________________
ভুমিকা
জৈনদের চব্বিশজন তীর্থংকরের শেষ তীর্থংকর বর্ধমান মহাবীর খৃষ্টজন্মের ৫১১ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন ।
যদিও মহাবীর ও ভগবান বুদ্ধ সমসাময়িক ছিলেন এবং যদিও জৈনধর্ম বাঙলার আদি ধর্ম তবুও তাঁর একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন আজ পর্যন্ত বাঙলা ভাষায় প্রকাশিত হয়নি । ভগবান বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে আমরা যতটা জানি ভগবান মহাবীর বা জৈনধর্ম সম্পর্কে তার শতাংশের একাংশও জানি না ।
এর নানা কারণের মধ্যে একটি কারণ এও মনে হয় যে জৈনধর্মকে আমরা এতদিন পশ্চিম ভারতীয় বণিক সম্প্রদায়ের ধর্ম বলেই মনে করে এসেছি কিন্তু তা নয় । জৈনধর্ম বাঙলার আদি ধর্ম। আর্য পরিধির সীমা অতিক্রম করে যে ধর্ম ঐতিহাসিককালে বাঙলায় প্রথম অনুপ্রবেশ লাভ করে সে ধর্ম জৈনধর্ম । ভগবান মহাবীর একাধিকবার বাঙলাদেশে এসেছিলেন ও নিজের ধর্মমত প্রচার করেছিলেন, যদিও গোড়ার দিকে এখানকার অধিবাসীরা তাঁকে বিরূপ সংবর্ধনা জানিয়েছিল তবু তিনি শেষপর্যন্ত তাদের হৃদয় জয় করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এর পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর নামের সঙ্গে সম্বন্ধান্বিত ‘বর্ধমান’, ‘বীরভূম’, মানভূম', ‘সিংভূম’আদি স্থাননাম হতে। অনুমান করা শক্ত নয় যে এক সময়ে এই অঞ্চলে ঘন জৈন বসতি ছিল । এর সমর্থন কেবলমাত্র হিউয়েন সাঙ, প্রমুখ চৈনিক পরিব্রাজকদের ভ্রমণ বিবরণ বা প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন থেকেই পাওয়া যায় তা নয়, এখনো এখানে সেই প্রাচীন জৈন জাতির বংশধরেরা বাস করেন যাঁদের সরাক বলে অভিহিত করা হয়। সরাক জৈন 'শ্রাবক' ( গৃহী উপাসক ) শব্দের অপভ্রংশ ।
কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলেই নয়, জৈনধর্ম ক্রমশঃ উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে। ভদ্রবাহু রচিত 'কল্পসূত্রে' জৈন সম্প্রদায়ের যে বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে চারটি শাখা ছিল বাঙলাদেশের চারটি জনপদের সঙ্গে সম্বন্ধান্বিত। যথা : তাম্রলিপ্তিয়া, কোটিবর্ষিয়া, পুণ্ড্রবর্ধনিয়া ও দাসী ধর্বটিয়া। তাম্রলিপ্ত মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত তমলুক শহর, প্রাচীন কোটিবর্ষ দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত ছিল। পুণ্ড্রবর্ধন বগুড়ার নিকটস্থ মহাস্থানগড় খর্বট বা কর্বট তাম্রলিপ্তের নিকটস্থ একটি শহর । ভদ্রবাহ সম্পর্কে বলা হয় তিনি বাঙালী ছিলেন। জন্মস্থান কোটিবর্ষ । ভদ্রবাহু স্বামীর জৈন সম্প্রদায়ে বিশেষ মান্ততা রয়েছে কারণ তিনি ছিলেন চতুর্দশ পূর্বধর অস্তিম দ্রুত-কেবলী।