Book Title: Who Am I Bengali
Author(s): Dada Bhagwan
Publisher: Dada Bhagwan Aradhana Trust
Catalog link: https://jainqq.org/explore/034054/1

JAIN EDUCATION INTERNATIONAL FOR PRIVATE AND PERSONAL USE ONLY
Page #1 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দাদা ভগবান প্ররূপিত। আমি কে ? Bengali নিজে নিজের’ থেকেই। কতদিন অজানা থাকবে ? | ‘নিজে কে’ সেটাই জানা দরকার । Page #2 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দাদা ভগবান প্ররূপিত আমি কে ? সংকলন : ডাঃ নীরুবেন অমিন Page #3 -------------------------------------------------------------------------- ________________ প্রকাশক : কপিরাইট ভাবমূল্য : দ্রব্যমূল্য : শ্রী অজিত সি. প্যাটেল দাদা ভগবান আরাধনা ট্রাস্ট দাদা দর্শন, ৫, মমতাপার্ক সোসাইটি, নবগুজরাট কলেজের পিছনে উসমানপুরা, আহমেদাবাদ – ৩৮০০১৪ ফোন : (০৭৯) ৩৯৮৩০১০০ E-mail : info@dadabhagwan.org ফোন : : All Rights reserved - Deepakbhai Desai Trimandir, Simandhar City, Ahmedabad-Kalol Highway, Adalaj, Dist: Gandhinagar-382421, Gujarat, India. No part of this book may be used or reproduced in any manner whatsoever without written permission from the holder of this copyrights. ‘পরম বিনয়’ আর ‘আমি কিছু জানি না' এই জাগৃতি ১০ টাকা প্রথম মুদ্রণ : নভেম্বর, ২০১৭ মুদ্রক : B-99, Electrronics G. I.D.C K-G Road, Sector 25 Gandhinagar - 382044 E-mail : info@ambaoffset.com Website : www.ambaoffset.com (০৭৯) ৩৯৮৩০৩৪১ / ৪২ Page #4 -------------------------------------------------------------------------- ________________ ত্রি-মন্ত্র વર્તમાનતીર્થંકર શ્રીસીમંધરસ્વામી নমাে অরিহন্তান নমাে সিদ্ধান নমাে আয়রিয়ানম্ নমাে উবজ্জায়ানম্ নমাে লােয়ে সাহুনম। এ্যায়সাে পঞ্চ নমুক্কারাে ; সব পাবপ্ননাশনাে মঙ্গলানম চ সব্বেসিম্ ; পঢ়মম্ হবই মঙ্গল ১ ওম নমাে ভগবতে বাসুদেবায় ২ ওম নমঃ শিবায় ৩ জয় সৎ চিৎ আনন্দ = Page #5 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ লিঙ্ক ‘আমি তো কিছু লোককে নিজের হাতে সিদ্ধি প্রদান করে যাব ৷ তারপরে অনুগামীর প্রয়োজন আছে না নেই ? পরের লোকেদের রাস্তার প্রয়োজন আছে কি না ? – দাদাশ্রী পরমপূজ্য দাদাশ্রী গ্রাম-শহরে দেশ-বিদেশে পরিভ্রমণ করে মুমুক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি করাতেন। দাদাশ্রী তাঁর জীবদ্দশাতেই পূজ্য ডাঃ নীরুবেহন অমিন (নীরুমা) –কে আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত করানোর জ্ঞানসিদ্ধি প্রদান করেছিলেন। দাদাশ্রীর দেহত্যাগের পর নীরুমা একইভাবে মুক্ষুজনেদের সৎসঙ্গ আর আত্মজ্ঞান প্রাপ্তি নিমিত্তভাবে করাতেন। দাদাশ্রী পূজ্য দীপকভাই দেসাইকে সৎসঙ্গ করার সিদ্ধি প্রদান করেছিলেন। নীরুমা-র উপস্থিতিতেই তাঁর আশীর্বাদে পূজ্য দীপকভাই দেশ-বিদেশে অনেক জায়গায় গিয়ে মুমূক্ষুদের আত্মজ্ঞান করাতেন যা নীরুমা-র দেহবিলয়ের পর আজও চলছে। এই আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পর হাজার হাজার মুমুক্ষু সংসারে থেকে, সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও আত্মরমণতার অনুভব নিয়ে থাকেন। পুস্তকে মুদ্রিত বাণী মোক্ষলাভার্থীর পথপ্রদর্শক হিসাবে অত্যন্ত উপযোগী প্রমাণিত হবে, কিন্তু মোক্ষলাভ –এর জন্য আত্মজ্ঞান প্রাপ্ত হওয়া অপরিহার্য। অক্রম মার্গের দ্বারা আত্মজ্ঞান প্রাপ্তির পথ আজও উন্মুক্ত আছে। যেমন প্রজ্বলিত প্রদীপই শুধু পারে অন্য প্রদীপকে প্রজ্বলিত করতে, তেমনই প্রত্যক্ষ আত্মজ্ঞানীর কাছে আত্মজ্ঞান লাভ করলে তবেই নিজের আত্মা জাগৃত হতে পারে। Page #6 -------------------------------------------------------------------------- ________________ সম্পাদকীয় জীবনে যা কিছু আসে, তাকে পূর্ণরূপে রিয়েলাইজেশান না হওয়া পর্যন্ত মানুষ তা গ্রহণ করে না। সবকিছুর রিয়েলাইজেশান করেছে, শুধুমাত্র ‘সেল’ –এরই রিয়েলাইজেশন করেনি। অনন্তজন্ম থেকে ‘আমি কে' তারই পরিচয় হয়নি, সেইজন্যেই তাে এই ঘুরে মরাও শেষ হয়নি। এর পরিচয় কিভাবে হবে ? | যাঁর নিজের পরিচয় হয়ে গেছে, সেই ব্যক্তিই অন্য ব্যক্তিদের সহজে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। এরকম বিভূতি স্বয়ং যিনি ‘জ্ঞানী’ তারই। জ্ঞানীপুরুষ তিনিই যাঁর এই সংসারে কিছু জানার, কিছু করার আর অবশিষ্ট নেই! এইরকম জ্ঞানীপুরুষ পরমপূজ্য দাদাশ্রী এই কালে আমাদের মধ্যে এসে আমাদের ভাষাতে, আমরা বুঝতে পারি এরকম সরল ভাষাতে প্রত্যেকের মূল প্রশ্ন ‘আমি কে' – এর উত্তর সহজভাবে বলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই সংসার কি ? কিভাবে চলছে ? কর্তা কে ? ভগবান কি ? মােক্ষ কি ? জ্ঞানীপুরুষ কাকে বলে ? সীমন্ধর স্বামী কে ? সন্ত, গুরু আর জ্ঞানীপুরুষের পার্থক্য কি ? জ্ঞানীকে কিভাবে চেনা যায় ? জ্ঞানী কি করতে পারেন ? পরমপূজ্য দাদাশ্রীর আক্রম-মার্গ কি ? ক্রমিকরূপে তাে মােক্ষমার্গে অনন্তজন্ম থেকে চড়ে আসছাে কিন্তু ‘লিফট’ (এলিভেটর)-এর মতাে মােক্ষমার্গে কিছু হতে পারে কি ? অক্রমমার্গে এই কালে সংসারে থেকেও মােক্ষ হয়, আর মােক্ষ কিভাবে প্রাপ্ত করা যায় তার সম্পূর্ণ বিবরণ আর সঠিক দিশা-র প্রাপ্তি পরমপূজ্য দাদাশ্রী করিয়েছেন। | ‘আমি কে' -এর পরিচয়ের পরে কিরকম অনুভূতি থাকে, সংসার-ব্যবহার পালন করেও সম্পূর্ণ নির্লেপ অনুভূতিতে থাকা যায়। আধি-ব্যাধি আর উপাধিতেও নিরন্তর স্ব-সমাধিতে থাকা যায়, এরকম অনুভব এই অক্রমবিজ্ঞান প্রাপ্তির পর হাজার হাজার মহাত্মার হয়েছে ! এই সমস্ত কিছু প্রাপ্তির জন্য প্রস্তুত সংকলন মােক্ষলাভাথীদের মােক্ষমার্গে আলােকস্তম্ভ হয়ে দিশা নির্দেশ করুক এই প্রার্থনা। ডাঃ নীরুবেহন অমিন-এর জয় সচ্চিদানন্দ Page #7 -------------------------------------------------------------------------- ________________ নিবেদন আত্মজ্ঞানী শ্রী অম্বালাল মুলজীভাই পটেল, যাঁকে লোকে, ‘দাদা ভগবান' নামেও জানে, তাঁর শ্রীমুখ থেকে আত্মতত্ত্ব সম্বন্ধে যে বাণী নিঃসৃত হয়েছিল, তার রেকর্ড করে, সংকলন আর সম্পাদন করে গ্রন্থরূপে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘আমি কে' বইতে আত্মা, আত্মজ্ঞান আর জগৎকর্তার সম্বন্ধে মৌলিক কথা সংক্ষিপ্তরূপে সংকলিত করা হয়েছে। বিচক্ষণ পাঠক এটি পাঠ করলে আত্মসাক্ষাৎকারের ভূমিকা তার মধ্যে প্রোথিত হয়ে যায়, এরকম অনুভব অনেকের হয়েছে। ‘অম্বালালভাই’–কে সবাই ‘দাদাজী' বলতো। ‘দাদাজী' মানে পিতামহ আর ‘দাদা ভগবান' তো উনি অন্তরের পরমাত্মাকে বলতেন। শরীর ভগবান হতে পারে না, শরীর তো বিনাশী। ভগবান তো অবিনাশী আর তাঁকেই তিনি ‘দাদা ভগবান’ বলতেন যিনি প্রত্যেক জীবের অন্তরে আছেন। এই অনুবাদে বিশেষরূপে এই খেয়াল রাখা হয়েছে যে পাঠক দাদাজীর বাণীই শুনছেন এরকম অনুভব করেন। ওনার হিন্দী সম্পর্কে ওনার কথাতেই বললে, “আমার হিন্দী মানে গুজরাতী, হিন্দী আর ইংরাজী-র মিশ্রণ, কিন্তু যখন ‘টী’ (চা) তৈরী হবে তখন ভালোই হবে।' জ্ঞানীর বাণীকে বাংলা ভাষায় যথার্থরূপে অনুবাদ করার প্রযত্ন করা হয়েছে কিন্তু দাদাশ্রীর আত্মজ্ঞান –এর যথার্থ আধার, যেমনকার তেমন, আপনি গুজরাতী ভাষাতেই অবগত হতে পারবেন। যিনি জ্ঞানএর গভীরে যেতে চান, জ্ঞান-এর সঠিক মর্ম অনুধাবন করতে চান তিনি এই কারণে গুজরাতী ভাষা শিখে নিন, এই আমাদের নম্ৰ বিনতি ৷ অনুবাদ বিষয়ক ভুল-ত্রুটির জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী । Page #8 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? (১) ‘আমি’ কে ? নাম এবং স্বয়ং’, ভিন্ন। দাদাশ্রী : তােমার নাম কি ? প্রশ্নকর্তা : আমার নাম চন্দুলাল। দাদাশ্রী : তুমি কি সত্যিই চন্দুলাল ? প্রশ্নকর্তা : আজ্ঞে হ্যা। দাদাশ্রী : চন্দুলাল তাে তােমার নাম। চন্দুলাল তােমার নাম নয় কি ? তুমি ‘স্বয়ং’ চন্দুলাল না কি তােমার নাম চন্দুলাল ? প্রশ্নকর্তা : ওটা তাে নাম। দাদাশ্রী : হ্যা, তাে তাহলে তুমি’ কে ? যদি ‘চন্দুলাল’ তােমার নাম তাে তুমি কে ? তােমার নাম’ আর ‘তুমি’ আলাদা নও কি ? ‘তুমি’ নাম থেকে আলাদা তাে তুমি’ (স্বয়ং) কে ? আমি কি বলতে চাইছি তা কি তুমি বুঝতে পারছ ? এটা আমার চশমা’ বললে তাে চশমা আর আমি আলাদা নয় কি ? সেইরকম তুমি (স্বয়ং) নাম থেকে আলাদা, এখন এরকম মনে হচ্ছে নাকি ? | যেমন ধরাে দোকানের নাম রাখা হয়েছে জেনারেল ট্রেডার্স’, তাে সেটা কোন দোষ নয়। কিন্তু আমি যদি ওর মালিককে বলি, এই জেনারেল ট্রেডার্স এদিকে এসাে' তাে মালিক বলবে, জেনারেল ট্রেডার্স’ আমার দোকানের নাম, আমার নাম তাে জয়ন্তীলাল। অর্থাৎ দোকানের নাম আলাদা আর মালিক তার থেকে আলাদা, জিনিষপত্র-ও আলাদা, সব আলাদা আলাদা নয় কি ? তােমার কি মনে হয় ? প্রশ্নকর্তা : ঠিক কথা। দাদাশ্রী : কিন্তু ওখানে তাে বলবে, 'না, আমিই চন্দুলাল'। মানে দোকানের নাম-ও আমি আর মালিক-ও আমি! তুমি যে চন্দ্রলাল সে তাে চেনার একটা উপায়মাত্র। Page #9 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? প্রভাব পড়ে, তাে আত্মস্বরূপ নয়! | তুমি চন্দুলাল। একেবারে নও এরকমও নয়। তুমিই চন্দুলাল, কিন্তু ‘বাই রিলেটিভ ভিউপয়েন্ট (ব্যবহারিক দৃষ্টি) -তে ইউ আর চন্দুলাল ইজ কারেক্ট। প্রশ্নকর্তা : আমি তাে আত্মা, কিন্তু নাম চন্দুলাল। দাদাশ্রী: হঁা, কিন্তু এখন চন্দুলালকে কেউ গালাগালি করলে তােমার উপর তার প্রভাব পড়বে কি না ? প্রশ্নকর্তা : প্রভাব তাে পড়বেই। দাদাশ্রী : তাহলে তাে তুমি ‘চন্দুলাল', আত্মা নও। আত্মা হলে তােমার উপর প্রভাব পড়তাে না। প্রভাব পড়ছে, সুতরাং তুমি চন্দুলাল-ই। চদুলালের নামে কেউ গালি দিলে তা তুমি নিজের উপর নিয়ে নাও। চন্দুলালের নামে কেউ উল্টো-পাল্টা বললে তুমি দেওয়ালে কান লাগিয়ে তা শুনতে থাক। তখন যদি বলি, “ভাই, দেওয়াল তােমাকে কি বলছে ? তাহলে বলবে, না দেওয়াল নয়, ভেতরে আমার কথা হচ্ছে, তাই শুনছি।' কার কথা হচ্ছে ? বললে, ‘চন্দুলাল-এর। আরে, তুমি তাে চন্দুলাল নও। যদি তুমি আত্মা হও তাে চন্দুলাল -এর কথা নিজের উপর নেবেনা। প্রশ্নকর্তা : বাস্তবে ‘আমি তাে আত্মা-ই', নয় কি ? দাদাশী : এখনও তাে তুমি আত্মা হওনি। চন্দুলাল-ই তাে আছ ? ‘আমি চন্দুলাল’ এটা আরােপিতভাব। তােমার ‘আমি চন্দুলাল’ এই বিলীফ (ধারণা) দৃঢ় হয়ে গেছে। এটা রং বিলীফ (ভুল ধারণা)।। (২) বিলীফ -রং, রাইট! কত রকমের রং বিলীফ ‘আমি চন্দুলাল’ এই ধারণা, এই বিলীফ তাে তােমার রাতে ঘুমের Page #10 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? মধ্যেও যায়না! আবার লােকে তােমার বিবাহ করিয়ে তােমাকে বলবে তুমি এই মহিলার স্বামী।' এইজন্যে তুমি আবার স্বামীত্বকে মেনে নাও। ফের ‘আমি এর স্বামী, আমি এর স্বামী’ বলতে থাকো। কেউ চিরকালের জন্যে স্বামী হয় কি ? ডিভাের্স হওয়ার পরের দিন কি ওর স্বামী থাকবে ? অর্থাৎ এই সমস্ত রং বিলীফ তৈরী হয়ে গেছে। ‘আমি চন্দুলাল’ এটা রং বিলীফ। আবার এই মহিলার স্বামী' এটা দ্বিতীয় রং বিলীফ। “আমি বৈষ্ণব' এটা তৃতীয় রং বিলীফ। আমি উকিল এটা চতুর্থ রং বিলীফ। আমি এই ছেলেটির পিতা’ এ হল পঞ্চম রং বিলীফ। এর মামা’ ষষ্ঠ রং বিলীফ। আমি ফরসা’ এটা সপ্তম রং বিলীফ। ‘আমার বয়স পঁয়তাল্লিশ বছর’ এ হল অষ্টম রং বিলীফ। আমি এর অংশীদার’ এও রং বিলীফ। আমি ইনকাষ্ট্যাক্স পেয়ার’ এরকম যদি বলাে, তাও রং বিলীফ। এরকম কত রং বিলীফ তৈরী হয়ে গেছে ? | ‘আমি’-র স্থান পরিবর্তন। ‘আমি চন্দুলাল’ এটা অহংকার। কেননা যেখানে ‘আমি নেই সেখানে ‘আমি’-কে আরােপিত করা, তারই নাম অহংকার। | প্রশ্নকর্তা: ‘আমি চন্দুলাল’ বললে তাতে অহংকার কি করে এলাে ? ‘আমি এই, আমি সেই’ এরকম বললে সেটা আলাদা কথা, কিন্তু সহজভাবে বললে তাতে অহংকার কিভাবে এলাে ? | দাদাশ্রী : সহজভাবে বললে কি অহংকার চলে যায় ? ‘আমার নাম চন্দুলাল’ এরকম স্বাভাবিকভাবে বললেও তা অহংকার-ই। কারণ তুমি যা তা জানাে না আর ‘যা নয়’ তার-ই আরােপন করাে ; এ সমস্ত অহংকারই। ‘তুমি চন্দুলাল’ তা হল ড্রামাটিক (নাটকীয়) বস্তু। অর্থাৎ ‘আমি চন্দুলাল' এ কথা বলতে অসুবিধা নেই কিন্তু আমি চন্দুলাল' এই বিলীফ থাকা চলবে না।। প্রশ্নকর্তা : হ্যা, নয়তাে ‘আমি’ পদ এসে গেল। Page #11 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? দাদাশ্রী : ‘আমি’ ‘আমি’-র স্থানে বসলে অহংকার হয় না। কিন্তু ‘আমি’ মূল স্থানে নেই, আরােপিত স্থান থেকে ‘আমি’ সরে যায় আর মূল স্থানে বসে যায়, তাহলে অহংকার চলে গেছে বুঝবে। অর্থাৎ ‘আমি’ কে বের করতে হবে না, ‘আমি’ কে ওর এজাক্ট প্লেস (যথার্থ স্থান)-এ রাখতে হবে। ‘স্বয়ং’ স্বয়ং থেকেই গুপ্ত। এ’তাে অনন্ত জন্ম থেকে স্বয়ং ‘স্বয়ং’থেকে গুপ্ত থাকার প্রচেষ্টা চলে আসছে। স্বয়ং ‘স্বয়ং’ থেকে গুপ্ত থাকে আর অন্যের সব কিছু জানে, এটা আশ্চৰ্য্যই নয় কি! স্বয়ং ‘স্বয়ং’ থেকে কত সময় অবধি গুপ্ত থাকবে ? কতদিন থাকবে ? ‘আমি কে' এটা জানার জন্যেই এই জন্ম। মনুষ্যজন্ম এই কারণে যে ‘আমি কে’ তার সন্ধান করতে পারবে। নয়তাে ততদিন পর্যন্ত ঘুরে মরতে হবে। আমি কে' এই কথা জানতে হবে নাকি ? তুমি ‘স্বয়ং কে তা জানতে হবে কি হবে না ? | (৩) I’ আর ‘My কে পৃথক করার প্রয়ােগ! CANCIO, 'I' and 'My Grace Th TOTI TT CT, separate ‘l' and My’ with separator, তাে তুমি I’ আর ‘My’ -কে সেপারেট করতে পারবে কি ? I’ আর My’ -কে সেপারেট করা দরকার কি না ? জগতে কখনও না কখনও জানতে হবে না কি ? সেপারেট I and My। যেমন দুধের জন্যে সেপারেটের হয়, যা দিয়ে ওর থেকে মালাই সেপারেট (আলাদা) করতে পারে ? তেমনি এটাও আলাদা করতে হবে। | তােমার কাছে ‘My’ বলে কোন বস্তু আছে ? I'একাই আছে কি My সাথে আছে ? প্রশ্নকর্তা : ‘My তাে সাথে থাকবেই! দাদাশ্রী : কি কি ‘My’ আছে তােমার কাছে ? Page #12 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? প্রশ্নকর্তা : আমার বাড়ী আর বাড়ীর সমস্ত বস্তু। দাদাশ্রী : সব-ই তােমার বলবে ? আর ওয়াইফ কার বলা হবে ? প্রশ্নকর্তা : ও আমার-ই। দাদাশ্রী : আর বাচ্চারা কার ? প্রশ্নকর্তা : ওরাও আমারই। দাদাশ্রী : আর এই ঘড়ি কার ? প্রশ্নকর্তা : ওটাও আমার।। দাদাশ্রী : আর এই হাত কার ? প্রশ্নকর্তা : হাত-ও আমারই। দাদাশ্রী : তাহলে আমার মাথা, আমার শরীর, আমার পা, আমার কান, আমার চোখ এরকম বলবে। এই শরীরের সমস্ত বস্তুকে আমার বলছাে তাে আমার যে বলছে সেই তুমি কে ? এটা ভেবে দ্যাখােনি? My’ নেম ইজ চন্দুলাল' বলবে, আবার বলবে আমি চদুলাল', এদের মধ্যে কোন বিরােধাভাস মনে হচ্ছে না কি ? প্রশ্নকর্তা :মনে হচ্ছে। দাদাশ্রী : তুমি চন্দুলাল, কিন্তু এতে ‘I' and 'My’ দুই-ই আছে। এই ‘Iand My’ দুই রেললাইন আলাদাই হয়। প্যারালাল-ই থাকে, কখনাে এক হয়ে যায় না। তবু তুমি এদের এক মনে করাে। এটা বুঝে নিয়ে ‘My’- কে সেপারেট করে দাও। তােমার মধ্যে যে ‘My আছে। তাকে একপাশে রাখাে। “My’ হার্ট তাে তাকে একপাশে রাখাে। এই শরীর থেকে আর কি কি সেপারেট করতে হবে ? প্রশ্নকর্তা : পা, ইন্দ্রিয়সমূহ। দাদাশ্রী : হ্যা, সমস্ত। পাঁচ ইন্দ্রিয়, পাঁচ কর্মেন্দ্রিয় সমস্ত-ই। আর তাছাড়া মাই মাইণ্ড' বলাে কি ‘আই অ্যাম মাইণ্ড' বলাে ? প্রশ্নকর্তা : ‘মাই মাইণ্ড' বলি। Page #13 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? দাদাশ্রী : আমার বুদ্ধি বলো তো ? প্রশ্নকর্তা : হ্যাঁ । দাদাশ্রী : আমার চিত্ত বলো কি না ? 12 প্রশ্নকর্তা : হ্যাঁ । দাদাশ্রী : আর ‘মাই ইগোইজম' বলো কি ‘আই অ্যাম ইগোইজম’ বলো ? প্রশ্নকর্তা : ‘মাই ইগোইজম'। দাদাশ্রী : ‘মাই ইগোইজ্‌জ্ম' বললে তাকে আলাদা করতে পারবে। কিন্তু এর আগে যা আছে তাতে তোমার অংশ কতটা তা তুমি জানো না । সেইজন্যে সম্পূর্ণরূপে সেপারেশন হয়না। তুমি তোমার কিছু দূর পর্য্যন্তই জানতে পারবে। তুমি স্থূল বস্তুকে জানো, সূক্ষ্মের পরিচয় তোমার হয়নি। সূক্ষ্মকে আলাদা করা, আবার সূক্ষ্মতরকে আলাদা করা, ফের সূক্ষ্মতমকে আলাদা করা তো জ্ঞানীপুরুষের-ই কাজ। হবে। কিন্তু এক-এক করে সমস্ত স্পেয়ারপার্টস বাদ দিতে থাকলে তো ‘I’ আর ‘My’, এই দুটি আলাদা হতে পারে, নয় কি ? ‘I’ এবং ‘My’ আলাদা করলে শেষে কি অবশিষ্ট থাকবে ? ‘My’–কে একদিকে রাখলে কি পড়ে থাকলো ? প্রশ্নকর্তা : ‘I’। দাদাশ্রী : ওই ‘I’–ই তুমি। ব্যস, ওই ‘I’–কেই রিয়েলাইজ করতে প্রশ্নকর্তা : তো সেপারেট করে এটা বুঝতে হবে কিযে যা অবশিষ্ট থাকল সেটা ‘আমি' ? দাদাশ্রী : হ্যাঁ, সেপারেট করার পরে যা অবশিষ্ট থাকল তা তুমি ‘স্বয়ং’, ‘I’ তুমি স্বয়ং-ই। ওর খোঁজ করতে হবে নাকি ? অর্থাৎ এটা সহজ রাস্তা, নয় কি ? ‘I’ আর ‘My’ কে আলাদা করলে ? Page #14 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? প্রশ্নকর্তা : রাস্তা তাে এমনিতে সহজ, কিন্তু ওই সূক্ষ্মতর আর সূক্ষ্মতম-ও আলাদা হয় তবেই না ? সে তাে জ্ঞানী বিনা হবে না ? দাদাশ্রী : হ্যা, সেটা জ্ঞানীপুরুষ দেখিয়ে দেবেন। এইজন্যেই তাে OTIST TOT, Separate l' and “My' with Gnani's separator. Si সেপারেটর-কে শাস্ত্রকার কি বলেন ? ভেদজ্ঞান বলেন। ভেদজ্ঞান ছাড়া তুমি কিভাবে আলাদা করবে ? কোন কোন বস্তু তােমার আর কি কি তােমার নয়, এ সম্পর্কে তােমার ভেদজ্ঞান নেই। ভেদজ্ঞান মানে এইসব ‘আমার' এবং ‘আমি’ এদের থেকে আলাদা। এইজন্যে জ্ঞানীপুরুষের কাছে, ওনার সান্নিধ্যে থাকলে ভেদজ্ঞান প্রাপ্ত হবে আর আমার (I’ আর My') সেপারেট হয়ে যাবে। I’ আর ‘My -এর ভেদ করলে এটা খুব সহজ নয় কি ? আমি এই উপায় বলেছি, এইভাবে চললে অধ্যাত্ম সহজ না কঠিন ? নয়তাে এই কালে জীবের তাে শাস্ত্র পড়তে পড়তেই দম বেরিয়ে যাবে। প্রশ্নকর্তা : বােঝার জন্যে তাে আপনার মতাে কাউকে দরকার হবে ? দাদাশ্রী : হ্যা, দরকার হবে। জ্ঞানীপুরুষ তাে অনেক হন না! কিন্তু যখন যে সময়ে আছেন তখন আমাদের নিজেদের কাজ করে নিতে হবে। জ্ঞানীপুরুষের সেপারেটর’ এক-আধ ঘণ্টার জন্যে নিয়ে নেবে, ওর কোন ভাড়া-টাড়া হয়না। ওটা দিয়ে সেপারেট করে নেবে। এতে I’ আলাদা হলেই তাে কাজ হয়ে গেল। সমস্ত শাস্ত্রের সার এটাই। আত্মা হতে হলে তাে আমার’ ‘My’ সমস্ত কিছু সমর্পণ করে দিতে হবে। জ্ঞানীপুরুষকে ‘My দিয়ে দিলে তােমার কাছে শুধুমাত্র ‘I’ থাকবে। I’ with My -এর নাম জীবাত্মা। আমি আছি আর এরা সব আমার’ –এটা জীবাত্মা দশা আর ‘আমি-ই আমি আর আমার কিছু নয়’ –এটা পরমাত্মা দশা। অর্থাৎ ‘My -এর কারণেই মােক্ষ হয় না। ‘আমি কে' এই জ্ঞান হওয়ার পর ‘My চলে যায়। My’ চলে গেলে তাে সবকিছুই চলে যায়। Page #15 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 14 | My’ ইজ রিলেটিভ ডিপার্টমেন্ট এণ্ড I’ ইজ রিয়েল। অর্থাৎ ‘I’ টেম্পােরারি হয় না, I’ ইজ পারমানেন্ট। My’ ইজ টেম্পােরারি। মানে তােমাকে I' খুঁজে বার করতে হবে। (৪) সংসারে উপরওয়ালা কে ? জ্ঞানী-ই ‘আমি’-র পরিচয় করান। প্রশ্নকর্তা : ‘আমি কে' এটা জানার যে কথা, তা সংসারে থেকে কিভাবে সম্ভব হবে ? | দাদাশ্রী : তাে কোথায় থেকে জানবে ? সংসার ছাড়া আর কোন জায়গা আছে কি যেখানে থাকতে পারবে ? এই জগতে সবাই সংসারী আর সবাই সংসারে থাকে। এখানেই ‘আমি কে তা জানতে পারা যায়। ‘তুমি কে’ তা বােঝার বিজ্ঞান এখানেই আছে। এখানে এসাে, আমি তােমাকে পরিচয় করিয়ে দেব। আর এই যে আমি তােমাকে যত প্রশ্ন করি, তাতে আমি একথা বলি না যে তুমি এই সমস্ত কর। তােমার পক্ষে সম্ভব হবে এরকম নয়। আমি তােমাকে কি বলছি যে আমি তােমার সব করে দেব। সে জন্যে তুমি চিন্তা কর না। প্রথমে এটা তাে বুঝে নাও যে বাস্তবে ‘আমি’ কি আর কি জানার যােগ্য ? সঠিক কথা কি ? কারেক্টনেস কি ? দুনিয়া কি ? এরা সমস্ত কারা ? পরমাত্মা কি ? | পরমাত্মা আছেন কি ? পরমাত্মা অবশ্যই আছেন এবং উনি তােমার কাছেই আছেন। বাইরে কোথায় খুঁজছাে ? কিন্তু কেউ আমাকে এই দরজা খুলে দিলে তবে তাে দর্শন করতে পারব! এই দরজা এমনভাবে বন্ধ হয়ে গেছে যে কেউ নিজে থেকে খুলতে পারে তা হওয়ার নয়। এতাে যিনি নিজে পার হয়েছেন এমন তরণ-তারণ জ্ঞানীপুরুষের-ই কাজ। Page #16 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 15 নিজের-ই ভুল নিজের উপরওয়ালা! ভগবান তাে তােমার স্বরূপ। তােমার কোন উপরওয়ালা নেই। কোন বাপ-ও উপরে নেই। তােমাকে কেউ কিছু করারও নেই। তুমি স্বাধীন, কেবলমাত্র নিজের ভুলের কারণে তুমি বাঁধা পড়ে আছ। তােমার উপরে কেউ নেই আর কোন জীব তােমার ব্যাপারে দখল দিতে (হস্তক্ষেপ করতে) পারে না। এত সমস্ত জীব আছে কিন্তু কোন জীবের তােমাতে দখল নেই। আর এই সমস্ত লােক যদি কিছু হস্তক্ষেপ করে তা তােমার ভুলের কারণেই করে। তুমি যে পূর্বে দখল করেছিলে, এ হল তার-ই ফল। এ আমি নিজে দেখে বলছি।। আমি এই দুই বাক্যে গ্যারান্টি দিচ্ছি, এতে মানুষ মুক্ত থাকতে পারবে। আমি বলছি যে, | ‘তােমার উপরে দুনিয়াতে কেউ নেই। তােমার উপরে তােমার ব্লাণ্ডার্স আর তােমার মিসটেকস্ আছে। এই দুটো না থাকলে তুমি পরমাত্মা-ই। আর তােমাতে কারাের এতটুকুও দখল নেই। কোন জীব অন্য কোন জীবকে কিঞ্চিৎমাত্র দখল করতে পারে এরকম স্থিতিতেই নেই, এমনই এই জগৎ। এই দুই বাক্যে সবকিছুর সমাধান এনে দেয়। (৫) জগৎ কর্তা কে ? জগৎ কর্তার বাস্তবিকতা! ফ্যাক্ট বস্তু না জানার কারণেই সব আটকে আছে। এখন তুমি যা জানাে তাই জানবে নাকি যা জানাে না তা জানবে ? জগৎ কি ? কিভাবে সৃষ্টি হল ? কে রচনা করল ? আমার এই জগতের সাথে কি দেনা-পাওনা ? আমার সাথে আমার আত্মীয়দের-ই বা Page #17 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? _16 কি সম্পর্ক ? ব্যবসা কিসের আধারে চলে ? আমি কর্তা না কি অন্য কেউ কর্তা ? এ সব জানার তাে দরকার আছে না কি ? প্রশ্নকর্তা : আজ্ঞে হ্যা। দাদাশ্রী : এইজন্যে এতে প্রথমে তুমি কি জানতে চাও, তার প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করছি। জগৎ কে রচনা করেছে, তােমার কি মনে হয় ? কে এই অশান্তিপূর্ণ জগৎ রচনা করেছে ? তােমার কি মত? প্রশ্নকর্তা : ভগবান-ই রচনা করেছেন হয়তাে। দাদাশ্রী : তাে তাহলে সমস্ত সংসারকে চিন্তাতে কেন রেখেছেন ? চিন্তারহিত কোন অবস্থাই নেই। প্রশ্নকর্তা : সব লােক তাে চিন্তাই করে।। প্রশ্নকর্তা: হা, কিন্তু উনি এই সংসার রচনা করেছেন তাে চিন্তাযুক্ত কেন করেছেন ? ওনাকে সি.বি.আই.পাঠিয়ে ধরিয়ে দাও। কিন্তু ভগবান দোষী নন! এ তাে লােকে ওনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বাস্তবে তাে, গড় ইজ নট ক্রিয়েটর অফ দিস্ ওয়ার্লর্ড অ্যাট অল।। ওনলি সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স-ই আছে। অর্থাৎ এ সমস্ত তাে প্রাকৃতিক রচনা। একে গুজরাতীতে আমি ‘ব্যবস্থিত শক্তি’ বলি। এ খুব সূক্ষ্ম কথা। | ওকে মােক্ষ বলেই না! ছােট বাচ্চা যে সে-ও বলে ‘ভগবান রচনা করেছেন। বড়-বড় সাধু-সন্তরাও বলেন ‘ভগবান রচনা করেছেন। এই কথা লৌকিক, অলৌকিক (রিয়েল) নয়। ভগবান যদি ক্রিয়েটর হতেন তাে উনি সর্বদা আমাদের উপরওয়ালা থাকতেন আর মােক্ষ বলে কোন বস্তু হত না। কিন্তু মােক্ষ আছে। ভগবান ক্রিয়েটর নন। মােক্ষ যারা বােঝে তারা ভগবানকে ক্রিয়েটর মনে করে না। ‘মােক্ষ’ আর ‘ভগবান ক্রিয়েটর' এ দুটো পরস্পর বিরােধী কথা। Page #18 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? ক্রিয়েটর তো সর্বদা উপকারী হবেন আর উপকার করছেন বলে শেষ পর্যন্ত উপকারী হয়েই থাকবেন । 17 তো ভগবানকে কে রচনা করেছে ? ভগবান রচনা করেছেন, এ কথা যদি আমি অলৌকিক পরিভাষায় বলি তো ‘লজিক’–ওয়ালা (যুক্তিবাদী) লোকে আমাকে প্রশ্ন করবে যে, ‘ভগবানকে কে রচনা করেছে ?' এইজন্যে প্রশ্ন ওঠে। লোকে আমাকে বলে, ‘আমাদের মনে হয়, ভগবান-ই জগতের কর্তা। আপনি তো অস্বীকার করেন। কিন্তু আপনার কথা মেনে নিতে পারছি না।' তখন আমি প্রশ্ন করি যে যদি আমি স্বীকার করে নিই যে ভগবান–ই কর্তা, তো সেই ভগবানকে কে রচনা করেছেন ? সেটা তুমি আমাকে বলো। আর সেই রচনাকর্তাকে কে রচনা করেছে ? কেউ কর্তা হলে তারও তো কর্তা থাকতে হবে, এটা ‘লজিক’-এ বলে। তাহলে তো এর কোন এণ্ড (অন্ত)-ই হবে না। সেইজন্য একথা ভুল। জগতের না আদি, না তো অন্ত ! মানে কারোর রচনা ছাড়া–ই সৃষ্টি হয়েছে, কেউ এর রচনা করেনি। কেউ রচনা করেনি, তাই এখন আমি কাকে এর সম্বন্ধে প্রশ্ন করবো ? আমিও খুঁজে বেড়াতাম যে কে এরজন্যে দায়ী যে এত ঝামেলা তৈরি করেছে ? আমি সমস্ত জায়গা খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও পাইনি। এ আমি ‘ফোরেন’–এর সায়েন্টিস্টদের বলেছি যে, ‘গড ক্রিয়েটর, কথা প্রমাণ করার জন্যে আপনারা আমার সাথে আলোচনা করুন। উনি যদি ক্রিয়েটর হন তা হলে কত সালে ক্রিয়েট করেছেন বলুন।' তখন ওঁরা বললেন, ‘সাল আমাদের জানা নেই। ' আমি প্রশ্ন করেছি ‘কিন্তু এর বিগিনিং ছিল কি ছিলনা ?' তখন বললেন, 'হ্যাঁ, বিগিনিং ছিল।' ক্রিয়েটর বললে তো বিগিনিং থাকবেই। যার বিগিনিং আছে তার অন্ত-ও থাকবে। Page #19 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? কিন্তু এ’তো বিনা এন্ড-এর জগৎ । বিগিনিং হয়নি তো এন্ড কোথা থেকে হবে ? এ’তো অনাদি-অনন্ত। যার বিগিনিং হয়নি তার কোন রচয়িতা নেই, এরকম মনে হয় না কি ? 18 ভগবানের সঠিক ঠিকানা তখন এই ফরেন-এর সায়েন্টিস্টরা জিজ্ঞাসা করলো, ‘তাহলে কি ভগবান নেই ?' তাতে আমি বললাম, ‘ভগবান না থাকলে এই জগতে যে সমস্ত ভাবনা আছে, সুখ-দুঃখের যে অনুভূতি হয়, তার কোন অনুভব-ই থাকত না। সুতরাং ভগবান অবশ্যই আছেন। ওঁরা আমাকে প্রশ্ন করলেন, “ভগবান কোথায় থাকেন?' আমি বললাম, ‘আপনাদের কোথায় মনে হচ্ছে ? ওনারা বললেন, “উপরে'। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘উনি উপরে কোথায় থাকেন ? ওনার গলির নম্বর কি ? কোন গলি তা আপনারা জানেন কি ? চিঠি পৌঁছাবে এরকম সঠিক অ্যাড্রেস আছে আপনাদের কাছে ? উপরে তো কোন বাপ-ও নেই। সমস্ত জায়গা আমি ঘুরে এসেছি। সবাই বলতো উপরে আছেন, উপরের দিকে অঙ্গুলি নিৰ্দেশ করতো। এতে আমার মনে হয়েছিল যে সবাই যখন বলছে তখন উপরে কিছু থাকা সম্ভব। এইজন্যে আমি উপরে সব জায়গা খুঁজে এসেছি কিন্তু উপরে তো শুধু আকাশ-ই আছে, উপরে কাউকে পাইনি। উপরে তো কেউ থাকে না। তখন ওই ফরেন-এর সায়েন্টিস্টরা আমাকে বললেন, ‘ভগবানের সঠিক অ্যাড্রেস বলবেন কি ?' আমি বললাম, “লিখে নিন । গড ইজ্ ইন্ এরি ক্রিয়েচার, হোয়েদার ‘ভিজিল্’ অর ‘ইনভিজিল্‌’, নট্‌ ইন ক্রিয়েশন।' (ভগবান দৃশ্য বা অদৃশ্য সমস্ত জীবের মধ্যে বিদ্যমান, কিন্তু মানব-নির্মিত কোন বস্তুতে নয়।)' এই টেপরেকর্ডার-কে ‘ক্রিয়েশন' বলে। যত ম্যান-মেড (মানবনির্মিত) বস্তু আছে, মানুষের বানানো বস্তু আছে, তাতে ভগবান নেই । যা প্রকৃতির রচনা তাতে ভগবান আছেন। Page #20 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 19 মনের অনুকূল সিদ্ধান্ত ! কত সমস্ত সংযোগ একত্র হলে তবেই কোন কার্য হয়, অর্থাৎ এটা সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানসিয়াল এভিডেন্স। এত ইগোইজম করে ‘আমি করেছি' বলে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু ভাল হলে ‘আমি করেছি' আর খারাপ হলে ‘আমার সংযোগ এখন ঠিক নেই' এরকম বলে না লোকে ? সংযোগ তো লোকে মেনে নেয় ? প্রশ্নকর্তা : হ্যাঁ । দাদাশ্রী : উপার্জন হলে তার গর্বরস নিজে চাখে আর যখন লোকসান হয় তখন কিছু বাহানা বানাতে থাকে। আমি যদি বলি, ‘শেঠজী, এখন এরকম কি করে হল ?” তখন বলবে, ‘ভগবান রুষ্ট হয়েছেন।' প্রশ্নকর্তা : মনের অনুকূল সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। দাদাশ্রী : হ্যাঁ, মনের অনুকূল, কিন্তু এরকম দোষারোপ ওনার প্রতি (ভগবানের প্রতি) করা অনুচিৎ। উকিলের উপর দোষ চাপায় বা অন্য কারোর উপর দোষ চাপায় সেটা তবু ঠিক আছে। কিন্তু ভগবানের উপর দোষ চাপানো যায় কি ? উকিল তো নালিশ ঠুকে হিসাব চাইবে কিন্তু এর নালিশ কে করবে ? এর ফলে তো পরের জন্মে ভয়ংকর (সংসার) বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। ভগবানের উপর দোষ চাপানো যায় কি ? প্রশ্নকর্তা : না, যায় না। দাদাশ্রী : নয়তো বলবে ‘স্টার্স ফেভারেবল্ (গ্রহ অনুকূল) নয়।' অথবা বলবে ‘অংশীদার লোক ভাল নয়।' নাহলে ‘পুত্রবধূ দুর্ভাগ্য নিয়ে এসেছে' এরকমও বলে। কিন্তু নিজের মাথায় নেবে না। নিজের উপর কখনো দোষ চাপাবে না। এই প্রসঙ্গে আমার একজন বিদেশীর সাথে কথা হয়েছিল। সে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনাদের ইণ্ডিয়ান লোকেরা দোষ নিজের উপর নেয় না কেন ?' আমি বললাম, ‘এটাই ইণ্ডিয়ান পাজল। ইণ্ডিয়ার সব থেকে বড় পাজ (সমস্যা) যদি কিছু থাকে তো এটাই। Page #21 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স! এইজন্যে আলােচনা করাে, যা কিছু আলােচনা করতে চাও সব করাে। এমনভাবে আলােচনা করাে যাতে তােমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রশ্নকর্তা : এই ‘সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স’ বুঝতে পারলাম না। দাদাশ্রী : এই সমস্ত সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স – এর আধারে হয়। সংসারে একটা পরমাণুও চেঞ্জ হতে পারে না। তুমি এখন খেতে বসেছাে, তাে তােমার কি জানা নেই যেকি খাবে ? রাঁধুনী কি জানে না কাল কি রান্না করবে ? এ সমস্ত কিভাবে হয়, সেটাই আশ্চর্য ! তুমি কতটা খেতে পারবে আর কতটা পারবেনা, সে সব পরমাণুমাত্র এবং পূর্বনির্ধারিত আছে।। তুমি যে আজ আমার সাথে সাক্ষাৎ করলে, তা কিসের ভিত্তিতে করতে পারলে ? ওনলি ফর সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স -এর জন্য। অতি অতি গুহ্য কারণ আছে। ওই কারণগুলাে খুঁজে বার করাে। প্রশ্নকর্তা : কিন্তু তাকে খুঁজবাে কিভাবে ? দাদাশ্রী : তুমি যে এখানে এসেছাে, এতে তােমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ও তাে তুমি মেনে নিয়েছাে, ‘ইগােইজ’ করছাে যে আমি এলাম আর গেলাম।' এই যে তুমি বলছাে ‘আমি এলাম আর আমি যদি বলি ‘কাল কেন আসােনি?তখন এরকমভাবে পা দেখালে, তাতে কি বুঝতে হবে ? | প্রশ্নকর্তা : পায়ে ব্যাথা করছিল। দাদাশ্রী : হ্যা, পায়ে ব্যাথা করছিল। পায়ের বাহানা করলে বুঝতে পারা যায় কিনা যে তুমি আসতে না পা আসতাে ? প্রশ্নকর্তা : কিন্তু আমি-ই এসেছি এরকম বলে নাকি ? Page #22 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 21 দাদাশ্রী : তুমি-ই এসেছো, নয় কি ? যদি পা ব্যাথা করে তবুও কি আসবে ? প্রশ্নকর্তা : আমার নিজের ইচ্ছে ছিল আসার, সেইজন্যে এসেছি । দাদাশ্রী : হ্যাঁ, তোমার ইচ্ছে ছিল সেইজন্যে এসেছো। কিন্তু এই পা ইত্যাদি সব ঠিকঠাক ছিল বলেই না আসতে পেরেছো ? ঠিক যদি না থাকতো তা হলে ? প্রশ্নকর্তা : তবে তো আসতে পারতাম না, ঠিক কথা—ই। দাদাশ্রী : মানে তুমি একা আসতে পারতে ? যেমন এক ব্যক্তি রথে চড়ে এখানে এসেছে আর বলছে, ‘আমি এসেছি, আমি এসেছি।' আমি প্রশ্ন করলাম ‘তোমার পায়ে তো প্যারালিসিস হয়েছে, তুমি এলে কি করে?' তাতে বললো 'রথে চড়ে এসেছি। কিন্তু আমি-ই এসেছি, আমি-ই এসেছি।' আরে! কিন্তু রথ এসেছে কি তুমি এসেছো ? তখন বললো ‘রথ এসেছে।' ফের আমি প্রশ্ন করলাম যে ‘রথ এসেছে কি বলদ এসেছে ?' অর্থাৎ কথা কোথাকার আর এ কোথায়! কিন্তু দ্যাখো, উল্টো বুঝে নিয়েছে কি না! সমস্ত সংযোগ অনুকূল হলে তবেই আসতে পেরেছো, নয়তো আসতে পারতে না। মাথায় যন্ত্রণা হলে তুমি এলেও আবার ফিরে যাবে কি না ? আমি–ই যদি আসা যাওয়া করছি তো মাথা যন্ত্রণার অজুহাত তো দিতে পারি না ? আরে, তখন মাথা এসেছিল কি তুমি এসেছিলে ? আর রাস্তায় যদি কারোর সাথে দেখা হয় আর সে বলে, ‘চলুন চান্দুলাল আমার সাথে’ তাহলেও তো তুমি ফিরে চলে যাবে। সংযোগ অনুকূল হলে, এখানে পৌঁছানো পর্য্যন্ত কেউ বাধা দেওয়ার না থাকলে তবেই তুমি আসতে পারবে। নিজের সত্ত্বা কতখানি ? তুমি তো কখনও খাও-ই নি! এ সমস্ত তো চন্দুলাল খায় আর Page #23 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? তুমি মনে করাে যে তুমি খাচ্ছ। চন্দুলাল খায় আর চন্দুলাল মলত্যাগ-ও করে। অকারণে এতে ফেঁসে আছে। তুমি এটা বুঝতে পারলে ? প্রশ্নকর্তা : বুঝিয়ে দিন। দাদাশ্রী : এই সংসারে এমন কোন মানুষ জন্মায়নি যার মলত্যাগ করতে যাওয়ারও স্বতন্ত্র সত্ত্বা আছে। মলত্যাগ করারও স্বতন্ত্র সত্ত্বা নেই কারাে কাছে তাে আর কোন সত্ত্বা থাকবে ? এ তাে যতক্ষণ পর্যন্ত তােমার ইচ্ছানুসারে অল্প-বিস্তর হয় তখন মনে করে নাও যে তােমার দ্বারাই সব কিছু হচ্ছে। যখন আটকে যায় তখন বুঝতে পারাে। | আমি ‘ফরেন-রিটার্ন’ ডাক্তারদের দশ-বারােজনকে এখানে ডেকেছিলাম, বড়ােদা-তে। তাদেরকে আমি বললাম, ‘মলত্যাগ করার ও স্বতন্ত্র সত্ত্বা আপনাদের নেই। এতে ওঁরা হতচকিত হয়ে গেলেন। আবার বললাম, ও তাে যখন আটকে যাবে তখন বুঝতে পারবেন তখন ওখানে কারাের হেল্প নিতে হবে। সুতরাং আপনার স্বতন্ত্র সত্ত্বা এতে নেই। এ তাে ভুল করে প্রকৃতির শক্তিকে নিজের শক্তি বলে মেনে নিয়েছেন। পরসত্ত্বাকে নিজের সত্ত্বা বলে মেনে নেওয়া, এরই নাম ভ্রান্তি। এই কথা কিছু বুঝতে পারলে তুমি ? দু-আনা চার-আনা বুঝলে কি ? প্রশ্নকর্তা : হা, বুঝতে পারছি। দাদাশ্রী : এইটুকু বুঝতে পারলে তাে সমাধান হয়ে যাবে। এই লােকেরা বলে না যে, আমি এত তপ করলাম, এইরকম জপ করলাম, উপবাস রাখলাম’ এ সমস্তই ভ্রান্তি। তবুও জগৎ তাে যেমন আছে তেমন-ই থাকবে। অহংকার না করে থাকবেই না। স্বভাব আছে । কর্তা, নৈমিত্তিক কর্তা— প্রশ্নকর্তা : যদি বাস্তবে আমি কর্তা নই তাহলে কর্তা কে ? তার স্বরূপ কি রকম ? দাদাশ্রী : আসলে নৈমিত্তিক কর্তা তাে তুমি স্বয়ং নিজেই। নিজে Page #24 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? স্বয়ং স্বতন্ত্র কর্তানও কিন্তু নৈমিত্তিক কর্তা। মানে পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে কর্তা। পার্লামেন্টারি পদ্ধতি মানে ? যেমন পার্লামেন্টে সবার ভােটিং হয়, আর ফের শেষে নিজের ভােট হয়। তার আধারে নিজে স্বয়ং বলে যে। এ’তাে আমাকে করতে হবে। এই হিসাবে কর্তা হয়, এইভাবে যােজনার সৃষ্টি করে। নিজে স্বয়ংই যােজনা করে। কর্তাপন কেবল যােজনাতেই থাকে। যােজনাতে ওর সই থাকে। কিন্তু সংসারের লােকেরা এটা জানে । এটা ব্যষ্টি কম্পিউটার, ছােট কম্পিউটারের মত। যেমন ছােট কম্পিউটারে যা ফীড করা হয়েছে তা বার হয় আর বড় কম্পিউটারে তা ফীড় হয়ে যায়। সেইরকমই এই যােজনা সৃষ্ট হয়ে বড় কম্পিউটারে যায়। বড়কম্পিউটার হল সমষ্টি কম্পিউটার—সেটা এর বিসর্জন করে। এইজন্যে এই জন্মে সমস্ত লাইফ বিসর্জনরূপে থাকে, যার সৃষ্টি গত জন্মে করা হয়েছে। সেইজন্যে এই জীবনে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিসর্জন স্বরূপেই আছে। নিজের হাতে কিছু নেই, সব পরসত্তাতে আছে। একবার যােজনা হয়ে গেলে সব পরসত্ত্বাতে চলে যায়। পরিণামে পরসত্ত্বার-ই নিয়ন্ত্রণে থাকে। অর্থাৎ পরিণাম আলাদা। পরিণাম পরসত্ত্বার অধীন। বুঝতে পারছ ? এ অতি গূঢ় কথা। কর্তাপদ থেকে কর্মবন্ধন! প্রশ্নকর্তা : এই কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তির জন্য কি করবাে ? দাদাশ্রী : এই কর্মকর্তার অধীন। এইজন্যে কর্তা হলে তবেই কর্ম হবে। কর্তা না হলে কর্ম হবেনা। কর্তা কেমন করে হয় ? আরােপিত ভাবে গিয়ে বসার জন্যে-ই কর্তা হয়েছে। নিজের মূল স্বভাবে আসলে স্বয়ং কর্তা হবেইনা। আমি করেছি' এইরকম বলেছাে, এইজন্যে কর্তা হয়েছে। মানে কর্ম-কে আধার দিয়েছে। এখন নিজে যদি কর্তা না হও তাে কর্ম থাকবে না, নিরাধার করলে কর্ম থাকবে না। মানে যতক্ষণ কর্তাপদ আছে ততক্ষণ কর্ম-ও আছে। Page #25 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 24 ‘ছুটে দেহাধ্যাস তাে নহি কর্তা তু কর্ম, (দেহাধ্যাস গেলে কর্ম-এর কর্তা তুমি নও)। নহি ভােক্তা তু ইসকা, এহি ধর্মকা মর্ম (তুমি এর ভােক্তানও, ধর্মের এটাই মর্ম)। —শ্রীমদ্ রাজচন্দ্র এখন তুমি আমি চন্দুলাল’ এরকম মনে ধারণা করে বসে আছ, সেইজন্যে সব একাকার হয়ে গেছে। ভিতরে দুটি বস্তু আলাদা আছে। তুমি আলাদা, চন্দুলাল আলাদা। কিন্তু তুমি যতক্ষণ এটা না জানছাে ততক্ষণ কি হবে ? জ্ঞানী পুরুষ ভেদ-বিজ্ঞান দিয়ে আলাদা করে দিলে যখন ‘তুমি’ (চন্দুলাল’ থেকে) আলাদা হয়ে যাবে তখন তােমাকে আর কিছু করতে হবেনা, সব ‘চন্দুলাল' করবে। (৬) ভেদজ্ঞান কে করায় ? আত্ম-অনাত্মার বৈজ্ঞানিক বিভাজন! যেমন এই আংটিতে সােনা আর তামা দুই মিশে আছে। একে আমি গ্রামে নিয়ে গিয়ে কাউকে যদি বলি যে, 'ভাই, আলাদা-আলাদা করে দিন তাে যে কেউ কি করে দিতে পারবে ? কে করতে পারবে ? প্রশ্নকর্তা : স্বর্ণকার-ই করতে পারবে। দাদাশী: এটা যার কাজ, যে এতে এক্সপার্ট, সেই সােনা আর তামা দুই-ই আলাদা করে দেবে। শতকরা একশাে ভাগ শুদ্ধ সােনা আলাদা করে দেবে কারণ ও দু’টোর-ই গুণধর্ম জানে যে সােনার গুণধর্ম এই আর তামার গুণধর্ম এই। সেইরকম জ্ঞানীপুরুষ আত্মার গুণধর্ম জানেন আর অনাত্মার গুণধর্ম-ও জানেন। আংটিতে সােনা আরতামা ‘মিক্সচার’ রূপে থাকে বলে এদের আলাদা করা যায়। সােনা আর তামা কম্পাউণ্ড স্বরূপে থাকলে তাদের আর আলাদা করা যেত না। কারণ সেক্ষেত্রে গুণধর্ম অন্য প্রকারের হয়ে যেত। Page #26 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? সেইরকমই জীবের ভিতর চেতন আর অচেতন মিক্সচার-রূপে থাকে, কম্পাউণ্ড স্বরূপে থাকে না। সেইজন্যে আবার নিজের স্বভাব ফিরে পেতে পারে। কম্পাউণ্ড হলে তাে বােঝাই যেত না। চেতন-এর গুণধর্ম-ও বােঝা যেত না আর অচেতন-এর গুণধর্ম-ও বােঝা যেত না। তৃতীয় কোন গুণধর্ম উৎপন্ন হত। কিন্তু তা নয়। এ তাে কেবল মিক্সচার হয়েছে। এইজন্যে জ্ঞানীপুরুষ এদের আলাদা করে দিলে আত্মার পরিচয় হয়ে যায়। জ্ঞানবিধি কি ? প্রশ্নকর্তা : আপনার জ্ঞানবিধি কি ? দাদাশ্রী:জ্ঞানবিধি তাে সেপারেশন (আলাদা) করে পুদগল (অনাত্মা) আর আত্মার ! শুদ্ধচেতন আর পুদ্গল, দুই-এর সেপারেশন। প্রশ্নকর্তা : এটা সিদ্ধান্তরূপে তাে ঠিক আছে কিন্তু এর পদ্ধতি কি ? দাদাশ্রী : এতে কিছু দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপার নেই। কেবলমাত্র এখানে বসে যেমনটি বলানাে হবে তেমনটি বলতে হবে। আমি কে' তার পরিচয় দেওয়ার জন্য দু-ঘণ্টার জ্ঞান প্রয়ােগ হয়। এর মধ্যে ৪৮ মিনিট আত্ম-অনাত্মার ভেদ করানাের জন্য ভেদবিজ্ঞান -এর বাক্য বলানাে হয়। | যা সবাইকে বলতে হয়। এরপরে একঘণ্টায় পাঁচ আজ্ঞা উদাহরণ দিয়ে সবিস্তারে বােঝানাে হয়, বাকি জীবন কেমনভাবে ব্যতিত করতে হবে যাতে নতুন কর্মবন্ধন না হয় আর পুরানাে কর্ম সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায়। সাথে সাথে আমি শুদ্ধাত্মা' এই লক্ষ্য সবসময় থাকে। আবশ্যকতা গুরু-র, না জ্ঞানী’র ? প্রশ্নকর্তা: দাদাজী-কে পাওয়ার আগে কাউকে গুরু বলে মানলে ? তাহলে ওনার কি করবাে ? দাদাশ্রী : ওনার কাছে যাবে। আর যদি না যেতে চাও তাে যাওয়া আবশ্যকও নয়। তুমি যেতে চাইলে যাবে, না যেতে চাইলে যাবে না। Page #27 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? ওনার দুঃখ না হয় সেইজন্যে যেতে হবে। তােমাকে বিনয় রাখতে হবে। এখানে ‘আত্মজ্ঞান নেওয়ার সময় আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, ‘এখন কি আমি গুরুকে ছেড়ে দেব ? তাহলে আমি বলি, ‘ছেড়াে না। আরে, ওই গুরুর প্রভাবেই তাে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছাে। গুরুর জন্যেই মানুষ সীমার মধ্যে থাকতে পারে। গুরু না থাকলে তাে সীমা-ও থাকবে না। আর গুরুকে বলা উচিৎ যে, আমি জ্ঞানীপুরুষএর দর্শন করতে যাচ্ছি। কিন্তু লােক তাে নিজের গুরুকেও আমার কাছে নিয়ে আসে কারণ গুরুরও তাে মােক্ষ চাই। সংসারের জ্ঞান গুরু বিনা হয় না আর মােক্ষের জ্ঞান-ও গুরু বিনা হয় না। ব্যবহার-এর গুরু ‘ব্যবহার’ -এর জন্য আর জ্ঞানীপুরুষ ‘নিশ্চয়’ -এর জন্য। ব্যবহার রিলেটিভ আর নিশ্চয় রয়্যাল। রিলেটিভ -এর জন্য গুরু চাই আর রিয়্যাল-এর জন্য জ্ঞানীপুরুষ চাই।। (৭) মােক্ষ -এর স্বরূপ কি ? ধ্যেয় কেবল এটাই হওয়া উচিৎ ! প্রশ্নকর্তা : মানুষের কি ধ্যেয় হওয়া উচিৎ ? দাদাশ্রী : মােক্ষ-এ যাওয়ার-ই। এটাই ধ্যেয় হওয়া উচিৎ। তুমিও মােক্ষেই যেতে চাও না কি ? কতদিন ঘুরে মরবে ? অনন্ত জন্মাতে তাে ঘুরছাে, ঘুরছাে ... ঘুরতে আর কিছু বাকি রাখােনি। জানােয়ার গতি, (পশুজন্ম), মনুষ্যগতি, দেবগতি ----সব জায়গাতেই ঘুরেই বেড়িয়েছে। কেন এরকম ঘুরতে হচ্ছে ? কারণ ‘আমি কে' এটাই জান না ? নিজের স্বরূপের সাথে পরিচয় হয়নি। নিজের স্বরূপ-কে চেনা দরকার। নিজে কে’ – এটা জানা দরকার, নয় কি ? এতাে ঘুরছাে, তবুও জানতে পারােনি ? কেবল পয়সা-উপার্জনেই ব্যস্ত ছিলে ? মােক্ষের জন্যেও তাে অল্প-বিস্তর কিছু করা প্রয়ােজন, না কি প্রয়ােজন নেই ? প্রশ্নকর্তা : করা দরকার। Page #28 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? দাদাশ্রী : অর্থাৎ স্বতন্ত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই কি ? এরকম পরবশ কতদিন থাকবে ? প্রশ্নকর্তা : স্বতন্ত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই কিন্তু স্বতন্ত্র হওয়ার বোধের প্রয়োজন আছে, এইরকম—ই আমি মনে করি। 27 দাদাশ্রী : হ্যাঁ, এই বোধের-ই প্রয়োজন আছে। এই বোধকে তুমি জেনে নিলেও অনেক হয়ে গেল, স্বতন্ত্র না-ই হলে। স্বতন্ত্র হলো কি না হলো সে তো পরের কথা কিন্তু এর বোধের তো প্রয়োজন আছে ? প্রথমে বোধপ্রাপ্ত হলেও অনেক হল । ‘স্বভাব’-এ আসতে পরিশ্রম নেই! মোক্ষ মানে নিজের স্বভাবে আসা আর সংসার মানে নিজের বিশেষভাবে যাওয়া। তাহলে সহজ কোনটা ? স্বভাবে থাকা ! অর্থাৎ মোক্ষ কঠিন নয়। সংসার সবসময়েই কঠিন । মোক্ষ তো খিচুড়ী রান্নার চেয়েও সহজ। খিচুড়ী রান্নার জন্যে তো কাঠ আনতে হবে, চাল-ডাল আনতে হবে, বাসন আনতে হবে, জল আনতে হবে, তবে-ই খিচুড়ী বানানো যাবে। এই স্থিতিতে মোক্ষ তো খিচুড়ী রান্নার চেয়েও সহজ কিন্তু মোক্ষদাতা জ্ঞানীর সাক্ষাৎ হওয়া চাই। নয়তো মোক্ষ কখনই হবে না । কোটি বার জন্মগ্রহণ করলেও হবেনা। অনন্ত জন্ম তো হয়ে গেছে ? পরিশ্রম করে মোক্ষ পাওয়া যায় না! এই যে আমি বলি, যে আমার কাছে এসে মোক্ষ নিয়ে যাও তো লোকেরা মনে মনে ভাবে যে, ‘নিজের পরিশ্রম ছাড়া এইরকমভাবে দেওয়া মোক্ষ কোন কাজে আসবে ?!' তো ভাই, পরিশ্রম করে আনো, দ্যাখো, ওদের বুদ্ধি কত ভালো (!) ?! শুধু পরিশ্রম করে কিছুই পাওয়া যাবে না । পরিশ্রম করে কেউ কখনো মোক্ষ পায়নি । প্রশ্নকর্তা : মোক্ষ দেওয়া বা নেওয়া সম্ভব কি ? Page #29 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 28 | দাদাশ্রী: ও তাে দেওয়া-নেওয়ার নয়ই। এ তাে নৈমিত্তিক হয়েছে। তুমি আমার কাছে এলে, এটা নিমিত্ত হল। নিমিত্ত হওয়া জরুরী। নয়তাে না কেউ দেওয়ার আছে, না কেউ নেওয়ার আছে। দানী কাকে বলে ? কেউ নিজেরবস্তু দিলে তাকে দানী বলে। কিন্তু মােক্ষ তাে তােমার ঘরেই আছে, আমার তাে কেবল তােমাকে দেখিয়ে দিতে হবে। মানে নেওয়া-দেওয়ার ব্যাপারই নয়। আমি তাে কেবল নিমিত্তমাত্র। মােক্ষ মানে সনাতন সুখ! প্রশ্নকর্তা : মােক্ষ পেলে কি করবাে ? দাদাশ্রী : কিছু কিছু লােক আমার কাছে আসে যারা বলে যে আমাদের মােক্ষ চাই না। আমি তাদের বলি, ‘ভাই তােমাদের মােক্ষের প্রয়ােজন নেই, কিন্তু সুখ তাে চাই নাকি চাই না ? দুঃখ পছন্দ করাে কি ? তারা বলে, ‘না, সুখ তাে চাই।' তখন আমি বলি, ‘সুখ একটু আধটু কম হলে চলবে ? তাতে বলে, “না, সুখ তাে পুরাে-ই চাই।' তখন আমি বলি, তাহলে আমি সুখেরই কথা বলছি। মােক্ষের কথার প্রয়ােজন নেই। মােক্ষ কি বস্তু তা লােকেরা বােঝেই না। শব্দটা শুধু বলে। অনেকে তাে এরকম মনে করে যে মােক্ষ বলে কোন জায়গা আছে আর সেখানে গেলে আমরা মােক্ষের আনন্দ পাবাে। কিন্তু এটা এরকম নয়। মােক্ষ, দুটি পর্যায়ে ! প্রশ্নকর্তা : মােক্ষ -এর অর্থ, আমরা সাধারণভাবে ‘জন্ম-মৃত্যু থেকে মুক্তি’ এরকম বুঝি। | দাদাশ্রী:হা, সেটা ঠিক আছে; কিন্তু যে অন্তিম মুক্তি, তা সেকেণ্ডারি স্টেজে আসে। কিন্তু প্রথম স্টেজে প্রথম মােক্ষ মানে সংসারী দুঃখের অভাব হয়। সংসারের দুঃখেও দুঃখের কোন অনুভূতি হয়না। উপাধিতেও সমাধি থাকে, এটাই প্রথম মােক্ষ। আর তারপরে এই দেহ বিলয় হলে Page #30 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? আত্যন্তিক মোক্ষ হয়। কিন্তু প্রথম মোক্ষ তো এখানেই হওয়া দরকার। আমার মোক্ষ তো হয়েই গেছে! সংসারে থাকলেও সংসার স্পর্শ করবে না এরকম মোক্ষ হতে হবে। এই আক্রম – বিজ্ঞানে এরকম-ই হয়। 29 বেঁচে থাকতেই মুক্তি ! প্রশ্নকর্তা : এই যে মোক্ষ বা মুক্তি, তা কি বেঁচে থাকতে–ই হয়, না কি মরার পরে মুক্তি হয়। দাদাশ্রী : মরার পরে মুক্তি কোন কাজে লাগবে ? মরার পরে মুক্তি হবে এরকম বলে লোককে ফাঁদে ফেলে। আরে, আমাকে এখানেই কিছু দেখাও না। কিছু তো আস্বাদ করাও, কিছু প্রমাণ তো দাও। ওখানে মোক্ষ হবে তার নিশ্চয়তা কোথায় ? এরকম ধার নেওয়া মোক্ষ নিয়ে আমি কি করবো ? ধার নেওয়াতে ফল পাওয়া যায় না। এইজন্য ক্যাশ (নগদ)–ই ভালো। আমাদের এখানে বেঁচে থাকতেই মুক্তি হওয়া চাই। যেমন জনক রাজার মুক্তি তুমি শোন নি। প্রশ্নকর্তা : শুনেছি । অক্রম মার্গ কি ? অক্রমজ্ঞান থেকে অদ্ভুত সিদ্ধি ! প্রশ্নকর্তা : কিন্তু এই সংসারে থেকে এরকম আত্মজ্ঞান পাওয়া যায় কি ? দাদাশ্রী : হ্যাঁ, এরকম রাস্তা আছে। সংসারে থেকেই শুধু নয়, স্ত্রীর সাথে থেকেও আত্মজ্ঞান পাওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র সংসারে থেকেই নয়, পরন্তু ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে, সমস্ত কর্ম করেও আত্মজ্ঞান হতে পারে। আমি সংসারে থেকেই এটা করিয়ে দিই। সংসারে, অর্থাৎ সিনেমা দেখতে যাওয়া ইত্যাদি সমস্ত প্রকারের ছাড় তোমাকে দিই। ছেলেমেয়ের বিয়ে দেবে আর ভাল জামাকাপড় পরে বিয়ে দেবে। এর চেয়ে বেশী আর কি গ্যারান্টি চাও ? Page #31 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? | 30 প্রশ্নকর্তা : এত সমস্ত ছাড় পেলে তবে তাে নিশ্চয়ই আত্মাতে থাকতে পারবাে। দাদাশ্রী : সমস্ত ছাড়! এটা অপবাদ (সাধারণ নিয়মের বাইরে) মার্গ। তােমাকে কিছু পরিশ্রম করতে হবেনা। তােমার আত্মা তােমার হাতে দিয়ে দেব, এরপরে আত্মরমণতাতে থাকো আর এই লিফ্ট-এ বসে থেকো। তােমাকে আর কিছুই করতে হবে না। ফের তােমার কোন কর্মবন্ধনও হবে না। এক জন্মের-ই কর্মবন্ধন হবে, সেও আমার আজ্ঞা পালন করার জন্যে। আজ্ঞায় থাকা এইজন্যে জরুরী যে লিফট-এ বসার সময় যদি হাত এদিক-ওদিক করাে তাে বিপদে না পড়ে যাও ! প্রশ্নকর্তা :মানে এর পরের জন্ম অবশ্যই হবে ? দাদাশ্রী : আগের জন্ম-ও ছিল আর এখন পরের জন্ম-ও আছে, কিন্তু এই জ্ঞান এমনই যে এর পরে এক-দুই জন্ম-ই বাকী থাকে। প্রথমে অজ্ঞান থেকে মুক্তি হয়, ফের দু-এক জন্মে অন্তিম মুক্তি পেয়ে যাবে। এই কাল এমনই যে এক জন্ম তাে অবশ্যই থাকবে। | তুমি একটা দিন আমার কাছে এসাে। আমি একটাদিন স্থিরকরবাে, সেদিন তােমাকে আসতে হবে। ওই দিন সবার রঞ্জু পিছন থেকে কেটে দিই (স্বরূপের অজ্ঞানরূপী রজ্জর বন্ধন দূর করে দিই)। রােজ কাটি না, রােজ তাে সৎসঙ্গেরই সমস্ত কথা বলি। কিন্তু একদিন স্থির করি আর ওইদিন ব্লেড দিয়ে এইভাবে রজু কেটে দিই (জ্ঞানবিধিতে স্বরূপজ্ঞান – এর প্রাপ্তি করাই), আর কিছু নয়। ফেরশীঘ্রই তুমি বুঝে যাবে যে এইসব খুলে গেছে। এই অনুভব হলেই সাথে সাথে বলে যে মুক্ত হয়ে গেছি। অর্থাৎ মুক্ত হয়েছে এরকম ভান (বােধ) হওয়া চাই। মুক্ত হওয়া, এটা কোন গল্পকথা নয়। আমি তােমাকে মুক্ত করিয়ে দিই। | যেদিন এই ‘জ্ঞান’ দিই সেদিন কি হয় ? তােমার যা কর্ম আছে তা জ্ঞানাগ্নিতে ভস্মীভূত হয়ে যায়। দু'ধরণের কর্ম ভস্মীভূত হয়ে যায় আর এক প্রকারের কর্মবাকী থেকে যায়। যে কর্ম বাষ্পরূপে আছে তানাশ হয়ে যায়। যে কর্ম জলরূপে আছে তাও নাশহয়ে যায়। কিন্তু যে কর্ম বরফরূপে Page #32 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? আছে তার নাশনয় না। বরফরূপে যে কর্ম আছে তা ভুগতেই হবে; কারণ এই কর্ম জমে কঠিন হয়ে গেছে। যে কর্ম ফল দেওয়ার জন্যে তৈরী হয়ে | গেছে তা তাে ছাড়বে না। কিন্তু জল আর বাষ্পরূপে যেকর্ম আছে তাকে জ্ঞানাগ্নি নষ্ট করে দেয়। এইজন্যে জ্ঞান পেতেই লােক একদন হাল্কা হয়ে যায়, তার জাগৃতি বেড়ে যায়। যতক্ষণ কর্ম ভস্মীভূত না হচ্ছে ততক্ষণ জাগৃতি বাড়ে না। বরফের মত কঠিন যে কর্ম তা তােমাকে ভুগতে হবে। আর তাও সহজভাবে (কম কষ্টে) কেমন করে ভুগতে হবে তারও সব উপায় আমি বলে দিচ্ছি যে, ‘ভাই, এই ‘দাদা ভগবানের অসীম জয়জয়কার হােক’ বলবে, ত্রিমন্ত্র বলবে, নয় কলম বলবে।' আমি জ্ঞান দিই, এতে কর্ম ভস্মীভূত হয়ে যায় আর সেইসময় অনেক আবরণ নষ্ট হয়ে যায়। তখন ভগবানের কৃপা হওয়ার সাথে ও স্বয়ংই জাগৃত হয়ে যায়। ওই জাগৃতি আর যাবে না। জাগার পরে আর চলে যায় না; নিরন্তর জাগৃত থাকতে পারে। মানে নিরন্তর প্রতীতি থাকবেই। প্রতীতি কখন থাকবে ? জাগৃতি হলে তবেই প্রতীতি থাকে। প্রথমে জাগৃতি, তারপরে প্রতীতি। ফের অনুভব, লক্ষ্য আর প্রতীতি এই তিন-ই থাকবে। প্রতীতি সমস্ত সময়ের জন্যে থাকবে। লক্ষ্য তাে কখনাে কখনাে থাকবে। কোন ব্যবসা বা কোন কাজে লেগে গেলে লক্ষ্য চলে যাবে, আবার কাজ শেষ হলেই লক্ষ্যে ফিরে আসবে। আর অনুভব তখনই হবে যখন কাজ থেকে, সমস্ত কিছু থেকে নিবৃত হয়ে একান্তে বসে আছাে তখন অনুভবের স্বাদ আসবে। আর অনুভব তাে ক্রমশঃ বাড়বেই। কারণ আগের চন্দুলাল কি ছিল আর আজকের চন্দুলাল কি হয়েছে তা বুঝতে পারবে। তাে এই পরিবর্তন কিভাবে আসে ? আত্মা অনুভব থেকে। আগে দেহাধ্যাসের অনুভব ছিল আর এখন এই আত্ম-অনুভব আছে। প্রশ্নকর্তা : আত্মার অনুভব হয়ে গেলে কি হয় ? দাদাশ্রী : আত্মার অনুভব হয়ে গেছে মানে দেহাধ্যাস চলে গেছে। দেহাভ্যাস চলে গেছে মানে কর্ম-বন্ধন হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আর কি চাই ? Page #33 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? আত্মা – অনাত্মার মধ্যে ভেদরেখা! এটা অক্রম-বিজ্ঞান, সেইজন্যে এত তাড়াতাড়ি সম্যকত্ব হয়। নয়তাে ক্ৰমিকমার্গে তাে আজ সম্যকত্ব হওয়া সম্ভবই নয়। এই অক্রমবিজ্ঞান তাে খুব-ই উচ্চকোটির বিজ্ঞান। এতে আত্মা আর অনাত্মার মধ্যে মানে তােমার আর পরবস্তু, এই দুইয়ের মধ্যে বিভাজন করে দেয়। ‘এই’ ভাগ তােমার আর ‘এটা তােমার নয়। আর মাঝখানে লাইন অফ ডিমার্কেশন, ভেদরেখা টেনে দিই। তারপরে প্রতিবেশীর ক্ষেতের ঢ্যাঁড়শ আমরা আর খেতে পারবাে কি ? মার্গ— ‘ক্রম’ আর ‘অক্রম’! তীর্থঙ্কদের যে জ্ঞান তা ক্রমিক জ্ঞান। ক্রমিক অর্থাৎ সিঁড়ির পরে সিঁড়ি চড়া। যেমন –যেমন পরিগ্রহ কম করবে, তেমন-তেমন মােক্ষের কাছে পৌঁছাবে, তাও অনেক সময় লাগবে। আর এই অক্রম-বিজ্ঞান মানে কি ? সিড়ি চড়তে হবে না, সিটে বসে যাও আর বারােতলায় পৌঁছে যাও! এইরকম এই লিফটু মার্গ এসেছে। যে এই লিফটে বসে গেছে তার কল্যাণ হয়ে গেছে। এই লিটে যে বসে গেছে তার সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসবে ! আমি তাে নিমিত্তমাত্র। সমস্যার সমাধান তাে করতে হবে না কি ? তুমি মােক্ষমার্গের পথিক, ওই লিফটে বসে আছাে তার প্রমাণ তাে হওয়া চাই, না কি চাইনা ? প্রমাণ মানে ক্রোধ মান মায়া লােভ হবে না, আর্তধ্যান-রৌদ্রধ্যান হবে না। মানে সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেল না ? | যে ‘আমার’ সাক্ষাৎ করেছে সেই পাত্র! দাদাশ্রী: এই মার্গ এত সহজ তাে তাহলে কোন অধিকার (পাত্রতা) দেখার প্রয়ােজন নেই ? সকলের জন্যেই কি এটা সম্ভব ? প্রশ্নকর্তা : লােকে আমাকে প্রশ্ন করে, আমি কি অধিকারী (পাত্র) ? আমি বলি যে, আমার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে, এইজন্যে তুমি অধিকারী। Page #34 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? এই সাক্ষাতের পিছনে সায়েন্টিফিক সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স আছে। এইজন্যে আমার সাথে যাদের সাক্ষাৎ হয়েছে তারা অধিকারী বলে গণ্য। যার সাক্ষাৎ হয়নি সে অধিকারী নয়। কিসের আধারে এই সাক্ষাৎ হয় ? ও অধিকারী, এই আধারেই তো আমার সাথে সাক্ষাৎ হয়। আমার সাথে সাক্ষাতের পরও যদি ওর প্রাপ্তি না হয় তো তাহলে ওর অন্তরায় কর্ম বাধারূপে আছে । 33 ক্রম–তে ‘করার' আর অক্রম-এ.... এক ভাই একবার প্রশ্ন করেছিল যে ক্রম আর অক্রম -এ পার্থক্য কি ? তখন আমি বললাম যে, ক্রম মানে যেমন সবাই বলে, এই উল্টো (ভুল) ছাড়ো আর সোজা (ঠিক) করো। সবাই এটাই বারবার বলে, তারই নাম ক্রমিক মার্গ। ক্রম মানে সবকিছু ছাড়তে বলে। এই কপট, লোভ ছাড়ো আর ভালো করো। এতদিন তুমি এই-ই দেখেছো কি না ? আর অক্রম মানে করার নয়, করোতি-করোসি-করোমি নয়! পকেট কাটা গেলে অক্রম-এ বলবে ‘ও কাটে নি, আর আমার কাটা যায় নি।' আর ক্রম-তে বলে যে ‘ও কেটেছে আর আমার কাটা গেছে।' এই অক্রমবিজ্ঞান লটারীর মত। লটারীতে পুরস্কার পেলে তার জন্যে কোন পরিশ্রম করতে হয়েছিল কি ? টাকা সে-ও দিয়েছিল আর অন্যরাও দিয়েছিল কিন্তু ও-ই পেয়ে গেল। এইরকমই এই অক্রমবিজ্ঞান, সাথে সাথেই মোক্ষ দিয়ে দেয়, নগদ দেয় ! অক্রম থেকে আমূল পরিবর্তন ! অক্রমবিজ্ঞানকে খুব বড় আশ্চর্য্য বলে। এখানে আত্মজ্ঞান পাওয়ার পরে দ্বিতীয় দিন থেকেই মানুষের মধ্যে পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়। এটা শুনতেই লোকেরা এই বিজ্ঞান স্বীকার করে নেয় আর এখানে আকর্ষিত হয়ে চলে আসে। Page #35 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 34 অক্রম মার্গ, সমস্ত বিশ্বে ! এই সংযোগ তো খুবই উচ্চকোটির তৈরী হয়েছে! এরকম অন্য কোথাও হয়নি। একজন মাত্র মানুষ ‘দাদাজী' একা–ই এই কাজ করতে পেরেছেন, দ্বিতীয় অন্য কেউ করতে পারবে না। প্রশ্নকর্তা : পরে দাদাজীর কৃপা থাকবে তো ? আপনার পরে কি হবে ? দাদাশ্রী : এই মার্গ তো চলতে থাকবে। আমার তো ইচ্ছা যে কেউ প্রস্তুত হয়ে যায়, পরে এই মার্গ চালানোর জন্য কাউকে চাই কি না ? প্রশ্নকর্তা : চাই । দাদাশ্রী : আমার ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে যাবে। প্রশ্নকর্তা : অক্রমবিজ্ঞান যদি চালু থাকে, তো তা নিমিত্ত দ্বারা চালু থাকবে ! দাদাশ্রী : ‘অক্রমবিজ্ঞান' চালু–ই থাকবে। অক্রম-ি [-বিজ্ঞান এক-দু' বছর এমনিই চলতে থাকলে সমস্ত জগতে এর কথা ছড়িয়ে পড়বে আর পৌঁছে যাবে এর চরম সীমা পর্যন্ত। কারণ মিথ্যে কথা যেমন গলা ফাটিয়ে বলে তেমনই সত্যি কথাও গলা ফাটিয়ে বলতে হবে। সত্যিকথার প্রভাব পরে হয় আর মিথ্যে কথার প্রভাব তাড়াতাড়ি হয়। অক্রম দ্বারা স্ত্রী-লোকেরও মোক্ষ! লোকে বলে যে মোক্ষ পুরুষদের-ই হয়, স্ত্রী-লোকের নয়। আমি বলি যে মহিলাদেরও মোক্ষ হয়। কেন হবে না? তাতে ওরা বলে যে, ওদের কপট আর মোহের গ্রন্থি অনেক বড় হয়। পুরুষদের যদি ছোট গাঁট হয়, তো ওদের তো এত বড় মানকচুর মত হয়। মহিলারাও মোক্ষ-এ যাবে। সবাই না বলুক না কেন, কিন্তু মহিলারাও মোক্ষ-এ যাওয়ার যোগ্য। কারণ ওরাও আত্মা, আর পুরুষদের Page #36 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? সাথে সম্পর্কে এসেছে। এইজন্যে ওদেরও সমাধান হবে। কিন্তু স্ত্রীপ্রকৃতিতে মােহ বলবান হওয়ার কারণে বেশি সময় লাগবে। | কাজ করিয়ে নাও! যখন প্রয়ােজন তখন নিজের কাজ করিয়ে নাও। এরকম নয় যে তােমাকে অবশ্যই আসতে হবে। তােমার ভালাে লাগলে আসবে। আর সংসার যদি ভালাে লাগে, তাে ততক্ষণ ওই ব্যবসাও চালিয়ে যাও। আমি একথা বলছি না যে তােমাকে এরকমই করতে হবে। আর তােমাকে | চিঠিও লিখতে যাবাে না। এখানে এসেছাে তাে তােমাকে বলবাে, ভাই লাভ হঠাও।' | এতটুকুই তােমাকে বলবাে। হাজার হাজার বছরে এরকম বিজ্ঞান প্রকট হয়নি। সেইজন্যে আমি বলছি যে পরে যা হওয়ার হােক, কিন্তু এই কাজ করে নেওয়া প্রয়ােজন। (৯) জ্ঞানী পুরুষ’ কে ? সন্ত পুরুষ: জ্ঞানী পুরুষ! প্রশ্নকর্তা : এই যে সমস্ত সন্ত, এনাদের আর জ্ঞানীর মধ্যে কতটা পার্থক্য ? দাদাশ্রী : সন্ত তাকে বলে যে খারাপ ছাড়িয়ে দেয় আর ভালাে শেখায়। খারাপ করা ছাড়ায় আর ভালাে করা শেখায়, তার নাম সন্ত। প্রশ্নকর্তা : অর্থাৎ পাপকর্ম থেকে রক্ষা করেন, তিনিই সন্ত ? দাদাশ্রী : হ্যা, পাপকর্ম থেকে বাঁচান তিনিই সন্ত, কিন্তু পাপ-পুণ্য দুই থেকেই যিনি বাঁচান তাঁরই নাম জ্ঞানীপুরুষ। | সন্তু পুরুষ সঠিক রাস্তা বলেন আর জ্ঞানীপুরুষ মুক্তি দেন। সন্তুকে তাে পথিক বলে, পথিক মানে ও নিজেও চলে আর অন্য পথিককে বলে, ‘চলাে তুমি আমার সাথে'। আর জ্ঞানী-পুরুষ তাে অন্তিম স্টেশন, ওখানে | তাে নিজের কাজ-ই হয়ে যায়। Page #37 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? শুদ্ধ, একদম বিশুদ্ধ সন্ত কে ? যিনি মমতা রহিত হয়েছেন। অন্য যাঁরা তাঁদের অল্প-বিস্তর মমতা থাকে। আর বিশুদ্ধ জ্ঞানী কে ? যাঁর অহঙ্কার আর মমতা দুই-ই নেই। 36 সেইজন্যে সন্তকে জ্ঞানীপুরুষ বলা যায় না। সন্তদের আত্মার জ্ঞান থাকে না। এই সন্ত যখন কোন জ্ঞানী পুরুষের কাছে আসবেন তখন তাঁর কাজ হয়ে যাবে। সন্তদের-ও ওনার প্রয়োজন আছে। সবাইকে এখানে আসতে হবে। বিকল্প নেই আর! প্রত্যেকেরই এই ইচ্ছা হয়ে থাকে। জ্ঞানীপুরুষ জগতের আশ্চর্য্য। জ্ঞানীপুরুষ প্রজ্জ্বলিত দীপ। জ্ঞানী পুরুষের পরিচয় ! প্রশ্নকর্তা : জ্ঞানীপুরুষকে কিভাবে চিনব ? দাদাশ্রী : কিভাবে চিনবে ? জ্ঞানীপুরুষ তো এমনই যে কিছু না করেই তাঁকে চেনা যায়। ওনার সুগন্ধই চেনা যায় এরকম হয়। ওনার বাতাবরণ কিছু অন্য রকমেরই হয়। ওনার বাণীও অন্য ধরণের হয়। ওনার শব্দ থেকেই চেনা যায়। আরে, ওনার চোখ দেখলেই বোঝা যায়। জ্ঞানী অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য হন, অসম্ভব বিশ্বাসযোগ্য। আর ওনার প্রত্যেক শব্দ শাস্ত্ররূপ হয়, যদি বুঝতে পারো তো। ওনার বাণী, ব্যবহার আর বিনয় মনোহর হয়, মনকে জয় করে নেয় এমন হয়। এইরকম অনেক লক্ষণ থাকে। জ্ঞানী পুরুষের লেশমাত্র বুদ্ধিও থাকে না। উনি অবুধ হন। বুদ্ধি লেশমাত্রও নেই এরকম কত লোক হবেন ? কখনও কখনও এরকম কারোর জন্ম হয় আর তখন লোকের কল্যাণ হয়ে যায়। তখন লক্ষ-লক্ষ মানুষ সাঁতার কেটে (সংসার-সাগর) পার হয়ে যায়। জ্ঞানীপুরুষ অহংকার রহিত হন, একটুও অহংকার থাকে না। অহংকার রহিত কোন মানুষ এই সংসারে হয়ই না। শুধুমাত্র জ্ঞানীপুরুষ-ই অহংকার রহিত হন । জ্ঞানীপুরুষ তো হাজার-হাজার বছরে এক-আধজন জন্মান, নয়তো সন্ত, শাস্ত্রজ্ঞানী তো অনেক হন। আমাদের এখানে শাস্ত্রের জ্ঞানী Page #38 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? অনেকে আছেন কিন্তু আত্মার জ্ঞানী নেই। যিনি আত্মার জ্ঞানী হবেন তিনি তো পরম সুখী হবেন, তাঁর কণামাত্রও দুঃখ থাকবে না। সেইজন্য তাঁর কাছে গেলে নিজের কল্যাণ হয়। যিনি স্বয়ং নিজের কল্যাণ করে বসে আছেন, তিনিই আমাদের কল্যাণ করতে সক্ষম। যিনি নিজে পার হয়ে গেছেন তিনি আমাদের পার করতে পারেন। যে নিজেই ডুবে যাচ্ছে, সে কখনও পার করতে পারবে না । (১০) ‘দাদা ভগবান' কে ? ‘আমি’ আর ‘দাদা ভগবান', এক নয় রে ! 37 প্রশ্নকর্তা : তো আপনাকে ভগবান কেন বলে ? দাদাশ্রী : আমি স্বয়ং ভগবান নই। ভগবানকে, ‘দাদা ভগবান'কে তো আমিও নমস্কার করি। আমি নিজে তিনশো-ছাপ্পান্ন ডিগ্রীতে আছি আর ‘দাদা ভগবান' তিনশো ষাট ডিগ্রীতে বসে আছেন। আমার চার ডিগ্রী কম আছে, এইজন্যে আমি দাদা ভগবানকে নমস্কার করি। প্রশ্নকর্তা : সেটা কিসের জন্যে ? দাদাশ্রী : কারণ আমাকে তো চার ডিগ্রী পুরো করতে হবে। হবে তো, না কি ? চার ডিগ্রী কম থেকে গেছে, পাস করতে পারিনি কিন্তু পাস না করলে মুক্তি পাব কি ? প্রশ্নকর্তা : আপনার ভগবান হওয়ার মোহ আছে কি ? দাদাশ্রী : আমার তো ভগবান হওয়া বোঝার মত লাগে। আমি তো লঘুতম পুরুষ। এই জগতে আমার থেকে লঘু কেউ নেই, এরকম লঘুতম আমি। ভগবান হওয়া আমার বোঝাস্বরূপ মনে হয়, উল্টে লজ্জা করে। প্রশ্নকর্তা : ভগবান হতে চান না তো তাহলে এই চার ডিগ্রী পুরো করার পুরুষার্থ কি জন্যে করতে হবে ? দাদাশ্রী : ও তো মোক্ষে যাওয়ার জন্যে। আমি ভগবান হয়ে কি করবো ? ভগবান মানে তো, ভগবান গুণ যাঁরা ধারণ করেন তাঁরা সবাই Page #39 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 38 ভগবান হন। ভগবান’ শব্দ বিশেষণ। কোন মানুষ ওর যােগ্য হলে লােকে তাকে ভগবান বলবেই। এখানে প্রকট হয়েছেন, চৌদ্দ লােকের প্রভু! প্রশ্নকর্তা : ‘দাদা ভগবান’ শব্দ কার জন্য প্রয়ােগ করা হয়েছে ? দাদাশ্রী : ‘দাদা ভগবান’-এর জন্য। আমার জন্য নয়, আমি তাে জ্ঞানীপুরুষ। প্রশ্নকর্তা : কোন ভগবান ? দাদাশ্রী : ‘দাদা ভগবান’ যিনি চৌদ্দ লােকের প্রভু। উনি তােমাতেও আছেন, কিন্তু তােমাতে প্রকট হননি। তােমাতে অব্যক্তরূপে আছেন আর এখানে ব্যক্ত হয়েছেন। ব্যক্ত হয়েছেন, সেইজন্যে ফল দিতে পারেন। একবারও ওনার নাম নিলে কাজ উদ্ধার হয়ে যায়। চিনে নিয়ে বললে কল্যাণ হয়ে যাবে আর সাংসারিক বস্তুর জন্য কোন বাধা-বিঘ্ন থাকলে তাও দূর হয়ে যাবে। কিন্তু এতে লােভ করবে না কারণ লােভ করলে তার অন্ত কোনদিন আসবে না। দাদা ভগবান’ কে তা তুমি বুঝতে পারলে কি ? | যাকে দেখতে পাচ্ছাে তিনি ‘দাদা ভগবান’ নন। তুমি এই যা দেখতে পাচ্ছাে তাকেই ‘দাদা ভগবান মনে করাে, তাই তাে ? কিন্তু এই যাকে দেখছাে এ ভাদরনের পটেল। আমি ‘জ্ঞানীপুরুষ’ আর ‘দাদাভগবান’ তাে ভিতরে বসে আছেন। ভিতরে প্রকট হয়েছেন তিনিই, চৌদ্দ লােকের নাথ প্রকট হয়েছেন। ওনাকে আমি নিজে দেখেছি, স্বয়ং অনুভব করেছি। সেইজন্যে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি যে উনি ভিতরে প্রকট হয়েছেন। আর এইসব কথা কে বলছে ?‘টেপ রেকর্ডার’ কথা বলছে। কারণ ‘দাদা ভগবান’-এর বলার শক্তি নেই আর এই পটেল’ তাে টেপ রেকর্ডারএর আধারে বলছে। ভগবান’ আর ‘পটেল’দুজনে আলাদা সেইজন্য এখানে অহংকার করতে পারি না। এই ‘টেপ রেকর্ডার' বলে আর আমি তার জ্ঞাতাদ্রষ্টা থাকি। তােমারও টেপরেকর্ডারই বলে কিন্তু তােমার মনে ‘আমি বলছি' এরকম গর্বরস (অহংকার) উৎপন্ন হয়। নতুবা, আমাকেও ‘দাদা Page #40 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 39 ভগবান’কে নমস্কার করতে হয়। আমার দাদা ভগবান’ এর সাথে ভেদব্যবহারই (দুজনে আলাদা, এরকম) থাকে। ব্যবহারেই ভেদ, কিন্তু লােকে এরকম মনে করে যে ইনি স্বয়ং-ই দাদা ভগবান। না, স্বয়ং দাদা ভগবান কি করে হবাে ? এতাে ভাদরনের পটেল। | (১১) সীমন্ধর স্বামী কে ? তীর্থঙ্কর ভগবান শ্রী সীমন্ধর স্বামী! দাদাশ্রী : সীমন্ধর স্বামী কে ? এটা বােঝানাের কৃপা করবেন ? প্রশ্নকর্তা : সীমন্ধর স্বামী বর্তমান তীর্থঙ্কর সাহেব। উনি অন্য ক্ষেত্রে আছেন। যেমন ঋষভদেব ভগবান ছিলেন, মহাবীর ভগবান ছিলেন তেমনি সীমন্ধর স্বামীও তীর্থঙ্কর। উনি আজও মহাবিদেহ ক্ষেত্রে বিচরণ করেন। মহাবীর ভগবান তাে সব বলে দিয়েছেন, কিন্তু লােকেদের বােধ বাঁকা হলে কি হবে ? এইজন্যে ফলপ্রাপ্তি হয় না। ভগবান মহাবীর বলে গিয়েছেন যে, এখন চৌবীসী বন্ধ হয়ে যাবে, এখন (ভরতক্ষেত্রে) আর তীর্থঙ্কর হবেন না। সেইজন্যে মহাবিদেহ ক্ষেত্রে যে তীর্থঙ্কর আছেন তার আরাধনা করবে। | ওখানে বর্তমান তীর্থঙ্কর আছেন, তার আরাধনা করবে। কিন্তু এখন তাে লােকেদের লক্ষ্যে তা নেই। আর এই চব্বিশজনকেই সব | লােক তীর্থঙ্কর বলে ! | খেয়ালে তাে সীমন্ধর স্বামীই! লােকে আমাকে প্রশ্ন করে যে আপনি সীমন্ধর স্বামীর আরাধনা কেন করান ? চব্বিশ তীর্থঙ্করদের কেনকরাননা ? আমিবলি যে, চব্বিশতীর্থঙ্করএর কথা তাে বলি, কিন্তু আমি রীতি অনুসারে বলি। সীমন্ধর স্বামীর কথা বেশি করেবলি। ওনাকেই বর্তমান তীর্থঙ্কর বলে আর এই নমাে অরিহন্তানং'ওনার কাছেই পৌঁছায়। নবকার-মন্ত্র বলার সময় সীমন্ধর স্বামী খেয়ালে থাকা উচিৎ, তবেই তােমাদের নবকার-মন্ত্র শুদ্ধ হয়েছে বলা যাবে। Page #41 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? ঋণানুবন্ধ, ভরতক্ষেত্রের! প্রশ্নকর্তা : সীমন্ধর স্বামীর বর্ণনা করুন। দাদাশ্রী : সীমন্ধর স্বামীর আয়ু এখন পৌনে দুই লক্ষ বছর। উনিও ঋষভদেব ভগবানের মত। ঋষভদেব ভগবানকে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের ভগবান বলা হয়। সেই রকমই ইনিও সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের ভগবান। উনি আমাদের এখানে নেই কিন্তু অন্য ভূমিতে, মহাবিদেহ ক্ষেত্রে আছেন যেখানে মানুষ যেতে পারবেনা। জ্ঞানী (ভগবানের কাছে যদি কোন প্রশ্নের উত্তর জানতে হয় তাে) নিজের শক্তি সেখানে পাঠান, যে জিজ্ঞাসা করে আসে। ওখানে সুল দেহে যাওয়া যায়না, কিন্তু ওখানে জন্ম হলে যাওয়া যায়। যদি এখান থেকে ওখানকার ভূমির উপযুক্ত কেউ হয়ে যায় তাে ওখানে জন্মও হয়। আমাদের এখানে আড়াই হাজার বছর ধরে তীর্থঙ্করদের আবির্ভাব বন্ধ হয়ে গেছে। তীর্থঙ্কর মানে সর্বশ্রেষ্ঠ, ‘ফুলমুন’ (পূর্ণচন্দ্র)। কিন্তু ওখানে মহাবিদেহ ক্ষেত্রে সব সময়েই তীর্থঙ্কর থাকেন। সীমন্ধর স্বামী ওখানে আজও জীবিত আছেন। আমাদের মতই দেহ আছে, সব কিছু আছে। (১২) “অক্ৰম-মার্গ ভােলাই আছে! পরে জ্ঞানীদের বংশাবলী! আমি আমার পরে জ্ঞানীদের পরম্পরা রেখে যাব। আমার উত্তরাধিকারী রেখে যাব আর তার পরে জ্ঞানীদের লিঙ্ক চলতে থাকবে। এই জন্য স-জীবন মূর্তি খুঁজবে। তাকে ছাড়া সমাধান হবে না। আমি তাে কিছু লােককে নিজের হাতে সিদ্ধি প্রদান করে যাব। পরে কাউকে চাই কি চাই না ? পরের লােকেদের তাে রাস্তার প্রয়ােজন, কিনা ? যাকে জগৎ মেনে নেবে, তার-ই চলবে! প্রশ্নকর্তা : আপনি বলেন যে আমার জন্যে চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার লােক কান্নাকাটি করবে কিন্তু শিষ্য একজন-ও থাকবে না। এর মানে আপনি কি বােঝাতে চান ? Page #42 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? দাদাশ্রী : আমার কোন শিষ্য হবে না। এটা কোন গদী নয়। গদী হলে তবে না উত্তরাধিকারী থাকবে ! কেউ আত্মীয় বলে উত্তরাধিকারী হতে আসবে! এখানে তাে লােকে যাকে মেনে নেবে, তার-ই চলবে। যে সবার শিষ্য হবে, তার-ই কাজ হবে। যে লঘুতম হবে তাকেই জগৎ মেনে নেবে। (১৩) আত্মদৃষ্টি হওয়ার পরে... আত্মপ্রাপ্তির লক্ষ্মণ ! ‘জ্ঞান পাওয়ার আগে তুমি চন্দুভাই ছিলে, আর এখন জ্ঞান নেওয়ার পরে শুদ্ধাত্মা হলে তাে অনুভবে কিছু পার্থক্য মনে হচ্ছে ? প্রশ্নকর্তা : আজ্ঞে হ্যা।। দাদাশ্রী : ‘আমি শুদ্ধাত্মা এই খেয়াল তােমার কতক্ষণ থাকে ? প্রশ্নকর্তা : একান্তে একা বসে থাকলে তখন থাকে। দাদাশ্রী : হ্যা। ফের কোন ভাব থাকে ? তােমার ‘আমি চন্দুভাই’ এরকম ভাব কখনও হয় কি ? তােমার রিয়েলি ‘আমি চন্দুভাই এরকম ভাব কোনদিন হয়েছিল কি ? প্রশ্নকর্তা : জ্ঞান নেওয়ার পরে হয়নি। দাদাশ্রী :তাহলে তুমি শুদ্ধাত্মা-ই। মানুষের একটাই ভাব থাকতে পারে। মানে ‘আমি শুদ্ধাত্মা’ এটা তােমার মধ্যে নিরন্তর থাকে। প্রশ্নকর্তা : কিন্তু অনেক সময় ব্যবহারে শুদ্ধাত্মার খেয়াল থাকে না। দাদাশ্রী : তাে ‘আমি চন্দুভাই’ এরকম খেয়াল থাকে ? তিনঘণ্টা শুদ্ধাত্মার খেয়াল থাকল না, আর তিনঘণ্টা পরে যদি প্রশ্ন করি, তুমি কি চন্দুভাই ? না কি শুদ্ধাত্মা ? তাহলে কি বলবে ? প্রশ্নকর্তা : শুদ্ধাত্মা। দাদাশ্রী : মানে ওই খেয়াল ছিলই। এক শেঠ ছিল আর সে মদ খেয়েছে, সেই সময় সমস্ত খেয়াল তার চলে যাবে। কিন্তু মদের নেশা চলে গেলে তখন .... ? প্রশ্নকর্তা : আবার জাগৃত হয়ে যাবে। Page #43 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 42 দাদাশ্রী : সেইরকম এটাও বাইরের প্রভাব। আমার এই প্রশ্নের উত্তরে, যে বাস্তবে তুমি ‘চন্দুভাই’ না ‘শুদ্ধাত্মা, তুমি বলাে যে তুমি শুদ্ধাত্মা। আবার দ্বিতীয় দিন প্রশ্ন করি যে, বাস্তবে, তুমি কে ?' তখনও তুমি বলাে যে ‘শুদ্ধাত্মা। পাঁচ দিন ধরে আমি জিজ্ঞাসা করতে থাকি, তারপরে বুঝে যাই যে তােমার মােক্ষের চাবি আমার কাছে আছে। পরে তুমি চেঁচামেচি করলেও আমি শুনব না। | অপূর্ব বােধ (ভান) এলাে! শ্রীমদ্ রাজচন্দ্র কি বলেছেন ? যে ‘সদ্গুরুর উপদেশে এলাে অপূর্ব বােধ, স্ব-পদ, স্ব-ঘর পেলাম ; দূর হয়ে গেলাে অজ্ঞান। আগে দেহাধ্যাসের-ই বােধ ছিল। দেহাধ্যাস-রহিত বােধ আমার আগে ছিল না। এখন এই অপূর্ব বােধ, এই আত্মার বােধ আমার হলাে। যা ‘নিজের নিজপদ ছিল, যে বলতাে, “আমি চন্দুভাই' সেই ‘আমি’ এখন নিজঘরে গিয়ে বসেছে। যা নিজপদ ছিল সেই নিজের মধ্যে বসে গেছে আর যে অজ্ঞান ছিল যে আমি চন্দুভাই' সেই অজ্ঞান দূর হয়ে গেছে। একে দেহাধ্যাস বলে! জগৎ দেহাধ্যাস থেকে মুক্ত হতে পারে না আর নিজের স্বরূপে থাকতেও পারে না। তুমি স্বরূপে আছ মানে অহংকার চলে গেছে, মমতা দূর হয়ে গেছে। আমি চন্দুভাই'— একে দেহাধ্যাস বলে, আর আমি শুদ্ধাত্মা' এই লক্ষ্য যখন থেকে বসেছে তখন থেকে আর অন্য কোন রকমের অধ্যাস (বােধ) থাকে না। এখন আর কিছু বাকী রইলাে না। তবু ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে একটু দমবন্ধ করা অবস্থার অনুভূতি হবে। শুদ্ধাত্মা পদ শুদ্ধ-ই! আগে যে ভ্রান্তি ছিল যে আমি-ইকরছি', এই জ্ঞান নেওয়ার পর সেই বােধ চলে গেছে। এইজন্যে আমি শুদ্ধ-ই, এই খেয়াল থাকার কারণে ‘শুদ্ধাত্মা বলেছি। কারাের সাথে যা কিছু হয়ে যাক, ‘চন্দুভাই' গালাগালি দিক, তবুও তুমি শুদ্ধাত্মা-ই। তাই আমার চন্দুভাইকে Page #44 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? বলতে হবে, ভাই, কেউ দুঃখ পায় এরকম অতিক্রমণ কেন করছাে ? এরজন্যে প্রতিক্রমণ করাে। কেউ দুঃখ পায় এরকম যদি কিছু বলাে তাে তাকে অতিক্রমণ করা বলা হয়। এর প্রতিক্ৰমণ করা উচিৎ। প্রতিক্ৰমণ মানে তুমি বুঝতে পারবে যে এইভাবে ওর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। দোষ করেছি এটা আমি বুঝতে পেরেছি আর এখন আবার এইরকম দোষ করবাে না, এই নিশ্চয় (স্থির) করতে হবে। এরকম করেছি। তা ভুল করেছি, এরকম হওয়া উচিৎ হয়নি, আর দ্বিতীয়বার এরকম হবে , এই প্রতিজ্ঞা করবে। তারপরেও যদি আবার একই দোষ দ্বিতীয়বার হয়ে যায় তাে আবার অনুশােচনা করবে। যত দোষ দেখতে পাবে তার জন্যে অনুশােচনা করলে ততটা কম হয়ে যাবে। এইরকম করতে করতে শেষ পর্যন্ত আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবে। প্রশ্নকর্তা : কোন ব্যক্তির প্রতিক্ৰমণ কি ভাবে করতে হবে ? দাদাশ্রী:মন-বাণী-শরীর, ভাবকর্ম-দ্রব্যকর্ম-নােকর্ম, (ওই ব্যক্তির) নাম আর ওর নামের সমস্ত মায়া থেকে পৃথক ওর শুদ্ধাত্মাকে স্মরণ করবে, আর ফের যে ভুল হয়েছে তা মনে করবে (আলােচনা)। ওই ভুলের জন্যে আমার অনুশােচনা হচ্ছে, আর এর জন্য আমাকে ক্ষমা করাে (প্রতিক্ৰমণ), আবার এই ভুল হবে না এরকম দৃঢ় নিশ্চয় করছি, এইরকম স্থির করবে (প্রত্যাখান)। ‘আমি’ স্বয়ং ‘চন্দুভাই’-এর জ্ঞাতাদ্রষ্টা থাকবাে আর জানবাে যে ‘চন্দুভাই' কতটা প্রতিক্রমণ করলাে, কত বার করলাে আর কত সুন্দর করে করলাে। প্রজ্ঞা ভিতর থেকে সাবধান করে! এটা বিজ্ঞান, সেইজন্যে আমার এর অনুভব হয় আর ভিতর থেকেই সাবধান করে। ওখানে (ক্রমিক মার্গে) তাে আমাকে করতে হয় আর এখানে ভিতর থেকেই সাবধান করতে থাকে। প্রশ্নকর্তা : এখন ভিতর থেকে সাবধানবাণী আসে, এর অনুভূতি হয়েছে। Page #45 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? দাদাশ্রী : এখন আমি এই মার্গ (রাস্তা) পেয়েছি আর শুদ্ধাত্মার যে প্রথম বাউণ্ডারি (সীমানা) আছে, তার প্রথম দরজায় প্রবেশকরতে পেরেছি যেখান থেকে কেউ বাইরে বার করে দিতে পারবে না। কারাের বাইরে বার করে দেওয়ার অধিকার নেই এরকম জায়গায় তুমি প্রবেশ পেয়েছাে। বারবার কে সচেতন করে ? প্রজ্ঞা ! জ্ঞানপ্রাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রজ্ঞা শুরু হয় না। অথবা সম্যকত্ব প্রাপ্ত হলে প্রজ্ঞা শুরু হয়। সম্যকত্বে প্রজ্ঞা কিরকম ভাবে শুরু হয় ? দ্বিতীয়ার চাদের মত শুরু হয়। আর আমাদের এখানে তাে পূর্ণ প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়। ফুল (পূর্ণ) প্রজ্ঞা মানে তা শুধু মােক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই সচেতন করতে থাকে। ভরত রাজাকে তাে সচেতন করার জন্যে লােক রাখতে হয়েছিল, চাকর রাখতে হয়েছিল। যে প্রত্যেক পনেরাে মিনিট পর পর বলতাে, ভরত রাজা ! সাবধান, সাবধান, সাবধান !!! তিন বার আওয়াজ দিত। দেখাে, তােমাকে তাে ভিতর থেকেই প্রজ্ঞা সচেতন করতে থাকে। প্রজ্ঞা নিরন্তর সচেতন করতে থাকে, এই, এরকম নয়। সারাদিন সচেতন করতে থাকে আর এটাই আত্মার অনুভব, নিরন্তর, সারাদিন-ই আত্মার অনুভব ! অনুভব অন্তরে হবে-ই! যে দিন জ্ঞান দিই, সেই রাতের যে অনুভব তা চলে যায় না। কি ভাবে যাবে ? আমি যেদিন জ্ঞান দিয়েছিলাম না, ওই রাতের যে অনুভব ছিল তা চিরদিনের জন্য। কিন্তু পুনরায় তােমার কর্ম তােমাকে ঘিরে ধরে। পূর্বকর্ম, যা ভােগ করেই শেষ করতে হবে, সেই ‘চাইতে আসা ঘিরে ধরে, তার আমি কি করবাে ? প্রশ্নকর্তা : দাদাজী, কিন্তু এখন আর এত ভুগতে হয় না। দাদাশ্রী :তা মনে না হলে সেটা আলাদা কথা, কিন্তু বেশী সংখ্যায় যদি চাইতে আসে তাহলে তাকে বেশী করে ঘিরে ধরবে। পাঁচ চাইতে | এলে পাঁচ, দুই চাইতে এলে দুই আর কুড়ি চাইতে এলে কুড়ি। আমি তাে তােমাকে শুদ্ধাত্মাপদে বসিয়ে দিয়েছি কিন্তু ফের দ্বিতীয়দিন সব চাইতে এলে তখন একটু সাফোকেশন হবে। Page #46 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 45 এখন কী বাকী রইলো ? ওটা ক্রমিক বিজ্ঞান আর এটা অক্রম বিজ্ঞান। এই জ্ঞান তো বীতরাগীদের-ই জ্ঞান। জ্ঞানে কোন পার্থক্য নেই। আমার জ্ঞান দেওয়ার পরে, আত্মা-অনুভব হওয়ার পরে আর কি কাজ বাকী থাকে ? জ্ঞানীপুরুষের ‘আজ্ঞা’–র পালন। ‘আজ্ঞা’–ই ধর্ম আর ‘আজ্ঞা’–ই তপ । আর আমার আজ্ঞা সংসার (ব্যবহারে) একটুও বাধাস্বরূপ হয় না। সংসারে থেকেও সংসারের কোন প্রভাব না পড়ে এমনই এই অক্রমবিজ্ঞান । সত্যিই যদি একাবতারী (একটাই জন্ম বাকী এরকম) হতে হয় তো আমার আজ্ঞা পালন করে চলো। এই বিজ্ঞান একাবতারী। এটা বিজ্ঞান, তবু এখান থেকে (ভরত ক্ষেত্র থেকে) সরাসরি মোক্ষে যেতে পারবে এরকম (সম্ভব) নয়। মোক্ষমার্গে আজ্ঞাই ধৰ্ম ... যাকে মোক্ষে যেতে হবে তার কোন ক্রিয়া করার প্রয়োজন নেই ৷ যাকে দেবযোনিতে যেতে হবে, ভৌতিক (সাংসারিক) সুখের কামনা যার আছে তার ক্রিয়া করার প্রয়োজন আছে। মোক্ষে যেতে হলে জ্ঞান আর জ্ঞানীর আজ্ঞা, এই দু'য়ের প্রয়োজন। মোক্ষমার্গে তপ-ত্যাগ কিছুই করতে হয় না। শুধু জ্ঞানীপুরুষকে পেলে সেই জ্ঞানীর আজ্ঞাই ধর্ম আর আজ্ঞাই তপ, আর এই-ই জ্ঞান, দর্শন, চারিত্র আর তপ যার প্রত্যক্ষ ফল মোক্ষ। জ্ঞানী-র কাছে থাকবে ! জ্ঞানীর প্রতি কখনও প্রেমভাব হয়নি। জ্ঞানীর উপর প্রেমভাব হলে তাতেই সমস্ত কিছুর সমাধান হবে। প্রত্যেক জন্মে স্ত্রী-সন্তানাদি ছাড়া আর কিছু তো হয়-ই না! ভগবান বলেছেন যে জ্ঞানীপুরুষের কাছ থেকে সম্যকত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পরে জ্ঞানীপুরুষের পিছনে লেগে থাকবে। Page #47 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 46 প্রশ্নকর্তা : কোন অর্থে পিছনে লেগে থাকতে হবে ? দাদাশ্রী : পিছনে লেগে থাকা মানে এই জ্ঞান পাওয়ার পরে আর কোন আরাধনা থাকে না। কিন্তু এ তো আমি জানি যে এটা অক্রম। এই সমস্ত লোক অসংখ্য ‘ফাইল’ নিয়ে এসেছে। এই ফাইলের কারণে তোমাকে মুক্ত রেখেছি কিন্তু এর মানে এই নয় যে কাজ মিটে গেছে। আজকাল অনেক ফাইল হয়, সেইজন্যে তোমাকে আমার এখানে রাখলে তোমার ‘ফাইল’–রা ডাকতে আসবে। এই কারণে ছাড় দিয়েছি যে ঘরে গিয়ে ফাইলদের সমভাবে নিকাল (সমাধানপূর্বক শেষ) করো। তা নাহলে তো জ্ঞানীর কাছেই পড়ে থাকা উচিৎ। নয়তো আমার থেকে যদি পূর্ণরূপে লাভ না নিতে পারো তো এটা তোমার মনে দিন-রাত কাঁটার মত ফোটা উচিৎ। যতই ফাইলরা থাকুক না কেন আর জ্ঞানীপুরুষ বলে থাকুন, আজ্ঞা দিয়ে থাকুন যে ফাইলদের সমভাবে নিকাল করবে, সেই আজ্ঞাই ধর্ম নয় কি ? সে তো আমাদের ধর্ম। কিন্তু এ’তো মনে ফুটতে থাকা উচিৎ যে ফাইল কম হোক যাতে আমি লাভ নিতে পারি। ওর তো মহাবিদেহ ক্ষেত্র সামনে আসবে ! যার মধ্যে শুদ্ধাত্মার লক্ষ্য বসে গেছে সে এখানে, ভরতক্ষেত্রে থাকতে পারবেই না। যার আত্মার লক্ষ্য বসে গেছে, সে মহাবিদেহ ক্ষেত্রেই পৌঁছে যাবে, এইরকমই নিয়ম আছে। এখানে এই দুষিতকালে থাকতেই পারবে না। এই যে শুদ্ধাত্মার লক্ষ্য বসে গেছে, সে মহাবিদেহ ক্ষেত্রে একজন্ম বা দুইজন্ম কাটিয়ে তীর্থঙ্করের দর্শন করে মোক্ষে চলে যাবে, এরকম সহজ, সরল এই মার্গ! আমার আজ্ঞায় থাকবে। আজ্ঞাই ধর্ম আর আজ্ঞাই তপ! সমভাবে নিকাল করতে হবে। এই যে আজ্ঞা বলেছি, ওতে যতটা পারবে ততটাই থাকবে, সম্পূর্ণরূপে থাকলে তো ভগবান মহাবীর-এর দশায় থাকতে পারবে। তুমি ‘রিয়েল’ আর ‘রিলেটিভ' Page #48 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? দেখতে থাকলে তখন তোমার চিত্ত অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াবে না, কিন্তু ওই সময় কিছু মনে আসলে তুমি বিচলিত হয়ে যাও। (১৪) পাঁচ আজ্ঞার মহত্ত্ব ! ‘জ্ঞান’–এর পরে কি ধরণের সাধনা ? 47 প্রশ্নকর্তা : এই জ্ঞানের পরে এখন কি ধরণের সাধনা করা উচিৎ ? দাদাশ্রী : সাধনা তো এই যে পাঁচ আজ্ঞার পালন করছো না, সেটাই! এখন আর অন্য কোন সাধনা নেই। অন্য সাধনা বন্ধনকারক। এই পাঁচ আজ্ঞাই মুক্তি দেবে। সমাধি থাকে, এরকম আজ্ঞা ! প্রশ্নকর্তা : এই যে পাঁচ আজ্ঞা আছে, এছাড়া আর কিছু আছে ? দাদাশ্রী : পাঁচ আজ্ঞা তোমার জন্য একটা বেড়ার মত যাতে তোমার জিনিষ ভিতর থেকে কেউ চুরি করে না নেয়। এই বেড়া রাখলে তোমার ভিতর আমি যা দিয়েছি তা একজ্যাক্ট, যেমনকার তেমন-ই থাকবে, আর বেড়া কমজোর হয়ে গেলে কেউ ভিতরে ঢুকে নষ্ট করে দেবে। তখন আবার আমাকে রিপেয়ার করতে আসতে হবে। এইজন্য, এই পাঁচ আজ্ঞায় যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ নিরন্তর সমাধির আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। " আমি পাঁচটা বাক্য তোমাকে রক্ষণের জন্যে দিই। এই জ্ঞান তো আমি তোমাকে দিয়েছি আর ‘ভেদজ্ঞান' দিয়ে ‘আলাদা’ও করেছি, কিন্তু এখন যাতে এটা আলাদাই থাকে সেইজন্যে রক্ষণ দিই, যাতে এই যে কলিযুগ, এই কলিযুগের কেউ কখনও তাকে লুটে নিয়ে না যায় ৷ ‘বোধবীজ’ অঙ্কুরিত হলে জল ইত্যাদি ছিটাতে হবে না ? বেড়া দিতে হবে না ? দৃঢ় নিশ্চয়ই আজ্ঞার পালন করায় ! দাদাজীর আজ্ঞা পালন করতে হবে। এটাই সবথেকে বড় জিনিস । আমার আজ্ঞা পালন করার নিশ্চয় করা চাই। তোমাকে এটা দেখতে Page #49 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? হবে না যে আজ্ঞার পালন হচ্ছে কি না। আজ্ঞা পালন যতটা করতে পারবে ততটাই ঠিক, কিন্তু তোমাকে নিশ্চয় করতে হবে যে আজ্ঞা পালন সব সময় করবো। প্রশ্নকর্তা : কম-বেশী পালন করলে তাতে কোন অসুবিধে নেই 48 তো ? দাদাশ্রী : ‘অসুবিধে নেই', এরকম নয়। তোমাকে নিশ্চয় করতে হবে যে আজ্ঞার পালন করতেই হবে। সকালেই নিশ্চয় করবে যে, ‘পাঁচ আজ্ঞাতে-ই থাকতে হবে, পালন করতেই হবে।' নিশ্চয় করলে তখন থেকেই আমার আজ্ঞায় এসে গেছো, আমার এটুকুই চাই। পালন হচ্ছে না, তার কজেজ (কারণ) আমার জানা আছে। তোমাকে পালন করতে হবে, এই নিশ্চয়টাই রাখতে হবে। আমার জ্ঞান থেকে তো মোক্ষ হবেই, যদি কেউ আজ্ঞায় থাকে তাহলে তার মোক্ষ হবে, এতে কোন দ্বি-মত নেই। তবে যদি কেউ জ্ঞান নিয়েছে কিন্তু আজ্ঞা পালন না করে, তাহলেও অঙ্কুরিত না হয়ে থাকবে না। এইজন্যে কেউ কেউ আমাকে বলে, ‘জ্ঞান নিয়ে কিছু লোক আজ্ঞার পালন করে না, তাদের কি হবে ?' আমি বলি, ‘সে তোমাদের দেখার দরকার নেই, এটা আমার দেখা দরকার। জ্ঞান আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে ; তোমার তো কিছু লোকসান হয়নি ?' কারণ পাপ ভস্মীভূত না হয়ে যায় না। সে হতে পারে না। আমার এই পাঁচ বাক্যে থাকলে পৌঁছে যাবে। আমি নিরন্তর এই পাঁচ বাক্যতেই থাকি আর আমি যাতে থাকি সেই ‘দশা’ তোমাকেও দিয়েছি। আজ্ঞাতে থাকলে কাজ হবে। নিজের বুদ্ধিতে লক্ষ জন্ম মাথা কুটলেও কিছু হওয়ার নয়। কিন্তু এরা তো আজ্ঞাও নিজের আক্কেল অনুযায়ী পালন করে। আবার আজ্ঞা বুঝবেও তো নিজেদের বোধ অনুযায়ী-ই না ! এইজন্যে ওখানেও একটু একটু লিকেজ হতেই থাকে। তবুও আজ্ঞা পালন করার পিছনে ওর নিজের ভাব তো এটাই আছে যে, ‘আজ্ঞা পালন করতেই হবে'। সেইজন্যে জাগৃতি চাই । 9 Page #50 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? আজ্ঞা পালন করতে ভুলে গেলে প্রতিক্ৰমণ করবে। মানুষ তাে, ভুল হতে পারে। কিন্তু ভুলে গেলে প্রতিক্ৰমণ করবে যে, ‘হে দাদাজী, এই দু'ঘণ্টা ভুলে গেছি, আপনার আজ্ঞা ভুলে গেছি। কিন্তু আমাকে আজ্ঞা পালন তাে করতেই হবে। আমাকে ক্ষমা করুন। তাহলে পিছনের সমস্ত কিছু মাফ হয়ে যাবে। একশাে’তে একশাে মার্কস পুরাে পাবে। এই জন্যে দায়িত্ব থাকবে না। আজ্ঞাতে এসে গেলে তাকে সমগ্র জগৎ-ও ছুঁতে পারবে না। আমার আজ্ঞা পালন করলে তােমাকে কিছুই স্পর্শ করবে । তাহলে আজ্ঞা যে দিচ্ছে তাকে কি স্পর্শ করে ? না, কারণ পরহেতু (অন্যের ভালাের জন্যে) হচ্ছে, তাই তাঁকে স্পর্শ করবে না আর ডিজম্ভ হয়ে যাবে। এ তাে ভগবানের আজ্ঞা !!! | দাদাজীর আজ্ঞা পালন করা মানে ‘এ. এম. প্যাটেল’ -এর আজ্ঞা নয়। স্বয়ং ‘দাদা ভগবান’-এর, যিনি চৌদ্দ লােকের নাথ, তাঁরই আজ্ঞা। এর গ্যারান্টী দিচ্ছি। এতে আমার মাধ্যমে এই সমস্ত বানী বাইরে এসেছে। এইজন্য তােমাকে ওই আজ্ঞা পালন করতে হবে। আমার আজ্ঞা’ নয়, এ দাদা ভগবান-এর আজ্ঞা। আমিও ওই ভগবানের আজ্ঞায় থাকি, কি না! জয় সচ্চিদানন্দ আত্মজ্ঞানী পুরুষ এ. এম. পটেল’-এর অন্তরে প্রকাশিত “দাদা ভগবানের অসীম জয়জয়কার হােক” | (প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট থেকে ৫০ মিনিট পর্যন্ত উচ্চস্বরে বলতে হবে) | Page #51 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? * * শ্রী সীমন্ধর স্বামীকে নমস্কার। * বাৎসল্যমূৰ্ত্তি শ্রী দাদা ভগবানকে নমস্কার * প্রাপ্ত মন-বচন-কায়া দ্বারা এই জগতের কোন জীবের কিঞ্চিৎমাত্রও দুঃখ না হয়, না হয়, না হয়। (৫) কেবল শুদ্ধাত্মানুভব ব্যতীত এই জগতের কোন বিনাশী বস্তু আমার চাই না ৷ (৫) নিত্যক্ৰম প্ৰাতঃবিধি 50 * * (৫) (৫) * জ্ঞানীপুরুষ দাদা ভগবান –এর বীতরাগ বিজ্ঞান যথার্থরূপে, সম্পূর্ণরূপে, সর্বাঙ্গরূপে কেবল জ্ঞান, কেবল দর্শন আর কেবল চারিত্রতে পরিণমিত হোক, পরিণমিত হোক, পরিণমিত হোক। (৫) নমস্কার বিধি প্রকট জ্ঞানীপুরুষ ‘দাদা ভগবান’–এর আজ্ঞাতেই সর্বদা থাকার পরম শক্তি প্রাপ্ত হোক, প্রাপ্ত হোক, প্রাপ্ত হোক । (৫) * প্রত্যক্ষ দাদা ভগবানকে সাক্ষী রেখে বর্তমানে মহাবিদেহক্ষেত্রে বিচরণকারী তীর্থঙ্কর ভগবান শ্রীসীমন্ধর স্বামীকে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। (80) প্রত্যক্ষ দাদা ভগবানকে সাক্ষী রেখে বর্তমানে মহাবিদেহক্ষেত্র আর অন্য ক্ষেত্রে বিচরণকারী ‘ওম্ পরমেষ্টি ভগবন্তো’–কে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। (৫) প্রত্যক্ষ দাদা ভগবানকে সাক্ষী রেখে বর্তমানে মহাবিদেহক্ষেত্র আর অন্য ক্ষেত্রে বিচরণকারী ‘পঞ্চ পরমেষ্টি ভগবন্তো'-কে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। (৫) প্রত্যক্ষ দাদা ভগবানকে সাক্ষী রেখে বর্তমানে মহাবিদেহক্ষেত্র আর অন্য ক্ষেত্রে বিহরমান ‘তীর্থঙ্কর সাহেব’–দের অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। (৫) Page #52 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? | 51 * * * * বীতরাগশাসন দেব-দেবীদেরকে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। (৫) * নিষ্পক্ষপাতী শাসন দেব-দেবীদেরকে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। চব্বিশ তীর্থঙ্কর ভগবন্তো-কে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। (৫) * শ্রীকৃষ্ণ ভগবান'-কে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। (৫) ভরতক্ষেত্রে বর্তমানে বিচরণকারী সর্বজ্ঞ ‘শ্রী দাদা ভগবান’-কে নিশ্চয়পূর্বক অত্যন্ত ভক্তিপূর্ণ নমস্কার করি। * ‘দাদা ভগবান'-এর সমস্ত সমকিধারী মহাত্মাগণকে অত্যন্ত | ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের জীবমাত্রের ‘রিয়েল’ স্বরূপকে অত্যন্ত ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। ‘রিয়েল’ স্বরূপ — সেটাই ভগবৎ স্বরূপ। সেইজন্যে সমগ্র জগৎকে ভগবৎ স্বরূপে দর্শন করি। | ‘রিয়েল’ স্বরূপ — সেটাই শুদ্ধাত্মা স্বরূপ। সেইজন্যে সমগ্র জগৎকে ‘শুদ্ধাত্মা স্বরূপে দর্শন করি। ‘রিয়েল’ স্বরূপ — সেটাই তত্ত্বস্বরূপ। সেইজন্যে সমগ্র জগৎকে ‘তত্ত্বজ্ঞান’-এ দর্শন করি। (বর্তমান তীর্থঙ্কর শ্রী সীমন্ধর স্বামীর কাছে পরমপূজ্য দাদা ভগবানের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ নমস্কার পৌঁছায়। বন্ধনীর ভিতরে লেখা সংখ্যা অনুযায়ী প্রতিদিন একবার পড়তে হবে।) Page #53 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 52 নয় কলাম ১। হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোন দেহধারী জীবাত্মার অহংকারকে কিঞ্চিৎমাত্র-ও দুঃখ না দিই, না দেওয়াই বা দেওয়ানোর প্রতি অনুমোদন না করি এমন পরম শক্তি দিন। আমাকে কোন দেহধারী জীবাত্মার অহংকারকে কিঞ্চিৎমাত্র-ও দুঃখ না দিই এরকম স্যাদবাদ বাণী, স্যাদবাদ ব্যবহার এবং স্যাদবাদ মনন করবার করবার পরম শক্তি দিন। ২। হে দাদা ভগবান! আমাকে কোন ধর্মকে কিঞ্চিৎ প্রমাণমাত্র-ও দুঃখ না দিই, না দেওয়াই বা দেওয়ানোর প্রতি অনুমোদন না করি এমন পরম শক্তি দিন। আমাকে কোন ধর্মের অহংকারকে কিঞ্চিৎমাত্র-ও দুঃখ না দিই এরকম স্যাদবাদ বাণী, স্যাদবাদ ব্যবহার এবং স্যাদবাদ মনন করবার পরম শক্তি দিন। ৩। হে দাদা ভগবান! আমাকে কোন দেহধারী উপদেশক, সাধু, সাধ্বী বা আচার্য্যের অবর্ণবাদ (নিন্দা), অপরাধ, অবিনয় না করার পরম শক্তি দিন। ৪। হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোন দেহধারী জীবাত্মার প্রতি কিঞ্চিৎমাত্র—ও অভাব, তিরস্কার কখনও না করি, না করাই বা কর্তার প্রতি অনুমোদন না করি এমন পরম শক্তি দিন। ৫। হে দাদা ভগবান! আমাকে কোন দেহধারী জীবাত্মার সাথে কঠোর ভাষা, তন্তিলি (যার রেশ থেকে যায় এমন) ভাষা না বলি, না বলাই বা বলার জন্যে অনুমোদন না করি এমন পরম শক্তি দিন । কেউ কঠোর ভাষা, তন্তিলি ভাষা বললে আমাকে মৃদু-সরল ভাষা বলা পরম শক্তি দিন। ৬। হে দাদা ভগবান ! আমাকে কোন দেহধারী জীবাত্মার প্রতি, স্ত্রী, পুরুষ বা নপুংসক, যে কোন লিঙ্গধারী হোক, তার সম্বন্ধে কিঞ্চিৎমাত্রও বিষয়-বিকারের দোষ, ইচ্ছা, চেষ্টা বা বিচার-সম্বন্ধী দোষ, না Page #54 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? | 53 করি, না করাই বা কর্তার প্রতি অনুমােদন না করি এরকম পরম শক্তি দিন। আমাকে নিরন্তর নির্বিকার থাকার পরম শক্তি দিন।। ৭। হে দাদা ভগবান! আমাকে কোন রসে লুব্ধতা না হয় এমন পরম শক্তি দিন। সমরসী আহার গ্রহণ করার পরম শক্তি দিন।। ৮। হে দাদা ভগবান! আমাকে কোন দেহধারী জীবাত্মার প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ, জীবিত অথবা মৃত, কারাের কিঞ্চিৎমাত্র-ও অবর্ণবাদ (নিন্দা), অপরাধ, অবিনয় না করি, না করাই বা কর্তার প্রতি অনুমােদন না করি এমন পরম শক্তি দিন। ৯। হে দাদা ভগবান! আমাকে জগৎ-কল্যাণ করার নিমিত্ত হওয়ার পরম শক্তি দিন, শক্তি দিন, শক্তি দিন। (এই সমস্ত আপনাকে দাদার কাছে চাইতে হবে। এটা শুধুমাত্র রােজ পড়ার বস্তু নয়, হৃদয়ে রাখার বস্তু। উপযােগপূর্বক ভাবনা করার বস্তু। এর পঠনে সমগ্র শাস্ত্রের সার এসে যায়।) | * * * * * Page #55 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? 54 জ্ঞান সাক্ষাৎকার প্রাপ্তি হেতু ব্যবহার বিধি (দিনে একবার পড়বেন) প্রকট ‘জ্ঞানীপুরুষ’ দাদা ভগবানকে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে নমস্কার করি, নমস্কার করি, নমস্কার করি। প্রকট ‘জ্ঞানীপুরুষ’দ্বারাযাঁদের ‘সত্ প্রাপ্ত হয়েছে সেই ‘সপুরুষ’দের অত্যন্ত ভক্তি সহকারে নমস্কার করি, নমস্কার করি, নমস্কার করি। সমস্ত নিষ্পক্ষপাত ‘দেবী-দেবতাদের অত্যন্ত ভক্তি সহকারে নমস্কার করি, নমস্কার করি, নমস্কার করি। | হে প্রকট জ্ঞানীপুরুষ! তথা হে সৎপুরুষগণ ! আজ এই লেলিহান অগ্নিতে প্রজ্বলিত জগতের কল্যাণ করুন, কল্যাণ করুন, কল্যাণ করুন।। আর আমি এতে নিমিত্ত হই এরকম শুদ্ধ ভাবনা থেকে আপনার সমক্ষে মন-বচন-কায়ার একাগ্রতার সাথে প্রার্থনাবিধি করছি। যা আত্যন্তিকরূপে সফল হােক, সফল হােক, সফল হােক। | হে দাদা ভগবান! আপনার শুদ্ধ জ্ঞানে দেখা আর আপনার শ্রীমুখ নিঃসৃত শুদ্ধ জ্ঞানসূত্র নিম্ন প্রকারের ঃ— “মন-বচন-কায়ার সমস্ত লেপায়মান ভাব যা আছে, তার থেকে ‘শুদ্ধচেতন’ সর্বদা নির্লেপ-ই থাকেন।” “মন-বচন-কায়ার সমস্ত সঙ্গী ক্রিয়া থেকে ‘শুদ্ধচেতন’ সম্পূর্ণ অসঙ্গ-ই থাকেন।” “মন-বচন-কায়ার অভ্যাস আর এদের স্বভাবকে ‘শুদ্ধচেতন’ জানেন আর নিজের স্বভাবকেও ‘শুদ্ধচেতন’ জানেন, কারণ উনি স্ব-পর প্রকাশক।” “আহারী আহার করে আর নিরাহারী ‘শুদ্ধচেতন’ কেবলমাত্র তা জানেন।” | “স্থল সংযােগ, সূক্ষ্ম সংযােগ, বাণীর সংযােগ পর এবং পরাধীন আর ‘শুদ্ধচেতন’ কেবলমাত্র তার জ্ঞাতা-দ্রষ্টা থাকেন। “স্থলতম থেকে সূক্ষ্মতম অবধি সমস্ত সাংসারিক অবস্থার ‘শুদ্ধচেতন’ কেবলমাত্র জ্ঞাতা-দ্রষ্টা টংকোকীর্ণ, আনন্দ-স্বরূপ। (3) Page #56 -------------------------------------------------------------------------- ________________ আমি কে ? | 55 “মন-বচন-কায়ার অবস্থামাত্র কুতী (প্রাকৃতিক) রচনা (only Scientific Circumstantial Evidence), যার রচনাকর্তা কোন বাবা-ও নয় আর এটা ব্যবস্থিত। “নিশ্চেতন চেতন-এর একটা-ও গুণ ‘শুদ্ধচেতন’-এ নেই আর ‘শুদ্ধচেতন’-এর একটা-ও গুণ নিশ্চেতন চেতন-এ নেই। দুজনে সর্বদা আলাদা আলাদাই আছে।” “চঞ্চল অংশে যতরকমের ভাব আছে তানিশ্চেতন চেতন-এর ভাব আর শুদ্ধচেতন যা অচল তার ভাব নেই।” হে প্রভু! ভ্রান্তিবশতঃ আমি ‘শুদ্ধচেতন’-এর ভাব উপরােক্ত সূত্র অনুসারে এই’-ই হয় এরকম যথার্থরূপে, যেমন আছে তেমন বুঝতে পারিনি, কারণ নিষ্পক্ষপাতীভাবে আমি নিজেকে নিজে নিরীক্ষণ করে বুঝতে পেরেছি যে আমার ভিতর থেকে আমার অন্তরক্লেশ তথা কলহঅশান্তি যায়নি। হে প্রভু! এইজন্য আমার অন্তরক্লেশ প্রশমণ হেতু আমাকে পরম শক্তি দিন। এখন আমার এই শুদ্ধভাব যেমনটি তেমন বােঝা ছাড়া আর কোন কামনা নেই। আমি কেবলমাত্র মােক্ষ-ইকামনা করি। সেইহেতু আমার দৃঢ় অভিলাষ এই যে আমি ‘সপুরুষ’-এর বিনয় আর জ্ঞানীপুরুষের পরম বিনয়’-এ থেকে, আমি কিছুই জানি না এরকম ভাবপূর্বক-ই থাকি। উপরােক্ত জ্ঞানসূত্র-এর অনুসার শুদ্ধভাব আমার শ্রদ্ধাতে আর জ্ঞান আসে না। যদি এই ভাব আমার দৃঢ় শ্রদ্ধাতে আসে তবেই আমি অনুভব করতে পারব যে আমার যথার্থ সম্যকদর্শন হয়েছে। এর জন্য মুখ্যতঃ দুটো জিনিষেরই প্রয়ােজন? (1) “আমি পরমসত্য জানার-ই কামনা করি এই ভাবনিষ্ঠা। 2) পরমসত্য জ্ঞানীপুরুষ-এর আজ্ঞার সম্পূর্ণ আরাধনাতেই প্রাপ্ত হয়। | ‘জ্ঞানীপুরুষ’-এর প্রত্যক্ষ যােগ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এইজন্য আমি প্রত্যক্ষ ‘জ্ঞানীপুরুষ'-এর সন্ধানেই থাকব আর তার সংযােগ প্রাপ্ত হলে আমি তারই আজ্ঞার আরাধনায় থাকার দৃঢ় নির্ণয় নিশ্চয়করছি। আমার এই কামনা সফল হােক, সফল হােক, সফল হােক। * * * * * Page #57 -------------------------------------------------------------------------- ________________ দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রকাশিত হিন্দী পুস্তকসমূহ 1. জ্ঞানী পুরুষ কি পহেচান 24. অহিংসা 2. সর্ব দুঃখে সে মুক্তি 25. প্রতিক্ৰমণ (সংক্ষিপ্ত) 3. কর্ম কে সিদ্ধান্ত। 27. কর্ম কা বিজ্ঞান আত্মবােধ 28. চমৎকার অন্তঃকরণ কা স্বরূপ 29. বাণী, ব্যবহার মে, জগকর্তা কৌন ? 30. প্যয়সে কা ব্যবহার (সংক্ষিপ্ত) | ভুগতে উসী কি ভুল 31. পতি-পত্নী কা দিব্য ব্যবহার 8. অ্যাডজাস্ট এভরিহােয়্যার (সং) 9. টকরাও টালিয়ে 32. মাতা-পিতা ঔর বচ্চো কা। 10. হুয়া সাে ন্যায় ব্যবহার (সং) 11. চিন্তা 33. সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (সং) 12. ক্রোধ 34, নিজদোষ দর্শন সে, ... নির্দোষ 13. ম্যাঁয় কৌন হুঁ ? 35. ক্লেশ রহিত জীবন 14. বর্তমান তীর্থঙ্কর শ্রী সীমন্ধর স্বামী 36. গুরু-শিষ্য। 15. মানব ধর্ম 37. আপ্তবাণী - 1 16. সেবা-পরােপকার 38. আপ্তবাণী - 2 17. ত্রিমন্ত্র 39. আপ্তবাণী - 3 18. ভাবনা সে সুধরে জন্মেজন্ম 40. আপ্তবাণী - 4 19. দান। 41. আপ্তবাণী - 5 20. মৃত্যু সময়, পহেলে ঔর পশ্চাৎ 42. আপ্তবাণী - 6 21. দাদা ভগবান কৌন ? 43. আপ্তবাণী - 7 22. সত্য-অসত্য কে রহস্য 44. আপ্তবাণী - 8 23. প্রেম 45. সমঝসে প্রাপ্ত ব্রহ্মচর্য (উত্তরাধ)। * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা গুজরাতী ভাষাতেও অনেক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। এই সমস্ত পুস্তক ওয়েবসাইট www.dadabhagwan.org - তেও উপলব্ধ। * দাদা ভগবান ফাউন্ডেশন দ্বারা “দাদাবাণী” পত্রিকা হিন্দী, গুজরাতী ও ইংরাজী ভাষায় প্রতিমাসে প্রকাশিত হয়। প্রাপ্তিস্থান : ত্রি-মন্দির সঙ্কুল, সীমন্ধর সিটী, আহমেদাবাদ - কালােল হাইওয়ে, পােস্ট : অডালজ, জিলা : গান্ধীনগর, গুজরাত - 38242 1 ফোন : (079) 39830100, E-mail : info@dadabhagwan.org Page #58 -------------------------------------------------------------------------- ________________ জীবনের লক্ষ্য যদি এই সংসার তােমার ভাল লাগে (বাধা-বিঘ্ন না করে) তাহলে। আগে আর কিছু বােঝার প্রয়ােজন নেই। আর যদি এই সংসার তােমার। জন্যে বাধা-বিঘ্ন আনে তাহলে অধ্যাত্ম জানার অত্যন্ত প্রয়ােজন আছে / অধ্যাত্ম-তে ‘স্ব-রূপ’ কে জানা প্রয়ােজন / আমি কে’ - এটা জানতে পারলে সমস্ত পাজল সম্ভ (সমস্যা সমাধান ) হয়ে যায় / - দাদাশ্রী ISBN 978-93-46321-93-0 श्ल दीपक से प्रकट कि से प्रकटे दीपमाला 9 789386"32 1930 Printed in India dadabhagwan.org MRP 10