________________
[ 2 ]
প্রভৃতি বৌদ্ধবিদ্যা কেন্দ্রগুলি নষ্ট হওয়ায় হিন্দু নৈয়ায়িকদের শাস্ত্র বিবৃদ্ধির অন্তত্র প্রতিপক্ষ আবিষ্কার করিতে হইয়াছিল, তারশাস্ত্রের ইতিহাসে ইহার সমর্থনের অভাব নাই ।
ভারতীয় যুক্তিবাদের ইতিহাসে উপরিনির্দিষ্ট সারস্বত বিরোধের ফল বিশেষ শুভদায়ক হইয়াছিল। উভয়পক্ষই নিজ নিজ ত্রুটি বিচ্যুতির পরিমার্জন স্ব স্ব শাস্ত্রের প্রগতির পথ প্রশস্ত করিবার সুযোগের যথেষ্ট সদ্ব্যবহার করিতে পারিয়াছিলেন ।
কিন্তু হিন্দু এবং বৌদ্ধ নৈয়ায়িকের সম্বন্ধ মন্ত্র এবং প্রতিমন্ত্রের সম্বন্ধ । প্রয়োজন অনুসারে স্বপক্ষ ক্ষোর আগ্রহে ইহারা অসঙ্কোচে আপাতদুষ্ট ছল জাতি এবং নিগ্রহস্থানের প্রয়োগ করিয়াছেন । ফলে তত্ত্বজ্ঞান লাভের সাধন যুক্তিশাস্ত্র স্থান বিশেষে তৰবিঘাতকত্ত হইয়া পড়িয়াছে ।
জৈন ন্যায়ের স্থান বৈদিক এবং বৌদ্ধন্যায় হইতে স্বতন্ত্র । উভয়ের সঙ্গে ইহার সম্বন্ধ প্রায় সমান ছিল। এইধারা নিজ উৎস হইতে উৎপন্ন হইয়া উভয় বিবদমান ধারার সমান্তরাল ভাবে প্রবাহিত হইয়াছে। ইতস্ততঃ গ্রহণ বর্জন অবশ্যই হইয়াছে। তবে জৈন অনেকান্ত ভাবনা সর্বত্র তত্ত্ব জিজ্ঞাসার উপরই মহত্ত্ব দিয়াছে, সহানবস্থান অথবা বধ্যঘাতক বিরোধের পরিবর্তে তাত্ত্বিক সহাবস্থান সর্বক্ষেত্রেই জৈনাচার্যদের অভীষ্ট ছিল ।
জৈনদৃষ্টির এই উদারতা কোন মতবাদের নাশক অথবা প্রচ্ছাদক হয় নাই, বরং ইহার সাহায্যে অজৈন মতবাদেরও যথাযোগ্য অভ্যুদয় হইয়াছে ৷ আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সঞ্চয় এবং সংরক্ষণ জৈন সংস্কৃতির এক বিশেষ গুণ। যুক্তিবাদের ক্ষেত্রেও ইহার অনেক উদাহরণ মিলিবে । অনেক বৈদিক এবং বৌদ্ধ্যায় গ্রন্থ নিজ নিজ সম্প্রদায় সম্পূর্ণ বিশ্লিষ্ট হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু জৈন সম্প্রদায়ে উহার আদর অক্ষুণ্ণ ছিল। জৈনেরা অপক্ষপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন সম্প্রদায়ের গ্রন্থগুলির অনুশীলন করিয়াছেন, নিজ নিজ গ্রন্থে পরগ্রন্থের সন্দর্ভ উদ্ধার করিয়াছেন, টাকা গ্রন্থ রচনা কবিয়া তীর্থিক গ্রন্থের স্থায়িত্ব বিধান করিয়াছেন এবং সর্বোপরি, অসংখ্য জৈন গ্রন্থ ভাণ্ডারে অন্যান্য গ্রন্থের সঙ্গে অমূল্য ন্যায় গ্রন্থ সমূহের সংগ্রহ এবং রক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছেন।
7
ভারতবর্ষের তপোলব্ধ অবদানমাত্রই মহান এবং সকলের সামান্ত সম্পত্তি, উহা সংগ্রহের এবং সংভাবনার যোগ্য এই জৈনী ভাবনা বিভিন্ন একান্ত দর্শনকে এক নয়চক্রের বিভিন্ন 'অর' রূপে সুবিস্তপ্ত করির৷ছে।