-কে উড়িয়ে দিয়েছি। বাইরের লােকেদের তাে ভাবকর্ম করা উচিৎ । সেইজন্যে শক্তি চাইতে হবে । যার যা শক্তি প্রয়ােজন সেই শক্তি ‘দাদা ভগবান’ এর কাছে চাইতে প্রশ্নকর্তা : বাইরের জগতের লােকেদের এই শক্তি চাইতে হবে, তাে আমাদের মহাত্মারা যে শক্তি চাইছে, ভাবনা করছে তা কিসে যায় ? দাদাশ্রী : মহাত্মারা যা চাইছে তা ডিচার্জে যায় , এ ডিস্টার্জ। কারণ ভাবনা দু’রকমের হয় ; চার্জ এবং ডিস্টার্জ দুই-ই হতে পারে। জগতের লােকেদের ব্যবহারের সময় ভাবনা হয় আর এখানেও তােমাদের ভাবনা হয়। কিন্তু তােমাদের এটা ডিস্টার্জরূপে আর ওদের চার্জ - ডিস্টার্জ দু’ভাবেই ভাবনা হয়। কিন্তু তােমাদের শক্তি চাইলে ক্ষতি কোথায় ? প্রশ্নকর্তা : বাইরের লােকেরা এই নয় কলমের শক্তি চাইলে তাকে ভাব বলে তাে মহাত্মারা শক্তি চাইলে তাকে ভাব বলে না ? দাদাশ্রী : বাইরের লােকেদের জন্যে একে ভাব বলে আর আমার মহাত্মাদের জন্যে এটা ভাবনা। কথাটা ঠিক। আগেরটাকে ভাব বলে আর তা চার্জ করছে। আর এটাকে ডিস্টার্জ বলে , ভাব বলে না ! ভাব , একজাক্ট ডিজাইন অনুসারে ! প্রশ্নকর্তা : এই নয় কলমে যা লেখা হয়েছে, আমার সব সময় সেই রকম-ই ভাবনা আছে, ইচ্ছা আছে, সব আছে, অভিপ্রায়ও আছে । দাদাশ্রী : এমন মনে হয় যে সবসময় এটাই করে আসছি কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এইদিকে ঝোঁক আছে সে কথা ঠিক কিন্তু সেই ঝোক নিশ্চিতরূপে এরকম হওয়া চাই , ডিজাইনপূর্বক হওয়া চাই। ঝোক তাে থাকে, সাধু-সন্ন্যাসীদের বিরক্ত করব না এরকম Page #44 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর ৩৫ ইচ্ছা তাে থাকেই। কিন্তু তা ডিজাইনপূর্বক হওয়া চাই । প্রশ্নকর্তা : ডিজাইনপূর্বক মানে কি ভাবে, দাদাজী ? দাদাশ্রী : এতে যে লেখা হয়েছে সেই অনুসারে একজ্যাক্টনেস্ (সঠিকভাবে)। নয়তাে সাধু-সন্ন্যাসীদের বিরক্ত করব না এমন ইচ্ছা তাে থাকে কিন্তু তবুও বিরক্ত করেই। এর কারণ কি ? তাতে বলা যায়, এর এটা ডিজাইনপূর্বক নয়। এ ডিজাইনপূর্বক হলে হতাে না। প্রশ্নকর্তা : এই যে নয় কলম একে কি বুঝে নিয়ে জীবনে আনতে হবে ? দাদাশ্রী : না, এরকম কিছু বুঝে নিয়ে আনার নেই। আমি এটাই বলতে চাইছি। যে আমি যেরকম বলেছি সেইভাবে শুধু শক্তি চাও। এই শক্তিই তােমাকে একজ্যাক্টনেসে নিয়ে আসবে। তােমার বুঝে নিয়ে কিছু করার নেই। এ হবেও না , মানুষ করতেও পারে না । বুঝে নিয়ে যদি করতে যায় তাে হবে না। কুন্দ্র (প্রকৃতি)-কে সঁপে দিতে হবে। সেইজন্যে, হে দাদা ভগবান, শক্তি দিন। এইভাবে শক্তি চাইলে শক্তি স্বয়ং-ই প্রকট হবে, পরে যথার্থরূপে হবে । এ তাে খুব উঁচু বস্তু । কিন্তু বুঝতে না পারা অবধি এমনিভাবেই চলবে । আমি এরকম কেন বলেছি যে শক্তি চাও, শক্তি দিন ? নিজে ডিজাইন করতে পারে না । মূল ডিজাইন কি ভাবে বানাবে ?! অর্থাৎ (আজ) এ এফেক্ট। শক্তি যে চাওয়া হচ্ছে তা কারণ আর এর এফেক্ট পরে আসবে । সেই এফেক্ট-এ কার মাধ্যমে। আসবে ? দাদা ভগবানের দ্বারা প্রেরিত হয়ে। এফেক্ট ভগবানের থু (মাধ্যমে) আসা চাই। সেইজন্য নয় কলম অনুসারে শক্তি চাইতে থাকলে পরে নিজে থেকেই নয় কলমে থাকবে বহু বছর পর্যন্ত। Page #45 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর জগত-এর সম্বন্ধ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে . . . প্রশ্নকর্তা : এই যে নয় কলম দিয়েছেন তা বিচার, বাণী আর ব্যবহার শুদ্ধ করার জন্যেই দিয়েছেন তাে ? দাদাশ্রী : না, না। অক্ৰমমার্গে এর দরকারই নেই৷ এই নয় কলম তাে অনন্ত জন্ম থেকে সবার সাথে তােমার যে হিসাব বাধা হয়ে গেছে তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে দিয়েছি। তােমার (হিসাবে) বই-খাতা পরিষ্কার করার জন্যে দিয়েছি । সেইজন্যে এই নয় কলম বললে (লােকেদের সাথে বাঁধা) তার খুলে যাবে। লােকেদের সাথে ঋণানুবন্ধের যে তার বাধা হয়ে আছে তা তােমাকে মােক্ষে যেতে দেবে। । সেই তার খােলার জন্যে এই নয় কলম। এ বললে তােমার আজ পর্যন্ত যে দোষ হয়ে গেছে সেই সমস্ত দোষ আগ্লা হয়ে যাবে। আর পরে কিন্তু এর ফল আসবেই। সমস্ত দোষ পুড়ে যাওয়া দড়ির মত হয়ে যায়, তাতে একটু হাত ছোঁয়ালেই তা ঝরে যাবে । প্রশ্নকর্তা : দোষের প্রতিক্ৰমণ করার জন্য আমি এই নয় কলম যদি রােজ বার-বার বলি তাে এতে শক্তি পাওয়া যায় কি ? দাদাশ্রী : তুমি নয় কলম যে বলাে তা আলাদা আর এই দোষেদের প্রতিক্ৰমণ করাে তা আলাদা। যে দোষ হয়ে যাচ্ছে রােজ তার প্রতিক্ৰমণ করবে । অনন্ত জন্ম থেকে লােকেদের সাথে রাগ-দ্বেষের যে হিসাব হয়ে গেছে এই নয় । কলম বললে সেই ঋণানুবন্ধ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এই প্রতিক্ৰমণ তাে খুব বড় মাপের। প্রতিক্ৰমণ। এই নয় কলমের মধ্যে সমস্ত জগতের প্রতিক্ৰমণ এসে যায়। এটা ভালােভাবে করাে। আমি তােমাকে দেখিয়ে দিলাম। এরপরে আমি আমার দেশে (মােক্ষে) চলে যাবাে তাে ! Page #46 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর ৩৭ আজীবন নয় কলম ছিল দাদার ব্যবহারে ! | এটা সত্যি যে এই কালের প্রভাবে লােকেদের ভিতর শক্তি নেই। যতটা শক্তি আছে এতে ততটাই দিয়েছি। এই ভাবনা যে ভাববে সামনের জন্মে সে মানুষ হবে, এই গ্যারান্টী দিচ্ছি । নয়তাে এখন এমন সময় এসেছে যে আশি প্রতিশত পুনরায় মনুষ্য জন্ম পাবে না। | আমার এই নয় কলমে তাে সর্বোত্তম ভাবনা নিহিত আছে। সব কিছুর সম্পূর্ণ সার এতে এসে যায়। এই নয় কলম আমি সমস্ত জীবন ধরে পালন করে আসছি , এই মূলধন তা-ই। অর্থাৎ এ আমার রােজকার জীবনচর্চার জিনিস, তাকে আমি বাইরে ব্যক্ত করেছি ; অসংখ্য লােকের কল্যাণার্থে। কত বছর ধরে, চল্লিশ-চল্লিশ বছর ধরে নিরন্তর এই নয় কলম প্রতিদিন আমার ভিতরে চলছেই , যা সবার জন্যে ব্যক্ত করলাম । প্রশ্নকর্তা : এখন তাে আমি ‘হে দাদা ভগবান, আমাকে শক্তি দিন’, এরকম করে বলছি । তাে আপনি কাকে সম্বােধন করে এই নয় কলম বলতেন ? দাদাশ্রী : ইনি ‘দাদা ভগবান’ নন, তাঁর অন্য নাম আছে। কিন্তু নাম আছেই, তাকেই উদ্দেশ্য করে বলতাম। এঁকে ‘শুদ্ধাত্মা’ বলাে কি যা বলাে তিনি-ই। এনাকে উদ্দেশ্য করেই বলতাম। যদি ক্রমিক মার্গের বড় বড় শাস্ত্র পড়ার বদলে শুধু এই নয় কলম বলে , অনেক হয়ে যায় তাহলে ! নয় কলমে এত বেশী শক্তি ভরে দিয়েছি । এতে তাে আশ্চৰ্য্য শক্তি আছে কিন্তু বুঝতে পারে না তাে। এ তাে আমি বােঝালে তবেই বুঝবে। আর এর মূল্য বুঝেছে কখন বলা যাবে ? যখন আমি এই নয় কলম দিই আর কেউ যদি বলে যে, এ আমার খুব ভালাে লেগেছে, আর এই নয় কলম বােঝার মতই জিনিস, তখন । এই নয় কলম কোনাে শাস্ত্রে নেই। কিন্তু যা আমি পালন করছি আর যা সর্বদা আমার সত্ত্বায় আছে তাই তােমাকে করার জন্যে দিয়েছি। আমি যেভাবে ব্যবহার করি । Page #47 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ভাবনা শুধরায় জন্ম-জন্মান্তর। সেইভাবে এই কলমে লেখা হয়েছে। এই নয় কলম অনুসারেই আমার ব্যবহার হয় কিন্তু তবুও আমাকে ভগবান বলা যায় না। ভগবান তাে যিনি ভিতরে আছেন তিনিই ! নয়তাে কোনাে মানুষ এমন ব্যবহার করতে পারে না। | চৌদ্দ লােকের সার আছে এর মধ্যে। এই যে নয় কলম লেখা হয়েছে এতে। চোদ্দ লােকের সার আছে । পুরাে চোদ্দ লােকের যে দই তা মন্থন করে এই মাখন তুলে এনেছি । সেইজন্যে এরা সবাই এত পূণ্যবান যে (অক্ৰম-মার্গের) লিফটে বসে বসে মােক্ষে যাচ্ছে । হ্যা, ব্যাস শর্ত এইটুকুই যে হাত বাইরে বের করবে না ! এই নয় কলম তাে কোথাও নেই। নয় কলম তাে পূর্ণ পুরুষই লিখতে পারেন। (সাধারণতঃ) উনি তাে থাকেই না ; উনি থাকলে তাে লােকেদের কল্যাণ হয়ে যায় । বীতরাগ বিজ্ঞানের সার ! এই ভাবনা করার সময় কিরকম হওয়া উচিৎ ? পড়ার সময় প্রত্যেকটি শব্দ। চোখের সামনে থাকা দরকার । যদি তুমি পড়ছে’ এরকম ‘দ্যাখাে’ তাহলে তুমি অন্য জায়গায় মগ্ন হবে না । এই ভাবনা ভাবার সময় তুমি অন্যত্র যাবে না । আমি একটি ক্ষণের জন্যেও অন্য জায়গায় যাই না। সেই মার্গে তােমাকেও আসতে হবে তাে? যে জায়গায় আমি আছি সেখানে ! এই ভাবনা ভাবলে পূর্ণ হতে থাকবে । এই ভাবনাটাই করার যােগ্য। | হ্যা, মন-বচন-কায়া একত্র রেখে করার এই ভাবনা কর। এ অবশ্যই করবে। সেইজন্যে এখন তুমি নয় কলম তাে নিশচয়ই করবে। সম্পূর্ণ বীতরাগ বিজ্ঞানের সার এই নয় কলম ! আর প্রতিক্ৰমণ-প্রত্যাখান সব কিছু এর মধ্যে এসে যায়। এইরকম কলম কোথাও বেরােয়নি। যেমন এই ব্রহ্মচর্যের বই বেরােয়নি, তেমনি এই নয় কলম-ও বেরােয়নি। এই কলম যে পড়বে, এই ভাবনা যে ভাববে তার জগতে কারাের সাথে শত্রতা থাকবে না , সবার সাথে মৈত্রী থাকবে। এই নয় কলম তাে সমস্ত শাস্ত্রের সার। জয় সচ্চিদানন্দ Page #48 -------------------------------------------------------------------------- ________________ শুদ্ধাত্মার প্রতি প্রার্থনা | (প্রতিদিন একবার বলতে হবে) হে অন্তর্যামী পরমাত্মা ! আপনি প্রত্যেক জীবের অন্তরে বিরাজমান, তেমনি আমার অন্তরেও বিরাজমান। আপনার স্বরূপ-ই আমার স্বরূপ। আমার স্বরূপ শুদ্ধাত্মা। | হে শুদ্ধাত্মা ভগবান ! আমি আপনাকে অভেদভাবে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি ।। অজ্ঞানতাবশতঃ আমি যে যে ** দোষ করেছি , সেই সমস্ত দোষ আপনার সম্মুখে স্বীকার করছি । হৃদয়পূর্বক তার অনেক পশ্চাতাপ করছি এবং আপনার কাছে। ক্ষমা প্রার্থনা করছি । হে প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন এবং পুনরায় এমন দোষ না করি , আপনি আমাকে এমন শক্তি দিন, শক্তি দিন, শক্তি দিন । | হে শুদ্ধাত্মা ভগবান ! আপনি এই কৃপা করুন যাতে আমার ভেদভাব দূর হয় এবং অভেদ স্বরূপ প্রাপ্তি হয়। আমি আপনার সাথে অভেদ স্বরূপে তন্ময়াকার হয়ে থাকি । ** যা যা দোষ হয়েছে , তা মনে মনে বলতে হবে । প্রতিক্ৰমণ বিধি প্রত্যক্ষ দাদা ভগবানকে সাক্ষী রেখে, দেহধারী (যার প্রতি দোষ হয়েছে সেই ব্যক্তির নাম) - এর মন-বচন-কায়ার যােগে, ভাবকর্ম-দ্রব্যকর্ম-নােকর্ম থেকে ভিন্ন এমন হে শুদ্ধাত্মা ভগবান আপনাকে সাক্ষী রেখে আজকের দিন পর্যন্ত আমার যা যা ** দোষ হয়েছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি । হৃদয়পূর্বক অনেক পশ্চাতাপ করছি । আমাকে ক্ষমা করুন। আর পুনরায় এমন দোষ কখনও করব না , এরকম দৃঢ় নিশ্চয় করছি । আমাকে এর জন্য শক্তি দিন , শক্তি দিন , শক্তি দিন। ** ক্রোধ-মান-মায়া-লােভ, বিষয়-বিকার, কষায় ইত্যাদি দ্বারা কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকলে সেই সব দোষ মনে করতে হবে । Page #49 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রকাশিত হিন্দী পুস্তকসমূহ ২৪. অহিংসা ২৫. প্রতিক্রমণ (সংক্ষিপ্ত) ১. জ্ঞানী পুরুষ কি পহেচান ২. সর্ব দুঃখোঁ সে মুক্তি ৩. কর্ম কে সিদ্ধান্ত ৪. আত্মবোধ ৫. অন্তঃকরণ কা স্বরূপ ৬. জগৎকর্তা কৌন ? ৭. ভুগতে উসী কি ভুল ৮. অ্যাডজাস্ট এভরিহোয়্যার ৯. টকরাও টালিয়ে ১০. হুয়া সো ন্যায় ১১. চিন্তা ১২. ক্রোধ ১৩. ম্যাঁয় কৌন হুঁ ? ১৪. বর্তমান তীর্থঙ্কর শ্রী সীমন্ধর স্বামী ১৫. মানব ধর্ম ১৬. সেবা-পরোপকার ১৭. ত্রিমন্ত্র ১৮. ভাবনা সে সুধরে জন্মেজন্ম ১৯. দান ২০. মৃত্যু সময়, পহেলে ঔর পশ্চাৎ ২১. দাদা ভগবান কৌন ? ২২. সত্য-অসত্য কে রহস্য ২৩. প্রেম ২৬. পাপ-পুণ্য ২৭. কর্ম কা বিজ্ঞান ২৮. চমৎকার ২৯. বাণী, ব্যবহার মে... ৩০. প্যয়সোঁ কা ব্যবহার (সংক্ষিপ্ত) ৩১. পতি-পত্নী কা দিব্য ব্যবহার (সং) ৩২. মাতা-পিতা ঔর বচ্চোঁ কা ব্যবহার (সং) ৩৩. সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (সং) ৩৪. নিজদোষ দর্শন সে. . . নির্দোষ ৩৫. ক্লেশ রহিত জীবন ৩৬, গুরু-শিষ্য ৩৭. আপ্তবাণী - ১ ৩৮. আপ্তবাণী - ২ ৩৯. আপ্তবাণী - ৩ ৪০. আপ্তবাণী - 8 ৪১. আপ্তবাণী - ৫ ৪২. আপ্তবাণী - ৬ ৪৩. আপ্তবাণী - 9 ৪৪. আপ্তবাণী - ৮ ৪৫. সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (উত্তরাধ) * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা গুজরাতী ভাষাতেও অনেক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। এই সমস্ত পুস্তক ওয়েবসাইট www.dadabhagwan.org - তেও উপলব্ধ । * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা “দাদাবাণী”” পত্রিকা হিন্দী, গুজরাতী ও ইংরাজী ভাষায় প্রতিমাসে প্রকাশিত হয়। প্রাপ্তিস্থান : ত্রি-মন্দির সঙ্কুল, সীমন্ধর সিটী, আহমেদাবাদ - কালোল হাইওয়ে, পোস্ট : অডালজ, জিলা : গান্ধীনগর, গুজরাত - 382421 ফোন : (079) 39830100, E-mail : info@dadabhagwan.org Page #50 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সার , সমস্ত শাস্ত্রের ! ক্রমিক মার্গের এত বড় শাস্ত্র পড়াে আর নয়তাে শুধু এই নয় কলম বলাে , তাহলেও অনেক হয়ে যায় / নয় কলমে অদ্ভুত শক্তি আছে ! এই নয় কলম শাস্ত্রে নেই কিন্তু আমি যা পালন করি আর যা সর্বদা আমার সত্ত্বাতেই আছে তা তােমাদের করার জন্যে দিয়েছি। সেইজন্যে তুমি এই নয়। কলম তাে অবশ্যই করবে / সমস্ত বীতরাগ বিজ্ঞানের সার এই নয় কলম ! দাদাশ্রী | ISBN 81-71--? 9789387551152/ रलदीपकप्रक Printed in India dadabhagwan.org Price 20