Page #1
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান প্ররূপিত
| যা হয়েছে তাই ন্যায়।
Bengali
প্রকৃতির যে ন্যায় , তাতে একটি ক্ষণের জন্যেও আন্যায় হয়নি।
Page #2
--------------------------------------------------------------------------
________________
@@@!9Jy999/'/.t99&t/fft_
J
/9&fe't/t9/f9JJJJfteftJJJJ599f9fte't &&&f///////t9/09/t9yt9XtWJ8Jtfff8/9/29/09/twit/f//t9/14
ការចងក កាកបាយ ។
সংকলন : ডাঃ নীরুবেন অমিন।
যা হয়েছে তাই ন্যায়
দাদা ভগবান প্ররূপিত
យប់មី Ann En បាន
UUUUUUUUUUUUUUUUUUUEREFUTURELUTHUTUUUUUU
9িc3df0ftJjc4cdcfjrJU3dcjdJU8cScgjc4dcj9JcJjjqGodfajjaddfjgJjjqgcg0j9Jjcdcjq9qJjjjjjjjjjjjjjc
Page #3
--------------------------------------------------------------------------
________________
প্রকাশক :
কপিরাইট
ভাবমূল্য :
শ্রী অজিত সি. প্যাটেল
দাদা ভগবান আরাধনা ট্রাস্ট দাদা দর্শন, ৫, মমতাপার্ক সোসাইটি, নবগুজরাট কলেজের পিছনে উসমানপুরা, আহমেদাবাদ – ৩৮০০১৪ ফোন : (০৭৯) ৩৯৮৩০১০০
E-mail : info@dadabhagwan.org
ফোন :
: All Rights reserved - Deepakbhai Desai Trimandir, Simandhar City,
Ahmedabad-Kalol Highway,
Adalaj, Dist: Gandhinagar - 382421, Gujarat, India.
No part of this book may be used or reproduced in any manner whatsoever without written permission from the holder of this copyrights.
‘পরম বিনয়’ আর
‘আমি কিছু জানিনা' এই জাগৃতি
দ্রব্যমূল্য :
প্রথম মুদ্রণ : 1st, November 2018
মুদ্রণ সংখ্যা : ২000
মুদ্রক :
১ টাকা
বি-৯৯, ইলেকট্রনিক্স জি.আই.ডি.সি. কে ৬ রোড, সেক্টর ২৫, গান্ধীনগর – ৩৮২০৪৪
E-mail : info@ambaoffset.com
(০৭৯) ৩৯৮৩০৩৪১ / ৪২
Page #4
--------------------------------------------------------------------------
________________
ত্রি-মন্ত্র
নমাে অরিহন্তানম্ নমাে সিদ্ধান নমাে আয়রিয়ানম নমাে উবজ্জায়ান নমাে লােয়ে সব্বসাহুন এ্যায়সে পঞ্চ নমুক্কারাে;
সব্ব পাবগ্নাশনাে মঙ্গলানম চ সব্বেসি;
পঢ়মম্ হবই মঙ্গলম্ ১ ওঁ নমাে ভগবতে বাসুদেবায় ২
ওঁ নমঃ শিবায় ৩ জয় সচ্চিদানন্দ
Page #5
--------------------------------------------------------------------------
________________
দাদা ভগবান কে ?
১৯৫৮ সালের জুন মাসের এক সন্ধ্যায় আনুমানিক ৬টার সময় ভীড়ে ভর্তি সুরত শহরের রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মনম্বর ৩-এর এক বেঞ্চে বসা শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেলরূপী দেহমন্দিরে প্রাকৃতিকভাবে, অক্রমরূপে, বহুজন্ম ধরে ব্যক্ত হওয়ার জন্যে ব্যাকুল দাদা ভগবান পূর্ণরূপে প্রকট হলেন—অধ্যাত্মের এক অদ্ভুত আশ্চৰ্য্য প্রকট হল। অলৌকিকভাবে এক ঘণ্টাতে ওনার বিশ্বদর্শন হল। আমি কে ? ভগবান কে ? জগত কে চালায় ? কর্ম কি ? মুক্তি কি ?' ইত্যাদি জগতের সমস্ত আধ্যাত্মিক প্রশ্নের সমস্ত রহস্য সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হল। এইভাবে প্রকৃতি বিশ্বকে এক অদ্বিতীয় সম্পূর্ণ দর্শন প্রদান করল যার মাধ্যম হলেন গুজরাত-এর চরােতর ক্ষেত্রের ভাদরন গ্রামনিবাসী পাটীদার শ্রীঅম্বালাল মুলজীভাই প্যাটেল যিনি কন্ট্রাকটরি ব্যবসা করেও সম্পূর্ণ বীতরাগী ছিলেন। | ‘ব্যবসা-তে ধর্ম থাকা প্রয়ােজন, কিন্তু ধর্ম-তে ব্যবসা নয়’ এই নীতি অনুসারেই তিনি সম্পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন। জীবনে কখনও উনি কারাের কাছ থেকে অর্থ নেননি, উপরন্তু নিজের উপার্জনের অর্থ থেকে ভক্তদের তীর্থযাত্রায় নিয়ে যেতেন।
| ওনার অদ্ভুত সিদ্ধজ্ঞান প্রয়ােগ দ্বারা ওনার যে রকম প্রাপ্তি হয়েছিল তেমনই অন্য মুমুক্ষুদের-ও তিনি কেবল দু'ঘণ্টাতেই আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করাতেন। একে অক্রম মার্গ বলে। অক্রম অর্থাৎ বিনা ক্রমের আর ক্রম মানে সিঁড়ির পরে সিঁড়ি — ক্রমানুসারে উপরে ওঠা। অক্রম অর্থাৎ লিফট-মার্গ, সংক্ষিপ্ত রাস্তা।
উনি স্বয়ংই ‘দাদাভগবান’কে ? এই রহস্য জানাতেন। উনি বলতেন “যাকে আপনারা দেখছেন তিনি দাদা ভগবান নন। তিনি তাে এ.এম.প্যাটেল ; আমি জ্ঞানী পুরুষ আর আমার ভিতর যিনি প্রকট হয়েছেন তিনিই ‘দাদাভগবান। দাদা ভগবানতাে চৌদ্দ লােকের নাথ। উনি আপনার মধ্যেও আছেন, সবার মধ্যেই আছেন; আপনার মধ্যে অব্যক্তরূপে আছেন, আর আমার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত অবস্থায় আছেন। দাদা ভগবান’কে আমিও নমস্কার করি।”
Page #6
--------------------------------------------------------------------------
________________
সম্পাদকীয়
লক্ষ লক্ষ লোক বদ্রী-কেদারনাথ যাত্রা করলো আর হঠাৎ হিমপাত হয়ে বহু লোক চাপা পড়ে মারা গেলো। এইরকম খবর শুনে সবারই মন দুঃখে ভরে যায় এই ভেবে যে কত ভক্তিভরে লোক ভগবানকে দর্শন করতে যায় আর তাদেরই ভগবান এভাবে মেরে ফেলেন ? এ ভগবানের অত্যন্ত অন্যায় ! দু'ভাইয়ের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি-র সময় একভাই বেশী সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়, অন্যজন কম পায়, সেখানে বুদ্ধি ন্যায় খোঁজে। শেষ পর্যন্ত কোর্টে যায় আর সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত মামলা চলে। পরিণামস্বরূপ আরও বেশী দুঃখী হয়। নিৰ্দোষ ব্যক্তি জেলে যায় আর দোষী ব্যক্তি স্ফূর্তি করে বেড়ায়। তো এতে ন্যায় কোথায় রইলো ? নীতিতে চলা মানুষ দুঃখী হয় আর অ- -নীতিতে চলা লোক বাংলো বানায়, গাড়িতে ঘোরে তো ওখানে ন্যায়স্বরূপ কিভাবে মনে হবে ?
-
এ রকম ঘটনা তো প্রতি পদক্ষেপেই হয়। যেখানে বুদ্ধি ন্যায় খুঁজে বেড়ায় আর দুঃখী-দুঃখী হয়ে যায়! পরমপুজ্য দাদাশ্রীর এ এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক খোঁজ যে এই জগতে কোথাও অন্যায় হয়-ই না। যা হয়েছে, তাই ন্যায় ! প্রকৃতি কখনো ন্যায়ের বাইরে যায়-ই নি। কারণ প্রকৃতি কোন ব্যক্তি বা ভগবান নয় যে তার উপর অন্য কারোর প্রভাব পড়বে! প্রকৃতি মানে সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্সেস। কত কত সংযোগ একত্র হলে তবেই কোন কাজ হয়। এত লোক ছিল, তার মধ্যে কিছু লোক মারা গেল কেন ? যাদের মারা যাওয়ার হিসাব ছিল তারাই মৃত্যু আর দুর্ঘটনার শিকার হল! অ্যান ইন্সিডেন্ট হ্যাজ্ সো মেনি কজেজ, অ্যান এক্সিডেন্ট হ্যাজ টু মেনি কজেজ! হিসাবে প্রাপ্য না হলে একটা মশাও তোমাকে কামড়াতে পারবে না। হিসাব আছে বলেই সাজা পেয়েছে। এইজন্য যে মুক্তি পেতে চায় তাকে এই কথাটা বুঝতে হবে যে তার সাথে যা যা হয়েছে তা ন্যায়ই হয়েছে।
‘যা হয়েছে তাই ন্যায়' এই জ্ঞান জীবনে যত উপযোগে আসবে ততটাই শান্তি থাকবে আর কোনরকম প্রতিকূলতাতেই ভিতরে একটা পরমাণুও নড়বে না ৷
ডাঃ নীরুবেহন অমিন-এর জয় সচ্চিদানন্দ
Page #7
--------------------------------------------------------------------------
________________ দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রকাশিত হিন্দী পুস্তকসমূহ / 9 d 3 0 24. অহিংসা 25. প্রতিক্ৰমণ (সংক্ষিপ্ত) 27. কর্ম কা বিজ্ঞান 28. চমৎকার 29, বাণী, ব্যবহার র্মে, 30. প্যয়সোঁ কা ব্যবহার (সংক্ষিপ্ত) 31. পতি-পত্নী কা দিব্য ব্যবহার (সং) 32. মাতা-পিতা ঔর বচ্চো কা ব্যবহার 1 1. জ্ঞানী পুরুষ কি পহেচান 2. সর্ব দুঃখে সে মুক্তি 3. কর্ম কে সিদ্ধান্ত আত্মবােধ অন্তঃকরণ কা স্বরূপ জগৎকর্তা কৌন ? ভুগতে উসী কি ভুল অ্যাডজাস্ট এভরিহােয়্যার টকরাও টালিয়ে 10. হুয়া সাে ন্যায় 11. চিন্তা 12. ক্রোধ। 13. ম্যাঁয় কৌন হুঁ ? 14. বর্তমান তীর্থঙ্কর শ্রী সীমন্ধর স্বামী 15. মানব ধর্ম 16. সেবা-পরােপকার 17. ত্রিমন্ত্র 18. ভাবনা সে সুধরে জন্মেজন্ম 19. দান। 20. মৃত্যু সময়, পহেলে ঔর পশ্চাৎ 21. দাদা ভগবান কৌন ? 22. সত্য-অসত্য কে রহস্য। 23, প্রেম 33, সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (সং) 34. নিজদোষ দর্শন সে, ... নির্দোষ 35. ক্লেশ রহিত জীবন। 36. গুরু-শিষ্য / 37. আপ্তবাণী - 1 38. আপ্তবাণী - 2 39. আপ্তবাণী - 3 40. আপ্তবাণী - 4 41. আপ্তবাণী - 5 42. আপ্তবাণী - 6 43. আপ্তবাণী - 7 44. আপ্তবাণী - 8 45. সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (উত্তরাধ) * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা গুজরাতী ভাষাতেও অনেক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। এই সমস্ত পুস্তক ওয়েবসাইট www.dadabhagwan.org - তেও উপলব্ধ। * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা ‘“দাদাবাণী” পত্রিকা হিন্দী, গুজরাতী ও ইংরাজী ভাষায় প্রতিমাসে প্রকাশিত হয়। প্রাপ্তিস্থান : ত্রি-মন্দির সঙ্কুল, সীমন্ধর সিটী, আহমেদাবাদ - কালােল হাইওয়ে, পােস্ট : অডালজ, জিলা : গান্ধীনগর, গুজরাত - 382421 ফোন : (079) 39830100, E-mail : info@dadabhagwan.org
Page #8
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
যা হয়েছে তাই ন্যায়
বিশ্বের বিশালতা, শব্দাতীত .... সব শাস্ত্রে যা বর্ণনা করা হয়েছে, জগৎ সেটুকুই নয়। শাস্ত্রে তাে কিছুটা অংশই আছে। বাকী জগৎ তাে অবক্তব্য আর অবর্ণনীয়, যা শব্দতে ধরা যায় এমন নয়। তাহলে শব্দের বাইরে তুমি একে কি করে বলবে ? শব্দতে না ধরা গেলে শব্দের বাইরে তার বর্ণনা কি করে সম্ভব ? জগৎ এত বড়, বিশাল আর আমি একে দেখে বসে আছি। এইজন্যে আমি তােমাকে বলতে পারি এর বিশালতা কত !
প্রকৃতি তাে সবসময় ন্যায়ী-ই হয় প্রকৃতির যে ন্যায় তাতে একটি ক্ষণের জন্যেও অন্যায় হয়নি। এই প্রকৃতি এক মুহূর্তের জন্যেও অন্যায়ী হয় না। কোর্টে অন্যায় হতে পারে কিন্তু প্রকৃতিতে কখনও অন্যায় হয়-ই নি। প্রকৃতির ন্যায় এরকম যে যদি তুমি ভালাে মানুষ হও আর যদি আজকে চুরি করতে যাও তাে তােমাকে প্রথমে ধরিয়ে দেবে, আর খারাপ লােক হলে তাকে প্রথমে এনকারেজ (উৎসাহিত) করবে। প্রকৃতির এরকম হিসাব যে প্রথম জনকে ভালাে রাখার জন্যে তাকে ধরিয়ে দেবে, ওকে হেল্প করবে না। অন্যজনকে হেল্প করতেই থাকবে আর পরে এমন মার মারবে যে ও আর উপরে উঠতে পারবে না। অধােগতিতে যাবে। প্রকৃতি এক মিনিটের জন্যেও অন্যায়ী হয়নি। লােকে আমাকে প্রশ্ন করে আপনার পায়ে যে ফ্র্যাকচার হয়েছে, | সেটা ? এ সমস্ত ন্যায়-ই করেছে প্রকৃতি।
যদি প্রকৃতির ন্যায়কে বােঝাে যে, যা হয়েছে তাই ন্যায়, তাহলে তুমি জগৎ থেকে মুক্ত হতে পারবে কিন্তু যদি তুমি প্রকৃতিকে বিন্দুমাত্রও অন্যায়ী বলে মনে করাে তাহলে তা তােমার জন্যে জগতে সমস্যার কারণ হবে। প্রকৃতিকে ন্যায়ী মনে করা, তাকেই জ্ঞান বলে। যেমনটি তেমন জানা, তা-ই জ্ঞান আর ‘যেমনটি তেমন না জানা, তা-ই অজ্ঞান।
Page #9
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
একজন লােকের বাড়ি আরেকজন পুড়িয়ে দিয়েছে, তাে সেইসময় যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে ভগবান একি ? এর বাড়ি এই ব্যক্তি পুড়িয়ে দিয়েছে। একি ন্যায় হল, না অন্যায় ? তাতে বলেন, 'ন্যায়। পুড়িয়ে দিয়েছে সেটাই ন্যায়। এখন এতে যদি তার মনে অশান্তি হয় আর মনে করে ও খারাপ লােক, ও এরকম, ও সেরকম তাে এই অন্যায়ের ফল সেই ব্যক্তি পরে পাবে। সে ন্যায়-কে অন্যায় বলেছে ! জগৎ সম্পূর্ণ ন্যায়স্বরূপ-ই। এক মুহূর্তের জন্যেও এতে অন্যায় হয় না।
জগতে ন্যায় খোঁজার জন্যেই তাে পৃথিবীতে এত লড়াই ঝগড়া হয়েছে। জগৎ ন্যায়স্বরূপ। সেইজন্যে এই জগতে ন্যায় খুঁজতে যেওনা। যা হল তাই ন্যায়। যা হয়ে গেছে তাই ন্যায়। এই সমস্ত কোর্ট ইত্যাদি তৈরি হয়েছে শুধু ন্যায় খোঁজার জন্যে। আরে ভাই, ন্যায় হয় কি ? এর পরিবর্তে কি হয়েছে তাই দেখাে। সেটাই ন্যায়।
| ন্যায়স্বরূপ আলাদা আর নিজের এই ফলস্বরূপ আলাদা। ন্যায়অন্যায়ের ফল তাে হিসাব মতাে আসে আর আমরা তার সাথে ন্যায় জুড়তে যাই, তাহলে কোর্টে তাে যেতেই হবে! আর সেখানে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ফিরে আসতে হয় ! | তুমি কাউকে একটা গালি দিলে সে তােমাকে দু-তিনটে গালি শুনিয়ে দেবে, কারণ ওর মনে তােমার প্রতি ক্রোধ হয়েছে। তাতে লােকেরা কি বলে ? ও কেন তিনটে গালি দিলাে, এ তাে একটাই গালি দিয়েছে। তাে এর মধ্যে ন্যায় কিভাবে হয় ? ওর তােমাকে তিনটি গালি-ই দেওয়ার ছিল, আগের হিসাব চুকিয়ে দিতে হবে কিনা ?
প্রশ্নকর্তা: হ্যা, চুকিয়ে দেয়।
দাদাশ্রী : পরে উশুল করবে, না কি করবে না ? তুমি ওর বাবাকে টাকা ধার দিয়েছিলে, তাে কখনাে সুযােগ পেলে তা উশুল করে নেবে তাে ? কিন্তু ও মনে করবে যে অন্যায় করেছে। এতে প্রকৃতির ন্যায় কি ? পুরানাে হিসাব যা কিছু থাকে তা একত্র করে দেয়। এখন কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীকে কষ্ট দিচ্ছে তাে সেটা প্রকৃতির ন্যায়। তার স্বামী মনে করে
Page #10
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
স্ত্রী খারাপ আর স্ত্রী মনে করে স্বামী খারাপ। কিন্তু এটা প্রকৃতির ন্যায়ই।
প্রশ্নকর্তা : হ্যা।।
দাদাশ্রী : তুমি যদি অভিযােগ করতে আস তাে আমি অভিযােগ শুনি না, এর কারণ কি ?
প্রশ্নকর্তা : এখন বুঝতে পেরেছি যে এটা ন্যায়-ই।
বােনা-টা খােলে প্রকৃতি
দাদাশ্রী: এ সমস্ত-ই আমার অনুসন্ধান! যে ভুগছে তারই ভুল। দেখাে, কত ভাল অনুসন্ধান! কারাের সাথে সংঘাতে যেও না আর ব্যবহারে ন্যায় খুঁজো না।
| নিয়ম হল যেমনভাবে বােনা হয়েছে, বােনাটা ঠিক সেইভাবেই খুলবে। অন্যায়পূর্বক বােনা হলে তা অন্যায়ভাবেই খুলবে আর ন্যায় দিয়ে বােনা হলে ন্যায়পূর্বক খুলবে। এইরকমভাবেই সমস্ত বােনাটা খুলছে আর লােকে পরে তার মধ্যে ন্যায় খুঁজতে যায়। ভাই, ন্যায় কিরকম চাইছাে, কোর্টের মত ? আরে ভাই, অন্যায়পূর্বক তুমি বুনে রেখেছাে আর এখন ন্যায়পূর্বক সেটা খুলতে চাইছাে, সেটা কিভাবে সম্ভব ? এ তাে নয় দিয়ে গুণ করাকে নয় দিয়ে ভাগ করলে তবেই মূল জায়গায় আসবে। অনেক বুনে রাখা সমস্যা পড়ে রয়েছে। অতএব, যে আমার কথা বুঝতে পেরেছে, সে তার কাজ করে নেবে।
প্রশ্নকর্তা: হ্যা দাদা, এই দু-তিনটে শব্দ ধরে রাখতে পারলে আর জিজ্ঞাসু মানুষ হলে তার কাজ হয়ে যাবে।
দাদাশ্রী : কাজ হয়ে যাবে। দরকারের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান না হলে কাজ হয়ে যাবে।
প্রশ্নকর্তা: ব্যবহারে ‘তুমি ন্যায় খুঁজো না’ আর ‘ভুগছে যে তারই ভুল’, এই দুই সূত্র আমি ধরে রেখেছি।
Page #11
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
দাদাশ্রী : ন্যায় খুঁজো না, এই সূত্রই যদি ধরে রাখে তো তার সব সহজ হয়ে যাবে। এই যে ন্যায় খুঁজে বেড়ায় তার জন্যেই সমস্ত রকমের অশান্তি তৈরি হয়ে যায়।
পুণ্যোদয় হলে খুনীও নির্দোষ বলে মুক্তি পায়
10
প্রশ্নকর্তা : কেউ যদি অন্যকে খুন করে তাহলেও কি তা ন্যায়ই বলবে ?
দাদাশ্রী : ন্যায়ের বাইরে তো কিছু হয় না। ভগবানের ভাষাতে ন্যায়ই বলে। সরকারের ভাষাতে বলে না, এই লোকসংজ্ঞাতে বলে না। লোকসংজ্ঞাতে তো খুনীকেই ধরে নিয়ে আসে, বলে এই দোষী। আর ভগবানের ভাষাতে কি বলে ? ‘যে খুন হয়েছে, সেই দোষী'। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘খুনীর কোন দোষ নেই ?' তখন বলবে, খুনী যখন ধরা পড়বে তখন ওকে দোষী বলে মানা হবে! এখন তো ও ধরা পড়ে নি আর এ ধরা পড়ে গেছে! তুমি বুঝতে পারলে না ?
প্রশ্নকর্তা : কোর্টে কোন মানুষ খুন করেও নির্দোষ বলে মুক্তি পায়। সে কি তার পূর্বকর্মের বদলা নিচ্ছে না কি ওর পুণ্যের কারণে এরকমভাবে মুক্তি পাচ্ছে ? এটা কি ?
দাদাশ্রী : পুণ্য আর পূর্বকর্মের বদলা, ও একই কথা ৷ ওর পুণ্য ছিল তাই মুক্তি পেয়েছে আর কেউ দোষ না করেও ধরা পড়ে, জেলে যেতে হয়। এ তো ওর পাপের উদয় হয়েছে। সেখানে তো কোন উপায়ই নেই।
নয়তো এই যে জগৎ এর কোর্টে হয়তো কখনো অন্যায় হতে পারে কিন্তু প্রকৃতি এই জগতে কখনো অন্যায় করে নি, ন্যায়ই হয় এখানে। প্রকৃতি ন্যায়ের বাইরে কখনো যায়-ই নি। পরে ঝড়-ঝঞ্ঝা একটা এলো কি দুটো এলো, কিন্তু তা ন্যায়ই হয়
প্রশ্নকর্তা : আপনার দৃষ্টিতে বিনাশের যে দৃশ্য দেখা দেয়, তা আমাদের জন্যে শ্রেয়-ই নয় কি ?
Page #12
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
দাদাশ্রী : বিনাশ হতে দেখলে তাকে শ্ৰেয় কি করে বলবাে ? কিন্তু বিনাশ হয়, সেটাও সঠিক নিয়মে হয়। প্রকৃতি বনাশ করে, সেটাও ঠিক, আর প্রকৃতি যার রক্ষণ করে, তাও ঠিক। সমস্ত কিছু রেগুলার করে, অন দি স্টেজ! লােক তাে নিজের স্বার্থের জন্যে চিৎকার চেঁচামেচি করে যে, ‘আমার তুলাে নষ্ট হয়ে গেলাে। কিন্তু ক্ষুদ্র চাষীরা বলে, আমার জন্যে ভালাে হয়েছে। অর্থাৎ লােকে তাে নিজের নিজের স্বার্থই দেখে।
প্রশ্নকর্তা : আপনি বলেন প্রকৃতি ন্যায়ী, তাহলে ভূমিকম্প হয়, তুফান আসে, অতিবৃষ্টি হয়, সে সব কেন ?
দাদাশ্রী : এ সমস্ত কিছু ন্যায়-ই হয়, বৃষ্টি হয়, ফসল পাকে – এসব কিছু ন্যায়-ই হচ্ছে। ভূমিকম্প হয়, তাও ন্যায় হচ্ছে।
প্রশ্নকর্তা: তা কেমন করে ?
দাদাশী: প্রকৃতি তাদেরই ধরে যারা দোষী, অন্যদের নয়। দোষীদেরই শুধু ধরে! এই জগৎ কখনই ডিস্টার্ব হয়নি। এক সেকেণ্ড-এর জন্যেও ন্যায়ের বাইরে কিছু যায় নি।
জগতে চোর আর সাপেদের দরকার
| তাে লােকে আমাকে প্রশ্ন করে যে এই চোরেরা কি করতে এসেছে ? এই সমস্ত পকেটমারদের কি প্রয়ােজন ছিল ? ভগবান কিজন্য এদের জন্ম দিয়েছেন ? আরে, নয়তাে তােমার পকেট কে খালি করবে ? ভগবান নিজে কি আসবেন ? তােমার চুরির পয়সা কে ধরবে ? তােমার হিসাব-বহির্ভূত টাকা থাকলে কে সেটা নিয়ে যাবে ? ও বেচারা তাে নিমিত্তমাত্র। এইজন্য এদের সবার দরকার আছে।
প্রশ্নকর্তা: কারাের কষ্টার্জিত উপার্জনও চলে যায়।
দাদাশ্রী : ও তাে এই জন্মের কষ্টার্জিত উপার্জন, কিন্তু আগের সমস্ত হিসাব আছে না ! হিসাব বাকি আছে সেইজন্যে, নয়তাে কেউ
Page #13
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
কখনাে আমার কিছু নিতে পারবে না। কারাের থেকে নিতে পারে এরকম ক্ষমতাই নেই। আর নিয়ে নিলে তা আমার আগের হিসাব। এই জগতে এমন কেউ জন্মায়নি যে কারাের কিছু করতে পারে। এতটাই নিয়মবদ্ধ এই জগৎ। খুবই নিয়মবদ্ধ এ জগৎ। এই পুরাে ময়দান সাপে ভর্তি, কিন্তু সাপ আমাকে ছুঁতে পারবে না, জগৎ এতটাই নিয়মবদ্ধ। এই জগৎ খুবই হিসাবওয়ালা, এই জগৎ খুবই সুন্দর, ন্যায়স্বরূপ কিন্তু লােকেরা তা বুঝতে পারেনা।
পরিণাম থেকে কারণ বােঝা যায়
এ সমস্ত-ই রেজাল্ট। যেমন পরীক্ষার রেজাল্ট আসে। ম্যাথেমেটিক্সে (গণিত) একশো’র মধ্যে পঁচানব্বই মার্কস এসেছে আর ইংরেজীতে একশাে’র মধ্যে পচিশ। তখন কি আমি বুঝতে পারব না যে এতে কোথায় ভুল করেছি ? এই পরিণাম থেকে, কোন কারণে ভুল হয়েছে তা আমি বুঝতে পারব কিনা ? এই সমস্ত সংযােগ যে একত্রিত হয়, তা সমস্তই পরিণাম। আর ওই পরিণাম থেকে, কারণ কি ছিল তা আমরা বুঝতে পারি।।
| এই রাস্তা দিয়ে অনেক লােকের আনাগােনা আর বাবুল-এর কাঁটা সােজা হয়ে পড়ে আছে। অনেক লােক যাতায়াত করছে কিন্তু কাটা যেমনকার তেমন পড়ে থাকে। এমনি তাে তুমি খালি পায়ে ঘর থেকে বেরােও না কিন্তু সেদিন কারাের কাছে গেছিলে আর শােরগােল হল কি চোর এসেছে, চোর এসেছে তাে তুমি খালি পায়ে দৌড়ালে আর কাঁটা তােমার পায়ে ফুটে গেল। তাে ওটা তােমার হিসাব ছিল। সেটাও এরকম যে একেবারে এ-ফেঁাড় ও-ফেঁাড় হয়ে গেল এরকমভাবে লাগল! এখন এই সংযােগ কে একত্রিত করে দেয় ? ওটা ব্যবস্থিত শক্তি (সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স) একত্রিত করে দেয়।
Page #14
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
সব প্রকৃতির নিয়ম মুম্বই-এর ফোর্ট এরিয়াতে তােমার সােনার চেন লাগানাে ঘড়ি হারিয়ে গেছে আর তুমি ঘরে এসে মনে করছাে যে, ভাই, ওটা আর ফিরে পাবনা। কিন্তু দু’দিন পরে পেপারে পড়লে যে যার ঘড়ি সে প্রমাণ দিয়ে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাক আর বিজ্ঞাপনের খরচ দিয়ে যাক। অর্থাৎ যার হয় তার থেকে কেউ নিতে পারে না। যার নেই, সে ফিরে পাবে না। এক পারসেন্ট-ও অদল-বদল কেউ করতে পারবে না। এতটাই নিয়মবদ্ধ এই জগৎ। কোর্ট যেমনই হােক কিন্তু তা কলিযুগের আধারে হবে। কিন্তু প্রকৃতি নিয়মের অধীন। কোর্টের নিয়ম ভাঙলে কোর্টের কাছে। দোষী হবে কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম কখনও ভাঙবে না।।
এ তাে নিজেরই প্রােজেকশান
এ সমস্ত প্রােজেকশান তােমার নিজেরই। লােককে কেন দোষ দিচ্ছাে ?
প্রশ্নকর্তা: ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া কি এটা ?
দাদাশী: একে প্রতিক্রিয়া বলে না। কিন্তু এই সমস্ত প্রােজেকশান তােমারই। প্রতিক্রিয়া বললে তাে ‘অ্যাকশন এণ্ড রি-অ্যাকশান আর ইকোয়াল এণ্ড অপােজিট হবে।
| এতাে দৃষ্টান্ত দিচ্ছি, সিমিলি দিচ্ছি। তােমারই প্রােজেকশান এসব। অন্য কারাের হাত এতে নেই। সেইজন্যে তােমাকে সাবধান থাকতে হবে যে এর সমস্ত দায়িত্ব আমার উপর। দায়িত্ব বুঝতে পারলে ঘরে ব্যবহার | কিরকম হওয়া উচিৎ ?
প্রশ্নকর্তা : ওইরকম ব্যবহার হওয়া উচিৎ।
দাদাশ্রী : হ্যা, নিজের দায়িত্ব বােঝে। নয়তাে ওরা তাে বলবে যে ভগবানের ভক্তি করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মিথ্যাচারিতা ! লােকে তাে
Page #15
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
ভগবানের নামেও মিথ্যাচার করে। দায়িত্ব নিজেরই। হােল এণ্ড সােল রেসপন্সিবল। নিজেরই প্রােজেকশান কি না!
| কেউ দুঃখ দিলে জমা করে নেবে। যা তুমি আগে দিয়েছিলে, সেটাই পরে জমা করতে হবে। কেন না বিনা কারণে কেউ কাউকে দুঃখ দিতে পারে এখানে এরকম নিয়মই নেই। ওর পিছনে কারণ থাকবে। সেইজন্য জমা করে নেবে।
যারা জগৎ থেকে ছুটে পালাতে চায়...
আবার কখনও যদি ডালে নুন বেশী পড়ে যায় তাে তাও ন্যায়।
প্রশ্নকর্তা : আপনি বলেছেন যে কি হচ্ছে তা দ্যাখাে তাে তাহলে এর মধ্যে ন্যায়-এর প্রশ্ন কেমন করে আসে ?
দাদাশ্রী : ন্যায়, আমি একটু আলাদাভাবে বলতে চাইছি। দ্যাখাে, ওর হাতে হয়তাে কেরােসিন লেগেছিল, সেই হাতে জলের পাত্র ধরেছিল হয়তাে, সেইজন্যে কেরােসিনের গন্ধ আসছিল। আমি জল খেতে যেতেই কেরােসিনের গন্ধ এলাে। এই পরিস্থিতিতে আমি দেখি আর জানি যে এটা কি হল! এখানে ন্যায় কি হওয়া উচিৎ ? আমার ভাগে এটা কোথা থেকে এলাে ? আগে কখনও আসেনি আর আজ কোথা থেকে এলাে ? অর্থাৎ এটা আমারই হিসাব। তাহলে এই হিসাবকে পুরাে করে দাও। কিন্তু কেউ কিছু বুঝতে না পারে এরকমভাবে পুরাে করাে। সকালে ওঠার পর যদি আবার ওই বােন এসে ওই একই জল আমাকে আনিয়ে দেয় তাে আবার আমি তা খেয়ে নেব। কিন্তু কেউ কিছু জানতে পারবে না। এখন অজ্ঞনী এই পরিস্থিতিতে কি করবে ?
প্রশ্নকর্তা: চেঁচামেচি শুরু করবে।
দাদাশ্রী : ঘরের সমস্ত লােক জেনে যাবে যে আজ শেঠজীর জলে কেরােসিন পড়ে গেছে।
Page #16
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
15
প্রশ্নকর্তা : সমস্ত ঘর ত্রস্ত-ব্যস্ত হয়ে যাবে !
দাদাশ্রী : আরে, সবাইকে পাগল করে দেবে। আর স্ত্রী বেচারী তো পরে চায়ে চিনি দিতেও ভুলে যাবে। একবার কোন কিছুতে কুণ্ঠিত হলে কি হবে ? অন্য সব ব্যাপারেও কুণ্ঠিত হতে থাকবে।
প্রশ্নকর্তা : দাদা, ওখানে সেই সময় নালিশ না করলেও পরে তো আমার শান্তভাবে ঘরের লোকেদের বলা উচিৎ নয় কি যে ভাই, জলে কেরোসিন মিশেছিল ; এরপরে খেয়াল রেখো।
দাদাশ্রী : সেটা কখন বলা উচিৎ ? চা-জলখাবার খাচ্ছো, হাসিঠাট্টা করছো, তখন হাসতে হাসতে বলতে পারো। যেমন আমি এখন এই কথা প্রকাশ করলাম না ? এইভাবে যখন হাসি-মস্করা করছো তখন কথাটা বলতে পারো ।
প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ সামনের লোকের দুঃখ না হয় এইভাবে বলতে হবে তো ?
দাদাশ্রী : হ্যাঁ, এইভাবে বলা যায় তো সামনের লোককে হেল্প করবে। কিন্তু সব থেকে ভাল রাস্তা তো এটাই যে আমিও চুপ আর তুমিও চুপ। এর মতো আর একটাও নয়। কারণ যাকে এই সংসার থেকে মুক্তি পেতে হবে সে একটুও নালিশ করবে না।
প্রশ্নকর্তা : পরামর্শরূপেও কিছু বলবে না ? ওখানে কি চুপ করে থাকাই উচিৎ ?
দাদাশ্রী : ও ওর সমস্ত হিসাব নিয়ে এসেছে। বিবেচক হওয়ার সমস্ত হিসাবও ও নিয়েই এসেছে। আমি এটাই বলতে চাইছি যে এখান থেকে যেতে হলে দৌড়ে পালাও। আর পালিয়ে যেতে হলে কিচ্ছু বলবে না। যদি রাতে পালাতে হয় আর চেঁচামেচি করে তো ধরে ফেলবে না।
ভগবানের কাছে কিরকম হয় ?
ভগবান ন্যায়স্বরূপও নন আর অন্যায়স্বরূপও নন। কারোর দুঃখ
Page #17
--------------------------------------------------------------------------
________________
16
যা হয়েছে তাই ন্যায়
না হয় সেটাই ভগবানের ভাষা। ন্যায়-অন্যায় তো লোকভাষা ৷
চোর, চুরি করাকেই ধর্ম বলে মানে ; দানী, দান দেওয়াকেই ধর্ম বলে মানে। ও তো লোকভাষা, ভগবানের ভাষা নয়। ভগবানের কাছে এইরকম—ওইরকম কিছু নেই। ভগবানের কাছে তো এতটুকুই আছে যে ‘কোন জীবের দুঃখ না হয়- এই আমার আজ্ঞা ! '
ন্যায়-অন্যায় তো প্রকৃতিই দ্যাখে। নয়তো এই যে জগতের ন্যায়-অন্যায়, তা শত্রুদের, দোষীদেরই সাহায্য করে। বলবে, ‘বেচারা ! যেতে দাও না!' তো দোষী-ও মুক্তি পেয়ে যায়। ‘এইরকমই হয়' বলবে। কিন্তু প্রকৃতির ন্যায়, তাতে কোন উপায়ই নেই। ওতে কারোর কোন প্রভাব চলে না ৷
নিজের দোষ অন্যায় দেখায়
কেবলমাত্র নিজের দোষের কারণে সমস্ত জগৎ অনিয়মিত মনে হয়। এক মুহূর্তের জন্যেও অনিয়মিত হয়নি। একদম ন্যায়তেই থাকে। এখানকার কোর্টের ন্যায়ে পার্থক্য থাকতে পারে, তা ভুল প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু এই প্রকৃতির ন্যায়ে কোন পার্থক্য হয় না ।
প্রশ্নকর্তা : কোর্টের ন্যায়ও প্রকৃতির ন্যায় নয় কি ?
দাদাশ্রী : এ সমস্তই প্রকৃতি । কিন্তু কোর্টে আমার এরকম মনে হতে পারে যে এই জজসাহেব এরকম করলেন। এরকম প্রকৃতিতে লাগে না কি ? কিন্তু ওটা তো বুদ্ধির বিরোধ !
প্রশ্নকর্তা : আপনি প্রকৃতির ন্যায়ের তুলনা কম্পিউটার-এর সাথে করেছেন কিন্তু কম্পিউটার তো মেকানিক্যাল হয়।
দাদাশ্রী : বোঝানোর জন্যে এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর কিছু নেই সেইজন্যে আমি এই সিমিলী দিয়েছি। নয়তো কম্পিউটার তো বলার জন্যে যে যেরকম কম্পিউটারে ফীড করা হয় ঠিক সেই রকমই এতে
Page #18
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
নিজের ভাব পাঠাতে থাকে। অর্থাৎ একজন্মের ভাবকর্ম পাঠানাের পরে পরের জন্মে তার পরিণাম আসে। তখন ওর বিসর্জন হয়। তা এই ‘ব্যবস্থিত শক্তির হাতেই আছে। ও তাে এজ্যাক্ট ন্যায়ই করে। যেমন ন্যায়তে আসে ঠিক তেমনই করে। বাবা নিজের ছেলেকে মেরে ফেললে তাও ন্যায়তেই হয়। তবুও তাকে ন্যায়ই বলে। প্রকৃতির ন্যায়কে তাে ন্যায়ই বলা হবে। কারণ যেমন বাপ-বেটার হিসাব ছিল তেমনভাবেই তা চুকিয়ে দিয়েছে। তা মিটে গেল। এতে হিসাবই মেটে, আর কিছু হয় না।
কোন গরীব মানুষ লটারিতে একলক্ষ টাকা জেতে, তাও ন্যায় আবার কারাের পকেটমার হলে তাও ন্যায়।
প্রকৃতির ন্যায়ের আধার কি ?
প্রশ্নকর্তা: প্রকৃতি ন্যায়ী, তার আধার কি ? ন্যায়ী বলার জন্যে তাে কোন আধার চাই, নয় কি ?
দাদাশ্রী : ও যে ন্যায়ী তা তাে কেবল তােমার জানার জন্যেই। তােমার বিশ্বাস হবে যে ও ন্যায়ী। কিন্তু বাইরের লােকজনের (অজ্ঞান অবস্থায়) কখনই বিশ্বাস হবে না প্রকৃত ন্যায়ী। ওদের তাে দৃষ্টি নেই না! (কারণ যারা আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করেনি, তাদের দৃষ্টি সম্যক হয়নি)। নয়তাে, আমি কি বলতে চাইছি ? আটার অল, জগৎ কি ? হ্যা ভাই, এইরকমই। একটা অণু-রও পার্থক্য হয় না এতটাই ন্যায়স্বরূপ, একদম ন্যায়ী।
প্রকৃতি দুটো বস্তু দিয়ে তৈরী। একটা স্থায়ী, সনাতন বস্তু আর দ্বিতীয় অস্থায়ী বস্তু যা অবস্থারূপে আছে। অবস্থা বদলাতে থাকে আর তা নিয়মানুসারেই বদলায়। যে ব্যক্তি দেখে সে তার সংকীর্ণ বুদ্ধি থেকে দেখে। অনেকান্ত (উদার) বুদ্ধি থেকে কেউ চিন্তাই করে না, শুধু নিজের স্বার্থ থেকেই দেখে।
কারাের একমাত্র ছেলে মারা যায়, তাও ন্যায়-ই। এতে কেউ
Page #19
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
কোন অন্যায় করেনি। এতে ভগবানের বা অন্য কারাের কোন অন্যায় নেই, ন্যায়-ই আছে। এইজন্য আমি বলি যে জগৎ ন্যায়স্বরূপ-ই। নিরন্তর ন্যায়স্বরূপেই থাকে।
কারাের একমাত্র ছেলে মারা গেলে শুধু তার পরিবারের লােকজনই কঁদে। অন্য আশ-পাশের লােক কেন কাদেনা ? ওই পরিবারের নিজেদের স্বার্থ থেকেই কাঁদে। যদি সনাতন বস্তুতে (নিজের আত্মস্বরূপে) স্থিত হয় তাহলে প্রকৃতি ন্যায়স্বরূপ-ই।
এইসব কথার মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছ ? সামঞ্জস্য খুঁজে পেলে জানবে যে কথাটা ঠিক। জ্ঞানকে আচরণে আনাে তাে কত দুঃখ কম হয়ে যায় !
| আর এক সেকেণ্ডের জন্যেও ন্যায়ের কোন পার্থক্য হয় না। যদি অন্যায়ী হত তাহলে মােক্ষতে কেউ যেতই না। এরা বলে ভালাে লােকেদের কেন ঝামেলা-ঝঞ্জাট হয় ? কিন্তু লােকেরা এমনি-এমনিই কোন ঝামেলা করতে পারে না। কারণ নিজে স্বয়ং যদি কোন কথায় নাক না গলায় তাহলে এমন কোন শক্তি নেই যে তােমার নাম নিতে পারে। নিজে নাক গলিয়েছে সেইজন্যে এইসব তৈরী হয়েছে।
প্র্যাকটিকাল চাই, থিয়ােরী নয়।
এখন শাস্ত্রকাররা কি লেখেন ? ‘যা হয়েছে তাই ন্যায়’ বলবে না। ওরা তাে ‘যা ন্যায় তাই ন্যায়’ বলবেন। আরে ভাই, তােমাদের জন্যেই তাে আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি ! থিওরেটিক্যালী এরকম বলে যে যা ন্যায় তাই ন্যায়, কিন্তু প্র্যাকটিকাল বলে যে যা হয়েছে তাই ন্যায়। প্র্যাকটিকাল বিনা দুনিয়াতে কোন কাজ হয় না। এইজন্য এটা থিয়ােরেটিকালী ঠিক হয়নি। মানে কি, যা হয়েছে তাই ন্যায়। নির্বিকল্প হতে হলে, যা হয়েছে তাই ন্যায়। বিকল্পী হতে চাইলে ন্যায় খুঁজতে যাও। ভগবান হতে হলে যা হয়েছে তাই ন্যায়, আর ঘুরে মরতে হলে ন্যায় খুঁজে নিরন্তর ঘুরে বেড়াও।
Page #20
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
| লােভীদের লােকসান খোঁচা মারে
এই জগৎ কোন গল্প নয়। জগৎ ন্যায়স্বরূপ-ই। প্রকৃতি কখনও একটুও অন্যায় করেনি। প্রকৃতি কখনও মানুষকে কেটে ফ্যালে, অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যায়। তাে সে সমস্তই ন্যায়স্বরূপ। ন্যায়ের বাইরে প্রকৃতি যায়-ই নি। এরা না বুঝে বেকার যা খুশী বলতে থাকে। জীবনযাপনের কলাও এদের জানা নেই আর শুধু চিন্তা আর চিন্তা-ই থাকে। এইজন্যে যা হয়েছে তাকে ন্যায় বলাে।
| তুমি দোকানদারকে একশাে টাকার নােট দিয়েছাে। ও তােমাকে পাঁচ টাকার জিনিষ দিল আর পাঁচ টাকা তােমাকে ফেরৎ দিল। চেঁচামেচিতে নব্বই টাকা ফেরৎ দিতে ভুলে গেল। ওর কাছে বেশ কিছু একশাে টাকার নােট, দশটাকার নােট না গােনা হয়েই পড়ে ছিল। ও ভুলে গেছে। আর তােমাকে পাঁচ টাকা ফেরৎ দিচ্ছে তাে তুমি কি বলবে ? আমি তােমাকে একশাে টাকার নােট দিয়েছিলাম। ও বললাে, ‘না’। ওর ওটাই স্মৃতিতে ছিল, ও মিথ্যে বলে না। তখন তুমি কি করবে ?
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু মনে তাে সবসময় খোঁচা লাগতেই থাকবে যে এতগুলাে পয়সা চলে গেল। মন তাে চেঁচামেচি করতেই থাকবে।
দাদাশ্রী : ওর খোঁচা লাগছে তাে যার খোঁচা লাগছে তার ঘুম আসবে না। আমার (শুদ্ধাত্মার) কি ? এই শরীরে যার খোঁচা লাগবে তার ঘুম আসবে না। সবারই কি কিছু খোঁচা লাগে ? লােভীরই খোঁচা লাগবে! তখন ওই লােভীকে বলবে, ‘খোঁচা লাগছে ? তাহলে শুয়ে পড়াে না ! এখন তাে সারারাত শুতেই হবে!'
প্রশ্নকর্তা: ওর তাে ঘুম-ও গেল আর পয়সাও গেল।
দাদাশ্রী : হ্যা, এইজন্য ওখানে যা হয়েছে তা কারেক্ট এই জ্ঞান উপস্থিত থাকলে নিজের কল্যাণ হবে।
‘যা হয়েছে তাই ন্যায় বুঝলে পুরাে সংসার পার হয়ে যাওয়া যায়,
Page #21
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
এমনই। এই দুনিয়াতে এক সেকেণ্ডের জন্যেও অন্যায় হয় না ; ন্যায়-ই হয়ে চলেছে। কিন্তু বুদ্ধি আমাকে বোঝায় যে একে ন্যায় কিভাবে বলতে পারো ? এইজন্যে আমি এই মূল কথা বলতে চাইছি যে প্রকৃতির জিনিষ আর বুদ্ধি থেকে তুমি আলাদা হয়ে যাও। বুদ্ধিই এতে ফাঁসায়। একবার বুঝে নেওয়ার পর আর বুদ্ধিকে মানবে না। যা হয়েছে তাই ন্যায় ৷ কোর্টের ন্যায়ে ভুল-ত্রুটি হতে পারে, উল্টোপাল্টা হয়ে যায়। কিন্তু এই ন্যায়ে কোন পার্থক্য নেই। একেবারে কেটে দেবে।
ভাগাভাগিতে কম – বেশি, সেটাই ন্যায়
একজনের বাবা মারা যাওয়ার পর পারিবারিক সমস্ত জমিজায়গা যাতে সব ভাইদেরই ভাগ ছিল তা বড় ভাইয়ের কব্জায় চলে আসে। এখন বড়ভাই যে, সে ছোটভাইদের বারবার ধমকাতে থাকে আর জমিও দেয় না। আড়াইশো বিঘা জমি ছিল, চারভাইকে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ বিঘা করে দেওয়ার ছিল। সেখানে কেউ পঁচিশ পেল, কেউ পঞ্চাশ পেল, কেউ চল্লিশ পেল আর কারোর ভাগে মাত্র পাঁচ-ই এলো।
20
এখন এইরকম পরিস্থিতিতে কি বুঝতে হবে ? জগতের ন্যায় বলে যে বড়ভাই বদমায়েশ, মিথ্যেবাদী। প্রকৃতির ন্যায় কিন্তু বলে যে বড়ভাই কারেক্ট। যে পঞ্চাশ পাবে তাকে পঞ্চাশ দিয়েছে, যে কুড়ি পাবে তাকে কুড়ি দিয়েছে, যে চল্লিশ পাবে তাকে চল্লিশ দিয়েছে আর যে পাঁচ পাবে তাকে পাঁচ-ই দিয়েছে। বাকিটা পূর্বজন্মের অন্য হিসাবে পুরো হয়ে গেছে। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো ?
যদি ঝগড়া করতে না চাও তো প্রকৃতির নিয়মে চলো, নয়তো এই জগতে তো ঝগড়া-ই ঝগড়া। এখানে ন্যায় হতে পারে না। ন্যায় তো দেখার জন্যে যে আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন, কোন পার্থক্য হয়েছে কি ? যদি আমি ন্যায় পাই তাহলে আমি ন্যায়ী এটা প্রমাণ হয়ে গেল৷ ন্যায় তো নিজের এক থার্মোমিটার, নয়তো ব্যবহারে ন্যায় তো হতে পারে না। ন্যায়ে
Page #22
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
আসা মানে মানুষ পূর্ণ হয়ে গেল। সেই পৰ্য্যন্ত ওরা তাে হয় অ্যাবাভনর্মালিটীতে থাকে নয়তাে বিলাে-নর্মালিটীতে থাকে। অর্থাৎ এই বড়ভাই যে ছােটভাইকে পুরাে ভাগ দিল না, মাত্র পাঁচ বিঘাই দিল। সেখানে | লােকেরা ন্যায় করতে যায় আর বড়ভাইকে খারাপ বলে। এখন এসমস্তই দোষ হচ্ছে। তুমি ভ্রান্তিতে আছ তাই তুমি ভ্রান্তিকেই সত্যি বলে মেনে নিচ্ছ। তাহলে তাে আর কোন উপায় রইলাে না। এই ব্যবহারকে সত্যি বলে ধরে নিয়েছে তাে মার তাে খেতেই হবে ! নয়তাে প্রকৃতির ন্যায়ে তাে কোন ভুল-ত্রুটি হয়ই না।
| এখন আমি এখানে এরকম বলি না যে তােমার এটা করা উচিৎ নয় বা ওকে এতটা করতে হবে। তা না হলে আমাকে বীতরাগী বলবে না। আমি তাে দেখতে থাকি যে পূর্বজন্মের কি হিসাব আছে !
| যদি আমাকে কেউ বলে যে আপনি ন্যায় করুন, ন্যায় করতে বলে। তাে আমি বলবাে যে ভাই, আমার ন্যায় একটু অন্য ধরণের হয় আর জগতের ন্যায় আলাদা ধরণের। প্রকৃতির ন্যায়-ই আমার ন্যায়। জগতের নিয়ন্তা যে, সে একে নিয়ন্ত্রণেই রাখে। একক্ষণের জন্যেও অন্যায় হয় না। কিন্তু লােকেদের তা অন্যায় মনে হয়। ফের তারা ন্যায় খোজে। কেন তােমাকে দুই দেয়নি, পাঁচ-ই দিয়েছে ? আরে ভাই, যা দিয়েছে তাই ন্যায়। কারণ পূর্বের এই সমস্ত হিসাব এখন সামনে এসেছে। জট পাকিয়ে আছে, হিসাব বলে। মানে ন্যায় তাে থার্মোমিটার, থার্মোমিটার দিয়ে দেখে নিতে হবে যে আমি পূর্বে ন্যায় করিনি, সেইজন্যে আমার সাথে অন্যায় হচ্ছে। এর জন্যে থার্মোমিটারের দোষ নেই। তােমার কি মনে হচ্ছে ? আমার এই কথাগুলাে কিছু হেল্প করে ?
প্রশ্নকর্তা : অনেক হেল্প করে।
দাদাশ্রী : জগতে ন্যায় খুঁজতে যেও না। যা হচ্ছে তাই ন্যায়। আমাকে দেখতে হবে যে এটা কি হচ্ছে। তখন বলে, ‘পঞ্চাশ বিঘার জায়গায় পাঁচ-বিঘা দিচ্ছে।' ভাইকে বলবে, “ঠিক আছে। এখন তুমি
Page #23
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
খুশী তাে ? ও বলবে, হা।' ফের পরের দিন থেকে একসাথে খাওয়াদাওয়া, ওঠা-বসা করবে। এ সমস্তই হিসাব। হিসাবের বাইরে তাে কেউ | নেই। বাবা ছেলেদেরকেও হিসাব না চোকানাে পর্যন্ত ছাড়ে না। এতাে হিসাব-ই, আত্মীয়তা নয়। তুমি আত্মীয় মনে করেছিলে !
পিষে মেরেছে, তাও ন্যায় বাসে ওঠার জন্যে রাইট সাইডে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে, ও রােডের পাশে দাঁড়িয়েছিল। রং সাইড দিয়ে একটা বাস এলাে। ওটা একদম ওর ওপর দিয়ে চলে গেল আর ওকে মেরে ফেললাে। একে কি ন্যায় বলা যাবে ?
প্রশ্নকর্তা : ড্রাইভার পিষে দিয়েছে, লােকে তাে এইরকমই বলবে।
দাদাশ্রী: হ্যা, উল্টোদিক দিয়ে এসে মেরেছে, অন্যায় করেছে। ঠিক রাস্তায় এসে যদি মারতাে তাহলেও তাকে দোষ-ই বলতাে, এ তাে ডবল দোষ করেছে। এতে প্রকৃতি বলে যে, কারেক্ট করেছে।' শােরগােল করলে তা ব্যর্থ হবে। আগের হিসাব চুকিয়ে দিল। এখন এইরকমভাবে তাে বােঝে না। সমস্ত জীবন ভাঙচুর করতেই কেটে যায়। কোর্ট, উকিল আর...! আর কখনও দেরী হয়ে গেলে তাে উকিলও গালি দেয় যে, ‘তােমার আক্কেল নেই।' গাধার মতাে, গালি খায় ভাই! এর বদলে যদি প্রকৃতির ন্যায়কে বুঝে নেয়, দাদাজী বলেছেন সেই ন্যায়, তাে সমাধান আসবে কি না ? আর কোর্টে যেতেও কোন অসুবিধা নেই। কোর্টে যাবে, কিন্তু ওর সাথে বসে চা খাবে, এইভাবে সমস্ত ব্যবহার করবে (সমাধানপূর্বক ফয়সালা করবে)। যদি ও না মানে তাে বলবে আমার চা খাও কিন্তু একসাথে বসে। কোর্টে যেতে কোন অসুবিধা নেই কিন্তু প্রেমপূর্বক সমাপ্ত করবে (ভিতরে রাগ-দ্বেষ না হয়, এইভাবে)।
প্রশ্নকর্তা : ওইরকম লােক আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে নাকি ?
Page #24
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
দাদাশ্রী : মানুষ কিছু করতে পারে না। যদি তুমি পিওর হও তাহলে কেউ তোমার কিছুই করতে পারবে না, এইরকমই এই জগতের নিয়ম। পিওর হলে আর কেউ কিছু করার জন্যে থাকবে না। সুতরাং ভুল শুধরাতে হলে শুধরে নেবে।
23
যে আগ্রহ ছাড়বে, সেই জিতবে
এই জগতে তুমি কি ন্যায় দেখতে চাইছো ? যা হয়েছে তাই ন্যায়। ‘এ থাপ্পড় মেরেছে তো আমার উপর অন্যায় করেছে', এরকম নয় কিন্তু যা হয়েছে তাই ন্যায়। এরকম যখন বুঝতে পারবে তখন এ সমস্ত কিছুর সমাপ্তি ঘটবে।
‘যা হয়েছে তাই ন্যায়' না বললে তো বুদ্ধি লাফালাফি করতে থাকবে। অনন্ত জন্ম থেকে তো এই বুদ্ধিই গণ্ডগোল করে আসছে, মতভেদ করিয়ে আসছে। বাস্তবে কিছু বলার মতো সময়ই আসা উচিৎ নয়। আমার কিছু বলার মতো সময়-ই আসে না। যে ছেড়ে দিয়েছে সে জিতে গেছে। লোকে নিজেরই স্ব-দায়িত্বে টানাটানি করে। বুদ্ধি চলে গেছে তা কিভাবে বুঝবে ? ন্যায় খুঁজতে যেও না। যা হয়েছে তাকেই ন্যায় বললে তখন তাকে বুদ্ধি চলে গেছে এরকম বলা যাবে। বুদ্ধি কি করে ? ন্যায় খুঁজে ফেরে আর সেই কারণেই এই সংসার দাঁড়িয়ে আছে। অতএব ন্যায় খুঁজো না ৷
ন্যায় খুঁজতে যায় কি ? যা হয়েছে তাই ঠিক, সাথে সাথেই তৈরী। কারণ ‘ব্যবস্থিত’–এর বাইরে অন্য কিছু হয়ই না। বেকার-ই হায় হায় ! হায় হায় !
-
মহারানী নয়, উসুলী-ই ফাঁসিয়েছে
বুদ্ধি তো ঝড় তুলে দেয়। বুদ্ধি-ই সব নষ্ট করে! বুদ্ধি মানে কি ? যা ন্যায় খোঁজে তারই নাম বুদ্ধি। বলবে, ‘পয়সা কেন দেবে না, মাল তো
Page #25
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
নিয়ে গেছে না ? এই যে ‘কেন এই প্রশ্ন যে করছে সেই বুদ্ধি। অন্যায় করেছে সেটাই ন্যায়। তুমি উসুল করার চেষ্টা করতে থাকবে, বলবে যে, ‘আমার পয়সার খুব দরকার আর আমার অসুবিধা আছে। তা-ও যদি না দেয় তাে ফিরে আসবে। কিন্তু ‘ও কেন দেবে না ?' বলেছাে তাে তাহলে উকিল খুঁজতে হবে। তাহলে সৎসঙ্গ ছেড়ে দিয়ে ওখানে গিয়ে বসবে। ‘যা হয়েছে তাই ন্যায়’ বললে বুদ্ধি চলে যাবে।
অন্তরে এরকম শ্রদ্ধা থাকা দরকার যে যা হচ্ছে তাই ন্যায়। তবুও ব্যবহারে তােমাকে পয়সা উসুল করতে যেতে হবে, তখন এই শ্রদ্ধার কারণে তােমার মাথা খারাপ হবে না। ওর ওপর বিরক্তি আসবে না আর ব্যাকুলতাও থাকবে না, যেন নাটক করছাে এরকমভাবে ওখানে গিয়ে বসবে। ওকে বলবে, “আমি তাে চারবার এসেছি, কিন্তু আপনার সাথে দেখা হয়নি। এইবারে হয়তাে আপনার পুণ্য অথবা আমার পুণ্যের জন্য আমাদের সাক্ষাৎকার হল।' এইরকম করে হাসতে হাসতে উসুল করবে। আর আপনি তাে ভাল আছেন, আমি এখন মহামুস্কিলে পড়েছি। তখন প্রশ্ন করে, আপনার কি মুস্কিল ?’ বলবে যে, আমার মুস্কিল তাে আমিই জানি। আপনার কাছে পয়সা না থাকলে কারাের কাছ থেকে আমাকে জোগাড় করে দিন। এইরকম কথাবার্তা বলে কাজ উদ্ধার করবে। লােক তাে অহংকারী হয়, তাই তােমার কাজ হয়ে যাবে। অহংকারী না হলে তাে কিছু হবেই না। অহংকারীর অহংকারকে একটু ওপরে তুললে সব কিছু করে দেবে। বলবে, “পাঁচ-দশ হাজার জোগাড় করে দিন। তাহলেও বলবে, “হ্যা, আমি জোগাড় করে দিচ্ছি।' মানে ঝগড়া যেন না হয়। রাগ-দ্বেষ যেন না হয়। একশােবার ঘুরলেও যদিনা দেয় তাে ক্ষতি নেই। ‘যা হয়েছে তাই ন্যায়’ বুঝে নেবে। নিরন্তর ন্যায়-ই হয়ে চলেছে! তােমার একার-ই কি উসুলী বাকী আছে ?
প্রশ্নকর্তা : না, না, সব ব্যাবসায়ীর-ই হয়।। দাদাশ্রী : জগতে কেউই মহারানীর জন্যে ফাঁসেনি, উসুলীর জন্যেই
Page #26
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
ফেঁসেছে। কত লোকে আমাকে বলে যে, ‘আমার দশলাখের উসুলী হচ্ছে না।' আগে উসুলী হত। যখন আয় করতাম, তখন কেউ আমাকে বলতে আসতো না। এখন বলতে আসে। উসুলী শব্দ তুমি শুনেছো কি ?
25
প্রশ্নকর্তা : কেউ কোন খারাপ শব্দ আমাকে শুনিয়ে যায়, সেটা তো উসুলী-ই, নয় কি ?
দাদাশ্রী : হ্যাঁ, উসুলী-ই তো! ও শুনিয়ে যায় তা একদম কঠিনভাবে শোনায়। ডিক্সনারীতেও নেই এরকম শব্দ-ও শোনায় । ফের তুমি ডিক্সনারীতে খোঁজো যে ‘এরকম শব্দ কোথা থেকে বেরোলো ? ওতে এরকম শব্দ থাকে না, এরকম পাগল হয় কি! কিন্তু ও নিজের দায়িত্বেই বলে কি না! ওতে আমার কোন দায়িত্ব তো নেই! এটা তো ভাল ৷
তোমার টাকা ফেরৎ দেয় না, তাও ন্যায়। ফেরৎ দেয়, তাও ন্যায় ৷ এই সমস্ত হিসাব আমি অনেক বছর আগে বের করেছিলাম। টাকা ফেরৎ দেয়নি তাতে কারোর কোন দোষ নেই। এইরকম-ই যদি কেউ ফেরৎ দিতে আসে তো তাতে ওর উপকার কোথায় ? এই জগতের সঞ্চালন তো অন্যরকমভাবে হয়।
ব্যবহারেই দুঃখের মূল
ন্যায় খুঁজতে তো দম বেরিয়ে গেছে। মানুষের এরকম মনে হয় যে আমি এর কি ক্ষতি করেছি যে এ আমার ক্ষতি করছে।
প্রশ্নকর্তা : এরকম হয়। আমি কারোর সম্বন্ধে কিছু বলিনা, তবুও কেন লোক আমাকে লাঠি মারে ?
দাদাশ্রী : হ্যাঁ, এইজন্যে তো এই কোর্ট, উকিল-এদের সব চলে। এরকম না হলে কোর্ট কেমন করে চলবে ? উকিলদের কোন মক্কেলই থাকবে না। কিন্তু উকিলও কত পুণ্যশালী যে মক্কেল সকালে তাড়াতাড়ি উঠে চলে আসে আর উকিলসাহেব যদি দাড়ি কামাচ্ছেন তো বসে
Page #27
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
অপেক্ষা করে। উকিলসাহেবকে ঘরে এসে টাকা দিয়ে যায়। উকিলসাহেব পুণ্যশালী নয় কি ? নােটিশ লিখিয়ে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে যায়! সুতরাং ন্যায় খুঁজতে যাও, সেটাই উপাধি।
প্রশ্নকর্তা: কিন্তু দাদা এমন সময় এসেছে যে কারাের ভালাে করলে সেই লাঠি মারে।
দাদাশ্রী: ওর ভালাে করলে আর ফের ওই লাঠি মারে তাে তারই নাম ন্যায়। কিন্তু মুখের ওপর এ কথা বলবে না। মুখের ওপর বলে ফেললে তাে সে আবার মনে করবে যে এ নির্লজ্জ হয়ে গেছে।
প্রশ্নকর্তা: আমি যদি কারাের সাথে একদম সােজা-সরল হয়ে চলি তবুও সেই আমাকে লাঠিপেটা করে।
দাদাশ্রী : লাঠিপেটা করে সেটাই ন্যায়। শান্তিতে থাকতে দেয় না ?
প্রশ্নকর্তা: শার্ট পরলে বলবে, শার্ট কেন পরছাে ? আর যদি টিশার্ট পরি তাে বলবে, টি-শার্ট কেন পরলে ? সেটা খুলে দিলে তখন বলবে, ‘কেন খুলে দিলে ?
দাদাশ্রী : একেই তাে আমি ন্যায় বলি ! আর এতে ন্যায় খুঁজতে গেলে তারই এই সমস্ত মার পড়ে। এইজন্যে ন্যায় খুঁজোনা। এ তাে আমি | সােজা আর সরল খোঁজ করেছি। ন্যায় খুঁজতে গিয়ে এরা সবাই মার খেয়েছে আর ফের হয়েছে তাে যা হওয়ার ছিল। শেষে তাে যা হওয়ার তাই হয়। তাহলে প্রথম থেকেই কেন না বুঝে নিই ? এ তাে শুধু অহংকারের হস্তক্ষেপ!
যা হয়েছে তাই ন্যায় ! এইজন্যে ন্যায় খুঁজতে যেও না। তােমার বাবা যদি বলেন যে, ‘তুই এইরকম, তুই ওইরকম তাে ওটা যা হয়েছে। তাই ন্যায়। তার উপরে দাবী করবে না যে আপনি কেন এরকম বললেন ? এটা অনুভবের কথা, নয় তাে শেষে ক্লান্ত হয়ে ন্যায় তাে স্বীকার করতেই হবে। লােকেরা স্বীকার করে, না কি করে না ? যদিও এরকম
Page #28
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
নিরর্থক প্রচেষ্টা করতে থাকে কিন্তু যেমন ছিল তেমনই থেকে যায়। যদি খুশী মনে মেনে নিতে তো কি খারাপ হতো ? হ্যাঁ, ওকে মুখের ওপর বলার দরকার নেই, নয়তো ফের ও উল্টো রাস্তায় চলবে। মনে মনেই বুঝে নেবে যে যা হয়েছে তাই ন্যায় ।
27
এই ক্ষেত্রে বুদ্ধির প্রয়োগ করবে না। যা হচ্ছে তাকে ন্যায় বলবে। এতো বলবে যে ‘তোমাকে কে বলেছিল যে জল গরম রাখলে ?” “আরে. যা হয়েছে তাই ন্যায়।' এই ন্যায় যদি বুঝে নেওয়া যায় তো বলবে ‘এখন আমি আর নালিশ করবো না।' বলবে, নাকি বলবে না ?
কোন ক্ষুধার্তকে যদি তুমি খেতে দাও আর পরে যদি সে বলে, ‘আপনাকে খাওয়াতে কে বলেছিল ? বেকারই আমাকে ঝামেলায় ফেলে আমার সময় নষ্ট করলেন! এরকম বললে তখন তুমি কি করবে ? বিরোধ করবে ? এটা যা হয়েছে তাই ন্যায় ।
ঘরে দুজনের মধ্যে একজন যদি বুদ্ধি প্রয়োগ করা বন্ধ করে, তো সবকিছু ঠিকভাবে চলবে। ও যদি ওর বুদ্ধি প্রয়োগ করে তাহলে কি হবে? রাতে খেতেও রুচি থাকবে না ।
বৃষ্টি যদি না হয়, সেটাই ন্যায়। তাতে কৃষক কি বলবে ? ‘ভগবান অন্যায় করছে।' এটা ওর নিজেরই বোঝার ভুল। এতে কি বৃষ্টি পড়া শুরু হবে ? বৃষ্টি হচ্ছে না, সেটাই ন্যায়। যদি সবসময় বৃষ্টি পড়ে, প্রত্যেক বছর ভালো বর্ষা হয়, তাহলে বর্ষার কি ক্ষতি হতো ? এক জায়গায় খুব বৃষ্টি হয়ে প্রচুর জল ঢেলে দেয় আর অন্য জায়গায় অনাবৃষ্টি হয়ে আকাল নিয়ে আসে। প্রকৃতি সমস্ত কিছু ‘ব্যবস্থিত' করে রেখেছে। তোমার কি মনে হয় প্রকৃতির ব্যবস্থা ভালো ? প্রকৃতি সমস্ত কিছু ন্যায়-ই করছে।
মানে এই সমস্তই সিদ্ধান্তিক বস্তু। বুদ্ধি চলে যাওয়ার জন্য এটাই একমাত্র নিয়ম। যা হচ্ছে তাকে ন্যায় বলে মানলে বুদ্ধি চলে যাবে। বুদ্ধি কতদিন জীবিত থাকে ? যা হচ্ছে তাতে ন্যায় খুঁজতে গেলে বুদ্ধি জীবিত থাকে। আর এতে তো বুদ্ধি বুঝে যায়, ফের লজ্জা পায়। ওরও লজ্জা
Page #29
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
হয়, আরে! এখন তাে মালিক-ই এরকম বলছে। এর থেকে তাে আমার চলে যাওয়া ভালাে।
এতে ন্যায় খুঁজো না
প্রশ্নকর্তা: বুদ্ধিকে তাে বের করতেই হবে। কেননা, ও অনেক মার খাওয়ায়।
দাদাশ্রী : এই বুদ্ধিকে বের করতে হলে বুদ্ধি তাে কিছু এমনিই চলে যাবে না। বুদ্ধি হল ‘কার্য, এর কারণ’কে বের করতে পারলে তবে এই ‘কার্য’ দূর হবে। বুদ্ধি তাে ‘কার্য, এর কারণ কি ? বাস্তবে যা হচ্ছে। তাকে ন্যায় বলতে পারলে, তখন এ চলে যেতে থাকে। জগৎ কি বলছে ? বাস্তবে যা ঘটছে তাকে মেনে নিতে হবে। আর এতে ন্যায় খুঁজতে গেলে ঝগড়া চলতেই থাকবে।
অর্থাৎ বুদ্ধি এমনি-এমনিই যায় না। বুদ্ধির যাওয়ার পথ হল এর কারণকে পুষ্টি না দেওয়া। তাহলে বুদ্ধি, এই কার্য আর হয় না।
প্রশ্নকর্তা: আপনি বললেন বুদ্ধি হল কার্য, আর এর কারণ খুঁজলে এই কার্য বন্ধ হয়ে যায়।
দাদাশ্রী : এর কারণ হল, তুমি যে ন্যায় খুঁজতে যাও, তাই ওর কারণ। ন্যায় খোঁজা বন্ধ করে দিলে বুদ্ধি চলে যায়। ন্যায় কি জন্যে খুঁজছাে ? তখন বধূ কি বলে ? ‘কিন্তু তুমি আমার শাশুড়িকে চেনাে না। আমি এসেছি তখন থেকেই এ আমাকে দুঃখ দিচ্ছে। এতে আমার কি দোষ ?
| কেউ বিনা পরিচয়ে দুঃখ দেয় কি ? এতাে হিসাবে জমা আছে। তাই তােমাকে দুঃখ দিচ্ছে। তখন বলে, কিন্তু আমি তাে ওঁর মুখও দেখিনি। আরে, তুমি এইজন্মে হয়তাে দেখােনি কিন্তু পূর্বজন্মের হিসাব কি বলছে ? এইজন্যে যা হয়েছে তাই ন্যায়।
Page #30
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
ঘরে ছেলে দাদাগিরি করছে ? ও যে দাদাগিরি করছে তাই ন্যায়। এ তাে বুদ্ধি দেখায় যে ছেলে হয়ে বাবার সামনে দাদাগিরি ? যা হয়েছে। তাই ন্যায় !
অতএব এই ‘অক্রম বিজ্ঞান কি বলছে ? দেখো, এটাই ন্যায় ! লােকে আমাকে প্রশ্ন করে, আপনি বুদ্ধি কিভাবে বের করে দিয়েছেন ? ন্যায় খুঁজিনি বলে বুদ্ধি চলে গেছে। বুদ্ধি কতদিন থাকবে ? ন্যায় খুঁজবে আর ন্যায়কে আশ্রয় দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বুদ্ধি থাকবে। এতে তাে বুদ্ধি বলবে, “ভাইসাহেব আমার পক্ষে আছে। আরও বলবে, এত ভাল করে কাজ করেছি আর ডাইরেক্টর কিসের ভিত্তিতে উল্টো বলছে ? এইভাবে ওকে আশ্রয় দাও কি ? ন্যায় খুঁজতে যাও কি ? উনি যা বলছেন তাই কারেক্ট। এতদিন কেন বলেননি ? কিসের ভিত্তিতে বলেননি ? এখন কোন ন্যায়ের ভিত্তিতে বলছেন ? বিচার করলে মনে হয় না কি যে ইনি যা বলছেন তা প্রমাণসহ বলছেন ? আরে, তােমার বেতন বাড়ায় না তাই ন্যায়, আমরা একে অন্যায় কিভাবে বলব ?
বুদ্ধি ন্যায় খোঁজে
এই সমস্ত তাে বেশীরভাগ-ই ডেকে নিয়ে আসা দুঃখ আর বাকি অল্প-বিস্তর যে দুঃখ নিয়ে আসে। যেখানে নেই সেখানেও দুঃখ খুঁজে বার করে। আমার বুদ্ধি তাে ডেভেলপ হওয়ার পরে চলে গেছে। বুদ্ধি-ই নিঃশেষ হয়ে গেছে। বলাে, মজা হয় কি না হয় ? একদম এক পারসেন্টও বুদ্ধি নেই। তাতে একজন আমাকে প্রশ্ন করলাে, বুদ্ধি কিভাবে চলে গেল ? তুই চলে যা, তুই চলে যা, এইরকম বলে ?' আমি বললাম, না ভাই, এরকম করতে নেই। ওতাে এতদিন পর্যন্ত তােমার দায়িত্ব সামলেছিল। দ্বিধায় পড়লে তখন উপযুক্ত সময়ে, কি করবে, কি করবে
?' এ সমস্ত কিছুর মার্গদর্শন করছিল। তাকে কি করে দূর করা যায় ? তাই আমি বললাম, “যে ন্যায় খোঁজে, তার সাথে বুদ্ধি চিরদিনের মতাে বাস করে। যা হয়েছে তাই ন্যায় এরকম যারা বলে তাদের বুদ্ধি চলে
Page #31
--------------------------------------------------------------------------
________________
30
যা হয়েছে তাই ন্যায়
যায়। ন্যায় খুঁজতে যায়, তাই-ই বুদ্ধি।
প্রশ্নকর্তা : কিন্তু দাদা, এ জীবনে যা কিছু আসবে তাকেই মেনে নেব ?
দাদাশ্রী: মার খেয়ে মেনে নেওয়া, তার চেয়ে তাে খুশী মনে মেনে নেওয়া ভালাে।
প্রশ্নকর্তা : সংসার আছে, ছেলে আছে, পুত্রবধূ আছে, এ আছে, ও আছে, অর্থাৎ সম্বন্ধ তাে রাখতে হবে।
দাদাশ্রী : হ্যা, সবকিছুই রাখবে। প্রশ্নকর্তা : তাে এদের থেকে আঘাত পেলে কি করতে হবে ?
দাদাশ্রী : সমস্ত সম্বন্ধ রাখবে আর যদি আঘাত আসে তাে তাকে মেনে নেবে। নয়তাে আঘাত এলে আর কি করবে ? অন্য কোন উপায় কি আছে ?
প্রশ্নকর্তা : কিছু নেই, উকিলের কাছে যেতে হবে।
দাদাশ্রী: হ্যা, অন্য আর কি হবে ? উকিল বাঁচাবে না নিজের ফী। নেবে ?
যেখানে যা হয়েছে তাই ন্যায়’, সেখানে বুদ্ধি ‘আউট’
ন্যায় খুঁজতে শুরু করেছে সেই জন্য বুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়েছে। বুদ্ধি বুঝে নেবে যে এখন আমাকে ছাড়া চলবে না আর যদি তুমি বলাে, যা হয়েছে তাই ন্যায়, তাহলে বুদ্ধি বলবে ‘এখন এ ঘরে আমার প্রভুত্ব চলবে না। ও বিদায় নিয়ে চলে যাবে। ওর কোন সমর্থক থাকলে সেখানে ঢুকে পড়বে। ওর ওপর আসক্তি আছে এরকম লােক তাে অনেক আছে। এরকম কামনা করে যে আমার বুদ্ধি বাড়ক। আর ওর সামনের পাল্লাতে দুঃখ-জ্বালা বাড়তেই থাকে। সবসময় ব্যালান্স তাে
Page #32
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়
চাই, না ? ওর সামনের পাল্লাতে ব্যালান্স তাে চাই-ই! আমার বুদ্ধি নিঃশেষ হয়ে গেছে, সেইজন্য জ্বালাও শেষ হয়ে গেছে।
বিকল্পের অন্ত, সেটাই মােক্ষমার্গ
অতএব যা হয়েছে তাকে ন্যায় বললে তবে নির্বিকল্প থাকবে আর লােক নির্বিকল্পী হওয়ার জন্যে ন্যায় খুঁজতে বেরিয়েছে। বিকল্পের অন্ত হলে সেটাই মােক্ষের রাস্তা ! বিকল্প না হয়, আমাদের মার্গ এরকম নয় কি ?
পরিশ্রম না করে আমাদের অক্ৰমমার্গে মানুষ এগিয়ে যেতে পারে। আমার চাবিগুলােই এমন যে পরিশ্রম না করেই এগিয়ে যায়।
এখন বুদ্ধি যখন বিকল্প দেখাতে চায়, তখন বলে দেবে, যা হয়েছে। তাই ন্যায়’। বুদ্ধি ন্যায় খোঁজে যে আমার থেকে ছােটো কিন্তু মর্যাদা দেয় না। মর্যাদা দেয়, সেটাও ন্যায় আবার দেয় না, সেটাও ন্যায়। বুদ্ধি যত নির্বিবাদ হবে, ততাে নির্বিকল্প হবে!
| এই বিজ্ঞান কি বলছে ? ন্যায় তাে পুরােজগৎ খুঁজছে। তার বদলে আমিই মেনে নিই যে যা হয়েছে তাই ন্যায়। তাহলে আর জজ-ও চাই
আর উকিল-ও চাই না। নয়তাে শেষে মার খেয়েও এইরকমই রয়ে যায় না ?
কোন কোর্টে সন্তোষ পাওয়া যায় না।
আর কদাচিৎ কখনও যদি এরকম ধরেও নাও যে কোন ব্যক্তির ন্যায় চাই তাে নীচু কোর্ট থেকে জাজমেন্ট করালাে। উকিল মামলা লড়লাে, পরে জাজমেন্ট এলাে, ন্যায় হলাে। তখন বলে, “না, এই ন্যায়ে আমি সন্তুষ্ট নই। ন্যায় হলাে তবু সন্তোষ নেই। তাে এখন কি করবে ? উপরের কোর্টে চলাে। তাে জেলা আদালতে গেল। ওখানকার জাজমেন্টেও সন্তোষ হলাে না। এখন তাহলে কি ? ‘না, ওখানে হাইকোর্টে যাব।
Page #33
--------------------------------------------------------------------------
________________
32
যা হয়েছে তাই ন্যায়
সেখানেও সন্তুষ্ট হলাে না। ফের সুপ্রিমকোর্টে গেল। তাতেও সন্তোষ হল না। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টকে বলে। তবুও ওনার ন্যায়ের সন্তুষ্ট হলােনা। মার খেয়ে মরে! ন্যায় খুঁজবেই না যে এই লােকটা আমাকে কেন গালাগালি করে গেল অথবা মক্কেল কেন আমার ওকালতিরফীস্ দিল না ? দেয়নি, সেটাই ন্যায়। পরে দিয়ে যায়, তাও ন্যায়। তুমি ন্যায় খুঁজো না।
| ন্যায় : প্রাকৃতিক আর বিকল্পী
দুই প্রকারের ন্যায় আছে। এক বিকল্পকে বাড়ায় এমন ন্যায় আর এক, বিকল্পকে কম করে এরকম ন্যায়। যে ন্যায় সম্পূর্ণ সত্য তা বিকল্পকে কম করে এইভাবে যে, যা হয়েছে তা ন্যায়-ই। এখন তুমি এর উপর অন্য দাবী করবে না। এখন তুমি নিজের অন্য সব কাজের দিকে নজর দাও। তুমি এর উপর দাবি করলে তােমার অন্য কাজগুলাে থেকে যাবে।
ন্যায় খুঁজতে গেলে বিকল্প বাড়তেই থাকে। আর প্রকৃতির এই ন্যায় বিকল্পকে নির্বিকল্প করতে থাকে। যা হয়ে গেছে, তাই ন্যায়। আর এরপরেও পাঁচজন মানুষের পঞ্চায়েৎ যা বলে তাও ওর বিরুদ্ধে চলেযায়। তখন ও তাকেও ন্যায় বলে মেনে নেয় না, কারাের কথাই শােনে না। তখন ফের বিকল্প বাড়তেই থাকে। নিজের চারপাশে জাল বুনে চলেছে এরকম ব্যক্তি কিছুই লাভ করে না। অত্যন্ত দুঃখী হয়ে যায়। এর বদলে প্রথম থেকেই শ্রদ্ধা রাখবে যে, যা হয়েছে তাই ন্যায়।
| আর প্রকৃতি সবসময়ই ন্যায়-ই করতে থাকে, নিরন্তর ন্যায়-ই করে কিন্তু ও প্রমাণ দিতে পারে না। প্রমাণ তাে ‘জ্ঞানী’ দেন যে কিভাবে এটা ন্যায় ? কিভাবে হলাে তা ‘জ্ঞানী’ বলে দেন। ওকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তবেই সমাধান হয়। নির্বিকল্পী হলে সমাধান আসবে।
— জয় সচ্চিদানন্দ
Page #34
--------------------------------------------------------------------------
________________
যা হয়েছে তাই ন্যায়।
| যদি প্রকৃতির ন্যায়কে বুঝতে পারাে যে , যা হয়েছ তাই ন্যায়', তাহলে তুমি এই জগৎ থেকে মুক্ত হতে পারবে, কিন্তু যদি প্রকৃতিকে বিন্দুমাত্র-ও অন্যায়কারী মনে করাে তাহলে তা তােমার জন্য জগতে বন্ধনের কারণ হবে। প্রকৃতিকে ন্যায়ী বলে মেনে নেওয়া সেটাই জ্ঞান। যেমনটি তেমন জানা –সেটাই জ্ঞান আর 'যেমনটি তেমন না জানা- সেটাই অজ্ঞান।
| যা হয়েছে তাই ন্যায়' বুঝলে পুরাে সংসার পার হয়ে যাওয়া যায়। দুনিয়াতে এক সেকেন্ডের জন্যও অন্যায় হয় না। ন্যায়-ই হচ্ছে। কিন্তু বুদ্ধি আমাদেরকে বােঝায় যে একে কিভাবে ন্যায় বলবে ? এইজন্য আমি আসল কথা বলতে চাইছি যে এটা প্রকৃতির ন্যায়, আর তুমি বুদ্ধি থেকে আলাদা হয়ে যাও। একবার বুঝে নেওয়ার পরে বুদ্ধির কথা আর শােনা উচিত নয়। যা হয়েছে তাই ন্যায়।
--দাদাশ্রী
tSBN 83-৪
?
मूल दीपक
939৪২৪
Printed in India Price 15
पापकपकोटीपमाला
dadabhagwan.org